নাটোরে সাত উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পদে দায়িত্ব পালন করছেন সাতজন নারী। উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীর দায়িত্ব পালন স্থানীয়দের প্রশংসা অর্জন করেছে। নির্বাহী কর্মকর্তা পদে তারা প্রত্যেকেই যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে চলছেন। বিশেষ করে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি সব মহলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়েছে।
সাত নির্বাহী কর্মকর্তা হলেন নাটোর সদর উপজেলায় সারমিনা সাত্তার, নলডাঙ্গায় রোজিনা আক্তার, বাগাতিপাড়ায় নীলুফা সরকার, লালপুরে শামীমা সুলতানা, বড়াইগ্রামে মারিয়াম খাতুন, গুরুদাসপুরে শ্রাবণী রায় এবং সিংড়ায় মাহমুদা খাতুন।
দেশের শাসনব্যবস্থায় সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে প্রশাসন ক্যাডারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৮২ সালের আগ পর্যন্ত এই ক্যাডারে নারীর সুযোগ ছিল না। সুযোগ পেয়ে মেধাসহ সার্বিক যোগ্যতা দিয়ে সেই চিত্র আমূল বদলে দিয়েছেন নারী কর্মকর্তারা। তারই উদাহরণ নাটোর জেলার সবগুলো উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্ত নারী নির্বাহী কর্মকর্তারা।
উল্লেখ্য যে, নাটোরে সিভিল সার্জন, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, নিম্ন আদালতের বিচারক এমনকি পৌরসভার মেয়র হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা।
গত ডিসেম্বরে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে যোগদান করেন মাহমুদা শারমিন। তিনি জেলার প্রথম নারী অতিরিক্ত পুলিশ সুপার। তিনি বর্তমানে সদর সার্কেলের দায়িত্বে রয়েছেন।
জেলার সিভিল সার্জন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন রোজি আরা বেগম। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করছেন বিসিএস ৩১ ব্যাচের রওনক জাহান।
জেলার নিম্ন আদালতের বিচারকার্যেও সরব ভূমিকায় রয়েছেন নারীরা। আদালতের ১৭ জন বিচারকের মধ্যে ৭ জন নারী বিচারক। এদের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ, ম্যাজিস্ট্রেট পদমর্যাদার বিচারক, লিগ্যাল এইড অফিসার, সহকারী জজ, সিনিয়র সহকারী জজ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। এই চিত্র স্থানীয় নারীদেরও অনুপ্রাণিত করছে।
বর্তমানে দেশের ছয়টি পৌরসভার মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করছেন নারীরা। এদের মধ্যে নাটোরের দুই পৌরসভার মেয়র নারী। তারা হলেন নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি এবং লালপুরের গোপালপুর পৌরসভার মেয়র রোখসানা মোর্ত্তোজা লিলি। অন্যান্য ক্ষেত্রগুলোতে চাপ সহনীয় পর্যায়ে থাকলেও জনসেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত এই পদ অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের বলে মনে করেন এই দুই মেয়র।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সারমিনা সাত্তার বলেন, ‘ইউএনও হিসেবে কাজটা সবার আগে আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব। এটা আমাকে পালন করতেই হবে।
জনসেবার জন্যই যে জনপ্রশাসন, এই সত্য প্রতিষ্ঠিত কারতে চাই। আমি নারী বা পুরুষ, এটি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমার কাজ আমাকে গন্তব্যে নিয়ে যাবে। পুরুষরাই চ্যালেঞ্জ নিতে পারে, নারীরা পারে না- এমন প্রথা ভাঙ্গার সময় এখন।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদা শারমিন বলেন, ‘যে কোনো চাকরির চেয়ে পুলিশে চাকরি অনেক বেশি চ্যালেঞ্জিং। আর তা যদি নারীর ক্ষেত্রে হয় তবে মাত্রাটা আরো বেশি। তবে এটাকে আপনি কীভাবে দেখছেন সেটা মুখ্য বিষয়। এখানে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। নারীরা যদি নিজেকে প্রথাগত চিন্তা-মননের জায়গা থেকে বের না করে তবে উত্তরণটা কঠিন।’
জেলা সিভিল সার্জন রোজি আরা বেগম বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে পুরুষদের তুলনায় নারীর অংশগ্রহণ এখনো তুলনামূলক কম। তবে নেতৃত্বগুণ থাকলে নারী সব সহকর্মীদের সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে। অনুকূল কর্মপরিবেশ পেলে নারীর অগ্রযাত্রা আরো অপ্রতিরোধ্য হবে।’
নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরী জলি বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিত্বে নারী তখনই সফল হবে যখন জনগণ তার পাশে থাকে। অবশ্যই রাজনৈতিক চাপ মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু নাগরিকদের সহযোগিতা পেলে কাজ করা সহজ হয়। আমি বরাবরই পৌরসভা পরিচালনায় নাগরিকদের অব্যাহত সহযোগিতা পেয়েছি। সাহস নিয়ে এগিয়ে এলে নারীদের পক্ষে সব ক্ষেত্রেই দারুন ভূমিকা রাখা সম্ভব।’
জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রাজ্জাক প্রশাসনে নারীর অংশগ্রহণ আরো বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন। ‘প্রশাসনে পুরুষদের চেয়ে নারী কর্মকর্তাদের মধ্যে দুর্নীতির প্রবণতা কম। নারীরা কর্মস্থলে পুরুষের চেয়ে বেশি নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলার স্বাক্ষর রেখে চলেছে যা ইতিবাচক। তাদের অংশগ্রহণ বাড়লে জাতি উপকৃত হবে।’ বলেন আব্দুর রাজ্জাক।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে প্রধান পৃষ্ঠপোষক বলে মনে করেন নাটোরের জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একজন নারী কর্মকর্তা একজন পুরুষ কর্মকর্তার সঙ্গে সমানতালে বা কখনো আরো বেশি দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন। নাটোরের প্রশাসনে থাকা নারী কর্মকর্তাগণ তাদের কাজে সর্বোচ্চ মেধা ও দক্ষতার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন। আমরা এই চর্চাকে উৎসাহিত করছি।