মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পর এবার শুরু হয়ে যাচ্ছে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তির লড়াই। তবে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে মূল লড়াইটা হবে ভালো কলেজে ভর্তি নিয়ে। মানসম্মত কলেজে আসন সংখ্যা সীমিতহওয়ায় এ নিয়ে ভাবনার শেষ নেই তাদের। বাধ্য হয়ে মানহীন কলেজগুলোতেও ভর্তি হতে হবে অনেককে। এসব কলেজেও এবার শিক্ষার্থী উপচে পড়বে। শিক্ষা বোর্ডগুলো জানিয়েছে, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণী আছে এমন সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোয় ভর্তিযোগ্য আসন শিক্ষার্থী তুুলনায় বেশি আছে। তবে মাধ্যমিকে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর তুলনায় মানসম্পন্ন কলেজ এবং আসন সংকট দীর্ঘদিনের। অভিভাবকদের দাবি, মানসম্পন্ন কলেজের সংখ্যা বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে আসন সংখ্যা বাড়াতে হবে ভালো কলেজগুলোয়। আগামী ৬ জুন থেকে অনলাইনে ভর্তির আবেদন শুরু হবে।
২০১৫ সালের মাধ্যমিকের ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এসএসসিতে ৯৩ হাজার ৬৩১ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছে। আরও আছে মাদ্রাসার ১১ হাজার ৩৩৮ এবং কারিগরি বোর্ডে ৬ হাজার ৯৩২ জন শিক্ষার্থী। এ ছাড়া জিপিএ ৪ পর্যন্ত পেয়েছে আরও ৪ লাখ ৮০ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। মূলত এ দুটি ক্যাটাগরির শিক্ষার্থীদের ভর্তির লক্ষ্য থাকে নামকরা বা ভালো কলেজ। অন্যদিকে রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোসহ সারাদেশে জেলা পর্যায়ে ভালো কলেজের সংখ্যা খুবই নগণ্য।
এ বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, আসন সংকটে উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে কেউ ভর্তি হতে পারবে না- এই অভিযোগ পাওয়া যাবে না। তবে মানসম্পন্ন কলেজের সংকট আছে। সরকারি-বেসরকারি কলেজগুলোয় উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে যে পরিমাণ ভর্তি নেওয়ার সুযোগ আছে তা পাসকরা শিক্ষার্থীর চেয়ে অনেক বেশি। মানসম্পন্ন কলেজগুলোয় ভর্তির প্রতিযোগিতা সবসময় থাকে, এবারও থাকবে। সরকারও নানা উপায় চেষ্টা করছে কলেজগুলো কীভাবে আরও ভালো পাঠদান করতে পারে।
বাংলাদেশ শিক্ষা, তথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) হিসাবে দেখা গেছে, সারাদেশে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে একাদশ শ্রেণীতে ভর্তিযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তিন হাজার ৭৫৭টি। যার মধ্যে মানসম্মত কলেজের সংখ্যা মাত্র ১৭৫টি। এসব কলেজে আসন সংখ্যা ৫০ হাজারের মতো। ঢাকা বিভাগে ৭০, রংপুর বিভাগে রয়েছে ২৯, বরিশাল বিভাগে ১২, রাজশাহী বিভাগে ৫, চট্টগ্রাম বিভাগে ১৭, খুলনা বিভাগে ১১ এবং সিলেট বিভাগে ২২টি মানসম্মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব কলেজে স্ব স্ব বিভাগের জিপিএ ৫ ধারীরাও ভিড় করলে সবার সংস্থান হবে না। রাজধানীতে মোট ১৪৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একাদশ শ্রেণী রয়েছে।
এসব কলেজে মোট আসন আছে ৪৩ হাজার ৫১৯টি। এর মধ্যে ভালোমানের কলেজ আছে মাত্র ২০-২২টি, যেখানে আসন সংখ্যা প্রায় ২০ হাজার। বিপরীত দিকে ঢাকা বোর্ডেই এবার পাস করেছে ৩ লাখ ১০ হাজার ৪৬ জন। এর মধ্যে জিপিএ ৫ পেয়েছে ৩৬ হাজার ৮০১ জন। আবার জিপিএ ৪ থেকে ৫ এর মধ্যে পেয়েছে ৯৬ হাজার ৬৬৭ জন। এ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীদের ভর্তির সুযোগ কতটা থাকবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। ভালো ফলের পর রাজধানীতে ছুটে আসাদের সুযোগ নেই বললেই চলে। বরং জিপিএ ৪ এবং তারও কম নম্বর অর্জনকারীদের জন্য এ সংকট আরও তীব্র। অথচ এ বছর কেবল এসএসসি, মাদ্রাসা ও কারিগরিতে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাই ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. আবুল এহসান বলেন, আগে তৃতীয়-চতুর্থ ক্যাটাগরির কলেজগুলোয় জিপিএ ৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা তেমন ভর্তি হতো না। এবার অনেকে বাধ্য হয়েই এসব কলেজে ভর্তি হবে।
উচ্চ মাধ্যমিক শ্রেণীতে ভর্তি: ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণীর ভর্তিতে আবেদন গ্রহণ শুরু হবে আগামী ৬ জুন। চলবে ১৮ জুন পর্যন্ত। আর ফল প্রকাশ হবে ২৫ জুন। আন্তঃশিক্ষা বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, www.xiclassadmission.gov.bd ওয়েবসাইটের মাধ্যমে এই আবেদন করতে হবে।
পাশাপাশি আগের মতো টেলিটকেও এসএমএসের মাধ্যমে আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। তবে এ জন্য প্রতি আবেদনের (প্রতি কলেজের জন্য এক আবেদন) জন্য ১২০ টাকা দিতে হবে। আর অনলাইনে এক আবেদনেই পাঁচটি কলেজের নাম পছন্দক্রম অনুযায়ী দেওয়া যাবে। ফি ১৫০ টাকা। কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সবার জন্যই একই নিয়মে আবেদন করতে হবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের সিনিয়র সিস্টেম অ্যানালিস্ট মঞ্জুরুল কবীর এই তথ্য জানিয়ে বলেন, যারা ফল পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করবে, তারা ২১ জুন ভর্তির আবেদনের সুযোগ পাবে। গতকাল থেকে ফল পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করা যাচ্ছে। পুনর্নিরীক্ষণের ফল প্রকাশ হবে ২০ জুন।