ঢাকা ১১:২৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এসপি বাবুল আক্তার নিজেও চুপ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩২:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০১৬
  • ৬৩০ বার

পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার ৩৯ দিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তিনি কি ছুটিতে, নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন— এ প্রশ্নের জবাব চাওয়া হলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। বাবুল নিজেও চুপ।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা গতকাল বুধবার বলেন, স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) খুন হওয়ার পর থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত এই কর্মকর্তা আর কর্মস্থলে আসছেন না। তিনি ছুটির আবেদনও করেননি; বরং তার পদত্যাগপত্র পড়ে আছে। এটি গ্রহণ করা হবে কি না, তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সদর দপ্তর।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, বাবুল আক্তার পুলিশ সদর দপ্তরের লোক। তিনি ছুটিতে আছেন, নাকি চাকরিতে আছেন, সেটা আমি জানি না।’

বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা।

হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। সেই মামলায় ২৪ জুন গভীর রাতে খিলগাঁও নওয়াপাড়ার শ্বশুরবাড়ি

থেকে বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।

এরপর ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয় তাকে। স্ত্রী খুন হওয়ার পর থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিবি কার্যালয়ে নেয়ার পর তিন কর্মকর্তা বাবুলকে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখনই তার পদত্যাগপত্রে সই নেয়া হয়।

তবে পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করা না-করা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাবুলকে শর্ত দেয়া হয়েছিল, হয় তাকে বাহিনী থেকে সরে যেতে হবে, নইলে স্ত্রী হত্যা মামলার আসামি হতে হবে।

বাবুল আক্তার বাহিনী থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে সম্মতি দেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, এসব ক্ষেত্রে মাঝামাঝি কোনো পন্থা থাকতে পারে না।

হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে। বাবুল যদি এতে জড়িত হন, তাহলে আর দশজন অপরাধীর যা হয়, তারও তা হবে। আর তা না হলে তিনি সসম্মানে পুলিশ বাহিনীতে থাকবেন। মামলার তদন্তপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়া উচিত।

তদন্তের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, মাহমুদা খানম হত্যা মামলার তদন্তে বলার মতো অগ্রগতি নেই। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আসামি মনিরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অস্ত্র সরবরাহকারী ভোলাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গ্রেপ্তার বাকি আসামিদের রিমান্ড শুনানি হবে ১৭ জুলাই।

খুনের নির্দেশদাতাকে শনাক্ত করা গেছে কি না, এর জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, পরিষ্কার না হয়ে বলতে পারব না।

আসামিদের মধ্যে নবী ও রাশেদ ৫ জুলাই ভোরে রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মুছাকে ২২ জুন বন্দর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলে দাবি করে আসছেন তার স্ত্রী পান্না আক্তার।

পুলিশ তা অস্বীকার করে বলছে, মুছাকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে। পলাতক রয়েছেন আসামি কালু। গ্রেপ্তার হয়েছেন ওয়াসিম, আনোয়ার, শাহজাহান, মুছার ভাই সাইদুল শিকদার ওরফে সাকু, অস্ত্র সরবরাহকারী এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা ও ভোলার সহযোগী মনির।

চট্টগ্রাম পুলিশের সূত্র জানায়, হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি মো. মনিরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। তিন দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে।

গত সোমবার বিকেল থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে বাকলিয়া থানার পুলিশ। -প্রথম আলো

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

এসপি বাবুল আক্তার নিজেও চুপ

আপডেট টাইম : ১১:৩২:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ জুলাই ২০১৬

পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার ৩৯ দিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। তিনি কি ছুটিতে, নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন— এ প্রশ্নের জবাব চাওয়া হলে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে কিছু বলছেন না। বাবুল নিজেও চুপ।

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ সদর দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা গতকাল বুধবার বলেন, স্ত্রী মাহমুদা খানম (মিতু) খুন হওয়ার পর থেকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত এই কর্মকর্তা আর কর্মস্থলে আসছেন না। তিনি ছুটির আবেদনও করেননি; বরং তার পদত্যাগপত্র পড়ে আছে। এটি গ্রহণ করা হবে কি না, তা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সদর দপ্তর।

চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, বাবুল আক্তার পুলিশ সদর দপ্তরের লোক। তিনি ছুটিতে আছেন, নাকি চাকরিতে আছেন, সেটা আমি জানি না।’

বাবুলের শ্বশুর সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশাররফ হোসেনকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রামের জিইসি এলাকায় গুলি ও ছুরিকাঘাতে খুন হন মাহমুদা।

হত্যাকাণ্ডের পর বাবুল বাদী হয়ে অজ্ঞাতপরিচয় তিন ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন। সেই মামলায় ২৪ জুন গভীর রাতে খিলগাঁও নওয়াপাড়ার শ্বশুরবাড়ি

থেকে বাবুলকে ডিবি কার্যালয়ে নেয়া হয়।

এরপর ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর শ্বশুরবাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয় তাকে। স্ত্রী খুন হওয়ার পর থেকে তিনি সেখানেই আছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ডিবি কার্যালয়ে নেয়ার পর তিন কর্মকর্তা বাবুলকে ১৫ ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তখনই তার পদত্যাগপত্রে সই নেয়া হয়।

তবে পদত্যাগপত্রটি গ্রহণ করা না-করা নিয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। জিজ্ঞাসাবাদের সময় বাবুলকে শর্ত দেয়া হয়েছিল, হয় তাকে বাহিনী থেকে সরে যেতে হবে, নইলে স্ত্রী হত্যা মামলার আসামি হতে হবে।

বাবুল আক্তার বাহিনী থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে সম্মতি দেন। ওই কর্মকর্তা বলেন, এসব ক্ষেত্রে মাঝামাঝি কোনো পন্থা থাকতে পারে না।

হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত হতে হবে। বাবুল যদি এতে জড়িত হন, তাহলে আর দশজন অপরাধীর যা হয়, তারও তা হবে। আর তা না হলে তিনি সসম্মানে পুলিশ বাহিনীতে থাকবেন। মামলার তদন্তপ্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়া উচিত।

তদন্তের প্রক্রিয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের কমিশনার ইকবাল বাহার বলেন, মাহমুদা খানম হত্যা মামলার তদন্তে বলার মতো অগ্রগতি নেই। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আসামি মনিরকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অস্ত্র সরবরাহকারী ভোলাকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গ্রেপ্তার বাকি আসামিদের রিমান্ড শুনানি হবে ১৭ জুলাই।

খুনের নির্দেশদাতাকে শনাক্ত করা গেছে কি না, এর জবাবে পুলিশ কমিশনার বলেন, পরিষ্কার না হয়ে বলতে পারব না।

আসামিদের মধ্যে নবী ও রাশেদ ৫ জুলাই ভোরে রাঙ্গুনিয়ায় পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। মুছাকে ২২ জুন বন্দর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে বলে দাবি করে আসছেন তার স্ত্রী পান্না আক্তার।

পুলিশ তা অস্বীকার করে বলছে, মুছাকে হন্যে হয়ে খোঁজা হচ্ছে। পলাতক রয়েছেন আসামি কালু। গ্রেপ্তার হয়েছেন ওয়াসিম, আনোয়ার, শাহজাহান, মুছার ভাই সাইদুল শিকদার ওরফে সাকু, অস্ত্র সরবরাহকারী এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা ও ভোলার সহযোগী মনির।

চট্টগ্রাম পুলিশের সূত্র জানায়, হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধারের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া আসামি মো. মনিরকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত আছে। তিন দিনের রিমান্ড শেষ হওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করা হতে পারে।

গত সোমবার বিকেল থেকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে বাকলিয়া থানার পুলিশ। -প্রথম আলো