অবশেষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে উঠল সেই প্রতিবন্ধী পরিবার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা-বাগানের মাহাতো সম্প্রদায়ের এক পরিবারের সেই তিন প্রতিবন্ধী অবশেষে উঠল প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে। সম্প্রতি ওই পরিবারটি গোয়ালঘর ছেড়ে তাদের স্বপ্নের নতুন ঘরে উঠেছেন।

গত ২২ জানুয়ারি  প্রিন্টে ‘এক পরিবারের তিনজনই প্রতিবন্ধী’ শিরোনামে ও অনলাইনে একটি মানবিক ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হয় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের। এরপর প্রশাসনের পক্ষ থেকে ওই পরিবারের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়।

গোয়ালঘরে একই পরিবারের তিনজনই প্রতিবন্ধী থাকছেন এমন খবর পেয়ে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি ওই প্রতিবন্ধীর বাড়িতে গিয়ে হাজির হন মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান, কুলাউড়ার সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী, বরমচাল ইউপি চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম খান সুইটসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও সাংবাদিকরা।

ওই দিন কথা বলতে না পারলেও গাড়িসহ জেলা প্রশাসকসহ অন্যদের দেখে সেদিন বিস্মিত হয়েছিল প্রতিবন্ধী পরিবারটি। জেলা প্রশাসক এই পরিবারের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি পাকা ঘরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, পাশাপাশি পরিবারটিকে দুইটি ভেড়া ও ২ মাসের খাবার দেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল চা-বাগানের বাসিন্দা দিনমজুর মোহনলাল কুর্মী (৪৯) ও জাসন্তী কুর্মী (৪৪) দম্পতির দুই সন্তান মিলে চার সদস্যের পরিবারের তিনজনই ছিল প্রতিবন্ধী। পরিবার প্রধান মোহনলাল বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাঁদের সংসারে জন্ম নেওয়া ছেলে অর্জুন কুর্মী (১৫) ও মেয়ে মালতী কুর্মী (১৩) দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। রোদ, ঝড় কিংবা বৃষ্টি মাড়িয়ে একটি জীর্ণশীর্ণ ঘরের ভেতর একমাত্র সম্বল গবাদিপশুসহ একই পরিবারের সকল প্রতিবন্ধী সদস্যের মানবেতর জীবনযাপন ছিল আধুনিক যুগের ক্রীতদাসের চিত্রের মতো। কখনো খেয়ে, কখনো না খেয়ে প্রতিবন্ধী ওই পরিবারটি চালিয়ে গিয়েছিল তাদের জীবন সংগ্রাম। তবে এখন নতুন পাকা ঘরে থাকছেন ওই পরিবারটি। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে তারা বেজায় খুশি। উপহারের ঘর পেয়ে তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

সরেজমিনে বরমচাল বাগানে একটি শ্রমিক বস্তিতে মোহনলাল ও জাসন্তী কুর্মীর নতুন ঘরে গিয়ে দেখা যায়, একটি ঘরের মেঝেতে পাটি বিছিয়ে ঘুমান মোহনলাল ও তার স্ত্রী জাসন্তী। আরেকটি ঘরে রয়েছে তার ভাইয়ের রাখা ধান। তবে ঘুমানোর জন্য নেই কোনো তাদের খাট, বিদ্যুৎ সংযোগ এখনো দেওয়া হয়নি।

স্থানীয় ইউপি সদস্য চন্দন কুর্মী বলেন, ‘পরিবারটি খুবই দরিদ্র। সেই প্রতিবন্ধী পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে ২ লাখ ৫৯ হাজার টাকায় নতুন ঘর দেয়ায় পরিবারটি এখন নতুন করে বাঁচার অবলম্বন খুঁজে পেয়েছে।

ঘর পেয়ে মোহনলাল কুর্মী কালের কণ্ঠের এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘এখন আর রাতে বৃষ্টিতে ভিজতে হয় না। গবাদিপশুর সঙ্গেও থাকতে হয় না। রাতে ঠিকমতো শান্তিতে ঘুমাতে পারি। আমরা খুবই খুশি হয়েছি। এই ঘরেই এখন মরবো, বাঁচবো। এটাই আমাদের শান্তি ও সুখের সংসার। ’ এত কিছু একসঙ্গে পেয়ে যাব, তা কখনো কল্পনা করিনি।

জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান বলেন,  প্রকাশিত প্রতিবেদনের পর আমরা সেখানে সরেজমিন যাই এবং পরিবারটির জন্য একটি নতুন ঘর বরাদ্দের সিদ্ধান্ত নেই। এটা মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার।

তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী ছিন্নমূল প্রতিবন্ধী অসহায় মানুষদের জন্য ঘর ও সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় যা যা সুবিধা আছে, আমরা পরিবারটিকে সব দেওয়ার চেষ্টা করছি। মোহনলাল মাহাতোর মতো সম্বলহীনদের জন্য বাসস্থান তৈরি করতে পারা আমাদের জন্য অনেক আনন্দের। তার শিশুরা যেন স্বাভাবিকভাবে বেড়ে উঠতে পারে, তা যেন নিশ্চিত হয়, সে বিষয়ে আমরা সতর্ক ও সচেতন থাকব।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর