ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহাউৎসব চলছে

সিলেট বিভাগের সর্বত্র বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের মহাউৎসব চলছে। গত বছরের তুলনায় এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফসলের বাম্পার ফলন হয়েছে। হাওরাঞ্চলে সর্বত্র এখন কৃষক-কৃষাণীরা কষ্টের সোনালী ফসল ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ইতোমধ্যে গড়ে ৭৫ ভাগ জমির ধান কাটা হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। আগামী ৩ থেকে ৪ দিনের মধ্যে হাওরের শতভাগ ধান কাটা মাড়াই হয়ে যাবে। এবার সিলেট অঞ্চলের হাওরসমুহে প্রায় দুই হাজার হারভেস্টার মেশিন ধান কাটা ও মাড়াইয়ের কাজ করছে। চলতি মৌসুমে সিলেট বিভাগে ৪ লাখ ৯০ হাজার ৫৭৭ হেক্টর জমিতে বুরো ধান চাষাবাদ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন খান বলেন, সার্বিক দিক বিবেচনায় এখন পর্যন্ত হাওরের জমির ধান কাটা ও মাড়াই ৭৫ ভাগ হয়ে গেছে। ৩/৪ দিনের মধ্যে হাওরের ধান শতভাগ কাটা হয়ে যাবে। কিন্তু উঁচু জমির ধান রয়ে যাবে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে উঁচু জমির ধান কাটা শেষ হবে। হাওরের ধান কাটায় শ্রমিক সংকট মোকাবিলায় সরকার ভর্তুকি দিয়ে হারভেস্টার বিতরণ করেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ জেলার উপণ্ডপরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান, সুনামগঞ্জ জেলায় এ পর্যন্ত প্রায় ৯০ ভাগ ধান কাটা হয়ে গেছে। কয়েক দিনের মধ্যে শতভাগ কাটা হয়ে যাবে। তিনি আরো জানান, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে চাষাবাদ হয়েছে।
হাওরাঞ্চল ঘুরে দেখা যায়, কৃষকের ঘামঝরা কষ্টের সোনালী ফসল বোরো ধান কাটা মাড়াই চলছে। ধান কাটা মাড়াইয়েও বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। শ্রমিক দিয়ে ধান কাঁটার সেই পুরনো প্রথা ভেঙে ধান কাটায় যোগ হয়েছে আধুনিক কৃষি যন্ত্র হারভেস্টার বা ধান কাঁটার মেশিন। ছোট বড় সকল হাওরেই মেশিন দিয়ে ধান কাটা মাড়াই চলছে। অবশ্য, এখনো শ্রমিক দিয়ে ধান কাঁটার প্রথা আছে। তবে, হাওরে আগের মতো এখন আর ধান কাঁটার শ্রমিক দেখা যায়না। এবার ব্রি-২৮ জাতের ধানে চিটা দেখা দেয়ায় ফলন কম হয়েছে। এর বাইরে মোটা জাতের হাইব্রিড ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। গত বছরের চেয়ে এবার ফলন ভালো হয়েছে ব্রি-২৯ জাতের ধানেরও। কিছুকিছু এলাকায় শিলা বৃষ্টির ফলে সামান্য ক্ষতি হলেও সার্বিক দিক বিবেচনায় এবার বাম্পার ফলন হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে। কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত চলছে সোনালী ফসল ঘরে তোলার কাজ। এসব কাজে নারী-পুরুষসহ সব বয়সী লোকজন এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষক ধান কাটা মাড়াই করে ধান শুকানোর জন্যে নির্দিষ্ট খলা বা খোলা জায়গায় নিয়ে আসেন।
সুনামগঞ্জের বৃহৎ নলুয়ার হাওরের কৃষক সোহেল আহমদ বলেন, এবার আবহাওয়া অনুকূলে রয়েছে। কিন্তু ব্রি-২৮ জাতের ধান রোপণ করে তিনি আশানুরূপ ফসল পাননি। তবে, অন্য সকল জাতের ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
ঐ জেলার আরেক বৃহৎ হাওরের নাম টাংনি। এ হাওরের কৃষক আবিদুর রহমান চৌধুরী বলেন, এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু শিলা বৃষ্টি কিছুকিছু জায়গায় ক্ষতিও করেছে। তবুও আমরা আনন্দিত। গত বছরের চেয়ে এবছর বেশি ফসল গোরায় উঠবে।
সিলেট বিভাগের মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলায় সর্বোচ্চ আবাদ হয়েছে। চলতি বোরো মৌসুমে সিলেট জেলায় ৮৫ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা হয়েছে। মৌলভীবাজার জেলায় আবাদ করা হয়েছে ৬০ হাজার ৫৭ হেক্টর। আর হবিগঞ্জ জেলায় ১ লাখ ২২ হাজার ৫৭৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়। সুনামগঞ্জ জেলায় ২ লাখ ২২ হাজার ৭৯৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো আবাদ করা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর