ঢাকা ১০:৩১ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের যে ৭টি পরীক্ষা অবশ্যই করা উচিত

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৭:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২২
  • ১০৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেককে নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়া খুবই জরুরি। বিশেষ করে ৩০ বছর বয়সের পর নারীদের বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে, যেগুলো এড়ানোর জন্য বিশেষ কিছু সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সাধারণত ২৫ বছরের পর থেকেই নারী শরীরের অসংখ্য কোষের কর্মক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে, ফলে এর প্রভাব শরীরের অনেক অঙ্গে পড়তে শুরু করে। আর এর ফলাফল হিসাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে, ত্বকের সৌন্দর্য কমতে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে শুরু করে। এ সময় নারীরা বিয়ে, সন্তান ধারণ কিংবা ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে নিজেকে সময় দিতে পারেন না। ফলে শরীরে বাসা বাঁধে নানাবিধ রোগ। ৩০ বছর বয়সের পর মহিলাদের যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে-

হাঁপানি

অনেকেই হাঁপানিকে শিশুদের রোগ বলে মনে করেন। কিন্তু বড়রাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকি পরিসংখ্যান মতে ৩৫ বছরের পর মহিলাদের মধ্যে হাঁপানি সংক্রান্ত মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে।

পিঠে ব্যথা

পিঠে ব্যথা বা ব্যাক পেইন খুবই কমন একটি সমস্যা। এমনকি পুরুষ হোক বা নারী, আপনি এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাবেন যিনি জীবনে কোনো না কোনো সময় পিঠের ব্যথায় ভোগেনি। আমাদের দেশে নারীদের মধ্যে এ সমস্যা আরও বেশি প্রকট। কেননা এখন সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বেড়ে গেছে। আর সিজারের পর নারীদের মধ্যে পিঠে ব্যথা খুব কমন।

হৃদরোগ

বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ ৩০ ঊর্ধ্ব নারীদের এক নম্বর শত্রু। এমনকি ধীরে ধীরে এ বয়সের সীমা আরও কমে আসছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সার্কুলেশনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, ৩৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের মোট সংখ্যা কিছুটা কমেছে অপরদিকে, অপেক্ষাকৃত কম বয়সের মহিলাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাত

বাত বা আর্থ্রাইটিস ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের আরও একটি সাধারণ সমস্যা। আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশনের মতে, নারীদের বাতের সূত্রপাতের গড় বয়স ৩০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। তবে সত্যি বলতে বাতের নির্ধারিত কোনো বয়স নেই। আরও কম বয়সেও নারী শরীরে বাতের আক্রমণ হতে পারে। সন্তান জন্মদানের পর ওজন বৃদ্ধিও হাড়ের সন্ধিস্থলের ব্যথার একটি বড় কারণ। তবে ৩০ পেরোলে বাত সংক্রান্ত সমস্যার প্রতি সচেতন হওয়া জরুরি।

হাড় ক্ষয়

এর কারণ হলো ৩০ বছর হলেই মহিলাদের হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে শুরু হয় ব্যথা। হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ক্যালশিয়ামের ঘাটতি। এমনকি গুরুতর পর্যায়ে হাড় ভঙ্গুর পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

মেটাবলিক রেট কমে যাওয়া

অল্প বয়সে মেটাবলিজম বেশি থাকে শরীরে ফলে এলোমেলো খাদ্যাভ্যাসে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু ৩০ পেরোলে শরীরে মেটাবলিক রেট কমতে শুরু করে। ফলে এলোমেলো খাদ্যাভ্যাস ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। শরীরের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য এবং মেটাবলিক রেট বাড়ানোর জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করা অত্যন্ত জরুরি।

ডায়াবেটিস

ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক মহিলার বয়স ৩০ পেরোতে না পেরোতে আরও একটি বড় বোঝা সঙ্গে লড়াই করতে হয়। সেটা হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতে ওজন নিয়ন্ত্রণ ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস খুবই জরুরি। এ ছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা বা হাঁটা এ রোগের ঝুঁকি অনেকটায় কমিয়ে দেয়।

৩০ বছর বয়সের পর যে পরীক্ষাগুলো অবশ্যই মহিলাদের করা উচিত। ৩০ পেরোলেই যে পৃথিবীর সব রোগ আপনার শরীরে এসে ঘাঁটি গাড়বে তা কিন্তু নয়। তবে নারীর শরীর ৩০ বছরের পর থেকেই মূলত ক্ষয়প্রাপ্ত হতে শুরু করে। ফলে নানাবিধ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এসব রোগের ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। চলুন দেখি ৩০ বছর বয়সের পর পরীক্ষাগুলো অবশ্যই মহিলাদের করা উচিত।

পেলভিক এক্সামিনেশন

বয়স যদি ৩০ পেরিয়ে থাকে তাহলে এ পরীক্ষা জরুরি। এতে প্রত্যেক নারী তার জরায়ুর সঠিক অবস্থান জানতে পারবেন। সন্তান জন্মদানের পর অনেক মহিলারই জরায়ু নিচে নেমে যায়, এমনকি অনেক সময় সেটা বাইরে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় সেটা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না। তবে পেলভিক এক্সামিনেশনের মাধ্যমে জরায়ুর সঠিক অবস্থান জানা সম্ভব এবং সময় থাকতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

প্যাপ স্মেয়ার পরীক্ষা

প্যাপ স্মেয়ার খুব সহজ এবং ব্যথামুক্ত একটি পরীক্ষা। জরায়ুমুখ থেকে রস নিয়ে এ টেস্ট করা হয়। জরায়ু ক্যানসার শনাক্তকরণের জন্য এটি খুবই কার্যকর একটি পরীক্ষা। ক্যানসার, ক্যানসারের পূর্বাবস্থা, বা জরায়ুমুখের প্রদাহ শনাক্ত করতে এ টেস্ট করা হয়ে থাকে।

মেমোগ্রাফি

দুনিয়াজুড়ে স্তন ক্যানসার মহিলাদের জন্য এখন একটি আতঙ্কের নাম। আর ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। স্তন ক্যানসার প্রাথমিকভাবে দীর্ঘদিন কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই শরীরে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। তাই ৩০ বছর বয়সের পর প্রতি ১ বছর পরপর মেমোগ্রাফি করা উচিত। কারণ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেলে এ রোগের সঙ্গেও লড়াই করা সম্ভব।

ত্বক পরীক্ষা

স্তন ক্যানসারের মতো ত্বকের ক্যানসারও ত্রিশোর্ধ্ব মহিলাদের একটি মারাত্মক রোগ। এখন বাজারে অসংখ্য রং ফর্সাকারী ক্রিম রয়েছে এবং মহিলারা সেসব ক্রিমের সাইড ইফেক্ট সম্পর্কে না জেনেই ব্যবহার করা শুরু করে। এমনকি অতিরিক্ত নিুমানের মেকআপ ব্যবহারের কারণেও ত্বকের অনেক বেশি ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে যা পরবর্তিতে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। তাই একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পরপর ত্বক পরীক্ষা করা জরুরি।

চোখের পরীক্ষা

৩০-৩৫ বছর বয়স পর শুধু মহিলাদের নয়, পুরুষদেরও দৃষ্টি দুর্বল হতে শুরু করে। মহিলারা সেলাই এবং রান্নার কাজ বেশি করার কারণে তাদের দৃষ্টি আরও দ্রুত কমে। তাই ৩০ বছর পার হলেই নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো উচিত।

ওপরের পরীক্ষাগুলো ছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা রয়েছে যেগুলো ৩০ বছর পার হলেই নিয়মিত করা দরকার। যেমন-

কলস্টেরল টেস্ট : দেহে কলস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত কলস্টেরল টেস্ট করতে হবে।

হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা : ৩০ বছরের পরই মহিলাদের হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে এবং ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয়ের জন্য ডেক্সা স্ক্যান নামে একটি টেস্ট রয়েছে। এ টেস্ট ৩০ বছর পর সব মহিলাদেরই করা উচিত।

ডায়াবেটিস টেস্ট : ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য মহিলাদের প্রতি বছর রক্তে সুগার টেস্ট করা উচিত। বিশেষ করে যদি মাতৃত্বকালীন রক্তে সুগার বেশি থাকে, ওজন বেশি থাকে বা ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকে তবে অবশ্যই প্রতি বছর বছর রক্তে সুগার টেস্ট করা উচিত।

৩০ বছর বয়সের পর মহিলাদের জীবনযাপনের কিছু নিয়ম : বয়সের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি। বিশেষ করে ত্রিশোর্ধ্ব মহিলাদের শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং কর্মক্ষমতা কমে যায়। তবে ৩০ বছর বয়সের পর মহিলাদের জীবনযাপনের কিছু নিয়ম মেনে চললে অনেক অনাকাক্সিক্ষত শারীরিক সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা যায়। যেমন-

কফি খাওয়া কমিয়ে দিন এমনকি চায়ের সঙ্গেও দুধ এবং চিনি বন্ধ করে দিন।

শরীর যাতে ভেঙে না পড়ে তাই ধূমপান এবং অ্যালকোহলকে পুরোপুরি না বলুন।

৩০ পেরোলে নারীদেহে পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা যায় তাই নিয়মিত পাকা কলা খাওয়া উচিত।

সারা দিনে তিন বেলা পরিমাণমতো খাবার এবং দুই বেলার মাঝখানে হালকা খাবার খেতে হবে।

প্রতিবেলার খাবারে সবজি রাখুন। বিশেষ করে পালংশাক। কারণ এতে আছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি২, সি, ই, কে, এবং ফসফরাস ও জিঙ্ক।

হাড়কে মজবুত রাখতে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান। চর্বিজাতীয় খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন আধা ঘণ্টা হালকা শরীরচর্চা করুন। প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটুন।

কোনো শারীরিক সমস্যাকে ছোট করে দেখবেন না।

মোট কথা ৩০ বছর বয়সের পর মহিলাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে কিছু সচেতন পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। যদি সময়মতো নিজেকে সচেতন রাখতে পারেন, তাহলে সম্ভাব্য রোগ বালাই থেকে অনেকটা দূরে থাকা সম্ভব।

লেখক : প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ।

facebook sharing button
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের যে ৭টি পরীক্ষা অবশ্যই করা উচিত

আপডেট টাইম : ১২:০৭:০৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৩ অগাস্ট ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রত্যেককে নিজের শরীরের প্রতি যত্নশীল হওয়া খুবই জরুরি। বিশেষ করে ৩০ বছর বয়সের পর নারীদের বিশেষ কিছু স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকে, যেগুলো এড়ানোর জন্য বিশেষ কিছু সচেতন পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। সাধারণত ২৫ বছরের পর থেকেই নারী শরীরের অসংখ্য কোষের কর্মক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে, ফলে এর প্রভাব শরীরের অনেক অঙ্গে পড়তে শুরু করে। আর এর ফলাফল হিসাবে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করে, ত্বকের সৌন্দর্য কমতে থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমতে শুরু করে। এ সময় নারীরা বিয়ে, সন্তান ধারণ কিংবা ক্যারিয়ার নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে নিজেকে সময় দিতে পারেন না। ফলে শরীরে বাসা বাঁধে নানাবিধ রোগ। ৩০ বছর বয়সের পর মহিলাদের যেসব শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে-

হাঁপানি

অনেকেই হাঁপানিকে শিশুদের রোগ বলে মনে করেন। কিন্তু বড়রাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। এমনকি পরিসংখ্যান মতে ৩৫ বছরের পর মহিলাদের মধ্যে হাঁপানি সংক্রান্ত মৃত্যু ঝুঁকি বেশি থাকে।

পিঠে ব্যথা

পিঠে ব্যথা বা ব্যাক পেইন খুবই কমন একটি সমস্যা। এমনকি পুরুষ হোক বা নারী, আপনি এমন মানুষ খুব কমই খুঁজে পাবেন যিনি জীবনে কোনো না কোনো সময় পিঠের ব্যথায় ভোগেনি। আমাদের দেশে নারীদের মধ্যে এ সমস্যা আরও বেশি প্রকট। কেননা এখন সিজারের মাধ্যমে সন্তান প্রসবের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যহারে বেড়ে গেছে। আর সিজারের পর নারীদের মধ্যে পিঠে ব্যথা খুব কমন।

হৃদরোগ

বিশ্বব্যাপী হৃদরোগ ৩০ ঊর্ধ্ব নারীদের এক নম্বর শত্রু। এমনকি ধীরে ধীরে এ বয়সের সীমা আরও কমে আসছে। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সার্কুলেশনে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে, ৩৫ থেকে ৭৫ বছর বয়সের নারীদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের মোট সংখ্যা কিছুটা কমেছে অপরদিকে, অপেক্ষাকৃত কম বয়সের মহিলাদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাত

বাত বা আর্থ্রাইটিস ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের আরও একটি সাধারণ সমস্যা। আর্থ্রাইটিস ফাউন্ডেশনের মতে, নারীদের বাতের সূত্রপাতের গড় বয়স ৩০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে। তবে সত্যি বলতে বাতের নির্ধারিত কোনো বয়স নেই। আরও কম বয়সেও নারী শরীরে বাতের আক্রমণ হতে পারে। সন্তান জন্মদানের পর ওজন বৃদ্ধিও হাড়ের সন্ধিস্থলের ব্যথার একটি বড় কারণ। তবে ৩০ পেরোলে বাত সংক্রান্ত সমস্যার প্রতি সচেতন হওয়া জরুরি।

হাড় ক্ষয়

এর কারণ হলো ৩০ বছর হলেই মহিলাদের হাড়ের ঘনত্ব কমতে থাকে। হাড় দুর্বল হয়ে পড়ে, ফলে শুরু হয় ব্যথা। হাড়ের ঘনত্ব কমে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ ক্যালশিয়ামের ঘাটতি। এমনকি গুরুতর পর্যায়ে হাড় ভঙ্গুর পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

মেটাবলিক রেট কমে যাওয়া

অল্প বয়সে মেটাবলিজম বেশি থাকে শরীরে ফলে এলোমেলো খাদ্যাভ্যাসে তেমন কোনো সমস্যা হয় না। কিন্তু ৩০ পেরোলে শরীরে মেটাবলিক রেট কমতে শুরু করে। ফলে এলোমেলো খাদ্যাভ্যাস ওজন বৃদ্ধির কারণ হতে পারে। শরীরের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য এবং মেটাবলিক রেট বাড়ানোর জন্য নিয়মিত শরীরচর্চা করা অত্যন্ত জরুরি।

ডায়াবেটিস

ওজন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক মহিলার বয়স ৩০ পেরোতে না পেরোতে আরও একটি বড় বোঝা সঙ্গে লড়াই করতে হয়। সেটা হলো টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতে ওজন নিয়ন্ত্রণ ও পরিমিত খাদ্যাভ্যাস খুবই জরুরি। এ ছাড়া নিয়মিত শরীরচর্চা বা হাঁটা এ রোগের ঝুঁকি অনেকটায় কমিয়ে দেয়।

৩০ বছর বয়সের পর যে পরীক্ষাগুলো অবশ্যই মহিলাদের করা উচিত। ৩০ পেরোলেই যে পৃথিবীর সব রোগ আপনার শরীরে এসে ঘাঁটি গাড়বে তা কিন্তু নয়। তবে নারীর শরীর ৩০ বছরের পর থেকেই মূলত ক্ষয়প্রাপ্ত হতে শুরু করে। ফলে নানাবিধ রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এসব রোগের ঝুঁকি এড়াতে নিয়মিত কিছু শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে নেওয়া জরুরি। চলুন দেখি ৩০ বছর বয়সের পর পরীক্ষাগুলো অবশ্যই মহিলাদের করা উচিত।

পেলভিক এক্সামিনেশন

বয়স যদি ৩০ পেরিয়ে থাকে তাহলে এ পরীক্ষা জরুরি। এতে প্রত্যেক নারী তার জরায়ুর সঠিক অবস্থান জানতে পারবেন। সন্তান জন্মদানের পর অনেক মহিলারই জরায়ু নিচে নেমে যায়, এমনকি অনেক সময় সেটা বাইরে বেরিয়ে আসে। এ অবস্থায় সেটা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলা ছাড়া উপায় থাকে না। তবে পেলভিক এক্সামিনেশনের মাধ্যমে জরায়ুর সঠিক অবস্থান জানা সম্ভব এবং সময় থাকতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

প্যাপ স্মেয়ার পরীক্ষা

প্যাপ স্মেয়ার খুব সহজ এবং ব্যথামুক্ত একটি পরীক্ষা। জরায়ুমুখ থেকে রস নিয়ে এ টেস্ট করা হয়। জরায়ু ক্যানসার শনাক্তকরণের জন্য এটি খুবই কার্যকর একটি পরীক্ষা। ক্যানসার, ক্যানসারের পূর্বাবস্থা, বা জরায়ুমুখের প্রদাহ শনাক্ত করতে এ টেস্ট করা হয়ে থাকে।

মেমোগ্রাফি

দুনিয়াজুড়ে স্তন ক্যানসার মহিলাদের জন্য এখন একটি আতঙ্কের নাম। আর ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের মধ্যে স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি বেশি থাকে। স্তন ক্যানসার প্রাথমিকভাবে দীর্ঘদিন কোনো ধরনের লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াই শরীরে ঘাপটি মেরে থাকতে পারে। তাই ৩০ বছর বয়সের পর প্রতি ১ বছর পরপর মেমোগ্রাফি করা উচিত। কারণ প্রাথমিকভাবে শনাক্ত করা গেলে এ রোগের সঙ্গেও লড়াই করা সম্ভব।

ত্বক পরীক্ষা

স্তন ক্যানসারের মতো ত্বকের ক্যানসারও ত্রিশোর্ধ্ব মহিলাদের একটি মারাত্মক রোগ। এখন বাজারে অসংখ্য রং ফর্সাকারী ক্রিম রয়েছে এবং মহিলারা সেসব ক্রিমের সাইড ইফেক্ট সম্পর্কে না জেনেই ব্যবহার করা শুরু করে। এমনকি অতিরিক্ত নিুমানের মেকআপ ব্যবহারের কারণেও ত্বকের অনেক বেশি ক্ষতিসাধন হয়ে থাকে যা পরবর্তিতে ক্যানসারে রূপ নিতে পারে। তাই একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ পরপর ত্বক পরীক্ষা করা জরুরি।

চোখের পরীক্ষা

৩০-৩৫ বছর বয়স পর শুধু মহিলাদের নয়, পুরুষদেরও দৃষ্টি দুর্বল হতে শুরু করে। মহিলারা সেলাই এবং রান্নার কাজ বেশি করার কারণে তাদের দৃষ্টি আরও দ্রুত কমে। তাই ৩০ বছর পার হলেই নিয়মিত চোখ পরীক্ষা করানো উচিত।

ওপরের পরীক্ষাগুলো ছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা রয়েছে যেগুলো ৩০ বছর পার হলেই নিয়মিত করা দরকার। যেমন-

কলস্টেরল টেস্ট : দেহে কলস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে হার্টের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। তাই হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নিয়মিত কলস্টেরল টেস্ট করতে হবে।

হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা : ৩০ বছরের পরই মহিলাদের হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে এবং ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। হাড়ের ঘনত্ব নির্ণয়ের জন্য ডেক্সা স্ক্যান নামে একটি টেস্ট রয়েছে। এ টেস্ট ৩০ বছর পর সব মহিলাদেরই করা উচিত।

ডায়াবেটিস টেস্ট : ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস নির্ণয়ের জন্য মহিলাদের প্রতি বছর রক্তে সুগার টেস্ট করা উচিত। বিশেষ করে যদি মাতৃত্বকালীন রক্তে সুগার বেশি থাকে, ওজন বেশি থাকে বা ডায়াবেটিসের পারিবারিক ইতিহাস থাকে তবে অবশ্যই প্রতি বছর বছর রক্তে সুগার টেস্ট করা উচিত।

৩০ বছর বয়সের পর মহিলাদের জীবনযাপনের কিছু নিয়ম : বয়সের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা জরুরি। বিশেষ করে ত্রিশোর্ধ্ব মহিলাদের শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং কর্মক্ষমতা কমে যায়। তবে ৩০ বছর বয়সের পর মহিলাদের জীবনযাপনের কিছু নিয়ম মেনে চললে অনেক অনাকাক্সিক্ষত শারীরিক সমস্যা থেকে বেঁচে থাকা যায়। যেমন-

কফি খাওয়া কমিয়ে দিন এমনকি চায়ের সঙ্গেও দুধ এবং চিনি বন্ধ করে দিন।

শরীর যাতে ভেঙে না পড়ে তাই ধূমপান এবং অ্যালকোহলকে পুরোপুরি না বলুন।

৩০ পেরোলে নারীদেহে পটাশিয়ামের ঘাটতি দেখা যায় তাই নিয়মিত পাকা কলা খাওয়া উচিত।

সারা দিনে তিন বেলা পরিমাণমতো খাবার এবং দুই বেলার মাঝখানে হালকা খাবার খেতে হবে।

প্রতিবেলার খাবারে সবজি রাখুন। বিশেষ করে পালংশাক। কারণ এতে আছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি২, সি, ই, কে, এবং ফসফরাস ও জিঙ্ক।

হাড়কে মজবুত রাখতে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার খান। চর্বিজাতীয় খাবার যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।

সপ্তাহে অন্তত ৫ দিন আধা ঘণ্টা হালকা শরীরচর্চা করুন। প্রতিদিন নিয়ম করে হাঁটুন।

কোনো শারীরিক সমস্যাকে ছোট করে দেখবেন না।

মোট কথা ৩০ বছর বয়সের পর মহিলাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি কমাতে কিছু সচেতন পদক্ষেপ নেওয়া খুবই জরুরি। যদি সময়মতো নিজেকে সচেতন রাখতে পারেন, তাহলে সম্ভাব্য রোগ বালাই থেকে অনেকটা দূরে থাকা সম্ভব।

লেখক : প্রসূতি ও স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ।

facebook sharing button