ঢাকা ১১:৩২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভোজ্যতেলে ভারতের আমদানিনির্ভরতা থাকবে আরও ১৫ বছর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৬:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২
  • ১৩৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতীয় উপমহাদেশে দৈনন্দিন খাদ্যাভাসের অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ ভোজ্যতেল। যেকোনো উৎসব-অনুষ্ঠান এলে এর চাহিদা বেড়ে যায় আরও বেশি। বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে গিয়ে এরই মধ্যে পাম, সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের বৃহত্তম আমদানিকারক হয়ে উঠেছে ভারত। নানা কারণে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন চড়া দামে এসব তেল কিনতে হচ্ছে ভারতীয়দের। এ কারণে প্রশ্ন উঠছে, এই সংকট থেকে কবে মুক্তি পাবে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটি।

প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন বলছে, অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা দ্রুতগতিতে বাড়ায় ভারতকে আরও অন্তত ১৫ বছর বিদেশ থেকে চড়া দামে ভোজ্যতেল আমদানি করতে হতে পারে।

ভারতের সলভেন্ট এক্সট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক বি ভি মেহতার অনুমান, আগামী চার বছরে দেশটিতে ভোজ্যতেলের চাহিদা ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এর সঙ্গে ভারতের ভোজ্যতেল উৎপাদনের ব্যবধান আরও বাড়বে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটিতে প্রায় এক কোটি টন ভোজ্যতেল উৎপাদন হলেও একই সময়ে তাদের চাহিদা থাকতে পারে ২ কোটি ৩০ লাখ টনের মতো। অর্থাৎ চলতি মৌসুমেও ভারতকে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি করতে হচ্ছে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম উদ্ভিজ তেল আমদানিকারক ভারত বহুদিন ধরে বিদেশনির্ভরতা কাটানোর চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। দেশটির কৃষকরা সাধারণত ধান, গম, তুলা, আখ চাষে আগ্রহী। কারণ সরকার এসব শস্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পাশাপাশি কিছু অংশ কিনেও নেয়।

ন্যাশনাল কমোডিটি ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সিরাজ চৌধুরীর মতে, ভারতীয় কৃষকদের এ মানসিকতা রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয়। রাই সরিষা ও সূর্যমুখীর উচ্চ ফলনশীল জাত এবং লাভজনক দাম নিশ্চিত হলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়তে পারে। কিন্তু ভারতে কৃষকদের তেলবীজ চাষের জন্য প্রণোদনা এখনো অনেক কম।

তার মতে, পরিবর্তনের শুরুটা করতে হবে স্থানীয় পর্যায়ে। শস্যচক্রের ওপর নিবিড় নজর রাখতে হবে। ধানচাষিদের বর্ষাকালে সূর্যমুখী চাষে উৎসাহিত করতে হবে, গম উৎপাদনকারীদের বলতে হবে শীতকালে রাই সরিষার চাষ করতে। রাইস ব্রান অয়েলের (তুষের তেল) উৎপাদন বা চিনাবাদাম চাষও পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে।

তবে ভারতের ভোজ্যতেল উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যকার ব্যবধান কমাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে পাম চাষ। দামে কিছুটা সস্তা হওয়ায় ভারতীয়দের কাছে পাম তেল বেশ জনপ্রিয়। অন্য অনেক তেলের চেয়ে বেশিদিন ভালো থাকায় এটি হোটেল-রেস্তোরাঁর বড় গ্রাহকদের জন্যেও সাশ্রয়ী।

 

বি ভি মেহতা জানান, ২০২৬ সালের মধ্যে পাম তেলের উৎপাদন ১০ লাখ টন ও ২০৩০ সাল নাগাদ তা ২৮ লাখ টনে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ভারত।

পাম চাষ বাড়ানোর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা ভারত সরকারকে সরাসরি তেল আমদানির বদলে সয়াবিন আমদানি করে অভ্যন্তরীণভাবে ভাঙানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এতে শুধু দেশটিতে সয়াবিন তেলের সরবরাহই বাড়বে না, পোল্ট্রি খাবারের ক্রমবর্ধমান চাহিদাও মিটবে।

সিরাজ চৌধুরী বলেন, এখনকার ধারা বদলে ভারত যদি চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোজ্যতেল স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে পারে ও বাকিটা আমদানি করে, সেটি হবে সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ভোজ্যতেলে ভারতের আমদানিনির্ভরতা থাকবে আরও ১৫ বছর

আপডেট টাইম : ১০:০৬:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভারতীয় উপমহাদেশে দৈনন্দিন খাদ্যাভাসের অন্যতম প্রধান অনুসঙ্গ ভোজ্যতেল। যেকোনো উৎসব-অনুষ্ঠান এলে এর চাহিদা বেড়ে যায় আরও বেশি। বিশাল জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটাতে গিয়ে এরই মধ্যে পাম, সয়াবিন ও সূর্যমুখী তেলের বৃহত্তম আমদানিকারক হয়ে উঠেছে ভারত। নানা কারণে বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধির কারণে এখন চড়া দামে এসব তেল কিনতে হচ্ছে ভারতীয়দের। এ কারণে প্রশ্ন উঠছে, এই সংকট থেকে কবে মুক্তি পাবে দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম দেশটি।

প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের প্রতিবেদন বলছে, অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের চেয়ে চাহিদা দ্রুতগতিতে বাড়ায় ভারতকে আরও অন্তত ১৫ বছর বিদেশ থেকে চড়া দামে ভোজ্যতেল আমদানি করতে হতে পারে।

ভারতের সলভেন্ট এক্সট্রাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী পরিচালক বি ভি মেহতার অনুমান, আগামী চার বছরে দেশটিতে ভোজ্যতেলের চাহিদা ১৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। ব্যাপক চাহিদা বৃদ্ধির কারণে এর সঙ্গে ভারতের ভোজ্যতেল উৎপাদনের ব্যবধান আরও বাড়বে। ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশটিতে প্রায় এক কোটি টন ভোজ্যতেল উৎপাদন হলেও একই সময়ে তাদের চাহিদা থাকতে পারে ২ কোটি ৩০ লাখ টনের মতো। অর্থাৎ চলতি মৌসুমেও ভারতকে প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ টন ভোজ্যতেল আমদানি করতে হচ্ছে।

বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম উদ্ভিজ তেল আমদানিকারক ভারত বহুদিন ধরে বিদেশনির্ভরতা কাটানোর চেষ্টা করেও সফল হতে পারেনি। দেশটির কৃষকরা সাধারণত ধান, গম, তুলা, আখ চাষে আগ্রহী। কারণ সরকার এসব শস্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পাশাপাশি কিছু অংশ কিনেও নেয়।

ন্যাশনাল কমোডিটি ম্যানেজমেন্ট সার্ভিসেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী সিরাজ চৌধুরীর মতে, ভারতীয় কৃষকদের এ মানসিকতা রাতারাতি বদলানো সম্ভব নয়। রাই সরিষা ও সূর্যমুখীর উচ্চ ফলনশীল জাত এবং লাভজনক দাম নিশ্চিত হলে অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়তে পারে। কিন্তু ভারতে কৃষকদের তেলবীজ চাষের জন্য প্রণোদনা এখনো অনেক কম।

তার মতে, পরিবর্তনের শুরুটা করতে হবে স্থানীয় পর্যায়ে। শস্যচক্রের ওপর নিবিড় নজর রাখতে হবে। ধানচাষিদের বর্ষাকালে সূর্যমুখী চাষে উৎসাহিত করতে হবে, গম উৎপাদনকারীদের বলতে হবে শীতকালে রাই সরিষার চাষ করতে। রাইস ব্রান অয়েলের (তুষের তেল) উৎপাদন বা চিনাবাদাম চাষও পরিপূরক হিসেবে কাজ করতে পারে।

তবে ভারতের ভোজ্যতেল উৎপাদন ও চাহিদার মধ্যকার ব্যবধান কমাতে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হতে পারে পাম চাষ। দামে কিছুটা সস্তা হওয়ায় ভারতীয়দের কাছে পাম তেল বেশ জনপ্রিয়। অন্য অনেক তেলের চেয়ে বেশিদিন ভালো থাকায় এটি হোটেল-রেস্তোরাঁর বড় গ্রাহকদের জন্যেও সাশ্রয়ী।

 

বি ভি মেহতা জানান, ২০২৬ সালের মধ্যে পাম তেলের উৎপাদন ১০ লাখ টন ও ২০৩০ সাল নাগাদ তা ২৮ লাখ টনে নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে ভারত।

পাম চাষ বাড়ানোর পাশাপাশি বিশেষজ্ঞরা ভারত সরকারকে সরাসরি তেল আমদানির বদলে সয়াবিন আমদানি করে অভ্যন্তরীণভাবে ভাঙানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এতে শুধু দেশটিতে সয়াবিন তেলের সরবরাহই বাড়বে না, পোল্ট্রি খাবারের ক্রমবর্ধমান চাহিদাও মিটবে।

সিরাজ চৌধুরী বলেন, এখনকার ধারা বদলে ভারত যদি চাহিদার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ ভোজ্যতেল স্থানীয়ভাবে উৎপাদন করতে পারে ও বাকিটা আমদানি করে, সেটি হবে সবচেয়ে ভালো ব্যবস্থা।