হাওর বার্তা ডেস্কঃ স্ট্যাচু হয়ে নিজেকে অন্যের কাছে আকর্ষণীয় করার চেষ্টা করছেন। হতে চান সফল একজন কনটেন্ট ক্রিয়েটর। ইতোমধ্যে চাঁদপুর শহরে সকলের কাছে খুবই সু-পরিচিত লাভ করেছেন ‘গোল্ডেন বয়’ হিসেবে। তার সঙ্গে সেলফি তুলতেও আগ্রহ দেখান অনেকেই। শহরের বাহিরের দূরদূরান্ত থেকেও তাকে দেখতে আসেন অনেকে মানুষজন। আর আল-আমিনের এমন পরিচিতির কারণ তার অভিনব এক পরিকল্পনা ও অধ্যবসায়। আপাদমস্তক সোনালি রঙে আবৃত করে জীবন্ত মূর্তির রুপ ধারণ করেন এই যুবক। একই রংয়ে ও ঢঙে সব সময় দাঁড়িয়ে থাকেন দীর্ঘ সময়। যে কেউ দেখলে প্রথমে ভাববেন, সোনায় মোড়ানো কোনো মূর্তি, কোনো স্ট্যাচু। নদীর পাড় শহরের মোলহেডে এভাবেই ঘণ্টার পর ঘণ্টা স্ট্যাচু হয়ে পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
অভিনব কায়দায় নিজেকে পরিচিত করা এই ‘গোল্ডেন বয়’ এর নাম আল-আমিন শেখ (২৫)। তিনি পেশায় একজন টাইলস্ কাজের ঠিকাদার।
এভাবেই দীর্ঘ সময় মূর্তিররুপ ধারণ করে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্থানে অবস্থান করেন আল-আমিন ঠিকাদার। আর এভাবেই ‘গোল্ডেন বয়’ খ্যাতিটা অর্জন করে দিয়েছে সে। কারণ, জীবন্ত মূর্তি ধারণ করে দীর্ঘসময় একই স্থানে অবস্থান করা ব্যক্তি চাঁদপুরে এর আগে আর কখনও দেখা যায়নি।
চাঁদপুর প্রেসক্লাবে শিক্ষা মন্ত্রীর অনুষ্ঠানে এসে উপস্থিত হন তিনি। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে এখন আল-আমিনের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়। বিশেষ করে জেলার প্রধান পর্যটন কেন্দ্র তিন নদীর মোহনা, বড় স্টেশন মোলহেডে বিভিন্ন সময়ই তাকে অবস্থান করতে দেখা যায়। আল-আমিনের একমাত্র স্বপ্ন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হবেন।
চাঁদপুরে ব্যাপক পরিচিতি পাওয়া আল-আমিনের বাড়ি মূলত বাগেরহাট জেলায়। সেখানে শাহজাহান শেখ ও মনোয়ারা বেগমের সংসারে ১৯৯৭ সালে জন্ম তার। তবে ৮ বছর বয়সে মা মনোয়ারার সঙ্গে চাঁদপুর ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামে নানা বাড়িতে চলে আসে আল-আমিন। সেখানে আফতাব উদ্দিন বেপারী বাড়িতে মায়ের কাছে বড় হন। মুক্তা আক্তার নামে ছোট বোন আছে তার। তিনি স্থানীয় একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়েন।
জানা যায়, ছোট বেলা থেকেই একটু দুষ্টু প্রকৃতির ছিল আল-আমিন। প্রাথমিক বিদ্যালয় শেষ করলেও মাধ্যমিকে এসে দুষ্টুমিটা বেড়ে যায় তার। একাধিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি করা হলেও অষ্টম শ্রেণীর পর আর শিক্ষা অর্জন করা সম্বব হয়নি। এক সময় পরিবারের অভাবের কারণে দুষ্টুমির স্বভাবে লাগাম টানতে হয়, কাজে যোগ দিতে হয় তাকে। গ্রামের এক টাইলস্ মিস্ত্রির সহযোগী হয়ে কাজ শেখেন। পরে নিজেই হয়ে যান টাইলস্ কাজের ঠিকাদার। দশ বছরের অধিক সময় এই কাজ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি।
‘গোল্ডেন বয়’ খ্যাত আল-আমিনের সঙ্গে কথা হয় বুধবার ।
তিনি বলেন, আমি ফরিদগঞ্জ নানাবাড়িতেই ছিলাম। এখনো আমার মা-বোন সেখানে। আমি চাঁদপুর শহরের ক্লাব রোডে এক বন্ধুর সঙ্গে থাকি। দীর্ঘ সময় টাইলসের কাজ করায় নানা অসুস্থতা দেখা দেয়। অবসর বসে না থেকে স্মার্ট মোবাইলে ফেসবুক ও ইউটিউব দেখে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ার পরিকল্পনা করি। গত জুন মাস থেকে জীবন্ত মূর্তি ধারণ করে চাঁদপুর শহরের তিন নদীর মোহনা, শপথ চত্বর এলাকায় অবস্থান করছি। ইতোমধ্যে আমি সক্ষম হয়েছি চাঁদপুরের লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে।
সোনালি রং মেখে এই জীবন্ত মূর্তি হওয়ার ভাবনা কীভাবে এলো প্রশের জবাবে তিনি বলেন, আমি ইউরোপের জীবন্ত মূর্তি ধারণ করা ব্যক্তিদের ভিডিও দেখে এটা শিখেছি। তবে এই কাজটি খুব ভালোভাবে করার জন্য তেমন অর্থ নেই আমার। আমি কিছু সামাজিক সচেতনতামূলক কাজে যুক্ত হয়েছি ইতিমধ্যে । বিশেষ করে সড়কে দুর্ঘটনা প্রতিরোধে চলাচল বিষয়ে সতর্কতামূলক প্রচারণা করে আসছি। গোল্ডেন বয়’ সেজে এসব প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি অনেক দিন যাবত।
তিনি বলেন, এর আগে গ্রামের বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করি। বার বার লোকসান হয়েছে। এখন জীবন্ত মূর্তি ধারণ করে শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষদেরকে বিনোদন দেওয়ার পাশাপাশি কন্টেন্ট ক্রিয়েটর হওয়ার স্বপ্ন দেখছি। ইতোমধ্যে আমার কাজ আমি শুরু করে দিয়েছি
আল-আমিন আরো জানান, আমার একটি ভালো ক্যামেরার প্রয়োজন রয়েছে। অন্য কোনো সমস্যা নেই আমার। আমার কাজের জন্য কিছুটা সহযোগিতা করেছেন চাঁদপুর পৌরসভার মেয়র এযভোকেট মো. জিল্লুর রহমান জুয়েল স্যার। তিনি বলেণ চাঁদপুর বাসীসহ দেশবাসীর সকলের সহযোগিতা থাকলে আমি আমার কাজটি নিয়ে অতিদ্রæত অল্প সময়ে এগিয়ে যেতে পারবো বলে আমার বিশ্বাস।