ঢাকা ১১:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১১৬ বছরে একদিনও গোসল করেননি তিনি!

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৭:০৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২১
  • ১৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গোসলের প্রতি অনীহা দেখা যায় অনেকের। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে এই তালিকায় বড়দের সংখ্যাও কম নয়। অনেকেই জীবনের কিছুটা সময় নানা কারণে গোসল না করে কাটিয়েছেন। তবে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন লন্ডনের জেন লিউসন।

মধ্যযুগে গোসল ছিল এক রকম বিলাসিতা। ফরাসি ইতিহাসবিদ জুলেস মিসলেট ইউরোপের মধ্যযুগকে ‘গোসল ছাড়া ১০০০ বছর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইউরোপীয়দের মনে ধারণা ছিল, গোসল করলে রোমকূপের মধ্যে দিয়ে দেহে রোগ-জীবাণু প্রবেশ করে এবং সেই কারণে তারা গোসল করতেন না।

 

স্পেনের রানি ইসাবেল জীবনে মাত্র দুইবার গোসল করেন। যেদিন তার জন্ম হয় এবং দ্বিতীয় ও শেষবার তার বিয়ের দিন। এমনকি তাদের এতো বড় প্রাসাদে ছিল না কোনো বাথরুম। তারা শরীরে ব্যবহার করতেন নানান ধরনে সুগন্ধি। তবে জেনের বেলায় বিষয়টি ছিল একেবারেই ভিন্ন।

৩০০ বছরের বেশি সময় আগে করা জেনের রেকর্ড এখনো ভাঙতে পারেনি কেউ। ১৭০০ সালে লন্ডনের এক ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জেন। ছোটবেলায় সবার খুব আদর আর আহ্লাদে বড় হয়েছেন তিনি। ঠান্ডা লেগে যেতে পারে এই ভয়ে জেনের মা কখনো তাকে গোসল করাতেন না। এভাবেই জেন বড় হতে থাকেন।

জীবনের প্রথম দিকে তিনি একজন ধনী ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন। তবে তার স্বামী মাত্র ২৬ বছর বয়সে মারা যায়। একমাত্র মেয়েকে নিয়েই জীবন পার করেছেন জেন। আর বিয়ে করেননি কখনো। পুরো শহরে তিনি বেশ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন। তার সৌন্দর্য এবং ফ্যাশন সচেতন তাকে পরিচিত করে তোলে সব মহলে।

তবে তা ছিল অন্যদের থেকে একেবারেই আলাদা। তার অদ্ভুত চেহারার কারণে তিনি স্থানীয় এলাকায় লেডি লুসন নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি পোশাক পরতেন তা সমসাময়িক সময়ের ছিল না। এ ধরনের পোশাক পরা হতো জর্জ প্রথমের রাজত্বকালে।

জেন একটি কুসংস্কারে বিশ্বাস করতেন। তার মনে হতো গোসল করলেই বুঝি ঠান্ডা লেগে যাবে। এমনকি ঠান্ডা থেকে বাঁচতে চা খেতেন সবসময়। শরীরে যাতে দুর্গন্ধ না হয় এজন্য তিনি সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। তিনি নিজেকে ধোয়ার পরিবর্তে শূকরের চর্বি মাখতেন শরীরে। তার বিশ্বাস ছিল এতে শরীরের সব জীবাণু দূর হয়ে যাবে।

তিনি সর্বদা পাউডার লাগিয়ে রাখতেন শরীরে। মাথায় পরতেন ঘোড়ার লেজ থেকে তৈরি পরচুলা। প্রায় আধা ফুট উঁচু একটি টুপি পরতেন মাথায়। যা তার চিবুকের নীচে গিঁট দেওয়া থাকত এবং গলায় তিন থেকে চারটি স্কার্ফ ঝুলিয়ে রাখতেন। সিল্কের পোশাক, হাই হিল পরতেন সবসময়। প্রায় ৮০ বছর ধরে তার প্রতিদিনের পোশাক এই ধরনের ছিল।

স্বামীর মৃত্যুর পর একা হাতেই মেয়েকে বড় করেছেন জেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আরও বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন তিনি। শুধু বৃদ্ধ এক দাসী, একটি কুকুর আর বিড়ালই ছিল তার একমাত্র সঙ্গী। তবে জেন যে নিজে গোসল করতেন না তাই নয়। তার ঘর বাড়ি ছিল খুবই অপরিষ্কার। তার বাড়ির আশপাশ দিয়ে গেলেও দুর্গন্ধ পাওয়া যেত।

 

১৮১৬ সালে ১১৬ বছর বয়সে মারা যান জেন লিউসন। তার মৃত্যুর পর তার বাড়িতে যারা গিয়েছেন তাদের কাছ থেকে জানা যায় যে, জেনের বাড়ি কতটা নোংরা ছিল। তারা ভেতরে গিয়ে একেবারে হতবাক হয়ে যান সবাই। সিলিংয়ে ময়লা পুরু হয়ে গিয়েছে। জানালা, দরজা, ফ্লোর সবখানেই ময়লার আস্তরণ। ফায়ার প্লেসের ছাই সরানো হয়নি বোধহয় বছর খানিক ধরে।

গ্রেট এক্সপেকটেশনস উপন্যাসের স্পিনস্টার মিস হাভিশামের চরিত্রটি জেনের আদলেই তৈরি বলে মনে করেন অনেকেই। এছাড়াও ১৮৪৬ সালে আলফ্রেড ইনিগো সাকলিং-এর দ্য হিস্টোরি অ্যান্ড অ্যান্টিকুইটিস অফ দ্য কাউন্টি অফ সাফোক বইতে জেনের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

১১৬ বছরে একদিনও গোসল করেননি তিনি!

আপডেট টাইম : ০৭:০৭:০৫ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গোসলের প্রতি অনীহা দেখা যায় অনেকের। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে এই তালিকায় বড়দের সংখ্যাও কম নয়। অনেকেই জীবনের কিছুটা সময় নানা কারণে গোসল না করে কাটিয়েছেন। তবে সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছেন লন্ডনের জেন লিউসন।

মধ্যযুগে গোসল ছিল এক রকম বিলাসিতা। ফরাসি ইতিহাসবিদ জুলেস মিসলেট ইউরোপের মধ্যযুগকে ‘গোসল ছাড়া ১০০০ বছর’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। ইউরোপীয়দের মনে ধারণা ছিল, গোসল করলে রোমকূপের মধ্যে দিয়ে দেহে রোগ-জীবাণু প্রবেশ করে এবং সেই কারণে তারা গোসল করতেন না।

 

স্পেনের রানি ইসাবেল জীবনে মাত্র দুইবার গোসল করেন। যেদিন তার জন্ম হয় এবং দ্বিতীয় ও শেষবার তার বিয়ের দিন। এমনকি তাদের এতো বড় প্রাসাদে ছিল না কোনো বাথরুম। তারা শরীরে ব্যবহার করতেন নানান ধরনে সুগন্ধি। তবে জেনের বেলায় বিষয়টি ছিল একেবারেই ভিন্ন।

৩০০ বছরের বেশি সময় আগে করা জেনের রেকর্ড এখনো ভাঙতে পারেনি কেউ। ১৭০০ সালে লন্ডনের এক ধনী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন জেন। ছোটবেলায় সবার খুব আদর আর আহ্লাদে বড় হয়েছেন তিনি। ঠান্ডা লেগে যেতে পারে এই ভয়ে জেনের মা কখনো তাকে গোসল করাতেন না। এভাবেই জেন বড় হতে থাকেন।

জীবনের প্রথম দিকে তিনি একজন ধনী ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন। তবে তার স্বামী মাত্র ২৬ বছর বয়সে মারা যায়। একমাত্র মেয়েকে নিয়েই জীবন পার করেছেন জেন। আর বিয়ে করেননি কখনো। পুরো শহরে তিনি বেশ আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু ছিলেন। তার সৌন্দর্য এবং ফ্যাশন সচেতন তাকে পরিচিত করে তোলে সব মহলে।

তবে তা ছিল অন্যদের থেকে একেবারেই আলাদা। তার অদ্ভুত চেহারার কারণে তিনি স্থানীয় এলাকায় লেডি লুসন নামে পরিচিত ছিলেন। তিনি পোশাক পরতেন তা সমসাময়িক সময়ের ছিল না। এ ধরনের পোশাক পরা হতো জর্জ প্রথমের রাজত্বকালে।

জেন একটি কুসংস্কারে বিশ্বাস করতেন। তার মনে হতো গোসল করলেই বুঝি ঠান্ডা লেগে যাবে। এমনকি ঠান্ডা থেকে বাঁচতে চা খেতেন সবসময়। শরীরে যাতে দুর্গন্ধ না হয় এজন্য তিনি সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। তিনি নিজেকে ধোয়ার পরিবর্তে শূকরের চর্বি মাখতেন শরীরে। তার বিশ্বাস ছিল এতে শরীরের সব জীবাণু দূর হয়ে যাবে।

তিনি সর্বদা পাউডার লাগিয়ে রাখতেন শরীরে। মাথায় পরতেন ঘোড়ার লেজ থেকে তৈরি পরচুলা। প্রায় আধা ফুট উঁচু একটি টুপি পরতেন মাথায়। যা তার চিবুকের নীচে গিঁট দেওয়া থাকত এবং গলায় তিন থেকে চারটি স্কার্ফ ঝুলিয়ে রাখতেন। সিল্কের পোশাক, হাই হিল পরতেন সবসময়। প্রায় ৮০ বছর ধরে তার প্রতিদিনের পোশাক এই ধরনের ছিল।

স্বামীর মৃত্যুর পর একা হাতেই মেয়েকে বড় করেছেন জেন। মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর আরও বেশি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন তিনি। শুধু বৃদ্ধ এক দাসী, একটি কুকুর আর বিড়ালই ছিল তার একমাত্র সঙ্গী। তবে জেন যে নিজে গোসল করতেন না তাই নয়। তার ঘর বাড়ি ছিল খুবই অপরিষ্কার। তার বাড়ির আশপাশ দিয়ে গেলেও দুর্গন্ধ পাওয়া যেত।

 

১৮১৬ সালে ১১৬ বছর বয়সে মারা যান জেন লিউসন। তার মৃত্যুর পর তার বাড়িতে যারা গিয়েছেন তাদের কাছ থেকে জানা যায় যে, জেনের বাড়ি কতটা নোংরা ছিল। তারা ভেতরে গিয়ে একেবারে হতবাক হয়ে যান সবাই। সিলিংয়ে ময়লা পুরু হয়ে গিয়েছে। জানালা, দরজা, ফ্লোর সবখানেই ময়লার আস্তরণ। ফায়ার প্লেসের ছাই সরানো হয়নি বোধহয় বছর খানিক ধরে।

গ্রেট এক্সপেকটেশনস উপন্যাসের স্পিনস্টার মিস হাভিশামের চরিত্রটি জেনের আদলেই তৈরি বলে মনে করেন অনেকেই। এছাড়াও ১৮৪৬ সালে আলফ্রেড ইনিগো সাকলিং-এর দ্য হিস্টোরি অ্যান্ড অ্যান্টিকুইটিস অফ দ্য কাউন্টি অফ সাফোক বইতে জেনের সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়।