ঈদুল ফিতরের ছুটিতে যেতে পারেন কক্সবাজার

এবারের ঈদুল ফিতরের ছুটিতে বেড়াতে যেতে পারেন কক্সবাজারে। ওখানে রয়েছে দীর্ঘ সমুদ্রসৈকত। এই সৈকত একবার-দুবার ঘুরে দেখার পরও মনের আশা পূরণ হবে না। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত মানেই এক দুর্নিবার রহস্য-রোমান্সের হাতছানি। মন শুধু হয় উড়ু উড়ু। কখনো সমুদ্রসৈকতে, আবার কখনো বা কস্তুরিঘাটে। বিশ্বসেরা এই সোনালি সৈকতে স্বপ্নের মতো কাটবে কয়েক দিন। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ছাড়াও তার আশপাশের রামু, মহেশখালী, সোনাদিয়া, ইনানী, হিমছড়ি, টেকনাফ আর সেন্টমার্টিন দেখার মতো সুন্দর জায়গা।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কক্সবাজার হয়ে ওঠে ব্রিটিশ তথা মিত্রবাহিনীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক সামরিক ঘাঁটি। আজাদ হিন্দ ফৌজের সঙ্গে লড়াই করার জন্য ব্রিটিশ বাহিনী বার্মা সীমান্তের এই ঘাঁটিটি ব্যবহার করে।

বিভিন্ন তথ্য : বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণ-পূর্বে বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে কক্সবাজার জেলা। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৫৪ কিলোমিটার। কক্সবাজারের আবহাওয়া খুব চমৎকার। ঐতিহাসিকদের মতে সপ্তদশ শতকে কক্সজারের নাম ছিল ‘পালংকি’। সে-সময়ে বর্মীরা আরাকান দখল করে নিলে বর্মী সেনারা আরাকানিদের ওপর অমানুসিক অত্যাচার, নিপীড়ন ও হত্যাযজ্ঞ চালায়। এতে অতিষ্ঠ হয়ে আরাকানি মগরা দলে দলে পালিয়ে এসে পার্শ্ববর্তী পালংকি অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। আগত এসব উদ্বাস্তুর পুনর্বাসনের জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স নামে এক ইংরেজ সেনানায়ককে পালংকি অঞ্চলের সুপারিন্টেনডেন্ট নিয়োগ করে। ক্যাপ্টেন কক্স বঙ্গোপসাগরের অর্থাৎ বর্তমান কক্সবাজার শহরে একটি বাজার প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে হিরাম কক্সের নামানুসারে এ জেলাটির নাম হয় ‘কক্সবাজার’।

কক্সবাজার জেলার উত্তরে চট্টগ্রাম জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বান্দরবান জেলা এবং পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর অবস্থিত। নাফ নদী বয়ে গেছে কক্সবাজার জেলার অভ্যন্তর থেকে। কক্সবাজার মোট ৮টি উপজেলা নিয়ে গঠিত। এগুলো হলো- কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, চকোরিয়া, কুতুবদিয়া, রামু, পেকুয়া, উখিয়া আর টেকনাফ। এই জেলার আয়তন ২,৪৯১.৮৫ বর্গকিলোমিটার।

উল্লেখযোগ্য স্পট : কক্সবাজারের কাছেপিঠে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে রামু এক আকর্ষণীয় জায়গা। রামুতে পাহাড়ের উপর সম্রাট অশোক নির্মিত ২ হাজার বছরের প্রাচীন বুদ্ধমূর্তি দেখতে পাবেন। এছাড়া দেখবেন থোয়াইথা চৌধুরীর বৌদ্ধবিহার, লামাপাড়ার বৌদ্ধবিহার, রামকুঠ তীর্থধামের মন্দির। এছাড়াও এ জেলায় রয়েছে শাহ উমরের মাজার (চকোরিয়া), সাতগম্বুজ মসজিদ (মানিকপুর), রামবোট হিন্দু মন্দির, রামপোট বৌদ্ধ কেয়াং, লামারপাড়া বৌদ্ধ কেয়াং (উখিয়া), তাতাবাড়ি বৌদ্ধ কেয়াং, বালাবাজার সুরঙ্গ।

সেন্টমার্টিন দ্বীপ

সেন্টমার্টিনে দেখবেন প্রবাল পাথরের ছড়াছড়ি। একদা আরবীয় বণিকরা ব্যবসায়-বাণিজ্য করতে এসে এখানে কিছু সময়ের জন্য বিশ্রাম নিতেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির অধীনে বাংলা, আরাকান ও বার্মা চলে আসার পর জনৈক ইংরেজ মি. মার্টিন-এর নামানুসারে এ দ্বীপের নামকরণ করা হয় সেন্টমার্টিন। সেন্টমার্টিন দ্বীপের আয়তন প্রায় ৮ বর্গমাইল। টেকনাফ সদর থেকে ৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে উত্তাল সাগরের বুকে সেন্টমার্টিন দ্বীপ। এই দ্বীপে বেড়াতে দার“ণ আনন্দ।

ধীরাজ-মাথিনের টেকনাফ

এই বাংলার সর্বদক্ষিণে নয়নজুড়ানো জায়গা ‘টেকনাফ’। বাংলাদেশ-বার্মা সীমান্তে অব¯ি’ত টেকনাফ অপরূপ সৌন্দর্য এবং সম্পদে ভরা। টেকনাফ নিয়ে শুনেছেন অনেক গল্প কিন্তু কখনও দেখেননি হয়তো। যদি টেকনাফ যান তাহলে ফিরে আসতে মন চায় না। নায়ক ধীরাজ ভট্টাচার্য্য আর মাথিনের প্রেমকাহিনীর জন্যও টেকনাফের খ্যাতি আছে। টেকনাফের থানা এলাকায় একটি কূপ আছে। এই কূপের নাম ‘মাথিনের কূপ’।

ঢাকা থেকে টেকনাফের দূরত্ব ৪৯০ কিলোমিটার। আর কক্সবাজার থেকে দূরত্ব ৮৫ কিলোমিটার। বাংলাদেশের শেষ ভূমিখণ্ড। নাফ নদীর তীরে, বঙ্গোপসাগরের কিনারায় টেকনাফ। কক্সবাজারের বিখ্যাত সমুদ্রসৈকত বিমানবন্দর থেকে শুর“ হয়ে শেষ হয়েছে টেকনাফে এসে।

টেকনাফ থানা এলাকায় দেখবেন মাথিনের কূপ। জানা যায়, বিশের দশকের শেষদিকের কথা। টেকনাফ থানায় পুলিশ অফিসার হয়ে আসেন ধীরাজ ভট্টাচার্য্য। তিনি দেখতে খুবই সুন্দর। ১৪ বছর বয়সী মাথিন থানার সামনের কূপে জল নিতে আসে। প্রথমে পরিচয় থেকে দুজনার মধ্যে মন দেওয়া-নেওয়া চলে। দুজনার মধ্যে হয় প্রেম। সমাজ বাধা দেয় ‘ভিন্নধর্মাবলম্বী’ এই দুই প্রেমিক-প্রেমিকার মিলনে। হঠাৎ করে প্রেমিক বাড়ি থেকে দুঃসংবাদ পেয়ে টেকনাফ থেকে চলে যায় কলকাতায়। বহুদিন ফিরতে পারে না টেকনাফে। এদিকে সবাই বলতে থাকে, ধীরাজ তাকে ঠকিয়েছে। ক্ষোভে-দুঃখে মাথিন এই কূপে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন। ধীরাজ পরে টেকনাফে এসে প্রেমিকাকে ফিরে পায় না। মাথিনের প্রেমের নিদর্শন হয়ে আছে ‘মাথিনের কূপ’। এটি দেখতে গিয়ে আপনার দু-চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে পারে।

টেকনাফের নামকরণ নিয়ে আছে বিভিন্ন অভিমত। অনেকের মতে, নাফ নদীর টেক-এ বাঁক অবস্থিত বলে টেকনাফ নামকরণ করা হয়েছে। টেকনাফের সমুদ্রতীরে প্রচুর সোনালি বালি। বীর কমলার দিঘি দেখবেন এই টেকনাফে।

সোনাদিয়া দ্বীপ

কক্সবাজারের ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে ছোট্ট দ্বীপ সোনাদিয়া।

সোনাদিয়া দ্বীপ সম্পর্কে জানবেন, একটি ডুবন্ত জাহাজে পলি আর রাশি রাশি বালি জমাট বেঁধে এ দ্বীপের সৃষ্টি হয়। পর্তুগিজ জলদস্যুরা সোনাদানা আর অন্য সব পণ্য লুট করার জন্য একটি জাহাজ আক্রমণ করে। জাহাজিরা মরণপণ লড়াই করেন। কিছুতেই কিছু হলো না। একপর্যায়ে জাহাজটি ডুবে যায়। পরে জাহাজটিতে বালি আর পলি জমে জমে গড়ে ওঠে সোনাদিয়া দ্বীপ। একথা অনেকের কাছে কিন্তু রূপকথার মতো। অনেকে বলেন, মহেশখালী প্রণালি এবং বাঁকখালী নদীর স্রোতোধারার সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের ঢেউয়ের আঘাতে বালিরাশি দক্ষিণ-পশ্চিম কোণায় এসে জমাট বাঁধে। এভাবে বালি জমতে জমতে একদিন সোনাদিয়া দ্বীপে পরিণত হয়। সোনার মোহরের জন্য এই দ্বীপের নাম সোনাদিয়া হয়েছে বলে অনেকে মনে করেন। এই দ্বীপের আয়তন ৪.৬৩ বর্গমাইল।

মহেশখালী

কক্সবাজার থেকে উত্তর-পশ্চিমে মহেশখালী দ্বীপ। এখানের পাহাড়-অরণ্য আর নদী তট দিয়েছে নৈসর্গিক শোভা। সমুদ্রতীরবর্তী স্বানিবাস হিসেবে মহেশখালীর খ্যাতি আছে। এখানকার বেশিরভাগ লোক মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। হিন্দু ও বৌদ্ধদের বেশকিছু স্থাপত্যশিল্প আছে এখানে।

মহেশখালীর প্রধান আকর্ষণ আদিনাথের মন্দির। এটি বঙ্গোপসাগরের মোহনার কাছে মৈনাক পাহাড়ের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে কয়েকশো বছর আগে। সমতল ভূমি হতে ৬৯টি সোপান অতিক্রম করে আদিনাথের মন্দিরে যাওয়া যায়। এটিকে শিবমন্দিরও বলা হয়। এখানে আদিনাথ মহাদেব ও অষ্টভুজা দুর্গামূর্তি প্রতিষ্ঠিত। প্রতিবছর শিবরাত্রির আগে-পরে আদিনাথ মন্দিরকে কেন্দ্র করে মেলা বসে। এই মেলা ৭ থেকে ৮ দিন ধরে চলে। এই মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা হলেন মহেশখালীর জমিদার প্রভাবতী ঠাকুরানী।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর