ঢাকা ০৭:৪৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রকৃতি রক্ষার নামে বিনাশ মাছ ও পাখি কমেছে, চিহ্নিত হয়নি সীমানা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৪৮:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ মে ২০১৬
  • ২৫৫ বার

দুনিয়াজুড়ে প্রকৃতি রক্ষার কাজে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্রের (আইইউসিএন) সুনাম। কিন্তু সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে সংস্থার স্থানীয় কর্মকর্তারা দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁদের অনিয়মের ফলে গত ১২ বছরে হাওরের সীমানা চিহ্নিত করা যায়নি। শেষ হওয়ার পথে মাছ। কমেছে পাখির সংখ্যাও। হাওরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনায় তৃতীয় দফা মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হচ্ছে। এর আগেই চতুর্থ দফা মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে আইইউসিএন। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে লোক দেখানো নাগরিক সংলাপসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।

অভিযোগ উঠেছে, প্রায় সাত বছর আগে প্রকল্পের মাধ্যমে হাওরের সীমানা নির্ধারণের জন্য গবেষক দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছিল। রক্ষণাবেক্ষণের নামে দীর্ঘমেয়াদি লুটপাটের স্বার্থে এত দিন সীমানা চিহ্নিত করা হয়নি। প্রকল্প ধরে রাখতে আইইউসিএন সীমানাবিষয়ক প্রতিবেদন গায়েব করে ফেলেছিল। মেয়াদের একেবারে শেষদিকে গায়েব হওয়া সেই প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া গেছে।

টাঙ্গুয়ার হাওর সমাজভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৯৯৯ সালে পরিবেশগত সংকটাপন্ন হিসেবে ঘোষণার পর ২০০০ সালে রামসার সাইট (বিশ্ব ঐতিহ্য) ঘোষণা করে। হাওরের জীববৈচিত্র্য আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ভূমি মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৭২৭ হেক্টর জমি ২০০১ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে।

সীমানা নির্ধারণকারী প্রাকৃতিক সম্পদ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (সিএনআরএস) প্রকল্প সমন্বয়ক ইয়াহ ইয়া সাজ্জাদ বলেন, ‘প্রশাসন, আইইউসিএনের কর্মীসহ আমরা প্রায় এক বছর মাঠ পর্যায়ে কাজ করে ২০০৯ সালে ১৪ হাজার হেক্টর সীমানা চিহ্নিত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠাই। এত দিন প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে আমাদের জানানো হয়েছিল।’

একাধিক সূত্র জানায়, সরকার ও আইইউসিএনের মধ্যে যৌথ সমঝোতা স্বাক্ষরের পর ২০০৩ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরে টেকসই সমাজভিত্তিক ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। রক্ষণাবেক্ষণের তৃতীয় দফা মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হওয়ার পথে থাকলেও হাওরের জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনা যায়নি। ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত লোকজনই মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতিদিন মাছ ধরার সুযোগ দিচ্ছেন। কাগজে-কলমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও বছরব্যাপী প্রকাশ্যে মাছ ধরা হচ্ছে। এ কাজে হাওর রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত আনসার, পুলিশ, জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং আইইউসিএন কর্মকর্তারা ঘুষ নিয়েছেন। এ কারণে হাওরে আগের তুলনায় মাছ কমেছে। দুই বছর আগে প্রকল্পসচিব নাসির উদ্দিন মাছ ধরার মৌসুমে টাঙ্গুয়া পরিদর্শন করেন। সে সময় হাওরে জাল ফেললে কম মাছ ধরা পড়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া প্রকল্পের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ২০১০ সালে সাবেক জেলা প্রশাসক মো. জহির আহমেদ হাওরের ব্যবস্থাপনা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার লিখিত আবেদন করেছিলেন। গত বছর একটি গোয়েন্দা সংস্থাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রকল্পের সুফল মিলছে না বলে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গত বছর স্থানীয় একটি দৈনিকের গোলটেবিল বৈঠকে সুনামগঞ্জের চারজন সংসদ সদস্য এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনেন।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বছরে সরকারি কোষাগার থেকে অর্ধকোটি এবং দাতাসংস্থা থেকে আরো মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় হচ্ছে। গত বুধবার আইইউসিএন সুনামগঞ্জ জেলা শহরে লোক দেখানো নাগরিক সংলাপ আহ্বান করে টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষণাবেক্ষণের দাবি উত্থাপন করেছে। তবে এ নাগরিক সংলাপে তারা সীমানা চিহ্নিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বেমালুম চেপে যায়।

হাওরের মৎস্যজীবীরা জানিয়েছে, সীমানা নির্ধারিত না হওয়ায় হাওরের হুরা বিল ও নয় আনা বিল প্রভাবশালীরা দখল করে ফেলেছে। এ ছাড়াও কালির দপ, কালির দেব, মুন্সীখালী, হাতীমারা, বাল্যার ডোবা, বলাই চাতল বিল ও কালীবাড়ি বিল দখল করে আছে প্রভাবশালীরা।

স্থানীয়রা জানায়, ব্যবস্থাপনার নামে আইইউসিএন মৎস্যজীবীদের ঐতিহ্যবাহী ‘চাঁই-গুই’ দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। হাওরবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে সমাজভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনা কমিটি সুবিধাভোগীদের নিয়ে সমিতি গঠিত হলেও এর আর্থিক, পারিপার্শ্বিকসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রকল্পের লোকজন নিচ্ছেন। এ টাকা কিভাবে ব্যয় হয়, তা জানেন না সমিতির অর্থ সম্পাদক। বর্তমানে ছয় হাজার সদস্যের সমিতির প্রায় দুই কোটি টাকার সঞ্চয় প্রকল্পের লোকজন লেনদেন করছেন।

টাঙ্গুয়ার হাওর সমিতির সদস্য বিনোদপুর গ্রামের আবুল হোসেন ও বীরেন্দ্র দাস বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু সমিতির টাকা কিভাবে খরচ হয়, আমরা জানি না। আমাদের অর্থ সম্পাদক আহমদ কবীরও আমাদের সমিতিতে কত টাকা আছে, তা জানেন না। আমাদের এই হিসাব জানতে দেন না। আমরা ইজারা আমলে যেভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছি, এখনো সেভাবে হচ্ছি।’

আইইউসিএন টাঙ্গুয়ার হাওর প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাঈদ মাহমুদ রিয়াদ বলেন, ‘সমিতির লোকজন অসচেতন, হিসাব-নিকাশ জানে না। তাই একজন লোক রাখা হয়েছে হিসাব-নিকাশের জন্য।’ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় কোনো অনিয়ম হচ্ছে না-দাবি করে তিনি বলেন, ‘চারটি পর্যায়ে আমাদের অডিট হয়। কোনো অডিটে দুর্নীতি প্রমাণিত হয়নি। তবে মেয়াদ শেষের আগে নানা কর্মসূচি নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।’ সীমানা চিহ্নিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এত দিন প্রতিবেদনটি পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি অফিসে খুঁজে পাওয়া গেছে।’

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর এখন মাছ, গাছ ও পাখিশূন্য। আগে আধঘণ্টায় যে মাছ পাওয়া যেত, এখন আট ঘণ্টায়ও সে মাছ পাওয়া যায় না। এতেই বোঝা যায়, এক যুগ ধরে কী পরিমাণ লুটপাট হচ্ছে। হাওরবাসী এ লুটপাটের ব্যবস্থাপনার বিপক্ষে থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এবারও মেয়াদ বাড়ানোর জন্য লোক দেখানো কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে চাচ্ছে।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গত শনিবার বিকেলে আইইউসিএন ঢাকা অফিসে ফোন করলে ছুটি থাকায় কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। টেলিফোন অপারেটরের কাছে কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে দিতে রাজি হননি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রকৃতি রক্ষার নামে বিনাশ মাছ ও পাখি কমেছে, চিহ্নিত হয়নি সীমানা

আপডেট টাইম : ০৪:৪৮:২৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ মে ২০১৬

দুনিয়াজুড়ে প্রকৃতি রক্ষার কাজে আন্তর্জাতিক প্রকৃতি সংরক্ষণ কেন্দ্রের (আইইউসিএন) সুনাম। কিন্তু সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওরে সংস্থার স্থানীয় কর্মকর্তারা দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁদের অনিয়মের ফলে গত ১২ বছরে হাওরের সীমানা চিহ্নিত করা যায়নি। শেষ হওয়ার পথে মাছ। কমেছে পাখির সংখ্যাও। হাওরের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সরকারি-বেসরকারি যৌথ ব্যবস্থাপনায় তৃতীয় দফা মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হচ্ছে। এর আগেই চতুর্থ দফা মেয়াদ বাড়ানোর আবেদন করেছে আইইউসিএন। মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে লোক দেখানো নাগরিক সংলাপসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।

অভিযোগ উঠেছে, প্রায় সাত বছর আগে প্রকল্পের মাধ্যমে হাওরের সীমানা নির্ধারণের জন্য গবেষক দিয়ে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছিল। রক্ষণাবেক্ষণের নামে দীর্ঘমেয়াদি লুটপাটের স্বার্থে এত দিন সীমানা চিহ্নিত করা হয়নি। প্রকল্প ধরে রাখতে আইইউসিএন সীমানাবিষয়ক প্রতিবেদন গায়েব করে ফেলেছিল। মেয়াদের একেবারে শেষদিকে গায়েব হওয়া সেই প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া গেছে।

টাঙ্গুয়ার হাওর সমাজভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বিগত ১৯৯৯ সালে পরিবেশগত সংকটাপন্ন হিসেবে ঘোষণার পর ২০০০ সালে রামসার সাইট (বিশ্ব ঐতিহ্য) ঘোষণা করে। হাওরের জীববৈচিত্র্য আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে ভূমি মন্ত্রণালয় ৯ হাজার ৭২৭ হেক্টর জমি ২০০১ সালে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে।

সীমানা নির্ধারণকারী প্রাকৃতিক সম্পদ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (সিএনআরএস) প্রকল্প সমন্বয়ক ইয়াহ ইয়া সাজ্জাদ বলেন, ‘প্রশাসন, আইইউসিএনের কর্মীসহ আমরা প্রায় এক বছর মাঠ পর্যায়ে কাজ করে ২০০৯ সালে ১৪ হাজার হেক্টর সীমানা চিহ্নিত করে চূড়ান্ত প্রতিবেদন পাঠাই। এত দিন প্রতিবেদনটি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না বলে আমাদের জানানো হয়েছিল।’

একাধিক সূত্র জানায়, সরকার ও আইইউসিএনের মধ্যে যৌথ সমঝোতা স্বাক্ষরের পর ২০০৩ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরে টেকসই সমাজভিত্তিক ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। রক্ষণাবেক্ষণের তৃতীয় দফা মেয়াদ চলতি মাসে শেষ হওয়ার পথে থাকলেও হাওরের জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনা যায়নি। ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত লোকজনই মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতিদিন মাছ ধরার সুযোগ দিচ্ছেন। কাগজে-কলমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকলেও বছরব্যাপী প্রকাশ্যে মাছ ধরা হচ্ছে। এ কাজে হাওর রক্ষণাবেক্ষণে নিয়োজিত আনসার, পুলিশ, জেলা প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এবং আইইউসিএন কর্মকর্তারা ঘুষ নিয়েছেন। এ কারণে হাওরে আগের তুলনায় মাছ কমেছে। দুই বছর আগে প্রকল্পসচিব নাসির উদ্দিন মাছ ধরার মৌসুমে টাঙ্গুয়া পরিদর্শন করেন। সে সময় হাওরে জাল ফেললে কম মাছ ধরা পড়ায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ ছাড়া প্রকল্পের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে ২০১০ সালে সাবেক জেলা প্রশাসক মো. জহির আহমেদ হাওরের ব্যবস্থাপনা বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার লিখিত আবেদন করেছিলেন। গত বছর একটি গোয়েন্দা সংস্থাও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রকল্পের সুফল মিলছে না বলে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গত বছর স্থানীয় একটি দৈনিকের গোলটেবিল বৈঠকে সুনামগঞ্জের চারজন সংসদ সদস্য এবং জেলা পরিষদের প্রশাসক টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষণাবেক্ষণ প্রকল্পে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আনেন।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, বছরে সরকারি কোষাগার থেকে অর্ধকোটি এবং দাতাসংস্থা থেকে আরো মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় হচ্ছে। গত বুধবার আইইউসিএন সুনামগঞ্জ জেলা শহরে লোক দেখানো নাগরিক সংলাপ আহ্বান করে টাঙ্গুয়ার হাওর রক্ষণাবেক্ষণের দাবি উত্থাপন করেছে। তবে এ নাগরিক সংলাপে তারা সীমানা চিহ্নিত করার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি বেমালুম চেপে যায়।

হাওরের মৎস্যজীবীরা জানিয়েছে, সীমানা নির্ধারিত না হওয়ায় হাওরের হুরা বিল ও নয় আনা বিল প্রভাবশালীরা দখল করে ফেলেছে। এ ছাড়াও কালির দপ, কালির দেব, মুন্সীখালী, হাতীমারা, বাল্যার ডোবা, বলাই চাতল বিল ও কালীবাড়ি বিল দখল করে আছে প্রভাবশালীরা।

স্থানীয়রা জানায়, ব্যবস্থাপনার নামে আইইউসিএন মৎস্যজীবীদের ঐতিহ্যবাহী ‘চাঁই-গুই’ দিয়ে মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে। হাওরবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠার কথা বলে সমাজভিত্তিক টেকসই ব্যবস্থাপনা কমিটি সুবিধাভোগীদের নিয়ে সমিতি গঠিত হলেও এর আর্থিক, পারিপার্শ্বিকসহ বিভিন্ন সিদ্ধান্ত প্রকল্পের লোকজন নিচ্ছেন। এ টাকা কিভাবে ব্যয় হয়, তা জানেন না সমিতির অর্থ সম্পাদক। বর্তমানে ছয় হাজার সদস্যের সমিতির প্রায় দুই কোটি টাকার সঞ্চয় প্রকল্পের লোকজন লেনদেন করছেন।

টাঙ্গুয়ার হাওর সমিতির সদস্য বিনোদপুর গ্রামের আবুল হোসেন ও বীরেন্দ্র দাস বলেন, ‘আমাদের স্বপ্ন দেখানো হয়েছিল। কিন্তু সমিতির টাকা কিভাবে খরচ হয়, আমরা জানি না। আমাদের অর্থ সম্পাদক আহমদ কবীরও আমাদের সমিতিতে কত টাকা আছে, তা জানেন না। আমাদের এই হিসাব জানতে দেন না। আমরা ইজারা আমলে যেভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছি, এখনো সেভাবে হচ্ছি।’

আইইউসিএন টাঙ্গুয়ার হাওর প্রকল্প ব্যবস্থাপক সাঈদ মাহমুদ রিয়াদ বলেন, ‘সমিতির লোকজন অসচেতন, হিসাব-নিকাশ জানে না। তাই একজন লোক রাখা হয়েছে হিসাব-নিকাশের জন্য।’ প্রকল্পের ব্যবস্থাপনায় কোনো অনিয়ম হচ্ছে না-দাবি করে তিনি বলেন, ‘চারটি পর্যায়ে আমাদের অডিট হয়। কোনো অডিটে দুর্নীতি প্রমাণিত হয়নি। তবে মেয়াদ শেষের আগে নানা কর্মসূচি নেওয়ার কথা স্বীকার করেছেন তিনি।’ সীমানা চিহ্নিত করার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এত দিন প্রতিবেদনটি পাওয়া যাচ্ছিল না। সম্প্রতি অফিসে খুঁজে পাওয়া গেছে।’

তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, ‘টাঙ্গুয়ার হাওর এখন মাছ, গাছ ও পাখিশূন্য। আগে আধঘণ্টায় যে মাছ পাওয়া যেত, এখন আট ঘণ্টায়ও সে মাছ পাওয়া যায় না। এতেই বোঝা যায়, এক যুগ ধরে কী পরিমাণ লুটপাট হচ্ছে। হাওরবাসী এ লুটপাটের ব্যবস্থাপনার বিপক্ষে থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এবারও মেয়াদ বাড়ানোর জন্য লোক দেখানো কর্মসূচির মাধ্যমে সরকারকে চাপ সৃষ্টি করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়াতে চাচ্ছে।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য গত শনিবার বিকেলে আইইউসিএন ঢাকা অফিসে ফোন করলে ছুটি থাকায় কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। টেলিফোন অপারেটরের কাছে কর্মকর্তাদের মোবাইল ফোন নম্বর চাইলে দিতে রাজি হননি।