নিখোঁজ ২৬২ জনের তালিকায় আছে ডাক্তার, প্রকৌশলী ও পাইলট

র‌্যাব ২৬২ জন নিখোঁজের যে তালিকা প্রকাশ করেছে সেই তালিকায় ডাক্তার, প্রকৌশলী ও পাইলটের পরিচয় পাওয়া গেছে। এছাড়াও ওই তালিকায় রয়েছে, গানের শিল্পী, পোশাক শ্রমিক, রাজমিস্ত্রী ও মাদরাসা শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৯টি পেশার মানুষ। এসব নিখোঁজের ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়েছে।

বুধবার মধ্যরাতে এই তালিকা প্রকাশ করে র‌্যাব। এদিকে র‌্যাব আরও জানিয়েছে ওই তালিকার একজন ইতোমধ্যে বাড়ি ফিরে এসেছে।

মো. মাহমুদুল হাসান রাতুল (২৩)। বাবার নাম রওশন আলী খান। সে পরিবারের সঙ্গেই রাজধানীর আদাবর থাকতেন। নটরডেম কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিমান চালানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে সে গত বছরের ১৯ জুলাই নিখোঁজ হয়। ওই বছরের ২১ জুলাই তার বিষয়ে আদাবর থানায় একটি জিডি হয়। আজ পর্যন্ত তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।

প্রকৌশলী রাহাত বিন আব্দুল্লাহ। বাবার নাম শেখ আব্দুল্লাহ। তিনি যশোর পলিটেকনিক্যাল থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপ্লোমা শেষে করেন। পরে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি করার জন্য ভর্তি হন। ইন্টার্নশিপ না করেই সেও নিখোঁজ। এবিষয়ে গত ১৮ জুন মোহাম্মদপুর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।

কওমি মাদরাসার ছাত্র মোস্তাফা কামাল (২৬)। গত ছয়মাস আগেও সে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেছে। গত ৬ জুলাই থেকে সে নিখোঁজ। এই ঘটনায় এখনও কোনও জিডি হয়নি। তার গ্রামের বাড়ি চাপাইনবাবগঞ্জের নাচল উপজেলায়।

বাদশাহ আলী (২৬)। তার গ্রামের বাড়ি শিবগঞ্জ, চাপাইনবাবগঞ্জ। বাবার নাম মতিউর রহমান। সে পেশায় রাজমিস্ত্রী। গত ২২ এপ্রিল সে নিখোঁজ হয়। এই ঘটনায় শিবগঞ্জ থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।

র‌্যাব প্রকাশিত তালিকা অনুসন্ধান করে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন জেলার মানুষ হলেও এদের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) থানা গুলোতে বেশি জিডি হয়েছে। জিডির সময়কাল ২০১৫ ও ২০১৬ সালের সাম্প্রতিক মাস। তবে বেশিরভাগ নিখোঁজের জিডি চলতি

বছরেই দায়ের করা হয়েছে।

র‌্যাব নিখোঁজের যে তালিকা প্রকাশ করেছে তাতে আছে, কোনও ব্যক্তির আলোকচিত্র, সর্বশেষ তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর, কারও কারও ঘনিষ্ঠ বন্ধুরও নাম প্রকাশ করা হয়েছে। নিখোঁজদের সন্ধানে যারা জিডি করেছে তাদেরও নাম প্রকাশ করা হয়েছে। যে সব থানায় জিডি করা হয়েছে, ওই থানার তদন্তকারীর মোবাইল নম্বরও দেওয়া হয়েছে তালিকায়। প্রকাশ করা হয়েছে নিখোঁজদের স্থায়ী ও অস্থায়ী ঠিকানা।

প্রসঙ্গত, গত ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার তিনজন বাংলাদেশি ও ১৭ বিদেশি নাগরিক নিহত হন। এছাড়াও জঙ্গি হামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরবর্তীতে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে ছয় হামলাকারী নিহত হয়। এরপর ঈদের দিন শোলাকিয়ার ঈদগাহে হামলার ঘটনায় এক পুলিশ সদস্য নিহত হন।

এসব হামলায় অংশগ্রহণকারী জঙ্গি সদস্যরা প্রত্যেকেই বাসা ও পরিবার থেকে ছয় মাস বা এক বছর আগে বের হয়ে নিখোঁজ ছিল বলে পরর্তীতে জানা যায়। এরপর নিখোঁজদের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথ্য সংগ্রহের জন্য কাজ করে। তারা নিখোঁজদের পরিবারকে স্থানীয় থানায় জিডি করার অনুরোধ করেন।

এরপর নিখোঁজদের পরিবারগুলো নিজেরাই স্থানীয় থানায় জিডি করেন। যা থেকে সন্দেহভাজনদের একটি তালিকা প্রকাশ করল র‌্যাব। পুলিশের কাছেও এধরণের একটি তালিকা রয়েছে।

কেবল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেওয়া নিখোঁজ সংবাদই নয়, দেশের বেশকিছু জেলায় নিখোঁজ হওয়ার আরও খবর মিলছে। এরমধ্যে কেবল নাটোরে গত ছয় মাসে ২৪ জনসহ মোট ২৮ তরুণ নিখোঁজ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। তাদের অধিকাংশের বয়স ১৫ থেকে ২১ বছর।

নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী বলছেন, শনিবার পর্যন্ত পুলিশ নাটোর জেলায় ৪৪ জন তরুণ নিখোঁজ হওয়ার তথ্য পেয়েছেন। তাদের মধ্যে ২৮ জনের সন্ধান চেয়ে জিডি করেছেন স্বজনরা। জিডি হওয়া তরুণদের মধ্যে ২৪ জন চলতি বছর এবং ৪ জন গত বছর নিখোঁজ হয়।

এদিকে নিখোঁজ শিক্ষার্থীদের বিষয়ে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তথ্য দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষমন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, ‘কোনও উপজেলার কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী কোনও কারণ ছাড়া ১০ দিনের বেশি নিখোঁজ থাকলে পরিবারকে জানাতে হবে। পরিবার থেকে কোনও উত্তর না দিতে পারলে সংশ্লিষ্ট উপজেলার শিক্ষা অফিসারকে জানাতে হবে। তিনি মন্ত্রণালয় জানাবেন।’

এছাড়া গত সোমবার বিকালে বগুড়ার দুটি উপজেলায় র‌্যাবের নেতৃত্বে পুলিশ ও বিজিবি’র যৌথ অভিযান শেষে র‌্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ বলেছেন, ‘কোনও জঙ্গি সংগঠন থেকে কোনও ব্যক্তি বের হয়ে এসে তথ্য দিলে তাকে দশ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হবে। একই সঙ্গে কাউকে ধরিয়ে দিলে তাকে দেওয়া হবে পাঁচ লাখ টাকা।’

এর আগে খোঁজ পাওয়া যায়, এক বছর ধরে ঢাকা শিশু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. রোকন উদ্দিন ও তার পরিবারের পাঁচ সদস্য নিখোঁজ রয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে রবিবার রাতে রামপুরা থানার ওসি রফিকুল ইসলাম একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। ঐ চিকিত্সক পরিবার তুরস্ক যাওয়ার পর আর দেশে ফেরেননি। পুলিশ ওই পরিবারের বিরুদ্ধে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ এনেছে। মালিবাগে মাটির মসজিদের পাশে ৪১১/বি নম্বর সাত বাড়িতে তারা থাকতেন।

গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পর ১০ যুবকের সন্ধান পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চায় তাদের পরিবার। এরপর গতকাল রবিবার আরও দশজনের তালিকা গণমাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। এই দশজনের মধ্যে তিনজন নারী রয়েছেন। এদের একজন রমিতা রোকন। কুড়িবছরের রমিতার ফেসবুক পেজে শেষ পোস্টটি গতবছর জুলাই মাসের।

গুলশানে হামলাকারীদের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়ার পর অভিভাবকরা জানতে পারেন, হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যাওয়া তাদের সন্তানেরা কোন পথে গিয়েছিল। তবে ওই ঘটনার পর অভিভাবকরা অভিযোগ করেছিলেন নিখোঁজ হিসেবে সাধারণ ডায়েরি করেও ফল পাওয়া যায়নি। -বাংলা ট্রিবিউন

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর