হাওর বার্তা ডেস্কঃ খন্দকার মিজানুর রহমান পেশায় ছিলেন একজন ব্যাংকার। ২০১৮ সালে গ্রামের বাড়িতে কিছু জমিতে ড্রাগন ও কুল চাষ কাজ শুরু করেন। প্রতি বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে বাড়িতে এসে কৃষি কাজ দেখাশোনা করতেন। এরই মধ্যে চাষে সফলতা আসতে শুরু করলে ২০২০ সালে স্বেচ্ছায় চাকরী ছেড়ে কৃষি কাজ শুরু করেন। নিজের ৫ বিঘা জমি দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে তার ১৯ বিঘা জমিতে ফল ও সবজির চাষ রয়েছে। বর্তমানে তিনি পেশায় একজন আপাদমস্তক কৃষক। মিজানুর রহমান ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাঁদবা গ্রামের মৃত তবিবুর রহমানের ছেলে।
বর্তমানে তিনি ৪০ শতক জমিতে ব্লাকবেরি জাতের তরমুজ চাষ করেছেন। জমিতে ২ হাজার ৫০০ তরমুজ পাওয়া গেছে। প্রায় ২ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। এ তরমুজ চাষ করতে তার প্রায় ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে তরমুজের বীজ রোপন করেন। মাত্র দুই মাসে ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়েছে। স্থানীয় ও ঢাকার ব্যাপারীরা ক্ষেতে এসে তরমুজ নিয়ে যাচ্ছেন। তরমুজ বিক্রি শেষ হলে খরচ বাদে লক্ষাধিক টাকা লাভ করতে পারবে বলে আশা করছেন তিনি।
মাত্র দুই মাসে ভিন্ন জাতের এ তরমুজ চাষ দেখে অন্য কৃষকরাও উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন। এর আগে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গোল্ডেন ক্রাউন (হলুদ রঙের) জাতের তরমুজ চাষ হতে দেখা গেছে। তরমুজের পাশাপাশি তার বাকি প্রায় ১৮ বিঘা জমিতে রয়েছে মাল্টা, কমলা-লেবু, ড্রাগন, কুল, ফিলিপাইন জাতের আখ, আম, ক্যাপসিকাম, ব্রকলি সহ নাানা জাতের মৌসুমি সবজি।
মিজানুর রহমান জানান, ছোটবেলা থেকে সখ ছিল কৃষি কাজ করার। কিন্তু পরিবারের ইচ্ছায় লেখাপড়া শেষ করে একটি বেসরকারি ব্যাংকে কাজ শুরু করি। কিন্তু নিজের মধ্যে পুশে রাখা স্বপ্ন আমাকে তাড়িয়ে বেড়াতো। তাই শত বাধা সত্বেও গ্রামের বাড়িতে নিজের কিছু জমিতে কৃষি কাজ শুরু করি। দুই বছরে সফলতা পাওয়ায় চাকরী ছেড়ে এখন পুরোমাত্রায় কৃষক। আমার কৃষি কাজ দেখতে বিভিন্ন এলাকার উদ্দ্যোক্তারা আসছেন। আমি কৃষকদের মাধ্যমে খোঁজ করি কোথায় কোন চাষ হচ্ছে, নতুন কিছু মনে হলেই সেখানে ছুটে যাই। চাষ পদ্ধতি রপ্ত করে নিজে চাষ করি। এভাবে চলছে আমার চাষকর্ম।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. রবজেল হোসেন জানান, কয়েকদিন আগে হঠাৎ শুনি মিজানুর অসময়ে তরমুজ চাষ করেছেন, দেখতেও গিয়েছিলাম। তরমুজ চাষ করে এলাকার মানুষের মধ্যে হৈচৈ ফেলে দিয়েছেন। তার মত অন্যরাও নতুন নতুন ফল ও ফসলের চাষ করে পারিবারে স্বচ্ছলতা আনতে পারবেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার শিকদার মো. মোহায়মেন আক্তার জানান, এ মৌসুমে তরমুজের চাষ হয় না বললেই চলে। তবে শিক্ষিত যুবক মিজানুর রহমান বিদেশি জাতের তরমুজ চাষ করে সফলতা পেয়েছে, যা অন্য কৃষকদের জন্য অনুকরণীয়।
পানি নিষ্কাষণ ও বেলে, দো-আঁশ মাটি এ জাতের তরমুজ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। মান ভালো হলে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে এ জেলার তরমুজের চাহিদা রয়েছে অনেক। এছাড়া তরমুজের পুষ্টিগুণ অনেক। এই ফলে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-এ এবং আয়রন। এছাড়া ফলটিতে রয়েছে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট যা বার্ধক্য প্রতিরোধে অনেক সহায়ক।