হজের খরচ ৪ লাখের মধ্যে পুনর্নির্ধারণ করতে আইনি নোটিশ

অযৌক্তিক, অতিরিক্ত খরচ কমিয়ে সরকারঘোষিত হজ প্যাকেজ পুনর্নির্ধারণ করতে বাংলাদেশ ও সৌদি আরবসরকারসহ বিভিন্ন ইসলামী রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও সরকারপ্রধানের কাছে উকিল নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

নোটিশটি পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আশরাফ-উজ-জামান। আজ সোমবার রেজিস্ট্রি ডাক ও ফ্যাক্স করে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান এ আইনজীবী।

ইসলামী সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি), তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ান, ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি হাসান রুহানি, সৌদি আরবের সালমান বিন আবদুল আজিজ, কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আলে সানি, সংযুক্ত আরব-আমিরাতের প্রেসিডেন্ট (ইউএই) প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল-নাহিয়ান, পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে এ নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

গত ৯ জানুয়ারি সৌদি সরকার ও বাংলাদেশ সরকারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় হজ চুক্তি সই হয়। চুক্তি অনুযায়ী এ বছর এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন হজ পালনের সুযোগ পাবেন। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৫ হাজার জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় এক লাখ ১২ হাজার ১৯৮ জন হজ পালন করতে পারবেন।

চুক্তির পর গত ১ ফেব্রুয়ারি সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজে যাওয়ার প্যাকেজ ঘোষণা করে ধর্ম মন্ত্রণালয়। বিভিন্ন খাত উল্লেখ করা এবার হজ প্যাকেজের মূল্য ধরা হয়েছে ছয় লাখ ৮৩ হাজার ১৮ টাকা। এসব খরচের বেশির ভাগই অযৌক্তিক এবং হজে গমনেচ্ছুদের নাগালের বাইরে বলে মনে করেন উকিল নোটিশের প্রেরক।

চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যাওয়া ও আসার বিমান ভাড়া বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। গত বছর যাওয়া-আসার (রাউন্ড ট্রিপ) বিমান ভাড়া ছিল এক লাখ ৪০ হাজার টাকা। এবার তা ৫৭ হাজার ৭৯৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে এক লাখ ৯৭ হাজার ৭৯৭ টাকা।

নোটিশে বলা হয়েছে, প্যাকেজে বিমান ভাড়া ধরা হয়েছে এক লাখ ৯৭ হজার ৭৯৭ টাকা। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব রুটে বিদ্যমান বিমান ভাড়া ৭৬ হাজার থেকে সর্বোচ্চ এক লাখ ১০ হাজার টাকা। তা ছাড়া প্রতিবছর বাংলোদেশ ও সৌদি আরবের সরকার বিমান বাংলাদেশ ও সৌদি এয়ারলাইনসের টিকিট কিনতে হজযাত্রীদের বাধ্য করে থাকে। এবারও তাই করা হচ্ছে। অবৈধ সুবিধার জন্যই এই বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে এবং এর মাধ্যমে একজন হজযাত্রীর ব্যক্তিগত স্বাধীনতাকে ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে।

২০১০ সালে সরকারি হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া ছিল ৯৬ হাজার ৪২৫ টাকা। সেই হিসাবে দেড় দশকের কম সময়ে হজ প্যাকেজে বিমান ভাড়া দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।

বিমান ভাড়ার পাশাপাশি মক্কা ও মদিনায় হজযাত্রীদের জন্য বাড়ি ভাড়া বাবদ ব্যয়ও বেড়েছে। গত বছর হজ প্যাকেজে বাড়ি ভাড়া (ভ্যাটসহ) ছিল ছয় হাজার ৫০৪ রিয়াল বা এক লাখ ৫৮ হাজার ৫৭ টাকা। এ বছর তা বেড়ে হয়েছে সাত হাজার ২০১ রিয়াল বা দুই লাখ চার হাজার ৪৪৫ টাকা। গত বছর বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি রিয়ালের দাম ২৪ দশমিক ৩ টাকা হিসাব করা হয়েছিল। চলতি বছর তা হিসাব করা হয়েছে ২৮ দশমিক ৩৯ টাকা ধরে।

বাড়ি ভাড়া নিয়ে নোটিশে বলা হয়েছে, সরকারি হজ প্যাকেজে হজযাত্রীদের জন্য মক্কা-মদিনায় যে বাড়ি ভাড়া ধরা হয়েছে তা অনেক বেশি। এতে বোঝা যায় সরকার বাড়ির মালিকদের স্বার্থে অতিরিক্ত ভাড়া নির্ধারণ করেছে।

বাড়ি ভাড়ার পাশাপাশি মক্কা-মদিনায় হজযাত্রীদের পরিবহন, জমজম পানি, বিভিন্ন সার্ভিস চার্জ বাবাদ যে খরচ বা মূল্য ধরা হয়েছে, সেসব খরচ কমিয়ে হজ প্যাকেজ চার লাখে নামিয়ে আনার আহ্বান জানানো হয়েছে নোটিশে। এর জন্য সাত দিন সময় দিয়ে নোটিশে বলা হয়েছে, তা না করলে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হব। আর এর সম্পূর্ণ দায় ও খরচ মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর