হাওর বার্তা ডেস্কঃ চুক্তি সইয়ের পরও সিন্ডিকেট নিয়ে জটের কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী নিয়োগ এখনো শুরু হয়নি। ঢাকা ও কুয়ালালামপুরে রিক্রুটিং এজেন্টদের শক্তিশালী চক্র ২৫টি এজেন্সির মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে উভয় দেশের সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশে প্রায় দেড় হাজার রিক্রুটিং এজেন্সি আছে। তারা এই সিন্ডিকেট প্রথা ভেঙে দিয়ে কর্মী পাঠানোর বিষয় উন্মুক্ত রাখার জন্য আন্দোলন করছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ আগামী ২৭ মার্চ মালয়েশিয়া সফরে যাচ্ছেন। যদিও মন্ত্রী মালয়েশিয়ার একটি সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিতে এই সফরে যাচ্ছেন। তবে তিনি এই সুযোগে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয় নিয়েও দেশটির সঙ্গে আলোচনা করতে চান।
কুয়ালালামপুরে ‘ডিফেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি এশিয়া’ নামের একটি প্রদর্শনী আগামী ২৮ থেকে ৩১ মার্চ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রদর্শনীতে প্রতিরক্ষা ও অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদর্শিত হবে। মালয়েশিয়ার সরকারের আয়োজনে এই প্রদর্শনীতে বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীরা অংশ নিচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীও সমরাস্ত্র প্রদর্শনী ও সম্মেলনে আমন্ত্রিত। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী হওয়ায় তিনি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রীকে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসাবে পাঠাচ্ছেন।
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ যুগান্তরকে বলেছেন, ‘মালয়েশিয়ায় ডিফেন্স কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী আমাকে পাঠাচ্ছেন। আমি এই ইভেন্টের সাইডলাইনে শ্রমবাজার নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করব। আমরা কর্মীদের স্বার্থ সুরক্ষা করে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে চাই।’
মানবপাচারের শঙ্কায় ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে তৎকালীন মাহাথির মোহাম্মদের সরকার বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করেছিল। শ্রমবাজারটি বন্ধ হওয়ার আগে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠানো হচ্ছিল। ওই সময়ে সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান জনশক্তি রপ্তানিকতারক নূর আলী। তিনি সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, বাংলাদেশে রিক্রুটিং এজেন্টদের সংগঠন বায়রার সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলী আসগর স্বপন এবং মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আমিন নূর সিন্ডিকেটের মূল হোতা। নূর আলী বলেছেন, অস্বচ্ছতার কারণে তিনি এবার সিন্ডিকেট ত্যাগ করেছেন।
জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে গত বছরের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ওই চুক্তি মোতাবেক, মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য কর্মীকে কোনো অর্থ পরিশোধ করতে হবে না। নিয়োগকারীরা বিমান ভাড়াসহ কর্মীর অভিবাসন ব্যয় বহন করবেন। এটাকে তখন অনেকে যুগান্তকারী চুক্তি বলে অভিহিত করেছিলেন। তারপর মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এক চিঠি দিয়ে নির্দিষ্ট ২৫টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে বাংলাদেশ থেকে কর্মী প্রেরণের অনুমতি দেওয়ার অনুরোধ জানান। বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার রিক্রুটিং এজেন্টরা এই প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামেন।
সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠানো হলে অভিবাসন ব্যয় বেড়ে যেতে পারে বলে আন্দোলনকারী রিক্রুটিং এজেন্টরা মনে করেন। এতে তারা মানবপাচারের আশঙ্কাও করছেন। মানবপাচারের বিষয় মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর নিবিড় পর্যবেক্ষণ করে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে থাকে। মানবপাচার সূচকে অবনতি ঘটলে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘রিস্ক ফ্যাক্টর তো অবশ্যই থাকে।’ তবে তিনি পালটা প্রশ্ন রাখেন, ‘সিন্ডিকেট না হলে অভিবাসন ব্যয় কম হবে এমন গ্যারান্টি কি আছে? সৌদি আরব কিংবা আরব আমিরাতে কর্মী প্রেরণে কোনো সিন্ডিকেট নেই। সেখানে কি অভিবাসন ব্যয় কম? মালয়েশিয়ায় বিমান ভাড়া নিয়োগকারীরা দেবেন। এতে কর্মীর ব্যয় পাসপোর্ট করাসহ সব মিলিয়ে তা ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে সীমিত থাকার কথা। সেটা নিশ্চিত করাটাও চ্যালেঞ্জ।’
মালয়েশিয়া কর্মী নিয়োগে ১৫টি সোর্স কান্ট্রি নির্ধারণ করলেও শুধু বাংলাদেশ থেকেই সিন্ডিকেট প্রথার ব্যাপারে দেশটির মানবসম্পদমন্ত্রী শর্ত দিচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রভাবশালী কেউ কেউ সিন্ডিকেট প্রথা চালু রাখার ব্যাপারে চাপ দিচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার সিন্ডিকেটের কাছে নতি স্বীকার করে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে কর্মী প্রেরণ শুরু করবে কিনা জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টা সরকারের রাজনৈতিক পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।’ মন্ত্রী ইমরান আহমদের কথায়ও অস্পষ্টতার সুর লক্ষণীয়। তিনি বলছেন, ‘সিন্ডিকেট কিংবা নন-সিন্ডিকেট বুঝি না। আমি শুধু দেখব কর্মীর স্বার্থ।’ কর্মীর স্বার্থ বলতে তিনি কী বুঝিয়েছেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
প্রবাসী কর্মীদের ২০০ টাকায় আবাসন : বিদেশগামী ও প্রবাস ফেরত কর্মীদের সাময়িক আবাসন সুবিধাসহ বিভিন্ন সেবা দেওয়ার জন্য ঢাকাস্থ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে নিরাপদ ও মনোরম পরিবেশে বঙ্গবন্ধু ওয়েজ আর্নার্স সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। শুক্রবার সেন্টারটির উদ্বোধন করেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ। এ সেন্টারের মাধ্যমে প্রবাসী কর্মীরা প্রতি রাতে ২০০ টাকা দিয়ে বিদেশে যাওয়ার সময় অথবা বিদেশ থেকে দেশে ফেরার সময়ে সাময়িকভাবে অবস্থান করতে পারবেন। এই অবস্থানকালে তাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে খাবারের ব্যবস্থা আছে। সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, বিমানবন্দরের অদূরে লঞ্জনীপাড়ায় ভবনসহ ১৪০ কাঠা জমি কিনে তা সংস্কার করা হয়েছে। ভবনটিতে পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা ডরমেটরি করা হয়েছে। খাবার জন্য ক্যান্টিন আছে। অত্যন্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ভবনটিতে আপাতত ৫০ জনের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেন্টার থেকে বিমানবন্দরে যাতায়াতের জন্য পরিবহণ সুবিধা, সেফ লকারে লাগেজসহ মূল্যবান মালামাল সংরক্ষণের ব্যবস্থা, টেলিফোন সুবিধা, ইন্টারনেটের জন্য ওয়াইফাই সুবিধা রয়েছে। প্রাথমিক চিকিৎসাসহ হাসপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা রয়েছে।