এবার খোলা সয়াবিনে অসাধুদের ‘চোখ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের পরও ভোজ্যতেলের দামে লাগাম টানা যাচ্ছে না। ফের মূল্যবৃদ্ধিতে বেসামাল হচ্ছে বাজার। গত কয়েকদিন কারসাজি বন্ধ থাকলেও আবারও একটি চক্র মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বোতলজাত তেলের গায়ে মূল্য লেখা থাকায় এবার খোলা সয়াবিনে অসাধুদের ‘চোখ’ পড়েছে। এই তেলের একটি বৃহৎ শ্রেণির ক্রেতা থাকায় সরবরাহ কমিয়ে বাড়ানো হয়েছে দাম। পরিস্থিতি এমন হয়েছে-রাজধানীর খুচরা বাজারে গত ১২ দিনে দুদফায় লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চাইতে লিটারে ৩৯ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহের পরও চিনি, ডাল, পেঁয়াজ ও খেজুরের মূল্য বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে রোজায় এসব পণ্য কিনতে ক্রেতার নাভিশ্বাস বাড়ছে।

এদিকে আসন্ন রমজান ও ঈদুল ফিতর উপলক্ষ্যে সয়াবিন তেলের দাম সহনীয় রাখতে আমদানি, উৎপাদন ও বিপণন পর্যায়ে মোট ৩০ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেলে এ সুবিধা ৩০ জুন পর্যন্ত বহাল থাকবে। পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিত্যপণ্য আমদানিতে এলসি মার্জিন প্রত্যাহার করেছে। একই সঙ্গে এলসি কমিশনও সর্বনিু পর্যায়ে রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। এর প্রভাবে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম কমবে বলে আশা করা হয়েছে।

এছাড়া পণ্যের দাম কমাতে সরকারের দেওয়া বিভিন্ন ধরনের ছাড়ের সুবিধা ভোক্তার কাছে পৌঁছাতে তদারকি বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে বন্দর থেকে দ্রুত পণ্য খালাসের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। পণ্যমূল্য তদারকিতে সরকার টাস্কফোর্স গঠন করেছে। সরকার থেকে এ ধরনের নানামুখী ছাড় ও পদক্ষেপ নেওয়া হলেও এখনো তেলের দাম কমতে শুরু করেনি। বরং দুই সপ্তাহের ব্যবধানে খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের দাম ১৫ টাকা বেড়েছে।

বুধবার রাজধানীর নয়াবাজার, জিনজিরা কাঁচাবাজার ও রায় সাহেব বাজার ঘুরে ও খুচরা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৭৫ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ১৬৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। আর দুই সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বশেষ প্রতি লিটার খোলা সয়াবিনের খুচরা মূল্য ১৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু এই দরে খোলা তেল পাওয়া যায়নি। সেক্ষেত্রে সরকারের বেঁধে দেওয়া দরের চেয়ে লিটার প্রতি প্রায় ৩৯ টাকা বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি লিটার পাম অয়েল সুপার বিক্রি হয়েছে ১৪৬-১৫০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ১৪৪-১৪৬ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

জিনজিরা বাজারের খুচরা মুদি বিক্রেতা বলেন, বোতলজাত সয়াবিনের গায়ে মূল্য লেখা থাকায় সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু খোলা তেলে কোনো দর লেখার সুযোগ নেই। আর এই খোলা তেলের একটি বৃহৎ শ্রেণির ক্রেতা রয়েছে। যারা দরিদ্র ও হতদরিদ্র তারা এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন একসঙ্গে কিনতে পারে না। ফলে তারা খোলা সয়াবিন ছটাক ধরে কেনে। তাই অসাধুরা এবার বাড়তি মুনাফা করতে খোলা তেলের দিকে নজর দিয়েছে। ইতোমধ্যে পাইকারি আড়ত থেকে সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। গত দুই সপ্তাহে দুই দফা দাম বাড়িয়েছে। তিনি বলেন, ২৬ মার্চ পাইকারি বাজার থেকে ১৫৫ টাকা লিটার দরে খোলা সয়াবিন এনেছি। তিন দিন পর ২৯ মার্চ ১৬০ টাকায় আনতে হয়েছে। এখন ১৭০ টাকায় কিনতে হচ্ছে। ফলে পরিবহণ খরচ ও অন্যান্য খরচ ধরে ১৭৫ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। তবে পাইকারি বাজারে তেলের কোনো সংকট নেই। তারা ইচ্ছ করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছে। ফলে আমাদের বেশি দরে এনে বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজধানীর মৌলভীবাজার পাইকারি ভোজ্যতেল বিক্রেতা মো. সালাউদ্দীন বলেন, বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমেনি। আমাদের বেশি দর দিয়ে এখনও আনতে হচ্ছে। পাশাপাশি এখন পাইকারি বাজারেই সরবরাহ কম। তাই দাম বেড়েছে। ফলে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বাড়তি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।

বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমরা সার্বিক তদারকি করছি। কয়েকদিন পর পর কোম্পানিগুলোর প্রতিনিধিদের তলব করছি। কি পরিমাণে তেল আমদানি করছে, কত দরে করছে, সরবরাহ কত পরিমাণে করছে তা খতিয়ে দেখছি। তবে আবার কেন দাম বাড়ল ও কারা দাম বাড়াল আমরা তদারকি শুরু করেছি। মূল্য নিয়ন্ত্রণে তেল কোম্পানির প্রতিনিধিদের আবারও ডাকা হবে।

এদিকে বাজারে সরবরাহ সংকট না থাকলেও রোজায় অতি ব্যবহৃত পণ্য চিনি, সব ধরনের ডাল, পেঁয়াজ ও খেজুরের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া আটা-ময়দা, আদা-রসুন, জিরা, এলাচের পাশাপাশি ইফতার পণ্য-বেগুন, লেবু, শসা ও সব ধরনের ফল বাড়তি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে এসব পণ্য কিনতে বর্তমানে ক্রেতার নাজেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। বুধবার প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হয়েছে ৭৬-৮২ টাকা। যা দুই দিন আগে ৭৫-৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মসুরের ডাল (ছোট দানা) প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১২০-১৩৫ টাকা। যা ৫ দিন আগে ১১৫-১৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি অ্যাংকর ডাল বিক্রি হয়েছে ৫৫-৬৫ টাকা। যা ৪ দিন আগে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ ৪০ টাকা বিক্রি হয়েছে। ৭ দিন আগে বিক্রি হয়েছে ৩৫ টাকা। প্রতি কেজি সাধারণ মানের খেজুর বিক্রি হয়েছে ১৫০-৪০০ টাকা। যা ৪ দিন আগে ১৩০-৩৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর