পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’ মন্ত্রে কমিউনিটি পুলিশিং

সেবাই পুলিশের ধর্ম। পুলিশের কাজ কী এক কথায় বুঝাতে গেলে তাই বলা হয়। কিন্তু আইন ও বিধিমালা দ্বারা পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত পুলিশের কাজ মূলত অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। বস্তুত আইনের আওতায় প্রদত্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করলে তা জনগণের সেবা করাই হয়। অর্থাৎ পুলিশের কাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জনসম্পৃক্ততা।

অন্যদিকে গণমাধ্যমের অন্যতম কাজ হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ এবং তা জনগণের সামনে উপস্থাপন করা। বস্তুনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সংবাদ পরিবেশন করে জনগণকে সঠিক পথ নির্দেশনার মাধ্যমে গণমাধ্যম জনসেবার কাজটিই করে। অর্থাৎ গণমাধ্যমের কাজের অন্যতম বৈশিষ্ট জনসম্পৃক্ততা।

গণমাধ্যমে নানা বিষয়ে সংবাদ পরিবেশন করা হলেও তার একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে নেয় অপরাধ বিষয়ক সংবাদ প্রতিবেদন। আর অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার পুলিশের অন্যতম দায়িত্ব ও কর্তব্য। বস্তুত পুলিশ এবং গণমাধ্যমের লক্ষ্য এক ও অভিন্ন। একটি গণতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় তারা পরস্পরের পরিপূরক ও সহায়ক হিসেবে গণ্য।

গণমাধ্যম ও পুলিশ
একটি গণতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় গণমাধ্যম ও পুলিশ পরস্পর পরিপূরক হলেও এটা অনস্বীকার্য যে, গণমাধ্যম ও পুলিশের মধ্যকার সম্পর্ক উভয়ের জন্যই বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সত্য উদঘাটন উভয়ের উদ্দেশ্য হওয়া সত্ত্বেও কাজের ধরণের কারণে তারা পরস্পরের কাছের, আবার দূরেরও বটে। কেননা গোপনীয়তা ও বিশ্বস্ততা পুলিশের অঙ্গীকারের অংশ। গোপনীয়তা এবং বিশ্বস্ততার মধ্য দিয়ে পুলিশকে প্রতিরোধমূলক পরিকল্পনা এবং প্রতিকারমূলক (তদন্ত) কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়।

অন্যদিকে গণমাধ্যমের অস্তিত্ব নির্ভর করছে তথ্য উদঘাটন, প্রচার এবং প্রকাশের উপর। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে গণমাধ্যমকে চলতে হয়। দ্রুততার সাথে প্রতিবেদন তৈরি করতে তাৎক্ষণিক পুলিশ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি না পেলে নাখোশ হন সংবাদকর্মী। আবার ‘স্কুপ’ প্রতিবেদন তৈরিতে আগ্রহী নাছোড় সাংবাদিকের অব্যাহত প্রশ্নে বিরক্ত পুলিশ কর্মকর্তা। তবে, সাদামাটা চোখে কর্মের ধরণে যথেষ্ট ব্যবধান থাকা সত্ত্বেও উভয় পক্ষ যখন পেশাদারিত্বের সাথে কাজ করে তখন তাদের কর্মকাণ্ড একই উদ্দেশ্যে পরিচালিত হয়। অর্থাৎ জনসেবার লক্ষ্যে কিংবা জনগণের জন্যই তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়।

পরস্পর নির্ভরশীলতা
গণমাধ্যম ও পুলিশের সম্পর্কের মধ্যে যতই টানাপোড়েন থাক না কেন, তারা পরস্পরের পরিপূরক ও সহায়ক। অপরাধ প্রতিরোধ, অপরাধ উদঘাটন এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পরস্পরের সহযোগিতা জরুরী। অপরাধ সম্পর্কে তৈরি প্রতিবেদন জনগণের মধ্যে ব্যাপক আগ্রহ সৃষ্টি করে। এর মধ্য দিয়ে অপরাধভীতি যেমন ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি অপরাধ সম্পর্কে পুলিশের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কেও আগ্রহ সৃষ্টি হয়। গণমাধ্যম কর্মীগণ পুলিশের সহযোগিতা ছাড়া সংঘটিত ঘটনা সম্পর্কে পরিপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারেন না। আবার জনগণের আস্থা সৃষ্টি এবং অপরাধভীতি দূরীকরণে পুলিশের গৃহীত পদক্ষেপ কিংবা অর্জিত সফলতা গণমাধ্যম ছাড়া সকল নাগরিককে জানানো সম্ভব নয়।
তাছাড়া গণমাধ্যমে প্রকাশিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন থেকে পুলিশ তার কী করণীয় সে সম্পর্কে সহজেই ধারণা লাভ করে। এখানে লক্ষ্যণীয় যে, সারা বিশ্বেই পুলিশ সর্বদাই গণমাধ্যমের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। সমাজে পুলিশের ভাবমূর্তি গড়ে তুলতে গণমাধ্যম প্রধান ভূমিকা রাখে। জনমতে প্রভাব বিস্তার করতে চাইলে গণমাধ্যমকে অবহেলা করার সুযোগ নেই। আইন প্রয়োগে গণমাধ্যমের সহযোগিতা নিয়ে পুলিশ প্রাথমিক লক্ষ্য পূরণ অর্থাৎ অপরাধ কমিয়ে আনার কাজটি সহজেই করতে পারে।

ডিএমপি ও গণমাধ্যম
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এবং গণমাধ্যম দীর্ঘদিন ধরে একটি সহযোগিতামূলক পরিবেশের মধ্যে দিয়ে কাজ করে আসছে। ২০১২ সাল থেকে একজন উপ-পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে ডিএমপি’র একটি বিভাগ পুলিশ এবং গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে সুদৃঢ় সেতুবন্ধন স্থাপন করেছে। আধুনিক এবং স্বয়ংসম্পূর্ণ এ বিভাগ থেকে নিয়মিতভাবে সংবাদ ব্রিফিং এর আয়োজন করা হয়। সংবাদকর্মীগণ তাদের প্রাপ্ত তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করে নিতে পারেন এ বিভাগ থেকে। পাশাপাশি তারা ওয়াইফাই এবং মিডিয়া বিভাগের কম্পিউটার ব্যবহার করে সংশ্লিষ্ট অফিসে দ্রুতই সংবাদ প্রেরণ করতে পারেন। গণমাধ্যম কর্মীদের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে পুলিশি সহযোগিতার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্বের সাথে দেখা হয়। অন্যদিকে, গণমাধ্যমের কল্যাণে ডিএমপি সারাদেশে আজ একটি উল্লেখযোগ্য অবস্থানে পৌঁছেছে। অপরাধ প্রতিরোধ ও উদঘাটনে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক মত বিনিময়ের ফলে ডিএমপি সমৃদ্ধ হয়েছে এবং জনগণের চাহিদা মোতাবেক জনবান্ধব পুলিশিং ব্যবস্থা চালু করার সুযোগ পেয়েছে। ডিএমপি কখনও গণমাধ্যমকে উপেক্ষা করে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে না, বরং সবসময় পেশাগত সম্পর্ক বজায় রেখে তার সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে।

ডিএমপি এবং জনবান্ধব পুলিশিং
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) জনগণ ও পুলিশের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে একটি টেকসই নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিরাপদ ঢাকা বাস্তবায়নে অঙ্গীকারবদ্ধ। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে জনগণের অংশগ্রহণ যেমন দরকার তেমনি দরকার গণমাধ্যমের সহযোগিতা। পুলিশের সেবাকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করে জনগণের নিকট পৌঁছে দেয়া এবং পুলিশের কার্যক্রমে জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সম্প্রতি ডিএমপি এলাকায় চালু করা হয়েছে বিট পুলিশিং। ইতোপূর্বে চালু করা কমিউনিটি পুলিশ ব্যবস্থাকে জোরদার করাই বিট পুলিশিং এর উদ্দেশ্য।

বস্তুত বিট এলাকায় কমিউনিটি পুলিশিংকে কার্যকরী করার মধ্য দিয়ে একই কার্যক্রম এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ঢাকা মহানগরে ২৮৭টি বিট কার্যকর আছে। বিট পুলিশিং কার্যক্রমের ফলে পুলিশের প্রতিটি এলাকা, এলাকার অপরাধ প্রকৃতি এবং অপরাধী সম্পর্কে ধারণা বৃদ্ধি পাবে। এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, বসবাসকারীদের কৌশলগত অবস্থান এবং এলাকাবাসী সম্পর্কে তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ হবে। এতে করে কোন অপরাধ সংঘটিত হলে সংশ্লিষ্ট অপরাধী সনাক্ত করা সহজতর হবে এবং অপরাধ দমনে এবং উদঘাটনে পুলিশের ‘রেসপন্স টাইম’ কমে আসবে। বিট পুলিশিং এর মাধ্যমে পুলিশিং কার্যক্রম বেগবান হবে, জনগণের সাথে পুলিশের সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি পাবে এবং অপরাধ প্রতিরোধে জনগণের সহায়তার সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়াও গণসচেতনতা বৃদ্ধি ও সামাজিক অপরাধসমূহ হ্রাস পাবে।

ডিএমপি বিভিন্ন সময়ে লিফলেট বিতরণ, পালাগান, মাইকিং এর মাধ্যমে বিভিন্ন অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। ডিএমপি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার জনবান্ধব পুলিশের অন্যতম উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। এছাড়া শীতবস্ত্র বিতরণ ও রক্তদান কর্মসূচির মতো মানবিক কার্যক্রম ডিএমপি পরিচালনা করে থাকে। এছাড়াও আর্থ মানবতার সেবায় অবদান রাখার জন্য ডিএমপি গড়ে তুলেছে অত্যাধুনিক ব্লাড ব্যাংক। সকল কার্যক্রমেই গণমাধ্যম ডিএমপির অন্যতম অংশীদার।

নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ
বিট পুলিশিং এর অন্যতম কার্যক্রম হিসেবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এলাকায় বাড়ীর মালিক ও ভাড়াটিয়া সম্পর্কে নির্দিষ্ট ফরমে পরিচিতিমুলক তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। কারণ বিভিন্ন অপরাধী ও জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা বাড়ীর মালিকের অজ্ঞাতে ভূয়া নাম ঠিকানা ও পেশা ব্যবহার করছে, কিংবা নাম ঠিকানা অপ্রকাশিত রেখে এবং কোন চুক্তি না করেই বাড়ী ভাড়া নিচ্ছে। এতে তারা নির্বিঘ্নে তাদের অপরাধ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে নিরীহ নাগরিকদের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টিসহ আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি করার অপচেষ্টা করছে। অপরাধ সংঘটন বা জঙ্গি কর্মকাণ্ডের তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশি অভিযানের পর দেখা যায় অপরাধী (ভাড়াটিয়া)দের সম্পর্কে কোন তথ্য বাড়ীর মালিক দিতে ব্যর্থ হন। ফলে অপরাধের রহস্য উদঘাটন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা যেমন কষ্টসাধ্য হয়, তেমনি বাড়ীর মালিক অহেতুক আইনী জটিলতার সম্মুখীন হন। ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ এর ৪২ ধারা অনুসারে জনগণের কাছে অপরাধী গ্রেফতার ও শান্তি শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সাহায্য চাইলে জনগণ কর্তৃক পুলিশকে সহায়তা করার আইনী বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাছাড়া ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা, ২০০৬ অনুসারে ঢাকা মহানগর এলাকায় অপরাধী সনাক্তকরণ ও তা প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা এবং জনসাধারণের শান্তি বিঘ্নকারী যেকোনো উদ্যোগ প্রতিহতকরণে ব্যবস্থা নেয়া কমিশনারের অন্যতম দায়িত্ব।

তথ্যের সংরক্ষণ ও ব্যবহার
মালিক ও ভাড়াটিয়া সম্পর্কে সংগৃহীত তথ্য সংরক্ষণে গোপনীয়তা রক্ষা করা হবে এবং তথ্য উপাত্ত অপরাধ প্রতিরোধ এবং প্রতিকারে ব্যবহার করা হবে। সংগৃহীত তথ্য যাতে অন্য কেউ পেতে না পারে এবং এর অপব্যবহার বা প্রয়োগ করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে এবং ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা নিবিড় তদারকির মাধ্যমে নির্দেশনা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন। কোনো ব্যক্তিগত তথ্য যৌক্তিক কারণে উপস্থাপন না করতে চাইলে তা বিশেষ বিবেচনায় রাখার জন্য অফিসার ইনচার্জদের নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে যেকোনো ধরণের হয়রানি পরিহার করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তারপরও কোনো ব্যবস্থা বা পুলিশ কর্মকর্তাদের কোনো আচরণ সম্পর্কে কোনো মতামত বা অভিযোগ থাকলে থানার অফিসার ইনচার্জসহ ঊর্দ্ধতন র্কর্মতাদের অবহিত করলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

বাড়ীওয়ালাদের/স্থাপনা মালিকদের অনুরোধ করা হয়েছে, যাতে তারা তার বাড়ী বা স্থাপনার ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংরক্ষণ করেন। এর জন্য যেমন আইনী বাধ্যবাধকতা আছে, তেমনি ব্যক্তি নিরাপত্তা এবং জননিরাপত্তার জন্য ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংরক্ষণ এবং তা পুলিশকে সরবরাহ করা তার নাগরিক দায়িত্বও বটে। উন্নত বিশ্বের বড় শহরে নাগরিক তথ্য সংরক্ষণ এবং বাড়ীভাড়ার ক্ষেত্রে এই তথ্য ব্যবহারের নিয়ম আছে। দেরীতে হলেও ডিএমপি এ ব্যবস্থা চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। তথ্য সংগ্রহের কাজ সফলভাবে করতে পারলে নাগরিক নিরাপত্তা, জননিরাপত্তা ও সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে, যা রূপকল্প ২০২১ এর লক্ষ্য অর্জনের জন্য জরুরি।

ইতোমধ্যে কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ, সম্মানিত নগরবাসীদের বিট পুলিশিং কার্যক্রমের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন এবং বাড়ী কিংবা প্রতিষ্ঠানের মালিক ও ভাড়াটিয়া সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে অবহিত করেছেন এবং নিশ্চিত করেছেন সংগৃহীত তথ্য ব্যক্তি সনাক্তকরণ, অপরাধ প্রতিরোধ এবং অপরাধ উদ্ঘাটন ছাড়া অন্য কোনো কাজে বা অন্য কোনো বিভাগ কর্তৃক ব্যবহৃত হবে না, যা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে নগরবাসী এবং গণমাধ্যমের সাড়া আশাব্যঞ্জক। শুধু এ বিষয়ে নয়, অপরাধ দমনের জন্য সকল ক্ষেত্রেই গণমাধ্যমের অব্যাহত সহযোগিতা অন্যতম নিয়ামক।

ডিজিটাইজেশন ও ডিএমপি
বাড়ী, স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং ভাড়াটিয়াদের সম্পর্কে তথ্য হোল্ডিং নম্বর, রোড নম্বর এবং মহল্লাভিত্তিক বোর্ড ফাইলে সংশ্লিষ্ট থানায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে। তবে এ তথ্যাদি চূড়ান্তভাবে একটি ডাটাবেসে সংরক্ষণ করা হবে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষিত তথ্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে সহজেই ব্যবহার করা সম্ভব হবে এবং একই সাথে স্তরে স্তরে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যাবে। ডাটাবেসের ডিজিটাইজেশন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের অঙ্গীকারের অংশ। ইতোমধ্যে ডিএমপি ট্রাফিক বিভাগের জন্য ই-প্রসিকিউশন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। ডিএমপির প্রশাসনিক ব্যবস্থা গতিশীল করার জন্য লজিস্টিক, মোটরযান, রেশন ষ্টোর, ফাইনান্স বিভাগকে অটোমেশন করা হয়েছে। এতে ডিএমপি’র প্রশাসনিক স্বচ্ছতা এবং দক্ষতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

ব্যক্তি যোগাযোগ বৃদ্ধি
ডিএমপি বিট পুলিশিং বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে নাগরিকদের সাথে পুলিশের যোগাযোগ বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নিয়েছে। জনগণ ও পুলিশের মধ্যে যতো যোগাযোগ ও মিথস্ক্রিয়া হবে, ততোই তাদের মধ্যকার দূরত্ব হ্রাস পাবে। বিট কর্মকর্তাগণ পাড়া, মহল্লায় উঠান বৈঠকের মধ্য দিয়ে জনগণের সাথে সেতুবন্ধন সৃষ্টি করছেন। এতে সমষ্টিগত যোগাযোগের পাশাপাশি আন্ত-ব্যক্তিগত যোগাযোগ (One to One Communication) এর উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। কালক্রমে প্রতিটি নাগরিকের সাথে যোগাযোগ সৃজন বিট পুলিশের উদ্দেশ্য। এতে করে পুলিশ এবং নাগরিকদের মধ্যে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি হবে। নাগরিকবৃন্দ জননিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট তথ্য সরবরাহে উৎসাহিত হবেন। পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। একই সাথে জনগণের মধ্যে থাকা অপরাধভীতি ও পুলিশভীতি দূর হবে এবং নিরাপত্তাবোধ বৃদ্ধি পাবে।

গণমাধ্যমের অব্যাহত সহযোগিতা
ডিএমপি সর্বদাই তার আইনানুগ দায়িত্ব পালনে গণমাধ্যমের সহযোগিতা পেয়েছে। ভালো কাজের প্রশংসা এবং অনাকাঙ্ক্ষিত কাজের সমালোচনা ডিএমপি সাদরে গ্রহণ করে। যেকোনো গঠনমূলক সমালোচনা থেকে পুলিশ তার ভুল শুধরে নেয়ার সুযোগ পায় এবং ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতের কর্মপন্থা তৈরি করে। তবে মাঝে মধ্যে ভালো কাজের যথেষ্ট প্রশংসা কিংবা কাভারেজের ক্ষেত্রে কার্পণ্য দেখা যায়। পঞ্চাশ লাখ টাকা ছিনতাই হলে পত্র-পত্রিকায় যে কাভারেজ দেয়া হয়, প্রায় একই পরিমাণ টাকার (৫৭ লাখ ৫০ হাজার) একটি পে-অর্ডার গত ১৯ জানুয়ারি কনস্টেবল লিটন সুতার কর্তৃক প্রাপ্ত হয়ে মালিককে খুঁজে ফেরত দিলেও সমান কাভারেজ পাওয়া যায়নি। ভালো কাজের যথাযথ কাভারেজ আরেকটি ভাল কাজ করার উৎসাহ যোগায়। গণমাধ্যমকে তা সহৃদয়তার সাথে ভেবে দেখা উচিত।

তাছাড়া জাতীয় স্বার্থ, জননিরাপত্তার জন্য হুমকি বা পরিপন্থী কোন সংবাদ প্রচার কিংবা প্রকাশে একটি নীতিমালা দরকার কিনা সে বিষয়ে দৃষ্টি দেয়ার জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি জনমনে আতংক বা ভীতি সৃষ্টি করে এমন ছবি বা খবর প্রচারে আরো যত্নশীল হওয়া প্রয়োজন। সম্প্রতি ব্রাসেলসে বোমা হামলায় কিংবা গত বছর প্যারিসে বোমা হামলায় এবং গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের কোনো ছবি গণমাধ্যমে প্রচার কিংবা প্রকাশিত হয়নি। বাংলাদেশের রানা প্লাজা ভেঙ্গে পড়ায় যারা নিহত আছেন তাদের বীভৎস ছবি গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচারিত হয়েছে। রানা প্লাজার ধ্বংসস্তুপ থেকে আহত/নিহতদের উদ্ধারে সরকার সাধ্যমতো চেষ্টা করা সত্ত্বেও এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ সত্ত্বেও বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। গার্মেন্টস শিল্প নানাবিধ প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছে।
অপরাধ সম্পর্কিত সংবাদ পরিবেশনে প্রতিযোগিতার কারণে অনেক সময় অসত্য তথ্য প্রচারের আশংকা থেকে যায়। অপরদিকে জাজমেন্টাল রিপোর্ট প্রচার করলে সুষ্ঠু তদন্ত কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হয়। এ ব্যাপারে গণমাধ্যম কর্মীদের সতর্কতা অবলম্বন দরকার বলে মনে করি।

জনসচেতনতায় গণমাধ্যম
একটি সভ্য সমাজে আইন মান্য করা হয় বেশী এবং প্রয়োগ করতে হয় কম। অর্থাৎ আইন মানার সংস্কৃতি থাকা দরকার। পুলিশ দিয়ে আইন প্রয়োগের মাধ্যমে এ সংস্কৃতি নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমের সহযোগিতা দরকার। জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং পুলিশের কাজে সহযোগিতার মধ্য দিয়ে আইন মানার অভ্যাস সৃষ্টি করা দরকার। ট্রাফিক নিয়মাবলী বাস্তবায়নে পথচারীর পারাপারের ক্ষেত্রে আইন অমান্য করার প্রবণতা দেখা যায়। এ আইন প্রয়োগ করতে গেলেও এক শ্রেণীর নাগরিকগণ অসন্তুষ্ট হন। তাদের অসন্তোষ ফলাওভাবে প্রচার না করে তাদের আইন মানতে উৎসাহ করা জরুরি বলে প্রতীয়মান হয়।

উপসংহার
পুলিশ ও গণমাধ্যমের পেশাগত সম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা এবং পুলিশ ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে একটি টেকসই নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে নিরাপদ ঢাকা বাস্তবায়নের জন্য ডিএমপি অঙ্গীকারবদ্ধ। গণমাধ্যমের অব্যাহত সহযোগিতায় ‘পুলিশই জনতা, জনতাই পুলিশ’ এ মন্ত্রে উদ্ধুদ্ধ হয়ে কমিউনিটিভিত্তিক পুলিশিং ব্যবস্থা প্রবর্তন, পুলিশ-জনতার সম্মিলিত উদ্যোগে অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকারের মাধ্যমে সমাজ থেকে পুলিশভীতি ও অপরাধভীতি দূর করাসহ প্রতিটি নাগরিকের নিরাপত্তাবোধ (Sense of Security) বৃদ্ধি করার কার্যক্রম একটি যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারবে বলে ডিএমপি বিশ্বাস করে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর