ঢাকা ০২:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খেজুর রস সংগ্রহে গাছিদের ব্যস্ততা, চাঙা অর্থনীতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:৪৩:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪
  • ৯০ বার

অনলাইনে বিপণন বাড়ায়, খেজুর গাছ রোপণ ও রস আহরণ বেড়েছে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায়। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজার লিটার খেজুর রস পাচ্ছেন গাছিরা, চলছে জমজমাট বেচাকেনা। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত গত এক সপ্তাহ ধরে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৩০ হাজারের বেশি খেজুর গাছ রয়েছে। তার মধ্যে রসের জন্য কাটা হয়েছে ১৮ হাজারের মতো। এখানে সরকারিভাবেও বিতরণ করা হচ্ছে খেজুরের চারা গাছ।

গুগল নিউজে ফলো করুন আরটিভি অনলাইন
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে ৫ লিটার রস পাওয়া যাচ্ছে। এক লিটার রস বিক্রি করে গাছিরা গড়ে সর্বনিম্ন দাম পাচ্ছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সেই হিসাবে পুরো উপজেলার ১৮ হাজারের মতো গাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে রস সংগ্রহ হচ্ছে ৭০ হাজার লিটারের মতো। যার মূল্য প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষাধিক টাকা।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, ‘শীতের যশ, খেজুরের রস’ আবহমানকাল ধরে চলে আসা এ প্রবাদটি এ উপজেলায় আজও প্রাসঙ্গিক। রস ছাড়া বাঙালির শীতকালটা যেন জমেই না। চিরায়ত এ ঐতিহ্যেও এখন লেগেছে ডিজিটালের ছোঁয়া। শহর-নগরের মানুষ ঘরে বসেই চুমুক দিচ্ছেন তাজা রসের গ্লাসে। সনাতন বাজার ব্যবস্থার বাইরেও এখানকার খেজুরের রস কেনাবেচা হচ্ছে অনলাইনেও।

জানা গেছে, ফেনী জেলা শহরসহ সোনাগাজী ও আশপাশের কয়েকটি উপজেলার বেশকজন যুবক অনলাইনে জমিয়ে তুলেছে এ রসের হাট। এ ছাড়া প্রকৃতিতে এখন শীতের দাপট, ফলে জমে উঠেছে খেজুরের রসের হাট। তবুও জেলা শহরে স্বাদের এ রস যেন সোনার হরিণ। সোনাগাজী ছাড়া এ জেলার অন্য উপজেলার অনেক গ্রামেও সহজে মেলে না রসের দেখা। এমন পরিস্থিতিতে খেজুর গাছ কাটার ব্যবস্থা করে রস সংগ্রহ করছেন ফেনীর একদল নতুন উদ্যোক্তা। গাছিদের কাছ থেকে সরাসরি রস সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি করছেন তারা।

নিজস্ব তত্ত্বাবধানে খেজুরের রস সংগ্রহ করে ভোজনবিলাসীদের চাহিদা মেটাচ্ছেন এসব উদ্যোক্তারা। অর্ডার পেলে রস পৌঁছে দিচ্ছেন ঘরে ঘরে। অর্ধ শতাধিক তরুণ উদ্যোক্তাসহ কয়েক শতাধিক মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমি এ ব্যবসায়। অনলাইনে বিকিকিনি হয় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার বেশি। অনলাইন-অফলাইন মিলিয়ে পুরো মৌসুম রসের এ বাজার কয়েক কোটি টাকার।

এ উদ্যোক্তাদের একজন ফেনীর উপকূলীয় জনপদ সোনাগাজী উপজেলার আদর্শ গ্রামের যুবক মোহাম্মদ আলী। বছরের অন্য সময় ভিন্ন ব্যবসা করলেও শীতের পুরো মৌসুমে ব্যস্ত থাকেন রসের ব্যবসায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে গত মৌসুমেও সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি খেজুরের রস বিক্রি করেছেন তিনি। চলতি মৌসুমে বিগত মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার লক্ষ্য তার।

নেয়ামত নামের এক যুবক বলেন, এলাকার দেড় শতাধিক গাছ থেকে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করে তিনি পৌঁছে দিচ্ছেন শহরের মানুষের ঘরে ঘরে। তিনি জানান, সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি মৌসুমে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার রস বিক্রি করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করছেন। রসে যাতে ইঁদুর-বাদুড় মুখ দিতে না পারে, নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে না পারে সেজন্য নেট দেওয়াসহ বিশেষ নিরাপত্তার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

ফেসবুক পেজ সহজ বাজারের রাশেদ, ই-ফাতাহ’র নিশাদ ও হ্যালো কলের হান্নানসহ এমন আরও বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা অনলাইনে এ খেজুরের রসের হাট জমিয়ে তুলেছেন। ভোরে গ্রামে গিয়ে গাছিদের কাছ থেকে রস সংগ্রহ করে পৌঁছে দিচ্ছেন শহরের মানুষের ঘরে ঘরে। সহজ বাজারের রাশেদ জানান, অনলাইনে তারা ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। মৌসুমী এ রস বিক্রি করে আয়ও হচ্ছে সন্তোষজনক।

ই-ফাতাহ’র নিশাদ বলেন, সময় পাল্টেছে, অনলাইনের বদৌলতে মানুষ এখন সব পাচ্ছে হাতের মুঠোও। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্ভেজাল খেজুর গাছের রস আমরা নিয়ে এসেছি মানুষের দোরগোড়ায়। বছর কয়েক আগেও এখনকার মতো রস বিক্রি হতো না। তখন নিজেরা খেয়ে যা বাঁচতো তা দিয়ে ঝোলাগুড় তৈরি করা হতো। দাম ছিল না তেমন। হালের অনলাইনের আবির্ভাবে রস বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন প্রান্তিকের মানুষগুলো।

রস সংগ্রহকারী ষাটোর্ধ গাছি নজির আহম্মদ বলেন, আগে খেজুর গাছের রস তেমন বিক্রি হতো না। এখন অনলাইনের কারণে রস একটুও থাকে না। সব বিক্রি হয়ে যায়।

এদিকে শহরের বাসায় বসে একদম গ্রাম থেকে আসা খেজুরের রস খেতে পেরে উচ্ছ্বসিত ভোক্তারাও। খরচ একটু বেশি হলেও তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন তারা। ফেনী শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা জহিরুল হক বলেন, এটা সত্যিই ভালো লাগার। সেই সোনাগাজীর আদর্শগ্রামের টাটকা রস ফেনী শহরে বসে খাওয়াটা সৌভাগ্যের।

এ বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ (সোহাগ) বলেন, খেজুর গাছের রস বর্তমানে একটি অর্থ উপার্জনের বিষয় হয়ে উঠেছে। অনলাইনের কারণে বিপণনও বেড়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারিভাবেও বিতরণ করা হচ্ছে খেজুরের চারা গাছ। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগও নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

খেজুর রস সংগ্রহে গাছিদের ব্যস্ততা, চাঙা অর্থনীতি

আপডেট টাইম : ০৭:৪৩:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৯ জানুয়ারী ২০২৪

অনলাইনে বিপণন বাড়ায়, খেজুর গাছ রোপণ ও রস আহরণ বেড়েছে ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায়। এখানে প্রতিদিন গড়ে ৭০ হাজার লিটার খেজুর রস পাচ্ছেন গাছিরা, চলছে জমজমাট বেচাকেনা। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) পর্যন্ত গত এক সপ্তাহ ধরে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ৩০ হাজারের বেশি খেজুর গাছ রয়েছে। তার মধ্যে রসের জন্য কাটা হয়েছে ১৮ হাজারের মতো। এখানে সরকারিভাবেও বিতরণ করা হচ্ছে খেজুরের চারা গাছ।

গুগল নিউজে ফলো করুন আরটিভি অনলাইন
সংশ্লিষ্ট সূত্র ও স্থানীয়রা জানান, একটি গাছ থেকে দৈনিক গড়ে ৫ লিটার রস পাওয়া যাচ্ছে। এক লিটার রস বিক্রি করে গাছিরা গড়ে সর্বনিম্ন দাম পাচ্ছেন ৫০ থেকে ৬০ টাকা। সেই হিসাবে পুরো উপজেলার ১৮ হাজারের মতো গাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে রস সংগ্রহ হচ্ছে ৭০ হাজার লিটারের মতো। যার মূল্য প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ লক্ষাধিক টাকা।

সংশ্লিষ্টদের দাবি, ‘শীতের যশ, খেজুরের রস’ আবহমানকাল ধরে চলে আসা এ প্রবাদটি এ উপজেলায় আজও প্রাসঙ্গিক। রস ছাড়া বাঙালির শীতকালটা যেন জমেই না। চিরায়ত এ ঐতিহ্যেও এখন লেগেছে ডিজিটালের ছোঁয়া। শহর-নগরের মানুষ ঘরে বসেই চুমুক দিচ্ছেন তাজা রসের গ্লাসে। সনাতন বাজার ব্যবস্থার বাইরেও এখানকার খেজুরের রস কেনাবেচা হচ্ছে অনলাইনেও।

জানা গেছে, ফেনী জেলা শহরসহ সোনাগাজী ও আশপাশের কয়েকটি উপজেলার বেশকজন যুবক অনলাইনে জমিয়ে তুলেছে এ রসের হাট। এ ছাড়া প্রকৃতিতে এখন শীতের দাপট, ফলে জমে উঠেছে খেজুরের রসের হাট। তবুও জেলা শহরে স্বাদের এ রস যেন সোনার হরিণ। সোনাগাজী ছাড়া এ জেলার অন্য উপজেলার অনেক গ্রামেও সহজে মেলে না রসের দেখা। এমন পরিস্থিতিতে খেজুর গাছ কাটার ব্যবস্থা করে রস সংগ্রহ করছেন ফেনীর একদল নতুন উদ্যোক্তা। গাছিদের কাছ থেকে সরাসরি রস সংগ্রহ করে অনলাইনে বিক্রি করছেন তারা।

নিজস্ব তত্ত্বাবধানে খেজুরের রস সংগ্রহ করে ভোজনবিলাসীদের চাহিদা মেটাচ্ছেন এসব উদ্যোক্তারা। অর্ডার পেলে রস পৌঁছে দিচ্ছেন ঘরে ঘরে। অর্ধ শতাধিক তরুণ উদ্যোক্তাসহ কয়েক শতাধিক মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছেন মৌসুমি এ ব্যবসায়। অনলাইনে বিকিকিনি হয় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার বেশি। অনলাইন-অফলাইন মিলিয়ে পুরো মৌসুম রসের এ বাজার কয়েক কোটি টাকার।

এ উদ্যোক্তাদের একজন ফেনীর উপকূলীয় জনপদ সোনাগাজী উপজেলার আদর্শ গ্রামের যুবক মোহাম্মদ আলী। বছরের অন্য সময় ভিন্ন ব্যবসা করলেও শীতের পুরো মৌসুমে ব্যস্ত থাকেন রসের ব্যবসায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে গত মৌসুমেও সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি খেজুরের রস বিক্রি করেছেন তিনি। চলতি মৌসুমে বিগত মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করার লক্ষ্য তার।

নেয়ামত নামের এক যুবক বলেন, এলাকার দেড় শতাধিক গাছ থেকে প্রতিদিন রস সংগ্রহ করে তিনি পৌঁছে দিচ্ছেন শহরের মানুষের ঘরে ঘরে। তিনি জানান, সব ঠিকঠাক থাকলে চলতি মৌসুমে সাড়ে চার থেকে পাঁচ লাখ টাকার রস বিক্রি করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যেই তিনি কাজ করছেন। রসে যাতে ইঁদুর-বাদুড় মুখ দিতে না পারে, নিপাহ ভাইরাস ছড়াতে না পারে সেজন্য নেট দেওয়াসহ বিশেষ নিরাপত্তার কথাও জানিয়েছেন তিনি।

ফেসবুক পেজ সহজ বাজারের রাশেদ, ই-ফাতাহ’র নিশাদ ও হ্যালো কলের হান্নানসহ এমন আরও বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তা অনলাইনে এ খেজুরের রসের হাট জমিয়ে তুলেছেন। ভোরে গ্রামে গিয়ে গাছিদের কাছ থেকে রস সংগ্রহ করে পৌঁছে দিচ্ছেন শহরের মানুষের ঘরে ঘরে। সহজ বাজারের রাশেদ জানান, অনলাইনে তারা ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন। মৌসুমী এ রস বিক্রি করে আয়ও হচ্ছে সন্তোষজনক।

ই-ফাতাহ’র নিশাদ বলেন, সময় পাল্টেছে, অনলাইনের বদৌলতে মানুষ এখন সব পাচ্ছে হাতের মুঠোও। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নির্ভেজাল খেজুর গাছের রস আমরা নিয়ে এসেছি মানুষের দোরগোড়ায়। বছর কয়েক আগেও এখনকার মতো রস বিক্রি হতো না। তখন নিজেরা খেয়ে যা বাঁচতো তা দিয়ে ঝোলাগুড় তৈরি করা হতো। দাম ছিল না তেমন। হালের অনলাইনের আবির্ভাবে রস বিক্রি করে লাভের মুখ দেখছেন প্রান্তিকের মানুষগুলো।

রস সংগ্রহকারী ষাটোর্ধ গাছি নজির আহম্মদ বলেন, আগে খেজুর গাছের রস তেমন বিক্রি হতো না। এখন অনলাইনের কারণে রস একটুও থাকে না। সব বিক্রি হয়ে যায়।

এদিকে শহরের বাসায় বসে একদম গ্রাম থেকে আসা খেজুরের রস খেতে পেরে উচ্ছ্বসিত ভোক্তারাও। খরচ একটু বেশি হলেও তৃপ্তির ঢেকুর তুলছেন তারা। ফেনী শহরের মাস্টারপাড়া এলাকার বাসিন্দা জহিরুল হক বলেন, এটা সত্যিই ভালো লাগার। সেই সোনাগাজীর আদর্শগ্রামের টাটকা রস ফেনী শহরে বসে খাওয়াটা সৌভাগ্যের।

এ বিষয়ে স্থানীয় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাইন উদ্দিন আহমেদ (সোহাগ) বলেন, খেজুর গাছের রস বর্তমানে একটি অর্থ উপার্জনের বিষয় হয়ে উঠেছে। অনলাইনের কারণে বিপণনও বেড়েছে। বিষয়টি মাথায় রেখে সরকারিভাবেও বিতরণ করা হচ্ছে খেজুরের চারা গাছ। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগও নানা পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে।