ঢাকা ০৭:৫৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শাপলা-পদ্মর সমাহারে মোহনীয় হেমন্তের প্রকৃতি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৩৭:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ নভেম্বর ২০২৩
  • ১৪৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পদ্মকে বলা হয় জলজ ফুলের রাণী। আর জাতীয় ফুল শাপলার সৌন্দর্যও কোনো অংশে কম নয়। বর্ষা থেকে হেমন্ত পর্যন্ত শোভা দেয় এই ফুল গুলো।

কিন্তু রাজধানী ঢাকার অদূরে যে এমন চোখ জুড়ানো শাপলা ও পদ্মর বিল রয়েছে তা হয়তো জানেন না অনেকেই।

রূপগঞ্জের দাউদপুরে প্রায় ৯০০ বিঘা জমির উপড় গড়ে উঠেছে শাপলা বিল। তবে শুধু যে লাল শাপলা তা কিন্তু নয়। রয়েছে গোলাপী ও নীল পদ্মও। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ। সকালে গিয়ে দুপুরেই ফেরা যায় সৌন্দর্য উপভোগ করে।

দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন বিলটিতে কেউ ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে। প্রতিদিনই এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আসেন দর্শনার্থীরা।

দাউদপুরের জিন্দা পার্ক থেকে ৫ মিনিট দূরেই শাপলা বিলের শুরু। মূলত শাপলা বিলকে ঘিরে শাপলা রিসোর্ট নামে দুটি স্পট গড়ে উঠেছে। প্রথম স্পটটিতে শাপলা কম। তবে দ্বিতীয়টিতে অসংখ্য শাপলা। স্থানীয় লাউয়াল ও আড়িয়াল বিলের ৯০০ বিঘা জমিতে ফুটে এ শাপলা। লাল শাপলার পাশাপাশি রয়েছে সাদা ও বেগুনি শাপলা। তবে এর সংখ্যা অনেক কম। এ বিলেই রয়েছে পদ্ম ফুলের সমারোহ।

পর্যটকদের বিলে ঘুরানোর জন্য রিসোর্টে রয়েছে নৌকা। এসব নৌকায় প্রতিঘন্টায় ভাড়া হিসাবে ৩০০ টাকা গুনতে হয়। শাপলা বিল দেখতে আসতে হলে সকাল ৭ টার মধ্যে আসতে হবে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পদ্মফুল সংকুচিত হবে শুরু করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আড়িয়াল ও লাউয়াল নামের মধ্যেই আছে এক অন্যরকম আদিমতা।

প্রকৃতির যত সৌন্দর্য তার সবটুকুই আদিমতার মধ্যে। আধুনিকতার আড়ালে আজ অনেক বুনো সৌন্দর্য যেন বিলীন। তবে দাউদপুর এখনো ব্যতিক্রম। শাপলা বিলের ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে হলে যতটা সম্ভব ভোরে পৌঁছতে হবে। সড়কের পাশেই খেয়াঘাট। গাড়ি থেকে নেমেই হুড়মুড় করে নৌকায় বসা। দূর থেকেই চোখে ধরা দেয় লাল শাপলা। ছোট নৌকা এগিয়ে যায়। যতই এগোনো যায় ততই যেন চোখে-মুখে মুগ্ধতা।

এক সময় নিজেকে আবিষ্কার করা যায় বিশাল লালের মধ্যে। লাল শাপলার রাজ্যে নৌকা চলা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকা। পুরো বিলটিই মনে হয় লাল মখমলে ঢাকা। বিলের মধ্যে একটা নিঝুম ভাব। মাঝে মধ্যে টুপটাপ মাছের লাফঝাঁপ। লাউয়াল বিলের চারপাশ পুরোটাই নৈসর্গিক।

মাঝি মোত্তাকিন জানালেন, আগে এখানে সাদা ও বেগুনি শাপলা ফুটত। এখন কম দেখা যায়। তিনি ৪ বছর ধরে বিলটিতে এ রকম হাজার হাজার শাপলা ফুটতে দেখছেন। আগে তেমন পর্যটক আসতেন না। এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে।

পদ্ম-শাপলা রিসোর্টের মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, শুক্র ও শনিবার লোকসংখ্যা বেশি হয়। অন্যদিন লোক কম হয়।

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন নাজমুল ইসলাম । কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার পাশে এতো সুন্দও শাপলা বিল না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। এক কথায় অসাধারণ।

রূপগঞ্জের লাল শাপলার বিল পিপাসা মেটাচ্ছে প্রকৃতি প্রেমীদের। রাজধানীর অতি নিকটে হওয়ায় নগর জীবনকে কিছুটা স্বস্তি দিতে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। হেমন্তের প্রকৃতি আরো মোহনীয় করে তুলেছে লাল শাপলার লাবণ্য। এ যেন বাংলা মায়ের আঁচলে জীবন্ত হয়ে ওঠা নকশি কাঁথার মাঠ। দিগন্ত জুড়ে ফুটে আছে লাল শাপলা। সবুজ আর লালে তাই ভোরের জলজ গানে উড়াল দেয় পাখি ও মানুষের মন।

শাপলার লাবণ্য ছুঁতে জলের সাথে মিতালী দর্শনার্থীদের। শুধু লাল শাপলা আর পদ্মই না, এই বিল মুখরিত হয় পাখির কলতানে। শালিক, দোয়েল, ফিঙেরাজাসহ অনেক দেশীয় পাখির কলতান মোহময়তা বাড়িয়েছে অপার সৌন্দর্যের। শাপলার বুকে বসে থাকা রঙিন ফড়িং কিংবা দোয়েলের গান আপনার চিত্তে দোলা দিবেই।

কিভাবে যাবেনঃ রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন সেতু। সেখান থেকে এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক দিয়ে জিন্দা পার্ক হয়ে শাপলা বিল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শাপলা-পদ্মর সমাহারে মোহনীয় হেমন্তের প্রকৃতি

আপডেট টাইম : ০৫:৩৭:৪১ অপরাহ্ন, রবিবার, ৫ নভেম্বর ২০২৩

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পদ্মকে বলা হয় জলজ ফুলের রাণী। আর জাতীয় ফুল শাপলার সৌন্দর্যও কোনো অংশে কম নয়। বর্ষা থেকে হেমন্ত পর্যন্ত শোভা দেয় এই ফুল গুলো।

কিন্তু রাজধানী ঢাকার অদূরে যে এমন চোখ জুড়ানো শাপলা ও পদ্মর বিল রয়েছে তা হয়তো জানেন না অনেকেই।

রূপগঞ্জের দাউদপুরে প্রায় ৯০০ বিঘা জমির উপড় গড়ে উঠেছে শাপলা বিল। তবে শুধু যে লাল শাপলা তা কিন্তু নয়। রয়েছে গোলাপী ও নীল পদ্মও। কুড়িল বিশ্বরোড থেকে মাত্র ৪০ মিনিটের পথ। সকালে গিয়ে দুপুরেই ফেরা যায় সৌন্দর্য উপভোগ করে।

দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন বিলটিতে কেউ ফুলের বিছানা পেতে রেখেছে। প্রতিদিনই এর সৌন্দর্য উপভোগ করতে জেলা-উপজেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে আসেন দর্শনার্থীরা।

দাউদপুরের জিন্দা পার্ক থেকে ৫ মিনিট দূরেই শাপলা বিলের শুরু। মূলত শাপলা বিলকে ঘিরে শাপলা রিসোর্ট নামে দুটি স্পট গড়ে উঠেছে। প্রথম স্পটটিতে শাপলা কম। তবে দ্বিতীয়টিতে অসংখ্য শাপলা। স্থানীয় লাউয়াল ও আড়িয়াল বিলের ৯০০ বিঘা জমিতে ফুটে এ শাপলা। লাল শাপলার পাশাপাশি রয়েছে সাদা ও বেগুনি শাপলা। তবে এর সংখ্যা অনেক কম। এ বিলেই রয়েছে পদ্ম ফুলের সমারোহ।

পর্যটকদের বিলে ঘুরানোর জন্য রিসোর্টে রয়েছে নৌকা। এসব নৌকায় প্রতিঘন্টায় ভাড়া হিসাবে ৩০০ টাকা গুনতে হয়। শাপলা বিল দেখতে আসতে হলে সকাল ৭ টার মধ্যে আসতে হবে। বেলা বাড়ার সাথে সাথে পদ্মফুল সংকুচিত হবে শুরু করে।

সরেজমিনে দেখা যায়, আড়িয়াল ও লাউয়াল নামের মধ্যেই আছে এক অন্যরকম আদিমতা।

প্রকৃতির যত সৌন্দর্য তার সবটুকুই আদিমতার মধ্যে। আধুনিকতার আড়ালে আজ অনেক বুনো সৌন্দর্য যেন বিলীন। তবে দাউদপুর এখনো ব্যতিক্রম। শাপলা বিলের ফুটন্ত লাল শাপলা দেখতে হলে যতটা সম্ভব ভোরে পৌঁছতে হবে। সড়কের পাশেই খেয়াঘাট। গাড়ি থেকে নেমেই হুড়মুড় করে নৌকায় বসা। দূর থেকেই চোখে ধরা দেয় লাল শাপলা। ছোট নৌকা এগিয়ে যায়। যতই এগোনো যায় ততই যেন চোখে-মুখে মুগ্ধতা।

এক সময় নিজেকে আবিষ্কার করা যায় বিশাল লালের মধ্যে। লাল শাপলার রাজ্যে নৌকা চলা অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকা। পুরো বিলটিই মনে হয় লাল মখমলে ঢাকা। বিলের মধ্যে একটা নিঝুম ভাব। মাঝে মধ্যে টুপটাপ মাছের লাফঝাঁপ। লাউয়াল বিলের চারপাশ পুরোটাই নৈসর্গিক।

মাঝি মোত্তাকিন জানালেন, আগে এখানে সাদা ও বেগুনি শাপলা ফুটত। এখন কম দেখা যায়। তিনি ৪ বছর ধরে বিলটিতে এ রকম হাজার হাজার শাপলা ফুটতে দেখছেন। আগে তেমন পর্যটক আসতেন না। এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থীর আগমন ঘটে। এতে স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থিক সচ্ছলতা এসেছে।

পদ্ম-শাপলা রিসোর্টের মালিক নুরুল ইসলাম বলেন, শুক্র ও শনিবার লোকসংখ্যা বেশি হয়। অন্যদিন লোক কম হয়।

ঢাকা থেকে পরিবার নিয়ে এসেছেন নাজমুল ইসলাম । কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বলেন, রাজধানী ঢাকার পাশে এতো সুন্দও শাপলা বিল না দেখলে বিশ্বাসই হবে না। এক কথায় অসাধারণ।

রূপগঞ্জের লাল শাপলার বিল পিপাসা মেটাচ্ছে প্রকৃতি প্রেমীদের। রাজধানীর অতি নিকটে হওয়ায় নগর জীবনকে কিছুটা স্বস্তি দিতে হাঁপিয়ে ওঠা মানুষ প্রতিদিনই ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। হেমন্তের প্রকৃতি আরো মোহনীয় করে তুলেছে লাল শাপলার লাবণ্য। এ যেন বাংলা মায়ের আঁচলে জীবন্ত হয়ে ওঠা নকশি কাঁথার মাঠ। দিগন্ত জুড়ে ফুটে আছে লাল শাপলা। সবুজ আর লালে তাই ভোরের জলজ গানে উড়াল দেয় পাখি ও মানুষের মন।

শাপলার লাবণ্য ছুঁতে জলের সাথে মিতালী দর্শনার্থীদের। শুধু লাল শাপলা আর পদ্মই না, এই বিল মুখরিত হয় পাখির কলতানে। শালিক, দোয়েল, ফিঙেরাজাসহ অনেক দেশীয় পাখির কলতান মোহময়তা বাড়িয়েছে অপার সৌন্দর্যের। শাপলার বুকে বসে থাকা রঙিন ফড়িং কিংবা দোয়েলের গান আপনার চিত্তে দোলা দিবেই।

কিভাবে যাবেনঃ রাজধানীর কুড়িল বিশ্বরোড থেকে কাঞ্চন সেতু। সেখান থেকে এশিয়ান হাইওয়ে সড়ক দিয়ে জিন্দা পার্ক হয়ে শাপলা বিল।