ঢাকা ০৪:০৪ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুরুটা করেছিলাম ২ টি গরু দিয়ে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:২২:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ১২৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাব্বির হাসান সাদাত নিলই। বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেছেন ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দেশের মাটিতে ফিরে এখন তিনি গরু পালনের তরুণ এক উদ্যোক্তা। আজ থেকে দশ বছর আগে মাত্র ২টি গরু দিয়ে শুরু করেছিলেন ছোট পরিসরের একটি খামার। আজ তার তিনটি খামার। যার মধ্যে একটি হলো রাজধানীর হাতিরঝিল আর্মি ক্যাম্প সংলগ্ন সামারাই ক্যাটেল ফার্ম। এখন তার খামারে গরু ও ছাগলের সংখ্যা ৭ শ’।

আসলে পশু-পাখি পালনের সখ ছোট বেলা থেকেই। ছোট বেলায় আব্বু কোরবানির গরু কিনে আনতেন। কয়েকদিন রেখেই কোরনানি দিয়ে দিতেন। ঈদের আগে ওই যে কয়েকদিন গরু পালন করতাম। খুব ভালো লাগতো। ইচ্ছা হতো সারা বছর এমন একটি গরু পালন করি। কিন্তু বয়সে ছোট এবং লেখা-পড়ার চাপ থাকার কারণে তখন গরু পালন করতে পারি নাই। পরে যখন লন্ডন থেকে লেখা-পড়া শেষ করে দেশে ফিরে আসি, তখনই ছোট বেলার স্বপ্ন ও সখ পূরণের সুযোগ পায়।

গাজীপুরে আমাদের একটি গার্মেন্টস কারখানা আছে। কারখানার পাশে অনেক পতিত জায়গা আছে। সেখানেই ঘরোয়া পরিবেশে শুরু করলাম গরু পালন। ২০০৮ সালে প্রথম দফায় দুটি গরু ক্রয় করলাম। যার দাম নেওয়া হলো ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। গরু দুটিকে পতিত জায়গায় উৎপাদিত ঘাস ও গমের ভূসি খাওয়াতাম। এছাড়া বাজারের কিছু খাবারও খাওয়াতাম।

এভাবে মাত্র ১ বছর গরু দুটি পালনের পর ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করলাম। কেনা দামের চেয়ে ২ লাখ টাকা বেশি পেলাম। মাত্র এক বছরে দ্বিগুণের বেশি লাভ পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম খামারের পরিধি বাড়াবো। সেই থেকে পথ চলা শুরু। আর কখনও পিছে ফিরে তাকায়নি।

বর্তমানে আমার ৩টি খামার। যার মধ্যে দুটিতে গরু পালন চলছে। আর একটি প্রকৃয়াধীন আছে। বাউন্ডারির কাজ শেষ হয়েছে। সচল দুটি খামারের মধ্যে একটি হলো হাতিরঝিলের এ খামার। তিন বিঘা জমির উপর এ খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে ৪শ’ মতো গরু আছে। আর ছাগল আছে ৫০টিও বেশি। ১৬ জন কর্মচারি এখানে কাজ করছে। যারা রাতদিন এখানে দায়িত্ব পালন করে। সপ্তাহে একদিন এ খামার ব্লিসিং পাওডার দিয়ে পরিস্কার করা হয়।

আর একটি খামার আছে কুষ্টিয়ার বাঁশ গ্রামে। দেড় বিঘা জমির উপর খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে শতাধিক গরু আছে। বিভিন্ন জেলার গ্রাম অঞ্চল থেকে গরুগুলো ক্রয়ের পর কুষ্টিয়ার খামারে রাখা হয়। দুই খামারে বিক্রি উপযোগি প্রায় ৬০০ গরু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর মেরাদিয়া অঞ্চলে ৬ বিঘা জমির উপর নতুন আরো একটি খামার গড়ে তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে বাউন্ডারি হয়ে গেছে। অল্প দিনের মধ্যেই খামারটিতে গরু উঠানো হবে।

প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময় গরুর কেনা-বেচা নিয়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্ঠি হয়। ঈদের এক থেকে দুই দিন আগে রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজি ও যানজটসহ নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয় অনেক কোরবানি দাতাকে। অনেকে আবার ইচ্ছা থাকলেও ব্যস্ততার কারণে ওই সময় গরু কিনতে পারেন না। তাদের জন্য সুযোগ হলো- তারা ইচ্ছা করলেই আমার খামারে আগে ভাগে গরু কিনে রাখতে পারেন। তাতে ভীড়ের সময় গরু ক্রয়ের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবেন ।

কোরবানি দাতা ইচ্ছা করলে ৬ মাস আগে থেকেও কোরবানির জন্য পছন্দের গরুটি কিনে রাখতে পারেন। তার জন্য বায়না হিসেবে অগ্রিম দিতে হবে মোট দামের ৫০ শতাংশ। তবে তার জন্য গরু ক্রেতাকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। গরুর দাম ও আকার অনুযায়ী এ পালন খরচ কম-বেশি হতে পারে। ক্রেতা খামারে এসে গরু দেখে দরদামের মাধ্যমে বায়না করে রেখে যেতে পারেন। শবে বরাত থেকে অনেকে গরু কিনে রাখেন।

গত বছর আমার খামার থেকে ২৮০টি গরু বিক্রি হয়েছে। প্রতিটা গরুর দাম ছিল ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। এবার ৬০০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে বিক্রির জন্য। এসব গরু সাড়ে ৮শ’ থেকে হাজার কেজি ওজনের হবে। এবার খামারে সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ লাখ টাকা দামের ৪টি গরুও আছে। তবে সর্বনিম্ন ৫৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার গরুও আছে।

গরু পালনে লাগামহীনভাবে গো খাদ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ভ্যাকসিনসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ সময় মতো পাওয়া যায় না। গরু আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়। নানাবিধ সমস্যার মধ্যে খামার পরিচালনা করতে হয়। গো-খাদ্যের দাম বাড়তির কারণে অনেক সময় হিমশিম খাইতে হয়। কারণ শুধু হাতিরঝিলের এই খামারটি পরিচালনায় প্রতিমাসে শ্রমিক খরচ দিতে হয় ২ লাখের উপরে।

বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। এখানে গরু পালনকে পেশা হিসেবে নিলে আমি সমূহ সম্ভাবনা দেখছি। আমরা যদি গরুর ঔষধগুলো সময় মতো পর্যাপ্ত পরিমান পাই তবে আগামীতে বিশ্বের বড় বড় গরু প্রদর্শনীতে আমরা অংশ নিতে পারবো। এমনকি আমরাও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গরু রফতানি করতে পারবো। তখন ভারতের মতো কোন দেশের উপর গরুর মাংসের জন্য নির্ভর করতে হবে না।

লাখো লাখো বেকার যুবকদের জন্য আমার পরামর্শ-পৃথিবীর কোন কাজ ছোট না। বেকার থাকাটাই বরং ছোট মানুষের কাজ। আমাদের দেশ গরু পালনের জন্য খুবই উপযোগি। বেকার না থেকে গরু পালনকে পেশা হিসেবে নেওয়া যায়। তাতে নিজের হতাশাও ঘুচবে আবার অর্থনৈতিক সফলতাও আসবে। সেক্ষেত্রে শুরুটা আমার মতো ২টা গরু দিয়েই করা ভালো হবে। তথ্যসূত্র: একুশে টেলিভিশন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

শুরুটা করেছিলাম ২ টি গরু দিয়ে

আপডেট টাইম : ০৫:২২:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাব্বির হাসান সাদাত নিলই। বিবিএ ও এমবিএ সম্পন্ন করেছেন ইংল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। দেশের মাটিতে ফিরে এখন তিনি গরু পালনের তরুণ এক উদ্যোক্তা। আজ থেকে দশ বছর আগে মাত্র ২টি গরু দিয়ে শুরু করেছিলেন ছোট পরিসরের একটি খামার। আজ তার তিনটি খামার। যার মধ্যে একটি হলো রাজধানীর হাতিরঝিল আর্মি ক্যাম্প সংলগ্ন সামারাই ক্যাটেল ফার্ম। এখন তার খামারে গরু ও ছাগলের সংখ্যা ৭ শ’।

আসলে পশু-পাখি পালনের সখ ছোট বেলা থেকেই। ছোট বেলায় আব্বু কোরবানির গরু কিনে আনতেন। কয়েকদিন রেখেই কোরনানি দিয়ে দিতেন। ঈদের আগে ওই যে কয়েকদিন গরু পালন করতাম। খুব ভালো লাগতো। ইচ্ছা হতো সারা বছর এমন একটি গরু পালন করি। কিন্তু বয়সে ছোট এবং লেখা-পড়ার চাপ থাকার কারণে তখন গরু পালন করতে পারি নাই। পরে যখন লন্ডন থেকে লেখা-পড়া শেষ করে দেশে ফিরে আসি, তখনই ছোট বেলার স্বপ্ন ও সখ পূরণের সুযোগ পায়।

গাজীপুরে আমাদের একটি গার্মেন্টস কারখানা আছে। কারখানার পাশে অনেক পতিত জায়গা আছে। সেখানেই ঘরোয়া পরিবেশে শুরু করলাম গরু পালন। ২০০৮ সালে প্রথম দফায় দুটি গরু ক্রয় করলাম। যার দাম নেওয়া হলো ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। গরু দুটিকে পতিত জায়গায় উৎপাদিত ঘাস ও গমের ভূসি খাওয়াতাম। এছাড়া বাজারের কিছু খাবারও খাওয়াতাম।

এভাবে মাত্র ১ বছর গরু দুটি পালনের পর ৩ লাখ ৮০ হাজার টাকায় বিক্রি করলাম। কেনা দামের চেয়ে ২ লাখ টাকা বেশি পেলাম। মাত্র এক বছরে দ্বিগুণের বেশি লাভ পেয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম খামারের পরিধি বাড়াবো। সেই থেকে পথ চলা শুরু। আর কখনও পিছে ফিরে তাকায়নি।

বর্তমানে আমার ৩টি খামার। যার মধ্যে দুটিতে গরু পালন চলছে। আর একটি প্রকৃয়াধীন আছে। বাউন্ডারির কাজ শেষ হয়েছে। সচল দুটি খামারের মধ্যে একটি হলো হাতিরঝিলের এ খামার। তিন বিঘা জমির উপর এ খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে। এখানে ৪শ’ মতো গরু আছে। আর ছাগল আছে ৫০টিও বেশি। ১৬ জন কর্মচারি এখানে কাজ করছে। যারা রাতদিন এখানে দায়িত্ব পালন করে। সপ্তাহে একদিন এ খামার ব্লিসিং পাওডার দিয়ে পরিস্কার করা হয়।

আর একটি খামার আছে কুষ্টিয়ার বাঁশ গ্রামে। দেড় বিঘা জমির উপর খামারটি গড়ে তোলা হয়েছে। যেখানে শতাধিক গরু আছে। বিভিন্ন জেলার গ্রাম অঞ্চল থেকে গরুগুলো ক্রয়ের পর কুষ্টিয়ার খামারে রাখা হয়। দুই খামারে বিক্রি উপযোগি প্রায় ৬০০ গরু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর মেরাদিয়া অঞ্চলে ৬ বিঘা জমির উপর নতুন আরো একটি খামার গড়ে তোলা হচ্ছে। এরই মধ্যে বাউন্ডারি হয়ে গেছে। অল্প দিনের মধ্যেই খামারটিতে গরু উঠানো হবে।

প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময় গরুর কেনা-বেচা নিয়ে একটা উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্ঠি হয়। ঈদের এক থেকে দুই দিন আগে রাস্তাঘাটে চাঁদাবাজি ও যানজটসহ নানাবিধ সমস্যায় পড়তে হয় অনেক কোরবানি দাতাকে। অনেকে আবার ইচ্ছা থাকলেও ব্যস্ততার কারণে ওই সময় গরু কিনতে পারেন না। তাদের জন্য সুযোগ হলো- তারা ইচ্ছা করলেই আমার খামারে আগে ভাগে গরু কিনে রাখতে পারেন। তাতে ভীড়ের সময় গরু ক্রয়ের ভোগান্তি থেকে রক্ষা পাবেন ।

কোরবানি দাতা ইচ্ছা করলে ৬ মাস আগে থেকেও কোরবানির জন্য পছন্দের গরুটি কিনে রাখতে পারেন। তার জন্য বায়না হিসেবে অগ্রিম দিতে হবে মোট দামের ৫০ শতাংশ। তবে তার জন্য গরু ক্রেতাকে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হবে। গরুর দাম ও আকার অনুযায়ী এ পালন খরচ কম-বেশি হতে পারে। ক্রেতা খামারে এসে গরু দেখে দরদামের মাধ্যমে বায়না করে রেখে যেতে পারেন। শবে বরাত থেকে অনেকে গরু কিনে রাখেন।

গত বছর আমার খামার থেকে ২৮০টি গরু বিক্রি হয়েছে। প্রতিটা গরুর দাম ছিল ৫০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। এবার ৬০০টি গরু প্রস্তুত করা হয়েছে বিক্রির জন্য। এসব গরু সাড়ে ৮শ’ থেকে হাজার কেজি ওজনের হবে। এবার খামারে সর্বোচ্চ সাড়ে ১১ লাখ টাকা দামের ৪টি গরুও আছে। তবে সর্বনিম্ন ৫৫ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ হাজার টাকার গরুও আছে।

গরু পালনে লাগামহীনভাবে গো খাদ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ভ্যাকসিনসহ প্রয়োজনীয় ঔষধ সময় মতো পাওয়া যায় না। গরু আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে চাঁদাবাজির শিকার হতে হয়। নানাবিধ সমস্যার মধ্যে খামার পরিচালনা করতে হয়। গো-খাদ্যের দাম বাড়তির কারণে অনেক সময় হিমশিম খাইতে হয়। কারণ শুধু হাতিরঝিলের এই খামারটি পরিচালনায় প্রতিমাসে শ্রমিক খরচ দিতে হয় ২ লাখের উপরে।

বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। এখানে গরু পালনকে পেশা হিসেবে নিলে আমি সমূহ সম্ভাবনা দেখছি। আমরা যদি গরুর ঔষধগুলো সময় মতো পর্যাপ্ত পরিমান পাই তবে আগামীতে বিশ্বের বড় বড় গরু প্রদর্শনীতে আমরা অংশ নিতে পারবো। এমনকি আমরাও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গরু রফতানি করতে পারবো। তখন ভারতের মতো কোন দেশের উপর গরুর মাংসের জন্য নির্ভর করতে হবে না।

লাখো লাখো বেকার যুবকদের জন্য আমার পরামর্শ-পৃথিবীর কোন কাজ ছোট না। বেকার থাকাটাই বরং ছোট মানুষের কাজ। আমাদের দেশ গরু পালনের জন্য খুবই উপযোগি। বেকার না থেকে গরু পালনকে পেশা হিসেবে নেওয়া যায়। তাতে নিজের হতাশাও ঘুচবে আবার অর্থনৈতিক সফলতাও আসবে। সেক্ষেত্রে শুরুটা আমার মতো ২টা গরু দিয়েই করা ভালো হবে। তথ্যসূত্র: একুশে টেলিভিশন