ঢাকা ১১:২৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বন্যাদুর্গত এলাকায় বাড়ছে জ্বর ও ডায়রিয়া

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৪:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুন ২০২২
  • ১১৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তবে সিলেট সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায় এখনো লাখ লাখ মানুষ বাড়ি ছাড়া। পানি কমলেও তারা বাড়িতে ফিরতে পারছে না। মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কুড়িগ্রাম, গাইবান্দা, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলেও বানভাসীদের একই অবস্থা। গত দু’দিন ধরে প্রচণ্ড গরম শুরু হয়েছে। ঘরবাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। কাদায় বসতঘর ভরে গেছে। পা ফেলানোর জায়গাটুকু নেই ঘরে। ভয়াল বন্যার আঘাতে অনেকের বাড়িঘর পানির স্রোতে নিয়ে গেছে। সিলেটে বন্যায় ২২ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে।

এসব বাড়িঘর টাকা পয়সার অভাবে মেরামত করতে পারছেন না। বানভাসিরা বলছেন, প্রতিদিনই কিছু না কিছু শুকনো খাবার তারা পাচ্ছেন। কিন্তু শুকনো খাবার ছোট ছোট শিশু ও বৃদ্ধরা এখন আর খেতে চাচ্ছে না। শুকনো খাবারের টাকায় কিছু চাল এবং ডাল দিলে বানভাসিরা অন্তত একবেলা ভাত খেতে পারতো। এদিকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে পানিবাহিত রোগ দেখে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বানভাসি অনেক শিশু জ¦র ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, বন্যাকবলিত এলাকায় ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৯০ জন। এরমধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ৪ হাজার ১১৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫২ জন। এরমধ্যে সিলেটে বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৭৩ জন। বন্যাকবলিত এলাকায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ জনে। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে সিলেট বিভাগে ৫২ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২৮ জন।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে আবার বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। গত ২৪ ঘন্টা ঢাকা বিভাগ ছিল প্রায় বৃষ্টিহীন। রংপুর বিভাগে পঞ্চগড় ছাড়া আর কোথাও বৃষ্টি হয়নি। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গাসহ রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে।

সিলেট ব্যুরো জানায়, গত দুইদিন ধরে আকাশে রৌদ উঠছে। প্রচণ্ড গরমও শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে অধিকাংশ বাড়িঘর এবং উঠান থেকে পানি নেমে গেছে। পানি নেমে গেলও চরম দুর্ভোগ ও আতঙ্কে সময় পার করছেন। কাদায় বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। উপায় না পেয়ে কাদার মধ্যেই রাত্রি যাপন করতে হচ্ছে বানবাসীদের। ভয়াল বন্যার আঘাতে অনেকের বাড়ি-ঘর এখন বিলীন। অর্থের অভাবে মেরামত করতে পারছেন না বানবাসীরা। বানবাসীরা জানান, প্রতিদিনই কিছু না কিছু শুকনো খাবার পাচ্ছি, শুকনো খাবার ছোট ছোট শিশু ও বৃদ্ধরা এখন আর খেতে চাচ্ছে না। এদিকে আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত গোটা সিলেট অঞ্চল।

আধুনিক বহুতল ভবন যেমন বন্যার ঢেউয়ের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে, একই সাথে ক্ষত বিক্ষত আধা-পাকা, কাচা ঘরবাড়ি। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বন্যার নিঃস্ব হয়েছেন সিলেটের বেশিরভাগ মানুষ। সেই সাথে অপূরনীয় ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি তারা। ঘরবাড়ি, ফসল, প্রাণিসম্পদ সবক্ষেত্রেই হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। ক্ষতির মুখে পড়েছেন সোয়া ৪ লাখ পরিবারের প্রায় ২২ লাখ মানুষ। জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার আহসানুল ইনকিলাবকে জানান, বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের আংশিক এলাকা, জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৯৯টি ইউনিয়নের মানুষ। ৪ লাখ ১৬ হাজার ৮১৯টি পরিবারের ২১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩২ জন সদস্য ক্ষতির মুখে পড়েছেন বন্যায়। তিনি জানান, ২২ হাজার ৪৫০টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির ফসল পড়েছে ক্ষতির মুখে। বন্যাকবলিত এলাকার জন্য এখন অবধি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১৪১২ মেট্রিক টন চাল, ১৩ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং নগদ ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বাড়িঘরে পানি থাকায় এখনো অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছে। পৌর শহরের মানুষ বাড়িঘরে ফিরতে পারলেও গ্রামের অনেকেই পারছে না। এখনো জেলার জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় পানিবন্দী মানুষ আছে। এসব উপজেলার নিচু এলাকায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে আছে বন্যার পানি। জেলা–উপজেলার মূল সড়কগুলো থেকে পানি নামলেও ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে প্লাবিত। পানি নামার পর নানা রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়াসহ পেটের পীড়াই বেশি, সঙ্গে রয়েছে চর্মরোগ। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৬২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই বাড়িঘরে ফিরেছে। এখনো ৩০০ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০ হাজারের মতো মানুষ আছে। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত বন্যায় সুনামগঞ্জে ৯০ হাজার পরিবারের সাড়ে ৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ১৫ জন।

সুনামগঞ্জে ১৬ জুন থেকে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। জেলার প্রতিটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। অসংখ্য বাড়িঘর, অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। টানা চার দিন জেলাটি সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এ সময় মুঠোফোনের নেটওয়ার্কও বন্ধ ছিল। সুনামগঞ্জ পৌর শহরে চার থেকে সাত ফুট পানি হয়। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। তবে গত পাঁচ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

 

সুনামগঞ্জ তাহিরপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাবুল মিয়া বলেন, এক প্যাকেট ত্রাণের আশায় হাওরের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকি। ঘরে ধান ছিল, পানিতে ডুবে গেছে। কিছু ধান রক্ষা করতে পারলেও এখন ভাঙাতে পারছি না। রান্নাঘর সহ বসতঘর পানিতে তলিয়ে ভেঙে গেছে। তিন দিন ধরে শুধু চিড়া আর মুড়ি খেয়ে দিন পার করছি। গোলাবাড়ী গ্রামের দুলাল মিয়া বলেন, মাঝেমধ্যে ত্রাণ হিসেবে পাচ্ছি চিড়া আর মুড়ি। এসব শুকনো খাবার বাচ্চারা আর খেতে চায় না। চিড়া-মুড়ির বদলে কিছু চাল ডাল দিলে জীবনটা রক্ষা হতো।

ফেনীতে বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষামৌসুমে ভারতের উজানে অতিবৃষ্টির ফলে ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরাম উপজেলায় অবস্থিত মুহুরী-কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। ভাঙা বাঁধ দিয়ে প্রবলবেগে লোকালয়ে প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ফলে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলী জমির বীজতলা, মাছের ঘের ও শতশত পুকুরের মাছ পানির নিচে তলিয়ে যায়, শুরু হয় চরম ভোগান্তি ও দুর্ভোগ। এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগে এ অঞ্চলের মানুষকে পুনরায় বন্যার কবলে পড়তে হয়। দুই উপজেলার নদীর তীরবর্তী হাজারো মানুষকে এসব দুর্যোগ মোকাবেলা করে দিনপার করতে হচ্ছে। জেলার পাউবো’র তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে বর্ষা শুরুর আগ থেকে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ ২১টি স্থান চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে দ্রুত মেরামত করা হবে বলে জানান পাউবো। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি গত ২০ শে জুন ভারতের উজানে অতিবৃষ্টির ফলে পাহাড়ী ঢলের পানি চাপে মহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪ টি স্থানে ভেঙে দুই উপজেলার অন্তত ১২ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যা এখন দৃশ্যমান হয়েছে। এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা এখনো আতঙ্কের মধ্যে দিনরাত পার করছেন। কারণ বৃষ্টি হলে ফের বন্যার কবলে পড়তে হবে তাদের। এদিকে বন্যা শেষ হয়েছে এক সপ্তাহ হয় এখনো পর্যন্ত ভাঙা বাঁধ সংস্কারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তারা বলেন, প্রতিবছর ভাঙছে আর মেরামত হচ্ছে। নদীর বাঁধ নির্মাণ সঠিক পদ্ধতিতে হয়নি, ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ঠিকাদারদের ব্যাপক গাফিলতি রয়েছে। ফেনী পাউবো’র (ফুলগাজী-পরশুরাম)এর দায়িত্বরত উপ-সহকারি প্রকৌশলী আরিফুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, পাউবো’র (কুমিল্লা অঞ্চল) এর প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নদীর বাঁধ পরিদর্শন করেছেন এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে চলতি সপ্তাহে ভাঙা বাঁধ সংস্কারের কাজ দ্রুত আরাম্ভ হবে।

জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। তবে চর ও নদ-নদীর অববাহিকার নিচু এলাকাগুলোতে এখনও পানি জমে আছে। পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। অনেকের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও সেগুলো বসবাসের উপযোগী হয়নি। দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। গ্রামীন ও চরের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে ভোগান্তি বেড়েছে। কুড়িগ্রাম পাউবো’র প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ইনকিলাবকে জানান, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতের চিহ্ন দৃশ্যমান হচ্ছে। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, বন্যায় জেলায় প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৭ হাজার কৃষক। পুরো পানি নেমেগেলে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরুপন করা হবে। ব্রহ্মপুত্র নদের পেটে অবস্থিত হকের চর। নদীর পানি কমার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। দুদিনে এখানকার ৯টি পরিবার ভিটে-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এদের মধ্যে আমিনুল মিস্ত্রী ও আলহাজ মিস্ত্রী বাড়ি-ঘর নৌকায় তুলে যাচ্ছেন গুজিমারীর চরে। মাঝ নদীতে দেখামেলে এ দু’পরিবারে সাথে। তাদের পিতা রফিকুল মিস্ত্রী নৌকার ছইয়ের উপর বসে উদাস ভাবে নদীর দিকে তাকিয়ে আছেন। পরিবারের মহিলা ও শিশুরা ছইয়ের ভিতরে। আর পুরো নৌকা জুড়ে দুটি পরিবারের ঘরের চালসহ অন্যান্য আসবাবপত্র। কয়েক দফায় এসব মালামাল স্থানান্তর করতে হবে। এটি ছিলো প্রথম ধাপ। এ জন্য নৌকা ভাড়া বাবদ দিতে হবে পুরো আট হাজার টাকা। তিনি জানান, ‘গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে ব্রহ্মপুত্র রাক্ষুসী রুপ ধারণ করে পাকদিয়ে ভাঙা শুরু করে দুইদিনে আমার দু’ছেলের বাড়িসহ ৯জনের বাড়িভিটা ভেঙে নিয়ে যায়। সবাই এখন খোলা আকাশের নীচে।

কুলাউড়া ৩ বছরের রিয়া নামের শিশুকন্যা। প্রথমবারের মতো তাকে দেখতে হচ্ছে ভয়াবহ এই বন্যা। কুলাউড়া পৌর শহরের রাবেয়া স্কুলের ২য় তলায় মা হালিমা আক্তারের সাথে আশ্রিত হয়েছে সে। রিয়ার মতো শত শত কোমলমতি শিশু ভয়াবহ এ বন্যার কবলে পড়ে পরিবার পরিজনের সাথে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। ছোট্ট শিশুরা শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে পানির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এছাড়া রয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব সঙ্গে নেই কোনো স্যানিটেশন ব্যবস্থা। সিলেট-সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির পর পানি কমতে শুরু করলেও হাকালুকি হাওর দিয়ে কুলাউড়া পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নে পানি বাড়তে শুরু করেছে। শহরের উপজেলার মেইন রোডে চলছে নৌকা। নৌকার পাশাপাশি যাত্রীদের ভ্যানই চলাচলের একমাত্র ভরসা। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি বাসাবাড়িতে ঢুকার কারণে পরিবারের লোকজন অনেকের ঠিকানা হয়েছে এখন আশ্রয়কেন্দ্রে। মানুষের পাশাপাশি তাদের গৃহপালিত পশুরও থাকার ঠিকানা হয়েছে বিভিন্ন স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে। বানভাসি লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণসামগ্রী পেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করলেও গৃহপালিত পশুদের গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৯৮টি পরিবারের শিশুসন্তানসহ প্রায় ২ হাজারের উপরে লোকজন প্রায় সপ্তাহ দশদিন থেকে কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছেন। বিশেষ করে পৌর শহরের ইয়াকুব তাজুল মহিলা কলেজ, রাবেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন্যা আশ্রয় শিবির, ব্রাম্মনবাজার ইউসুফ তৈয়বুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ কাদিপুর ও ভূকশিমইল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এতে আশ্রিতরা বাড়িঘর ছেড়ে আসলেও আশ্রয়কেন্দ্রে এসেই আবার পানির মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে আশ্রিত অনেক পরিবারের নববধূ ও যুবতী মেয়েরা গোসল ও টয়লেটের বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বন্যাদুর্গত এলাকায় বাড়ছে জ্বর ও ডায়রিয়া

আপডেট টাইম : ০৯:৪৪:১৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জুন ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বন্যার পানি ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে। তবে সিলেট সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোণায় এখনো লাখ লাখ মানুষ বাড়ি ছাড়া। পানি কমলেও তারা বাড়িতে ফিরতে পারছে না। মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। কুড়িগ্রাম, গাইবান্দা, রংপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইলেও বানভাসীদের একই অবস্থা। গত দু’দিন ধরে প্রচণ্ড গরম শুরু হয়েছে। ঘরবাড়ি থেকে বন্যার পানি নেমে গেলেও চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। কাদায় বসতঘর ভরে গেছে। পা ফেলানোর জায়গাটুকু নেই ঘরে। ভয়াল বন্যার আঘাতে অনেকের বাড়িঘর পানির স্রোতে নিয়ে গেছে। সিলেটে বন্যায় ২২ হাজার ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে।

এসব বাড়িঘর টাকা পয়সার অভাবে মেরামত করতে পারছেন না। বানভাসিরা বলছেন, প্রতিদিনই কিছু না কিছু শুকনো খাবার তারা পাচ্ছেন। কিন্তু শুকনো খাবার ছোট ছোট শিশু ও বৃদ্ধরা এখন আর খেতে চাচ্ছে না। শুকনো খাবারের টাকায় কিছু চাল এবং ডাল দিলে বানভাসিরা অন্তত একবেলা ভাত খেতে পারতো। এদিকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে পানিবাহিত রোগ দেখে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বানভাসি অনেক শিশু জ¦র ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য মতে, বন্যাকবলিত এলাকায় ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়েছেন ৫ হাজার ৮৯০ জন। এরমধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী সংখ্যা ৪ হাজার ১১৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫২ জন। এরমধ্যে সিলেটে বিভাগে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ২৭৩ জন। বন্যাকবলিত এলাকায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৪ জনে। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে সিলেট বিভাগে ৫২ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ২৮ জন।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, চলতি সপ্তাহের শেষের দিকে আবার বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে। গত ২৪ ঘন্টা ঢাকা বিভাগ ছিল প্রায় বৃষ্টিহীন। রংপুর বিভাগে পঞ্চগড় ছাড়া আর কোথাও বৃষ্টি হয়নি। এ সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। আগামী ২৪ ঘণ্টায় খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গাসহ রংপুর, রাজশাহী, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে।

সিলেট ব্যুরো জানায়, গত দুইদিন ধরে আকাশে রৌদ উঠছে। প্রচণ্ড গরমও শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে অধিকাংশ বাড়িঘর এবং উঠান থেকে পানি নেমে গেছে। পানি নেমে গেলও চরম দুর্ভোগ ও আতঙ্কে সময় পার করছেন। কাদায় বাড়ি-ঘর তলিয়ে গেছে। উপায় না পেয়ে কাদার মধ্যেই রাত্রি যাপন করতে হচ্ছে বানবাসীদের। ভয়াল বন্যার আঘাতে অনেকের বাড়ি-ঘর এখন বিলীন। অর্থের অভাবে মেরামত করতে পারছেন না বানবাসীরা। বানবাসীরা জানান, প্রতিদিনই কিছু না কিছু শুকনো খাবার পাচ্ছি, শুকনো খাবার ছোট ছোট শিশু ও বৃদ্ধরা এখন আর খেতে চাচ্ছে না। এদিকে আকস্মিক বন্যায় বিপর্যস্ত গোটা সিলেট অঞ্চল।

আধুনিক বহুতল ভবন যেমন বন্যার ঢেউয়ের আঘাতে ক্ষত বিক্ষত হয়েছে, একই সাথে ক্ষত বিক্ষত আধা-পাকা, কাচা ঘরবাড়ি। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, বন্যার নিঃস্ব হয়েছেন সিলেটের বেশিরভাগ মানুষ। সেই সাথে অপূরনীয় ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি তারা। ঘরবাড়ি, ফসল, প্রাণিসম্পদ সবক্ষেত্রেই হয়েছে ব্যাপক ক্ষতি। ক্ষতির মুখে পড়েছেন সোয়া ৪ লাখ পরিবারের প্রায় ২২ লাখ মানুষ। জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার আহসানুল ইনকিলাবকে জানান, বন্যায় সিলেট সিটি করপোরেশনের আংশিক এলাকা, জেলার ১৩টি উপজেলা ও ৫টি পৌরসভা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থ। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৯৯টি ইউনিয়নের মানুষ। ৪ লাখ ১৬ হাজার ৮১৯টি পরিবারের ২১ লাখ ৮৭ হাজার ২৩২ জন সদস্য ক্ষতির মুখে পড়েছেন বন্যায়। তিনি জানান, ২২ হাজার ৪৫০টি ঘরবাড়ি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২৮ হাজার ৯৪৫ হেক্টর জমির ফসল পড়েছে ক্ষতির মুখে। বন্যাকবলিত এলাকার জন্য এখন অবধি দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ১৪১২ মেট্রিক টন চাল, ১৩ হাজার ২১৮ প্যাকেট শুকনো খাবার এবং নগদ ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বাড়িঘরে পানি থাকায় এখনো অনেক মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছে। পৌর শহরের মানুষ বাড়িঘরে ফিরতে পারলেও গ্রামের অনেকেই পারছে না। এখনো জেলার জগন্নাথপুর, তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলায় পানিবন্দী মানুষ আছে। এসব উপজেলার নিচু এলাকায় বাড়িঘর, রাস্তাঘাটে আছে বন্যার পানি। জেলা–উপজেলার মূল সড়কগুলো থেকে পানি নামলেও ইউনিয়ন ও গ্রামীণ সড়ক এখনো পানিতে প্লাবিত। পানি নামার পর নানা রোগবালাই দেখা দিচ্ছে। এর মধ্যে ডায়রিয়াসহ পেটের পীড়াই বেশি, সঙ্গে রয়েছে চর্মরোগ। জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৬২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ১ লাখ ৬০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিল। পানি কমতে শুরু করায় অনেকেই বাড়িঘরে ফিরেছে। এখনো ৩০০ আশ্রয়কেন্দ্রে ৫০ হাজারের মতো মানুষ আছে। সরকারি হিসাবে এখন পর্যন্ত বন্যায় সুনামগঞ্জে ৯০ হাজার পরিবারের সাড়ে ৪ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ১৫ জন।

সুনামগঞ্জে ১৬ জুন থেকে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। জেলার প্রতিটি উপজেলা বন্যাকবলিত হয়ে পড়ে। অসংখ্য বাড়িঘর, অফিস-আদালত, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে তলিয়ে যায়। টানা চার দিন জেলাটি সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। এ সময় মুঠোফোনের নেটওয়ার্কও বন্ধ ছিল। সুনামগঞ্জ পৌর শহরে চার থেকে সাত ফুট পানি হয়। হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নেয় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে। তবে গত পাঁচ দিন বৃষ্টি না হওয়ায় বর্তমানে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে।

 

সুনামগঞ্জ তাহিরপুর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাবুল মিয়া বলেন, এক প্যাকেট ত্রাণের আশায় হাওরের পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকি। ঘরে ধান ছিল, পানিতে ডুবে গেছে। কিছু ধান রক্ষা করতে পারলেও এখন ভাঙাতে পারছি না। রান্নাঘর সহ বসতঘর পানিতে তলিয়ে ভেঙে গেছে। তিন দিন ধরে শুধু চিড়া আর মুড়ি খেয়ে দিন পার করছি। গোলাবাড়ী গ্রামের দুলাল মিয়া বলেন, মাঝেমধ্যে ত্রাণ হিসেবে পাচ্ছি চিড়া আর মুড়ি। এসব শুকনো খাবার বাচ্চারা আর খেতে চায় না। চিড়া-মুড়ির বদলে কিছু চাল ডাল দিলে জীবনটা রক্ষা হতো।

ফেনীতে বন্যার পানি নেমে গেছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ক্রমেই দৃশ্যমান হচ্ছে। প্রতিবছর বর্ষামৌসুমে ভারতের উজানে অতিবৃষ্টির ফলে ফেনীর ফুলগাজী-পরশুরাম উপজেলায় অবস্থিত মুহুরী-কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। ভাঙা বাঁধ দিয়ে প্রবলবেগে লোকালয়ে প্রবেশ করে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। ফলে মানুষের ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, ফসলী জমির বীজতলা, মাছের ঘের ও শতশত পুকুরের মাছ পানির নিচে তলিয়ে যায়, শুরু হয় চরম ভোগান্তি ও দুর্ভোগ। এসব ক্ষতি কাটিয়ে উঠার আগে এ অঞ্চলের মানুষকে পুনরায় বন্যার কবলে পড়তে হয়। দুই উপজেলার নদীর তীরবর্তী হাজারো মানুষকে এসব দুর্যোগ মোকাবেলা করে দিনপার করতে হচ্ছে। জেলার পাউবো’র তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে বর্ষা শুরুর আগ থেকে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনিয়া নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ ২১টি স্থান চিহ্নিত করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো সংস্কারের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দ পেলে দ্রুত মেরামত করা হবে বলে জানান পাউবো। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি গত ২০ শে জুন ভারতের উজানে অতিবৃষ্টির ফলে পাহাড়ী ঢলের পানি চাপে মহুরী নদীর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ৪ টি স্থানে ভেঙে দুই উপজেলার অন্তত ১২ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে যা এখন দৃশ্যমান হয়েছে। এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকার সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তারা এখনো আতঙ্কের মধ্যে দিনরাত পার করছেন। কারণ বৃষ্টি হলে ফের বন্যার কবলে পড়তে হবে তাদের। এদিকে বন্যা শেষ হয়েছে এক সপ্তাহ হয় এখনো পর্যন্ত ভাঙা বাঁধ সংস্কারের কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। তারা বলেন, প্রতিবছর ভাঙছে আর মেরামত হচ্ছে। নদীর বাঁধ নির্মাণ সঠিক পদ্ধতিতে হয়নি, ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ মেরামতে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন ঠিকাদারদের ব্যাপক গাফিলতি রয়েছে। ফেনী পাউবো’র (ফুলগাজী-পরশুরাম)এর দায়িত্বরত উপ-সহকারি প্রকৌশলী আরিফুর রহমান ইনকিলাবকে জানান, পাউবো’র (কুমিল্লা অঞ্চল) এর প্রধান প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত নদীর বাঁধ পরিদর্শন করেছেন এবং এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ সংস্কার কাজের জন্য বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। বরাদ্দ পেলে চলতি সপ্তাহে ভাঙা বাঁধ সংস্কারের কাজ দ্রুত আরাম্ভ হবে।

জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। তবে চর ও নদ-নদীর অববাহিকার নিচু এলাকাগুলোতে এখনও পানি জমে আছে। পানিবন্দি রয়েছে হাজার হাজার মানুষ। অনেকের ঘরবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও সেগুলো বসবাসের উপযোগী হয়নি। দেখা দিয়েছে তীব্র নদী ভাঙন। গ্রামীন ও চরের রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় যাতায়াতে ভোগান্তি বেড়েছে। কুড়িগ্রাম পাউবো’র প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন ইনকিলাবকে জানান, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে যাওয়ায় কুড়িগ্রামের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষতের চিহ্ন দৃশ্যমান হচ্ছে। জেলার কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ পরিচালক আব্দুর রশিদ জানান, বন্যায় জেলায় প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমির ফসল নিমজ্জিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ প্রায় ৭ হাজার কৃষক। পুরো পানি নেমেগেলে ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নিরুপন করা হবে। ব্রহ্মপুত্র নদের পেটে অবস্থিত হকের চর। নদীর পানি কমার সাথে সাথে দেখা দিয়েছে ব্যাপক ভাঙন। দুদিনে এখানকার ৯টি পরিবার ভিটে-মাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে। এদের মধ্যে আমিনুল মিস্ত্রী ও আলহাজ মিস্ত্রী বাড়ি-ঘর নৌকায় তুলে যাচ্ছেন গুজিমারীর চরে। মাঝ নদীতে দেখামেলে এ দু’পরিবারে সাথে। তাদের পিতা রফিকুল মিস্ত্রী নৌকার ছইয়ের উপর বসে উদাস ভাবে নদীর দিকে তাকিয়ে আছেন। পরিবারের মহিলা ও শিশুরা ছইয়ের ভিতরে। আর পুরো নৌকা জুড়ে দুটি পরিবারের ঘরের চালসহ অন্যান্য আসবাবপত্র। কয়েক দফায় এসব মালামাল স্থানান্তর করতে হবে। এটি ছিলো প্রথম ধাপ। এ জন্য নৌকা ভাড়া বাবদ দিতে হবে পুরো আট হাজার টাকা। তিনি জানান, ‘গত বৃহস্পতিবার হঠাৎ করে ব্রহ্মপুত্র রাক্ষুসী রুপ ধারণ করে পাকদিয়ে ভাঙা শুরু করে দুইদিনে আমার দু’ছেলের বাড়িসহ ৯জনের বাড়িভিটা ভেঙে নিয়ে যায়। সবাই এখন খোলা আকাশের নীচে।

কুলাউড়া ৩ বছরের রিয়া নামের শিশুকন্যা। প্রথমবারের মতো তাকে দেখতে হচ্ছে ভয়াবহ এই বন্যা। কুলাউড়া পৌর শহরের রাবেয়া স্কুলের ২য় তলায় মা হালিমা আক্তারের সাথে আশ্রিত হয়েছে সে। রিয়ার মতো শত শত কোমলমতি শিশু ভয়াবহ এ বন্যার কবলে পড়ে পরিবার পরিজনের সাথে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মাথা গোঁজার ঠাঁই হয়েছে। ছোট্ট শিশুরা শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে পানির দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এছাড়া রয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব সঙ্গে নেই কোনো স্যানিটেশন ব্যবস্থা। সিলেট-সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির পর পানি কমতে শুরু করলেও হাকালুকি হাওর দিয়ে কুলাউড়া পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নে পানি বাড়তে শুরু করেছে। শহরের উপজেলার মেইন রোডে চলছে নৌকা। নৌকার পাশাপাশি যাত্রীদের ভ্যানই চলাচলের একমাত্র ভরসা। ইতোমধ্যে নিম্নাঞ্চলের প্রায় ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানি বাসাবাড়িতে ঢুকার কারণে পরিবারের লোকজন অনেকের ঠিকানা হয়েছে এখন আশ্রয়কেন্দ্রে। মানুষের পাশাপাশি তাদের গৃহপালিত পশুরও থাকার ঠিকানা হয়েছে বিভিন্ন স্কুলের আশ্রয়কেন্দ্রে। বানভাসি লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে ত্রাণসামগ্রী পেয়ে ক্ষুধা নিবারণ করলেও গৃহপালিত পশুদের গো-খাদ্যের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। উপজেলার ৩৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৫৯৮টি পরিবারের শিশুসন্তানসহ প্রায় ২ হাজারের উপরে লোকজন প্রায় সপ্তাহ দশদিন থেকে কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান করছেন। বিশেষ করে পৌর শহরের ইয়াকুব তাজুল মহিলা কলেজ, রাবেয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বন্যা আশ্রয় শিবির, ব্রাম্মনবাজার ইউসুফ তৈয়বুন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়সহ কাদিপুর ও ভূকশিমইল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এতে আশ্রিতরা বাড়িঘর ছেড়ে আসলেও আশ্রয়কেন্দ্রে এসেই আবার পানির মোকাবেলা করতে হচ্ছে। বিশেষ করে আশ্রিত অনেক পরিবারের নববধূ ও যুবতী মেয়েরা গোসল ও টয়লেটের বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।