ঢাকা ১১:১৯ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যে কারণে শিশুর উচ্চতা কমবেশি হয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫২:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১২৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সব শিশুর উচ্চতা সমান হয় না। কে লম্বা হবে বা কে খর্বকায় হবে সেটি জন্মের পর বলে দেওয়া যায় না। তবে মা-বাবার উচ্চতা মেপে চিকিৎসকরা একটা আন্দাজ করতে পারেন। ষোল-সতেরো বছর পর্যন্ত কারও লম্বা হওয়ার সময়। এরপর পঁচিশ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২/১ সেন্টিমিটার উচ্চতা বাড়তে পারে; এরপর আর বাড়ে না।

সাবালক হওয়ার পর লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। কোনো শিশু জন্মের সময় ২০ ইঞ্চি লম্বা হলে প্রাপ্ত বয়সে যদি ৬ ফুট (৭২ ইঞ্চি) উচ্চতা হতে হয় তবে তাকে ১৪ বছরে আরও ৫০ ইঞ্চি লম্বা হতে হবে। গড়ে প্রতি বছর ৪ ইঞ্চি করে। বাস্তবে সবসময় একই হারে উচ্চতা বৃদ্ধি পায় না।

জন্মের পরপর কয়েক বছর ও সাবালক হওয়ার সময় দ্রুত উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। অভিজ্ঞ মা-বাবারা অনেকেই তা জানেন। মানুষের উচ্চতা কমবেশি হওয়ার কারণ সাধারণত বংশগত।

যে সব কারণে শিশুর উচ্চতায় তারতম্য হয় সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এমএ জলিল আনসারী।

অনেক রোগ বিশেষ করে হরমোনজনিত রোগে কারও কারও উচ্চতা অস্বাভাবিকরকম কম বা বেশি হয়। পৃথিবীতে জানামতে সবচেয়ে খর্বাকৃতি মানুষের উচ্চতা মাত্র ২১ ইঞ্চি এবং সবচেয়ে লম্বা মানুষের ১০৭ ইঞ্চি প্রায় পাঁচগুণ তফাৎ! আশ্চর্যজনক বটে। কেন এমন হয় তা নিয়ে গবেষণা হয়েছে।

জানা যায়, মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে পিটুইটারি নামক হরমোন নিঃসরণকারী গ্রন্থি থেকে গ্রোথ হরমোন নামক এক প্রকার হরমোন কমবেশি হওয়ার কারণেই কেউ অস্বাভাবিকরকম খাটো বা লম্বা হয়ে থাকে। এই হরমোন কেন কমবেশি হয় তা চিকিৎসকরাই নির্ণয় করতে পারেন। গ্রোথ হরমোন ছাড়াও আরও কিছু কারণে শৈশবাবস্থায় কারও উচ্চতা বিঘ্নিত হতে পারে।

এর মধ্যে সুষম খাদ্যের অভাব, থাইরয়েড হরমোনের অভাব, কিডনির রোগ, ভিটামিন ডির অভাব, পরিপাকতন্ত্র ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি অসুখ ইত্যাদি। চিকিৎসকরা এসব নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করলে সাধারণত প্রাপ্ত বয়সে স্বাভাবিক উচ্চতা লাভ করা যায়। তবে কম উচ্চতা নিয়ে কেউ ১৪-১৫ বছর পার হলে চিকিৎসা করেও উচ্চতা আর বাড়ানো সম্ভব হয় না।

স্বাস্থ্যগত দিক থেকে যে রোগের জন্য কেউ অস্বাভাবিক খাটো বা লম্বা হয়ে থাকে তার গুরুত্বই বেশি। সামাজিক ক্ষেত্রে অতি লম্বা বা অতি খাটো হওয়া নানাবিধ কারণে বিব্রতকর হওয়ায় উচ্চতার জন্য অনেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে দেখা যায়, দেহের উচ্চতা বাড়ার প্রধান অঙ্গ হাতপায়ের লম্বা অস্থিগুলোর প্রান্তের কাছাকাছি অবস্থিত গ্রোথ প্লেট নামক অপেক্ষাকৃত নরম কার্টিলেজগঠিত অংশ হতেই উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। অস্থির এই গ্রোথ প্লেট নামক অংশেই গ্রোথ হরমোনের ক্রিয়ার ফলে অস্থি বৃদ্ধি পায় এবং সঙ্গে সঙ্গে দেহের উচ্চতা বাড়তে থাকে।

মস্তিষ্কে অবস্থিত ক্ষুদ্রাকার পিটুইটারি গ্রন্থির হরমোন যাকে গ্রোথ হরমোন বলা হয় ইহাই মূলত আইজিএফ নামক অপর একটি হরমোনের মাধ্যমে উচ্চতা বৃদ্ধির কাজটি করে থাকে। উচ্চতা বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়া ১৪-১৫ বছর বয়সে সাবালক হওয়ার পর আর থাকে না কারণ তখন অস্থির গ্রোথ প্লেট অস্থির সঙ্গে মিলিয়ে যায়।

উচ্চতার সঙ্গে অন্যান্য হরমোনের যোগসূত্র থাকলেও গ্রোথ হরমোনের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। গ্রোথ হরমোন বাইরে থেকে ওষুধের আকারে প্রয়োগ করে উচ্চতা বৃদ্ধি করা যায়, তবে এখানে শর্ত হল যত কম বয়সে প্রয়োগ করা যায় ততই ফল ভালো হয়ে থাকে। দশ বছরের পরে এর প্রয়োগে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

এ ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণে বেশি বয়সে অনেকেই লম্বা হওয়ার জন্য চিকিৎসা করাতে চান যা প্রায় অসম্ভব। বেশি বয়সে কেবলমাত্র শল্যচিকিৎসার (সার্জারি) মাধ্যমেই কিছুটা লম্বা হওয়া সম্ভব।

কোনো শিশুর রক্তে গ্রোথ হরমোন কম থাকলে শিশুটি তার সমবয়স্ক স্বাভাবিক বাচ্চার তুলনায় অনেক কম উচ্চতাপ্রাপ্ত হয়। মা-বাবারা অনেক সময় তা খেয়াল করেন না বা বুঝতে দেরি করেন। শিশুর বৃদ্ধি স্বাভাবিক হচ্ছে কিনা তা গুরুত্বসহকারে লক্ষ্য করা উচিত।

অন্তত প্রতি তিন মাস পরপর শিশুর উচ্চতা মেপে লিখে রাখা প্রয়োজন। কোনো শিশু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক কিনা তা পরীক্ষা করে নিলে সবচেয়ে ভালো হয়। অতীতে গ্রোথ হরমোন ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা যেত না এর মূল্যও অনেক বেশি ছিল তাই এর ব্যবহারও ছিল সীমিত।

আজকাল গ্রোথ হরমোন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি হয়, মানও ভালো এবং সব দেশেই পাওয়া যায় অথচ সচেতনতার অভাবে এর সুফল থেকে অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন বলে ধারণা করা যায়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখনও এর দাম কিছুটা বেশি মনে হতে পারে।

তবে সঠিক সময়ে অর্থাৎ আগেভাগেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী ব্যবহার করা গেলে উচ্চতা নিয়ে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে এরূপ অনেক শিশুই পরিণত বয়সে এ সমস্যাকে এড়াতে পারেন। গ্রোথ হরমোন দিয়ে চিকিৎসায় আর্থিক ব্যায় বেশি হওয়া ছাড়াও কিছু শারীরিক সমস্যা কদাচিৎ লক্ষ্য করা যায় তাই চিকিৎসাকালীন কোনো হরমোন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকা বাঞ্ছনীয়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যে কারণে শিশুর উচ্চতা কমবেশি হয়

আপডেট টাইম : ০৯:৫২:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সব শিশুর উচ্চতা সমান হয় না। কে লম্বা হবে বা কে খর্বকায় হবে সেটি জন্মের পর বলে দেওয়া যায় না। তবে মা-বাবার উচ্চতা মেপে চিকিৎসকরা একটা আন্দাজ করতে পারেন। ষোল-সতেরো বছর পর্যন্ত কারও লম্বা হওয়ার সময়। এরপর পঁচিশ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২/১ সেন্টিমিটার উচ্চতা বাড়তে পারে; এরপর আর বাড়ে না।

সাবালক হওয়ার পর লম্বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে। কোনো শিশু জন্মের সময় ২০ ইঞ্চি লম্বা হলে প্রাপ্ত বয়সে যদি ৬ ফুট (৭২ ইঞ্চি) উচ্চতা হতে হয় তবে তাকে ১৪ বছরে আরও ৫০ ইঞ্চি লম্বা হতে হবে। গড়ে প্রতি বছর ৪ ইঞ্চি করে। বাস্তবে সবসময় একই হারে উচ্চতা বৃদ্ধি পায় না।

জন্মের পরপর কয়েক বছর ও সাবালক হওয়ার সময় দ্রুত উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। অভিজ্ঞ মা-বাবারা অনেকেই তা জানেন। মানুষের উচ্চতা কমবেশি হওয়ার কারণ সাধারণত বংশগত।

যে সব কারণে শিশুর উচ্চতায় তারতম্য হয় সেগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের হরমোন ও ডায়াবেটিস বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. এমএ জলিল আনসারী।

অনেক রোগ বিশেষ করে হরমোনজনিত রোগে কারও কারও উচ্চতা অস্বাভাবিকরকম কম বা বেশি হয়। পৃথিবীতে জানামতে সবচেয়ে খর্বাকৃতি মানুষের উচ্চতা মাত্র ২১ ইঞ্চি এবং সবচেয়ে লম্বা মানুষের ১০৭ ইঞ্চি প্রায় পাঁচগুণ তফাৎ! আশ্চর্যজনক বটে। কেন এমন হয় তা নিয়ে গবেষণা হয়েছে।

জানা যায়, মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে পিটুইটারি নামক হরমোন নিঃসরণকারী গ্রন্থি থেকে গ্রোথ হরমোন নামক এক প্রকার হরমোন কমবেশি হওয়ার কারণেই কেউ অস্বাভাবিকরকম খাটো বা লম্বা হয়ে থাকে। এই হরমোন কেন কমবেশি হয় তা চিকিৎসকরাই নির্ণয় করতে পারেন। গ্রোথ হরমোন ছাড়াও আরও কিছু কারণে শৈশবাবস্থায় কারও উচ্চতা বিঘ্নিত হতে পারে।

এর মধ্যে সুষম খাদ্যের অভাব, থাইরয়েড হরমোনের অভাব, কিডনির রোগ, ভিটামিন ডির অভাব, পরিপাকতন্ত্র ও ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি অসুখ ইত্যাদি। চিকিৎসকরা এসব নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করলে সাধারণত প্রাপ্ত বয়সে স্বাভাবিক উচ্চতা লাভ করা যায়। তবে কম উচ্চতা নিয়ে কেউ ১৪-১৫ বছর পার হলে চিকিৎসা করেও উচ্চতা আর বাড়ানো সম্ভব হয় না।

স্বাস্থ্যগত দিক থেকে যে রোগের জন্য কেউ অস্বাভাবিক খাটো বা লম্বা হয়ে থাকে তার গুরুত্বই বেশি। সামাজিক ক্ষেত্রে অতি লম্বা বা অতি খাটো হওয়া নানাবিধ কারণে বিব্রতকর হওয়ায় উচ্চতার জন্য অনেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে থাকেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের আলোকে দেখা যায়, দেহের উচ্চতা বাড়ার প্রধান অঙ্গ হাতপায়ের লম্বা অস্থিগুলোর প্রান্তের কাছাকাছি অবস্থিত গ্রোথ প্লেট নামক অপেক্ষাকৃত নরম কার্টিলেজগঠিত অংশ হতেই উচ্চতা বৃদ্ধি পায়। অস্থির এই গ্রোথ প্লেট নামক অংশেই গ্রোথ হরমোনের ক্রিয়ার ফলে অস্থি বৃদ্ধি পায় এবং সঙ্গে সঙ্গে দেহের উচ্চতা বাড়তে থাকে।

মস্তিষ্কে অবস্থিত ক্ষুদ্রাকার পিটুইটারি গ্রন্থির হরমোন যাকে গ্রোথ হরমোন বলা হয় ইহাই মূলত আইজিএফ নামক অপর একটি হরমোনের মাধ্যমে উচ্চতা বৃদ্ধির কাজটি করে থাকে। উচ্চতা বৃদ্ধির এই প্রক্রিয়া ১৪-১৫ বছর বয়সে সাবালক হওয়ার পর আর থাকে না কারণ তখন অস্থির গ্রোথ প্লেট অস্থির সঙ্গে মিলিয়ে যায়।

উচ্চতার সঙ্গে অন্যান্য হরমোনের যোগসূত্র থাকলেও গ্রোথ হরমোনের প্রভাবই সবচেয়ে বেশি। গ্রোথ হরমোন বাইরে থেকে ওষুধের আকারে প্রয়োগ করে উচ্চতা বৃদ্ধি করা যায়, তবে এখানে শর্ত হল যত কম বয়সে প্রয়োগ করা যায় ততই ফল ভালো হয়ে থাকে। দশ বছরের পরে এর প্রয়োগে সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম।

এ ব্যাপারে অজ্ঞতার কারণে বেশি বয়সে অনেকেই লম্বা হওয়ার জন্য চিকিৎসা করাতে চান যা প্রায় অসম্ভব। বেশি বয়সে কেবলমাত্র শল্যচিকিৎসার (সার্জারি) মাধ্যমেই কিছুটা লম্বা হওয়া সম্ভব।

কোনো শিশুর রক্তে গ্রোথ হরমোন কম থাকলে শিশুটি তার সমবয়স্ক স্বাভাবিক বাচ্চার তুলনায় অনেক কম উচ্চতাপ্রাপ্ত হয়। মা-বাবারা অনেক সময় তা খেয়াল করেন না বা বুঝতে দেরি করেন। শিশুর বৃদ্ধি স্বাভাবিক হচ্ছে কিনা তা গুরুত্বসহকারে লক্ষ্য করা উচিত।

অন্তত প্রতি তিন মাস পরপর শিশুর উচ্চতা মেপে লিখে রাখা প্রয়োজন। কোনো শিশু বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে শিশুর দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক কিনা তা পরীক্ষা করে নিলে সবচেয়ে ভালো হয়। অতীতে গ্রোথ হরমোন ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা যেত না এর মূল্যও অনেক বেশি ছিল তাই এর ব্যবহারও ছিল সীমিত।

আজকাল গ্রোথ হরমোন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তৈরি হয়, মানও ভালো এবং সব দেশেই পাওয়া যায় অথচ সচেতনতার অভাবে এর সুফল থেকে অনেকেই বঞ্চিত হচ্ছেন বলে ধারণা করা যায়। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এখনও এর দাম কিছুটা বেশি মনে হতে পারে।

তবে সঠিক সময়ে অর্থাৎ আগেভাগেই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী ব্যবহার করা গেলে উচ্চতা নিয়ে ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে এরূপ অনেক শিশুই পরিণত বয়সে এ সমস্যাকে এড়াতে পারেন। গ্রোথ হরমোন দিয়ে চিকিৎসায় আর্থিক ব্যায় বেশি হওয়া ছাড়াও কিছু শারীরিক সমস্যা কদাচিৎ লক্ষ্য করা যায় তাই চিকিৎসাকালীন কোনো হরমোন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থাকা বাঞ্ছনীয়।