হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাতের রক্ত চলাচলের মূল পথটি বন্ধ হয়ে গিয়ে অনেক সময় অঙ্গহানির ঘটনা ঘটে। হাতের মূল ধমনিটি (Subclavian Artery) ঘাড়ের কাছ থেকে জমাট রক্ত দিয়ে বন্ধ হয়ে এই সমস্যা হয়ে থাকে।
সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিয়ে এসব সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়। থোরাসিক আউটলেট সিনড্রোম সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন ডা. আবুল হাসান মুহম্মদ বাশার। তিনি বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ভাস্কুলার অ্যান্ড এন্ডোভাস্কুলার সার্জন।
* থোরাসিক আউটলেট সিনড্রোম কী
মানবদেহে হাতের রক্তনালি ও স্নায়ুগুলো বুকের ভেতর থেকে ঘাড় হয়ে হাতে বের হয়ে আসে। বের হওয়ার এ পথটির নাম ‘থোরাসিক আউটলেট’ (Thoracic Outlet)। ঘাড়ে অবস্থিত এ পথটি এমনিতেই সরু। কারো কারো ক্ষেত্রে বিভিন্ন কারণে এটি আরও সরু হয়ে যায়। ঘাড়ে জন্মগত বাড়তি হাড় বা ‘সারভাইকাল রিব’ এর অন্যতম একটি কারণ। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি বেশি দেখা যায়, প্রতি ১০০ জনে ০.৫-১ জন।
বিভিন্ন কারণে সরু হয়ে যাওয়া থোরাসিক আউটলেট যখন উপসর্গ প্রকাশ করে তখন এর নাম হয় ‘থোরাসিক আউটলেট সিনড্রোম’ (Thoracic Outlet Syndrome) সংক্ষেপে ‘টস’ (TOS)।
উপসর্গ
টস মূলত দুই ধরনের; নিউরোলজিকাল ও ভাস্কুলার। নিউরোলজিকাল টস সংখ্যায় বেশি। এ ধরনের রোগীর ১০০ জনের ৯৫ জনই নিউরোলজিকাল টসে ভুগে থাকেন। এ ক্ষেত্রে মূলত স্নায়ুর উপর চাপ পড়ে বলে হাতে এক ধরনের ঝিনঝিন বা কনকনে ব্যথা বোধ হয়, কখনো অবশ লাগে।
ভাস্কুলার টসে চাপটা পড়ে শিরা অথবা ধমনির উপর। শিরার উপর পড়লে হাত ফুলে যায়, নীলচে কালো হয়ে যেতে পারে, ব্যথা তো হয়ই। ধমনির উপর পড়লে ক্ষতি সবচেয়ে বেশি। দীর্ঘমেয়াদি আঘাতে ধমনিটি ফুলে যায়, ভেতরের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয় ও ভেতরে রক্ত জমাট বেঁধে গিয়ে রক্ত চলাচল হঠাৎ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। রিতুর ক্ষেত্রে এ ঘটনাটিই ঘটেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে হাত ঠান্ডা বোধ হতে পারে, ব্যথাও হতে পারে। কবজির কাছে নাড়ির স্পন্দন কমে যেতে পারে। দু’একটি আঙুলের মাথা কালো হয়ে যাওয়ার মাধ্যমেও এ রোগ প্রকাশ পেতে পারে।
* পরীক্ষা-নিরীক্ষা
হাতের দীর্ঘমেয়াদি ব্যথার রোগীদের অনেকেই বিশেষ করে মেয়েরা থোরাসিক আউটলেট সিনড্রোম বা টস রোগে ভুগছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ঘাড়ের একটি এক্স-রে এই রোগ শনাক্ত করার জন্য যথেষ্ট। তবে ভাস্কুলার টসের জন্য রক্তনালির ডুপ্লেক্স স্টাডি করার প্রয়োজন হয়। কখনো কখনো ঘাড়ের এমআরআই বা রক্তনালির সিটি অ্যানজিওগ্রাফিও দরকার হতে পারে।
কার কাছে যাবেন
নিউরোলজিকাল টসের অধিকাংশ রোগী স্নায়ু রোগ বিশেষজ্ঞ বা অর্থোপেডিক সার্জনের কাছে চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। তবে ভাস্কুলার টসের রোগীদেরকে সময়মতো রক্তনালি বিশেষজ্ঞ অর্থাৎ ভাস্কুলার সার্জনের শরণাপন্ন হতে হবে।
চিকিৎসা
নিউরোলজিকাল টসে প্রাথমিক পর্যায়ে ওষুধ, ফিজিওথেরাপির ভূমিকা আছে। বাড়তি ওজন কমিয়ে ফেলতে হবে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপারেশন প্রয়োজন হয়। সারভাইভাল রিব কেটে বাদ দেয়াসহ অন্যান্য কিছু পদ্ধতি ব্যবহার করে থোরাসিক আউটলেটে স্নায়ুর উপর চাপ কমানো হয়।
ভাস্কুলার টসের চিকিৎসায় অপারেশনের বিকল্প খুব বেশি নেই। সেটিও হতে হবে সময়মতো, হাত হুমকির মুখে পড়বার আগেই। এই অপারেশনে সারভাইভাল রিব কেটে, মাংসপেশির চাপ সরিয়ে ধমনিকে চাপমুক্ত করা হয়, সঙ্গে বন্ধ হয়ে যাওয়া ধমনি মেরামত করে হাতে রক্ত সরবরাহ ঠিক করা হয়। এটি রক্তনালির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বা ভাস্কুলার সার্জনরা করে থাকেন। দেশে ভাস্কুলার সার্জন সংখ্যায় খুবই কম, ঢাকার বাইরে নেই বললেই চলে। ঢাকার শেরে বাংলা নগরস্থ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে এ রোগের চিকিৎসাসেবার ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের মতো কিছু বেসরকারি হাসপাতালও ইদানীং সেবাটি দিচ্ছে।