সম্পদ লুটপাট করতেই আদিবাসী উচ্ছেদ : বারকাত

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত বলেছেন, বিশ্বের যেসব স্থানে আদিবাসীরা বসবাস করেন, সে স্থানগুলো প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর। আর এই সম্পদ লুটপাটের জন্যই সব স্থানে আদিবাসী উচ্ছেদ চলছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম দেখি না। তবে এই অবস্থা পরিবর্তনে বিপ্লব প্রয়োজন।

সাঁওতাল বিদ্রোহের ১৬১ বছর উপলক্ষে বৃহস্পতিবার জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম ও কাপেং ফাউন্ডেশনের যৌথ উদ্যোগে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

ড. বারকাত বলেন, এটি শ্রেণিগত সমস্যা। তাই আদিবাসীদের অধিকার আদায়ে শ্রেণি সংগ্রামের বিকল্প নেই। দাতা গোষ্ঠীদের টাকায় আলোচনা সভা, সেমিনার করতে থাকলে বিপ্লবও কোন দিন হবে না।

সভায় পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, আদিবাসী ছাড়া এ উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন কখনই সম্ভব হতো না। সিধু-কানুর নেতৃত্বে সাঁওতালদের ন্যায়সঙ্গত বিদ্রোহ দেখিয়ে গেছে কীভাবে অধিকার আদায় করতে হয়।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমাদের মধ্যেই কেউ কেউ আন্দোলন সংগ্রামকে বাধাগ্রস্ত করছে। তাই জমি রক্ষার আন্দোলনে আদিবাসী বাঙালি নির্বিশেষে সকলকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

সাদেকা হালিম বলেন, আদিবাসীদের কাছ থেকে ভূমি কেড়ে নেয়াটা বরাবরই রাজনীতির অংশ। বর্তমান আধুনিক রাষ্ট্র কাঠামোতেও প্রতিনিয়ত আদিবাসীদের জমি নানা কায়দায় লুট হচ্ছে। তাই আদিবাসীদের ভূমি রক্ষায় স্বাধীন ভূমি কমিশন গঠনের দাবি জানান তিনি।

সংসদ সদস্য টিপু সুলতান বলেন, বর্তমান সংসদ সদস্যরা ভোগবাদী। যার কারণে সংসদ সদস্যদের জন্য প্লট-ফ্ল্যাট বরাদ্দ করতে হয়। অথচ গরীব কৃষক শ্রমিক আদিবাসী মানুষের একটুকরো জমির জন্য লড়াই সংগ্রাম করতে হচ্ছে।

সঞ্জীব্র দ্রং বলেন, আদিবাসীদের উচ্ছেদ করা হচ্ছে আর প্রতিবাদ করলে জীবন দিতে হচ্ছে। কিন্তু কবে রাষ্ট্র আদিবাসীদের জন্য মানবিক হবে? মানবিক রাষ্ট্রই কেবল পারে সকলের জন্য সমান অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে।

সভাপতির বক্তব্যে রবীন্দ্রনাথ সরেন বলেন, গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ-বাগদাফার্মের ১৮৪২.৩০ একর জমি ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করছি। এরই মধ্যে শুনছি সরকার সেখানে চিনিকল টিকিয়ে রাখতে না পেরে অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরির পাঁয়তারা করছে। তবে সরকারকে হুঁশিয়ারি দিয়ে জানাতে চাই যদি সেখানে আদিবাসীদের জমি ফিরিয়ে দেয়া না হয়, তাহলে আবারো বিদ্রোহ হবে।

সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে পাভেল পার্থ ও মানিক সরেন বলেন, ১৮৫৫ সালে আদিবাসীদের যে আর্থ-সামাজিক অবস্থা তা ২০১৬ সালেও যেন বিদ্যমান। ব্রিটিশ শাসক, জমিদার, মহাজনদের মতো বর্তমান রাষ্ট্র ব্যবস্থা, রাষ্ট্রীয় বাহিনী, প্রশাসন, বিচার কাঠামো আদিবাসীদের জমি-জঙ্গল-জলা কেড়ে নিয়ে অমানবিক ও অন্যায্য প্রান্তিকতায় ঠেলে দিচ্ছে। আদিবাসী জনগণের উপর জুলুম আর জবরদস্তি জারি রেখেছে।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সভাপতি ও কাপেং ফাউন্ডেশনের চেয়ারপারসন রবীন্দ্রনাথ সরেনের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা। মূল প্রবন্ধ যৌথভাবে উপস্থাপন করেন গবেষক ও লেখক পাভেল পার্থ এবং জাতীয় আদিবাসী পরিষদের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মানিক সরেন।

আলোচনা সভার মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, তারিক মিঠুল, হরেন্দ্রনাথ সিং, বিচিত্রা তির্কি প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর