বাঙালির রসনাবিলাসের একটি বিশাল অংশজুড়ে রয়েছে নানা গুণসমৃদ্ধ বেগুন। ভর্তা, ভাজি তো বটেই, বেগুন পোড়া, বিভিন্ন তরকারি, লাবড়া, বেগুনের টক ইত্যাদিও কম জনপ্রিয় নয়! বাংলাদেশে ইফতারের একটি জনপ্রিয় খাবার হলো বেগুনী, যা বেগুন ও বেসন দিয়ে বানানো হয়।
সবজি হিসেবে জনপ্রিয়তার কমতি নেই। বারো মাস পাওয়া যায় এবং দাম কম বলে ঠাট্টা করে একে ‘গরিবের খাবার’ বলে ডাকা হয়। বারো মাস পাওয়া গেলেও শীতকালের সবজি হিসেবেই বেগুনকে গণ্য করা হয়। তবে অনেকেই হয়তো জানেন না যে এই সবজির রয়েছে বহুমাত্রিক গুণাগুণ। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপকারি খাদ্য উপাদান। যেমন প্রতি ১০০ গ্রাম বেগুনে রয়েছে –
খাদ্যশক্তি- ২৫ কিলোক্যালরি, শর্করা- ৫.৮৮ গ্রাম, চিনি- ৩.৫৩ গ্রাম, খাদ্যআঁশ- ৩ গ্রাম, চর্বি- ০.১৮ গ্রাম, আমিষ- ০.৯৮ গ্রাম, থায়ামিন- ০.০৩৯ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লেভিন- ০.০৩৭ মিলিগ্রাম, নিয়াসিন- ০.৬৪৯ মিলিগ্রাম, প্যানটোথেনিক অ্যাসিড- ০.২৮১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি৬- ০.০৮৪ মিলিগ্রাম, ফোলেট- ২২ আইইউ, ভিটামিন সি- ২.২ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই- ০.৩ মিলিগ্রাম, ভিটামিন কে- ৩.৫ আইইউ, ক্যালসিয়াম- ৯ মিলিগ্রাম, আয়রন- ০.২৩ মিলিগ্রাম, ম্যাগনেসিয়াম- ১৪ মিলিগ্রাম, ম্যাংগানিজ- ০.২৩২ মিলিগ্রাম
, ফসফরাস- ২৪ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম- ২২৯ মিলিগ্রাম এবং জিংক- ০.১৬ মিলিগ্রাম
খাদ্যগুণে ভরপুর বেগুন বিভিন্নভাবে আমাদের শরীরের উপকার করে। যেমন –
১. বেগুনে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা পাকস্থলী, ক্ষুদ্রান্ত ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। যেকোনো ক্ষতস্থান দ্রুত শুকাতেও বেগুন সাহায্য করে।
২. এতে চিনি এবং চর্বির পরিমাণ খুবই কম। তাই ডায়াবেটিকস, হৃদরোগ ও অধিক ওজন রয়েছে যাঁদের, তাঁরা নিশ্চিন্তে বেগুন খেতে পারেন।
৩. বেগুনে উপস্থিত রিবোফ্লেভিন মুখ, ঠোঁট ও জিহ্বার ঘা দূর করে, জ্বর জ্বর ভাব কমায়। এর ভিটামিন এ চোখের রোগ প্রতিরোধ করে, ভিটামিন সি ত্বক, নখ ও চুলে পুষ্টি জোগায় এবং ভিটামিন ই ও কে রক্তজমাট বাঁধার বিরুদ্ধে কাজ করে।
৪. বেগুনে রয়েছে খাদ্যআঁশ যা খাদ্য হজমে সহায়তা করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
৫. বেগুনে রয়েছে নাসুনিন নামে একটি উপাদান, যা মস্তিষ্কের শিরা-উপশিরার দেয়ালে চর্বি জমা হতে বাধা দেয়। ফলে ব্রেইন স্ট্রোক ও মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনিত রোগের ঝুঁকি কমে যায়। মস্তিষ্কে অক্সিজেনের মাত্রা বেড়ে গিয়ে কর্মোদ্দীপনা বৃদ্ধি পায়।
৬. বেগুন রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে দেয় এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে।
৭. বেগুনের ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম দাঁত, হাড় ও নখ মজবুত করে।
৮. মৌসুমি সর্দি, কাশি, কফ দূর করতে বেগুন সাহায্য করে।
খাদ্যগুণের পাশাপাশি বেগুনের রয়েছে কিছু ভেষজগুণও। যেমন –
১. আগের দিন সন্ধ্যাবেলা বেগুন সেদ্ধ করে পরদিন এর শাঁস মধু মিশিয়ে খেলে অনিদ্রা দূর হয়।
২. বেগুন পোড়ানো ছাই গায়ে মাখলে চুলকানি ও চর্মরোগ সেরে যায়।
৩. বেগুন সেদ্ধ করে এর পুলটিস দিলে বিষফোঁড়া তাড়াতাড়ি পেকে যায়।
৪. কাঁচা বেগুনের রস খেলে ধুতুরার রস নেমে যায়।
৫. রোজ সকালে খালি পেটে বেগুন পুড়িয়ে এর সাথে গুড় মিশিয়ে খেলে ম্যালেরিয়ার কারণে লিভার বড় হয়ে যাবার ঝুঁকি কমে।