হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জের মেয়ে শর্মী সাহা। কাজ করছেন যুক্তরাজ্যের কভেন্ট্রি সিটি কাউন্সিলের জনস্বাস্থ্য বিভাগে এনালিস্ট (বিশ্লেষক) হিসেবে। দারুণ মেধাবী শর্মী সাহা যুক্তরাজ্যের কভেন্ট্রি ইউনিভার্সিটিতে ডাটা সাইন্সে মাস্টার্স করেছেন। সে সময় অফিস ফর স্টুডেন্ট সংস্থা থেকে তিনি ১০ হাজার পাউন্ড স্কলারশিপ লাভ করেন।
শর্মী সাহার জন্ম কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের বড়বাজারে। তার পিতা শান্তনু সাহা ও মাতা মনি সাহা। পেশায় ব্যবসায়ী শান্তনু সাহার এক ছেলে ও এক মেয়ে সন্তানের মধ্যে শর্মী বড়।
শর্মীর প্রথম স্কুল লাইসিয়াম প্রি-ক্যাডেট স্কুল। এসভি স্কুলের ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হন তিনি। কঠোর পরিশ্রমের ফল হিসেবে ২০০৮ সালে ফেনী গার্লস ক্যাডেট কলেজে চান্স পান।
ছয় বছরের ক্যাডেট জীবন শেষে এপিজি শিমলা ইউনিভার্সিটিতে কম্পিউটার সাইন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ার জন্য আবেদন করেন শর্মী। আবেদনের পর টিউশন ফির উপর ৪০% স্কলারশিপ পেয়ে ২০১৫ সালে তিনি সেখানে ভর্তি হন।
২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত চার বছর পড়ালেখার সময় শর্মীর সুযোগ হয় পৃথিবীর ২৬টি দেশের ছাত্রছাত্রীদের সাথে পরিচিত হবার, তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি কাছ থেকে জানার। এ সময় তিনি সবসময় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মঞ্চে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন।
গ্রাজুয়েশানের সময় ডিপার্টমেন্ট এ সবচেয়ে ভাল ফলাফলের জন্য হিমাচল প্রদেশের রাজপাল এর তরফ থেকে গোল্ড মেডেলিস্ট পুরস্কার পান শর্মী সাহা।
২০১৯ সালে গ্রাজুয়েশন শেষ করার পর শর্মী দেশে ফিরে আসেন এবং ঢাকার একটি বেসরকারি ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার পদে যোগদান করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি সেই প্রতিষ্ঠান এর ফুটবল টিমের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
যানজট এর উপর লেখা শর্মী সাহার দুইটি গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয় আন্তর্জাতিক জার্নালে।
এক বছরের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকতা জীবন শেষে শর্মী সাহা ২০২০ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। সেখানকার কভেন্ট্রি ইউনিভার্সিটিতে ডাটা সাইন্সে মাস্টার্স করার সময় অফিস ফর স্টুডেন্ট সংস্থা থেকে ১০ হাজার পাউন্ড স্কলারশিপ পান।
সেখানে পড়াকালীন সময়ে তার গবেষণার অংশ ছিল, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স প্রয়োগ করে বিচার করা যে খাদ্যাভ্যাসের সাথে কোভিড ১৯ এর আরোগ্যলাভের কোন সংযোগ আছে কিনা, কোভিড ভ্যাক্সিন ট্রায়ালের রিয়েকশান ও একজনের মেডিকেল হিস্ট্রির উপর ভিত্তি করে বিচার করা কোন কোম্পানির ভ্যাক্সিন কতটা ঝুঁকিপূর্ণ।
শর্মী সাহা মেরিট নিয়ে মাস্টার্স পাশ করার পর কভেন্ট্রি সিটি কাউন্সিল থেকে জনস্বাস্থ্য বিভাগে এনালিস্ট (বিশ্লেষক) হিসেবে যোগদান করেন।
কিশোরগঞ্জ নিউজ এর সাথে আলাপকালে শর্মী সাহা বলেন, আমি আমার মা-বাবার প্রতি চিরকৃতজ্ঞ যারা সবসময়ই আমার পাশে ছিলেন, আমার উপর আস্থা রেখেছেন। মফস্বলের আর পাঁচটা মেয়ের মত তারা কখনো আমার পায়ে শেকল বেঁধে দেননি যেন আমি আলোকিত হতে পারি আমার পূর্ণ জ্যোতিতে। আমার স্বামী, যিনি নিজেও রংপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে পড়েছেন, নিজের সাধ্যমত আমাকে সহায়তা ও সমর্থন করেন। অবসর সময়ে আমি ইউটিউবে উচ্চশিক্ষার গাইডেন্স সম্বলিত ভিডিও তৈরি করি। আমি সবসময়ই চেষ্টা করে গেছি পড়ালেখার পাশাপাশি নিজেকে অন্যান্য গঠনমূলক কাজে নিয়োজিত রাখতে, নিজের সংস্কৃতিকে গর্বের সহিত বিশ্বমঞ্চে তুলে ধরতে।
শর্মী সাহা যোগ করেন, আমি আমার পরিচিত অনেক পরিবারেই দেখেছি যারা এখনো একজন মেয়ে সন্তানের শিক্ষাকে মৌলিক চাহিদা হিসেবে গণ্য করে না। আমার প্রত্যাশা, আমার জন্মস্থান কিশোরগঞ্জের প্রতিটি মা-বাবাই যেন তাদের মেয়েসন্তানকে শুধুমাত্র ঘরণী হবার প্রশিক্ষণ না দিয়ে, তাদের প্রথমে মানুষ হিসেবে গড়ে উঠার সু্যোগ করে দেন, যেন একটা মেয়ে স্বপ্ন দেখার সাহস করতে শিখে, যেন নিজের সামর্থকে বুঝতে শিখে, আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় মনোবল নিয়ে বিকশিত হতে পারে।