তাহসিনা রুশদি লুনা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার। যার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি নিখোঁজ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক,সাবেক সংসদ সদস্য ও সিলেট জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম ইলিয়াস আলীর সুযোগ্য সহধর্মিনী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কুয়েত মৈত্রী হলের সাবেক এজিএস তাহসিনা রুশদি লুনা,স্বামী ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হওয়ার পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক পরিচিত লাভ করেন। তাহসিনা রুশদি লুনা সিলেটের বিশ্বনাথের গৃহবধূ। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের চার বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামীকাল রোববার। ইলিয়াস আলী নিখোঁজ প্রসঙ্গে ও আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে শুক্রবার রাত ১০টায় ইলিয়াস আলীর গ্রামের বাড়ি সিলেটের বিশ্বনাথের রামধানায় তার বাসভবনে মানবকণ্ঠকে একান্ত সাক্ষাৎকার দেন তাহসিনা রুশদি লুনা। তার সাক্ষাৎকার নেন আমাদের সিলেটের বিশ্বনাথ প্রতিনিধি মোহাম্মদ আলী শিপন।
তাহসিনা রুশদি লুনা ইলিয়াস নিখোঁজ প্রসঙ্গে বলেন, আজ দীর্ঘ চার বছর ধরে স্বামী ইলিয়াস নিখোঁজ। কিন্তু আজও তাঁর কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। অনেক বার প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি,কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো সাড়াও পাইনি। এর আগে ২০১২ সালের ২ মে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলাম। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ইলিয়াস আলীকে উদ্ধার করার আশ্বাস দেন। কিন্তু এখনও ইলিয়াস আলীকে ফিরে না পেয়ে হতাশায় ভুগছি। সুযোগ পেলে আবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চাই।
লুনা বলেন, সরকার আন্তরিক হলে ইলিয়াসকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব। কেননা গুম-নিখোঁজ হওয়ায় অনেক ব্যক্তি তাদের পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন। আমরাও বিশ্বাস করি ইলিয়াস আলী ফিরে আসবেন! আমার শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ইলিয়াসের অপেক্ষায় থাকব।
স্বামীর কথা বলতে গিয়ে বার বার আবেগ আল্পুত হয়ে পড়েন লুনা। তার একটাই দাবি যে কোনো কিছুর বিনিময়ে স্বামীকে ফেরত চাই। তিনি এখনও মনে করেন তার স্বামী বেঁচে আছেন, পরিবারের মাঝে আবার ফিরে আসবে? এখন তিনি শুধু আল্লাহর ওপর ভরসা করে ইলিয়াস ফিরে আসার পথে চেয়ে রয়েছেন তিনি।
লুনা বলেন, ইচ্ছা থাকা সত্তেও চাকুরি ও সন্তানের লেখা-পড়ার কারণে স্বামীর বাড়ি রামধানায় আসা হয় কম। ইলিয়াস আলীর নিজ এলাকায় বিএনপি অধিক শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। ইলিয়াস আলীর ভালবাসার কারণে এলাকার অসংখ্য নেতাকর্মী নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। মাঝে মাঝে তাদের প্রতি সমবেদনা জানাতে বিশ্বনাথে স্বামীর বাড়িতে আসা হয়।
ইলিয়াস নিখোঁজ আন্দোলন প্রসঙ্গে তাহসিনা রুশদি লুনা বলেন, ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর সারা দেশের ন্যায় তাঁর জন্মস্থান সিলেটের বিশ্বনাথবাসী ইলিয়াস সন্ধান দাবি দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেনী পেশার মানুষ রাস্তা নেমে আসে। ২০১২ সালের ২৩ এপ্রিল সিলেটের বিশ্বনাথে ইলিয়াস সন্ধান আন্দোলন করতে গিয়ে তিনজন প্রাণ দিয়েছে। অসংখ্য বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা দেয়া হয়েছে। কারাববণ করেছেন কয়েকশত নেতা। সেইদিন দেশবাসীকে জানিয়েছিলেন ইলিয়াসকে বিশ্বনাথবাসী কত ভালবাসেন। যা গোটা বাংলাদেশে নতুন এক ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল। হত্যা-হামলা-মামলা অনেক নির্যাতন করেও ইলিয়াস নিখোঁজ আন্দোলন দমন করা সম্ভব হয়নি। সিলেটে এখন তাঁর সন্ধান আন্দোলন অব্যাহত রয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন প্রসঙ্গে লুনা বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে (ইউপি নির্বাচন) দলীয় প্রতীকে এবারই প্রথম। উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে বর্তমান সরকার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন চালু করেছে। আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তা দেখাতে সরকার মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে ব্যালট ছিনতাই করছে। ইতোমধ্যে যেসকল ইউনিয়নে নির্বাচন হয়েছে সেগুলোতে পুলিশ দিয়ে কেন্দ্র দখল আর জাল ভোট দিয়ে নৌকার প্রার্থীদের বিজয়ী করা হয়েছে।
তিনি বলেন, বিশ্বনাথে প্রতিটি ঘরে ঘরে ইলিয়াস আলী তার সৈনিক তৈরি করে রেখে গেছেন। তিনি বিএনপি নেতাকর্মীদের বিএনপির আদর্শে লালিত হওয়ার ট্রেনিং দিয়ে গেছেন।
তার প্রমাণ বিশ্বনাথবাসী ইলিয়াস আলী গুমের পর দেখিয়েছেন। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের পর বিশ্বনাথে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। সেই আন্দোলনে আমাদের তিন ভাই প্রাণ দিয়েছিল। বাংলাদেশে ইতিহাসে এটা বিরল। সে কারণে বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বনাথ উপজেলাকে অন্য ভাবে দেখে,অন্যভাবে মূল্যয়ন করে। কারণ এটা ইলিয়াস আলীর এলাকা।
তিনি আরো বলেন, বিগত ইউপি নির্বাচনে ইলিয়াস আলী ছিল। সেই নির্বাচনে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী জয়ী হয়েছিল। কিন্তু আজ তিনি তার উপজেলাবাসীর সামনে নেই। তাকে গুম করা হয়েছে। আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ধানের শীষ ভোট দিয়ে বিশ্বনাথবাসী ইলিয়াস নিখোঁজের জবাব দিতে বলে তিনি মনে করেন।
পরিশেষে তিনি ইলিয়াস আলী ও তার গাড়ি চালক আনসার আলীকে ফিরে পাওয়ার জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া করার আহবান জানান।
মানবকণ্ঠ