হাওর বার্তা ডেস্কঃ চারদিকে থৈ থৈ পানি। দিগন্তবিস্তৃত হাওরে ছলাত ছলাত ঢেউয়ের গর্জন। রোদ আছড়ে পড়া জলের বুক চিড়ে এগিয়ে যাচ্ছে ছোট ছোট ডিঙি নৌকা। চারদিকে পাখিদের ওড়াউড়ি আর হাঁসের ডুবসাঁতার। বর্ষা এলেই এমন জৌলুস ছড়ায় কিশোরগঞ্জের হাওর। ফিরে পায় আপন রূপ।
কিশোরগঞ্জের ১৩টি উপজেলার মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ হাওর। অপর তিনটি আংশিক হাওর। ছয় মাসই হাওরে জমে থাকে বর্ষার পানি। এ সময় বিশাল হাওর অঞ্চলকে মনে হয় সাগরের মতো। ভরা বর্ষায় দূরের একেকটি গ্রামকে মনে হবে ভাসমান কচুরি পানার মতো। যেতে যেতে পেছনে হাতছানি দিয়ে ডাকবে নীল আকাশ।
কখনো রোদ কখনোবা বৃষ্টি। হাওরে ভেসে যেতে যেতে চোখে পড়বে ছোট ছোট মাছ ধরার নাও। দেখা মিলবে জলের মাঝখান দিয়ে ছুটে চলেছে কালো পিচঢালা প্রসস্থ সড়ক। দুই পাশে উত্তাল ঢেউয়ের গর্জন। এমন সম্মোহন জাগানিয়া প্রকৃতির বুকে হারিয়ে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসছেন হাজারো ভ্রমণপিপাসু। কেউ ছুটছেন অটোরিকশা কিংবা মোটরসাইকেলে চড়ে সাঁই সাঁই আওয়াজ তুলে। রাস্তার ধারে চা-কফির দোকানে ভিড় করছেন অনেকে। কেউবা প্রিয়জনকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ছেন ছোট্ট নৌকা নিয়ে। এমন মধুর স্মৃতিটুকু ক্যামেরাবন্দি করছেন অনেকে।
এক সময় হাওরের দুর্গম যোগাযোগ ব্যবস্থার অভূতপূর্ব উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে পর্যটনের নতুন এলাকা হয়ে উঠেছে কিশোরগঞ্জের হাওর। পর্যটকদের আগমনে মুখর হয়ে ওঠে হাওর জনপদ। মিঠামইনের বিস্ময়কর অলওয়েদার সড়ক, প্রেসিডেন্ট রিসোর্ট, করসবন, নিকলীর বেড়িবাঁধ, বালিখোলাসহ বেশকিছু এলাকা আকর্ষণ করছে তাদের। তবে এখনো হাওরে গড়ে খাবার হোটেলসহ পর্যটকদের জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা। তবে দিনে দিনে পর্যটনের নতুন সম্ভাবনা দেখা দিচ্ছে কিশোরগঞ্জের হাওরকে ঘিরে। এরই মধ্যে হাওরকে পর্যটন এলাকা ঘোষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নেওয়া হচ্ছে সব ধরনের ব্যবস্থাও।
ইটনা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চৌধুরী কামরুল হাসান বলেন, এক সময় হাওরবাসীর দুর্ভোগের সীমা ছিলো না। ‘বর্ষায় নাও আর শুকনায় পাও’ এমন প্রবাদই ছিল হাওরবাসীর কাছে প্রকৃত বাস্তবতা। কিন্তু রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের অবদানে হাওরে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দেখা দিয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। অর্থনীতিতেও এসেছে পরিবর্তন। এ ধারা অব্যাহত রাখতে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হবে।
মিঠামইন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম জেমস বলেন, এক সময় হাওরের মানুষের বিড়ম্বনার শেষ ছিল না। তিন উপজেলার মানুষের সঙ্গে একে-অন্যের দেখা হতো কালে ভদ্রে। গ্রামগুলোকে মনে হতো ভাসমান দ্বীপের মতো। এখন দিন বদলেছে। এক অলওয়েদার সড়কই বদলে দিয়েছে হাওরের সামগ্রিক চিত্র।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে পুরো বর্ষায় এমনকি শরতের দিনেও হাওরে পর্যটকদের ভিড় লেগেই থাকে। সারা দেশের হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন হাওরে। তবে পর্যটকদের জন্য এখনো গড়ে উঠেনি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা।
কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, হাওরের যোগাযোগ ব্যবস্থা এক সময় এতোটাই দুর্গম ছিল যে কেউ সহজে হাওরে যেতে চাইতো না। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায় হাওর এখন সারাদেশের কাছে লোভনীয় স্থান। নজিরবিহীন উন্নয়ন হয়েছে হাওরে। অলওয়েদার সড়ক হয়েছে। জেলার সঙ্গে সাব-মার্সেবল সড়কে সরাসরি গাড়ি নিয়ে যোগাযোগ করা যায়। ফলে হাওর হয়ে উঠেছে পর্যটনের অন্যতম স্পট।
পর্যটকদের জন্য নতুন হোটেল-মোটেল নির্মাণসহ তাদের নিরাপত্তায় বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়ে এ সংসদ সদস্য বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় হাওরে পুলিশ চৌকি ও ট্যুরিস্ট থানা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিঠামইন সদরে উন্নতমানের রিসোর্ট হচ্ছে। তবে সবকিছুই হবে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে। জীববৈচিত্রের ক্ষতি হয় এমন কোনো উন্নয়ন করা হবে না।
তিনি আরও বলেন, হাওরের পর্যটন শিল্পের বিকাশে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে উচ্চ পর্যায়ের একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করা হয়েছে। জেলা সদরের সঙ্গে হাওরকে যুক্ত করে নির্মাণ করা হচ্ছে উড়াল সড়কও।