হাওর বার্তা ডেস্কঃ আমি বসন্ত হয়ে এসেছি, শরৎ হেমন্ত পেরিয়ে আবার তোমার দোয়ারেই এসেছি…। এমন সুরের ঝঙ্কারে আবহমান বাংলার প্রকৃতি ঋতুরাজ বসন্তের উষ্ণ পরশ দিতে ডানা মেলে সাজে সুনামগঞ্জের ‘পাকনা হাওরের মিনি সুন্দরবন’ খ্যাত পরিবেশবাদী সংস্থা সিএনআরএসের এই করচ বাগান।
হেমন্তে সবুজ ঘাসের বুকে মেঠোপথ পেরিয়ে আর বর্ষায় হাওরের বিশাল জলরাশি দিয়ে জামালগঞ্জের বুক ছিঁড়ে পাকনা হাওরে ঐতিহ্যবাহী ফেনারবাঁক কানাই খালী নদীর উজান পাড় ঘেঁষে এই নয়নাভিরাম করচ বাগান। বর্ষা, শরৎ, হেমন্ত, বসন্তে সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রিয়জনদের সাথে নিয়ে প্রতিদিন ছুঠে আসেন প্রকৃতিপ্রেমিরা। লাল-সবুজের বাংলাদেশে এই করচ বাগানে নতুন পাতার শব্দে বিভিন্ন ঋতু যেন সার্থক হয়ে উঠে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যেমন প্রকৃতির মনোরম দৃশ্য দেশি-বিদেশি পর্যটকদের হৃদয় আকৃষ্ট করে, ঠিক তেমনই সুনামগঞ্জের হাওরের জামালগঞ্জ উপজেলার ফেনারবাঁক, শান্তিপুর, বীণাজুড়া, মাতারগাঁও সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি ও নয়নাভিরাম হিজল-করচ বাগান দর্শনার্থী ও ভ্রমণপ্রিয়দের স্বাগত জানাতে হাতছানি দিচ্ছে। হাওরবেষ্টিত জামালগঞ্জ উপজেলা ৩৩৮.৭৮ বর্গ কিলোমিটার আয়তনে প্রায় দুই লাখ লোকের বসবাস। এক সময় পুরো হাওরাঞ্চলে ছোট ছোট নদী নালা, খাল, বিল, ডোবার তীর ঘেষে অবস্থান ছিল হিজল-করচ গাছসহ নানাবিধ জলজ উদ্ভিদের। জমিদারি প্রথা বিলুপ্ত হলে স্থানীয় জমিদাররা ওই সব গাছপালা কেটে উজাড় করে ফেলেন। ফলে ১৯৬০ দশক থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত ছিল বৃক্ষশূন্য এই হাওর এলাকা।
এ অবস্থায় প্রায় দেড় যুগ আগে হাওরাঞ্চলকে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে উদ্ধার করতে এগিয়ে আসে পরিবেশবাদী সংস্থা সেন্টার ফর ন্যাচারাল রিসোর্স স্ট্যাডিজ (সিএনআরএস)। সিএনআরএসের প্রকল্প ন্যাচারাল রিসোর্স গভর্ন্যান্স (এনার্জি) প্রাকৃতিক সম্পদের উপর হতদরিদ্র মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ সম্পদের সুষম বণ্টনে জোরালো ভূমিকা রাখে। পরিকল্পিত আহরণ ও সংরণ করার উদ্দেশ্য নিয়ে এই প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রয়েছে হাওরে।
এ ব্যাপারে সিএনআরএসের নির্বাহী পরিচালক ড. এম মোখলেছুর রহমান নয়া দিগন্তকে জানান, সিএনআরএস দীর্ঘ প্রায় ১৮-১৯ বছর যাবত সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, মৌলভীবাজারের হাকালুকি হাওর ও হাইল হাওরে পরিবেশ রক্ষায় বনায়ন করে যাচ্ছে। এ ছাড়া মাছের অভয়ারণ্য ও পাখির বাসা নির্মাণেও আমরা কাজ করেছি। হাওরের পরিবেশ রক্ষায় আরো কিছু করার স্বপ্ন দেখছি।