ঢাকা ০৯:১৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাজার থেকে অদৃশ্য দেশিয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৩৭:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জুন ২০১৬
  • ৫৮৬ বার

দিনাজপুরসহ পুরো উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশিয় মাছের বিলুপ্তি ঘটছে। গত ২৫ বছরের মধ্যে বিলুপ্তি ঘটেছে ৩০ প্রজাতির মাছ। আরও ১৫ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। দেশিয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিলুপ্তির সাথে মাছের সংকট ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থান করে নিচ্ছে বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগেও চাষ করা হচ্ছে বিদেশি প্রজাতির মাছ। জলবায়ু পরিবর্তন, ছোট বড় নদ-নদী, জলাশয়, বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে দেশিয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। হারিয়ে গেছে মাছের অভয়ারণ্য ও স্বাভাবিক প্রজণন ক্ষেত্র।

শহর বন্দর গ্রামে পুকুর জলাশয় ভরাট করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ ও চাষাবাদের জমিতে পরিণত করার ফলে দেশিয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। মাছের জন্য খ্যাত চলনবিলের বিশাল এলাকা ২৫ বছর আগেই ভরাট হয়ে গেছে। বিশাল বিস্তৃত চলনবিল আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে।

অপরিকল্পিত উপায়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, রাস্তা নির্মাণের ফলে অভ্যন্তরীণ নদ-নদী, খাল বিলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে এক কালের প্রবল স্রোতস্বিনী করতোয়া, ইছামতি, বড়াল, হুরাসাগর, গুমানী, মহানন্দা, বুড়িতিস্তাসহ অভ্যন্তরীণ শতাধিক নদী। এসব নদ নদী, বিল, জলাশয় ভরা ছিল দেড় শতাধিক দেয়ি প্রজাতির ছোট-বড় মাছ। ফলে ক্রমশই বিলুপ্তি ঘটছে দেশিয় প্রজাতির মাছ।

বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে নদ নদীর স্রোত ধারায় জাল ফেলে অবাধে রেণু পোনা আহরণ, বেআইনিভাবে পোনা আহরণ ও ছোট মাছ বাজারজাত করা ও নিধন করায় দেশিয় প্রজাতির মাছ ধংস হচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও প্রাণী বিদ্যা বিভাগের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দেশী ৩০ প্রজাতির মাছের মধ্যে মৌকা, চেলা, মৃগেল, বাউশ, কড়াপুটি, সরপুটি, টেংরা, গোলসা, চাপিলা, কর্তি, বাইজা, চিকাশি, নওলা, কানিয়া, গুচি, ভ্যাদা, নন্দই, ভেটকি, পাবদা, গজার, শোল, ফলি, খোসল্লা সহ চলনবিলের বিখ্যাত, কৈ বিলুপ্তি ঘটেছে।

ভাগ্যক্রমে বাজারে বিলুপ্ত মাছে মধ্যে কোন কোন মাছের দেখা মিললেও দাম প্রায় আকাশচুম্বি। ১কেজি পবদা মাছ ৮-৯ শ’ টাকা, ১ কেজি চেহেলী মাঠ ৫শ’ টাকা আর ১ কেজি মৌকা মাছ সর্বনিম্ন ৬শ’ টাকা, সবার পরিচিত পুঁটি মাছ ৪-৫শ’ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

বিলুপ্ত এসব মাছের স্থান দখল করে নিয়েছে, থাইপুটি, সিলভারকার্প, জাপানি রুই, ব্রিগেড, তেলাপিয়া জাতীয় বিদেশি প্রজাতির মাছ। পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদ-নদীর বিখ্যাত পাঙ্গাস মাছেরও বিলুপ্তি ঘটছে বলে মৎস্য বিভাগের অভিমত।

নদীর পাঙ্গাসের পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে পুকুরে চাষ করা পাঙ্গাস। এখন পুকুরেও চাষ শুরু হয়েছে জাপানি ও থাই কৈ। প্রাণী বিদ্যা বিশেজ্ঞদের অভিমত, দেশিয় মাছের অভয়ারণ্য ও স্বাভাবিক প্রজনক্ষেত্র তৈরি ও অবাধে পোনা আহরণ বন্ধ করা না হলে আগামী দশ বছরের মধ্যে দেশিয় প্রজাতির সবধরণের মাছের বিলুপ্তি ঘটবে। দেশিয় প্রজাতির মাছের বিলুপ্তি ঘটলে মাছের সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে। বিদেশি মাছ চাষ ও পোনা উৎপাদনের সাথে সাথে দেশিয় প্রজাতির মাছ চাষ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে চলনবিল ও আভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে দেশিয় প্রজাতির মাছ চাষের উপযোগী করার পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বাজার থেকে অদৃশ্য দেশিয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ

আপডেট টাইম : ১২:৩৭:৩২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জুন ২০১৬

দিনাজপুরসহ পুরো উত্তরাঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির দেশিয় মাছের বিলুপ্তি ঘটছে। গত ২৫ বছরের মধ্যে বিলুপ্তি ঘটেছে ৩০ প্রজাতির মাছ। আরও ১৫ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। দেশিয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিলুপ্তির সাথে মাছের সংকট ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। স্থান করে নিচ্ছে বিদেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।

সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগেও চাষ করা হচ্ছে বিদেশি প্রজাতির মাছ। জলবায়ু পরিবর্তন, ছোট বড় নদ-নদী, জলাশয়, বিল ভরাট হয়ে যাওয়ায় হারিয়ে গেছে দেশিয় প্রজাতির সুস্বাদু মাছ। হারিয়ে গেছে মাছের অভয়ারণ্য ও স্বাভাবিক প্রজণন ক্ষেত্র।

শহর বন্দর গ্রামে পুকুর জলাশয় ভরাট করে বাড়ি-ঘর নির্মাণ ও চাষাবাদের জমিতে পরিণত করার ফলে দেশিয় প্রজাতির মাছ হারিয়ে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে। মাছের জন্য খ্যাত চলনবিলের বিশাল এলাকা ২৫ বছর আগেই ভরাট হয়ে গেছে। বিশাল বিস্তৃত চলনবিল আবাদি জমিতে পরিণত হয়েছে।

অপরিকল্পিত উপায়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ, রাস্তা নির্মাণের ফলে অভ্যন্তরীণ নদ-নদী, খাল বিলে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। হারিয়ে গেছে এক কালের প্রবল স্রোতস্বিনী করতোয়া, ইছামতি, বড়াল, হুরাসাগর, গুমানী, মহানন্দা, বুড়িতিস্তাসহ অভ্যন্তরীণ শতাধিক নদী। এসব নদ নদী, বিল, জলাশয় ভরা ছিল দেড় শতাধিক দেয়ি প্রজাতির ছোট-বড় মাছ। ফলে ক্রমশই বিলুপ্তি ঘটছে দেশিয় প্রজাতির মাছ।

বর্ষাকালে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে নদ নদীর স্রোত ধারায় জাল ফেলে অবাধে রেণু পোনা আহরণ, বেআইনিভাবে পোনা আহরণ ও ছোট মাছ বাজারজাত করা ও নিধন করায় দেশিয় প্রজাতির মাছ ধংস হচ্ছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ও প্রাণী বিদ্যা বিভাগের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, দেশী ৩০ প্রজাতির মাছের মধ্যে মৌকা, চেলা, মৃগেল, বাউশ, কড়াপুটি, সরপুটি, টেংরা, গোলসা, চাপিলা, কর্তি, বাইজা, চিকাশি, নওলা, কানিয়া, গুচি, ভ্যাদা, নন্দই, ভেটকি, পাবদা, গজার, শোল, ফলি, খোসল্লা সহ চলনবিলের বিখ্যাত, কৈ বিলুপ্তি ঘটেছে।

ভাগ্যক্রমে বাজারে বিলুপ্ত মাছে মধ্যে কোন কোন মাছের দেখা মিললেও দাম প্রায় আকাশচুম্বি। ১কেজি পবদা মাছ ৮-৯ শ’ টাকা, ১ কেজি চেহেলী মাঠ ৫শ’ টাকা আর ১ কেজি মৌকা মাছ সর্বনিম্ন ৬শ’ টাকা, সবার পরিচিত পুঁটি মাছ ৪-৫শ’ টাকা কেজি দরে বাজারে বিক্রি হচ্ছে।

বিলুপ্ত এসব মাছের স্থান দখল করে নিয়েছে, থাইপুটি, সিলভারকার্প, জাপানি রুই, ব্রিগেড, তেলাপিয়া জাতীয় বিদেশি প্রজাতির মাছ। পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা নদ-নদীর বিখ্যাত পাঙ্গাস মাছেরও বিলুপ্তি ঘটছে বলে মৎস্য বিভাগের অভিমত।

নদীর পাঙ্গাসের পরিবর্তে স্থান করে নিয়েছে পুকুরে চাষ করা পাঙ্গাস। এখন পুকুরেও চাষ শুরু হয়েছে জাপানি ও থাই কৈ। প্রাণী বিদ্যা বিশেজ্ঞদের অভিমত, দেশিয় মাছের অভয়ারণ্য ও স্বাভাবিক প্রজনক্ষেত্র তৈরি ও অবাধে পোনা আহরণ বন্ধ করা না হলে আগামী দশ বছরের মধ্যে দেশিয় প্রজাতির সবধরণের মাছের বিলুপ্তি ঘটবে। দেশিয় প্রজাতির মাছের বিলুপ্তি ঘটলে মাছের সংকট তীব্র আকার ধারণ করবে। বিদেশি মাছ চাষ ও পোনা উৎপাদনের সাথে সাথে দেশিয় প্রজাতির মাছ চাষ বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে চলনবিল ও আভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে দেশিয় প্রজাতির মাছ চাষের উপযোগী করার পরামর্শ দিয়েছে বিশেষজ্ঞরা।