গোপালগঞ্জে বিলাসবহুল বাড়ি ও মার্কেটের মালিক আইএস সন্দেহে আটক আমিন

রাজধানীতে আইএস জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার আমিনুল ইসলাম ওরফে আমিন বেগের বিলাসী জীবনের সন্ধান মিলেছে। তার বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার সদর থানার বলাকৈইড় গ্রামের দক্ষিণপাড়ায়। গোপালগঞ্জ জেলা শহরে তার দুটি বিলাসবহুল বাড়ি রয়েছে। বাড়ির নিচতলায় রয়েছে সুপার মার্কেট। জেলা শহরের গোহাটা বটতলায় দুটি বাড়ির একটি ৫ তলা ও অপরটি ৪ তলা। টাইলস দিয়ে নির্মিত ৫ তলা বাড়ির ২য়-৩য় ও ৪র্থ তলার সামনে কালো থাই গ্লাস দিয়ে ঢাকা। ভেতরে থাকা মানুষজন বাইরের সবকিছু দেখতে পারলেও বাইরে থাকা মানুষ কিছুই দেখতে পাবে না- এমন ভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বাড়িটি। বাড়ির নিচ তলায় মার্কেটে রয়েছে মোবাইলে টাকা লোড দেয়া একটি দোকান, একটি ওষুধের ফার্মেসি, একটি স্টুডিও দোকান, একটি পার্লার, একটি লন্ড্রির দোকান, একটি সেলুন ও চারটি স্টেশনারি দোকানসহ মোট ১১টি দোকান। ২য় তলা পুরোটা জুড়ে রয়েছে আরবান নামে একটি এনজিও, ৩য় তলায় উঠতে হাতের ডানপাশে আরবান অফিস আর সোজাসুজি রয়েছে মধুমিতা নামে একটি মাল্টিপারপাস অফিস, ৪র্থ তলায় উঠে সোজাসুজি রয়েছে আরবান অফিসের প্রধান কার্যালয়। যেখানে বসেন অফিসের প্রকল্প ম্যানেজারসহ ৩ জন। এ তলার ডান পাশে রয়েছে কর্মসংস্থান ব্যাংক। আর ৫ তলা পুরোটা জুড়ে রয়েছে শহর সমাজসেবা অফিস। এর এক পাশে চলে অফিসিয়াল কার্যক্রম ও অপরপাশে চলে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ। এ অফিসের সমাজসেবা অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বনানী ম্যাডাম। সমাজসেবা অফিসার বনানী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, প্রতিমাসে ১৫/২০ হাজার টাকা ভাড়া দেয়ার কথা বলে প্রায় ১ বছর আগে আমিন বেগের সঙ্গে আমার চুক্তি হয়। অন্যদিকে, আরবান এনজিও কর্তৃপক্ষ বলেছেন, প্রতি মাসে ৪০ হাজার টাকা ভাড়ায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে স্থানীয় পৌর কর্তৃপক্ষ ২০১১ সালের ১১ই অক্টোবর ওই বিল্ডিংটি ভাড়া নেয়। এরপর থেকে অ্যাকাউন্ট পে চেকের মাধ্যমে আমিন বেগকে আরবান কর্তৃপক্ষ নিয়মিত ভাড়ার টাকা দিয়ে আসছে। আমিন বেগের গ্রেপ্তারের খবর শোনার পর ওই বাড়ির সকল ভাড়াটিয়াসহ বটতলার অনেক মানুষের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। এর পশ্চিম পাশের সামনে খয়েরি রংয়ের টাইলস দিয়ে সাজানো ৪ তলা বাড়িতে রয়েছে বিভিন্ন ভাড়াটিয়া। বটতলার একজন চায়ের দোকানদারসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেছেন, আমিন বেগের গ্রামের বাড়ি বলাকৈইড়ে তেমন কিছু না থাকলেও খুব অল্পদিনে শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান বটতলায় বেশ কয়েক কোটি টাকা দিয়ে প্রায় ১০ কাঠার মতো জায়গা কিনে বিলাসবহুল দুটি বাড়ি করায় শহরবাসীর কাছে আমিন বেগ পরিচিতি লাভ করে এবং শহরের নামীদামি লোকজন তার কাছে আসা-যাওয়া করতে থাকে। এছাড়া সে বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব সৈয়দ আহাম্মদ বেগের ভাতিজা হিসেবে সবাই তাকে মূল্যায়ন করতে শুরু করে। কারণ সৈয়দ বেগ চাকরি দেয়নি এমন লোক এ জেলায় খুব কমই আছে। গোপালগঞ্জে বাড়ি নাম শুনলেই যোগ্যতা অনুসারে তিনি অনেক মানুষকে চাকরি দিয়েছেন। তাই তার কথা ভেবে কেউ কখনই জানতে চায়নি যে আমিন বেগের হঠাৎ করে এত টাকার মালিক হওয়ার পেছনে কারণ কি বা এ টাকার উৎস কোথায়? ২৫শে মে ঢাকায় পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হওয়ার পর গোপালগঞ্জের সকল শ্রেণী-পেশার মানুষ এখন বুঝতে পেরেছে যে, এ টাকা-গাড়ি-বাড়ির উৎস কোথায়? কোমল পানির একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী আমিন বেগ ও তার বাবা সহিদ বেগ এবং মাতার নাম ছাড়াও বিভিন্ন আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের নামে গোপালগঞ্জ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকে অ্যাকাউন্ড রয়েছে বলে জানিয়েছে গোহাটা বটতলা ও তার এলাকার একাধিক মানুষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা আরও বলেছেন, আমিন বেগ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার বাবা সহিদ বেগ এলাকা থেকে গাঢাকা দিয়েছেন। স্থানীয় লোকজন আরও বলেছেন, মালয়েশিয়া থেকে কম্পিউটারের উপর লেখাপড়া করা আমিন বেগ একটি মোবাইল কোম্পানির আইটি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি একটি পানীয় কোম্পানির আইটি বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মাঝে মধ্যে তিনি অপরিচিত কিছু লোকজন নিয়ে গোপালগঞ্জে আসতেন এবং বিভিন্ন সময়ে রাতে-দিনে তাকে তার বিল্ডিংয়ের কোন রুমে অথবা ছাদের উপরে ওই অপরিচিত লোকজন ছাড়াও স্থানীয় কিছু লোকজনের সঙ্গে বৈঠক করতে দেখা গেছে। আমিন বেগের সংগঠনের কোন লোক গোপালগঞ্জে রয়েছে কিনা এমন এক প্রশ্নের উত্তরে ওই সব মানুষ কিছুই জানেন না বলে জানান। তবে তারা বলেছেন, মুফতি হান্নানের বাড়ি যেহেতু গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সেহেতু থাকলেও থাকতে পারে। আমিন বেগের পিতার নাম সহিদ বেগ। তার একমাত্র বোন দেশের বাইরে থাকেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর