ঢাকা ০৩:১০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

স্বপ্নচূড়ায় অবস্থান নিতে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৫১:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ ২০১৬
  • ৩২৫ বার

বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক অভাবনীয় অগ্রগতির স্বপ্নচূড়ায় অবস্থান নিতে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠছে বাংলাদেশের সমান আরেক ভূখণ্ড, আগামীর বসতি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সামাজিক অগ্রগতির ধারায় বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক দেশকে। বিশ্ব ক্রিকেটে এক ঈর্ষণড়ীয় সাফল্যের নাম বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে ১৬ কোটি মানুষের এই গর্বিত জনপদ।

খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক খাতে বিশ্বে রীতিমতো রহস্য সৃষ্টি করে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোকে ছাড়িয়েছে আগেই। এখন আকাশ ছোঁয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশের সাফল্য। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে রোল মডেলে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ নতুন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে চাইছে। এর মাধ্যমে সামাজিক সূচকে পৌঁছানো যাবে নতুন উচ্চতায়। পাশাপাশি দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর স্পৃহা, ব্যবসায়ীদের নিত্যনতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগ, কর্মঠ কৃষক ও তৃণমূল নারীর সম্মিলিত শক্তি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতিকে। নিয়মিত বিরতিতেই গৌরবের মুকুট এনে দিচ্ছেন দেশে ও বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশিরা। জানা যায়, বিশ্ব অর্থনীতিতে ২০১৬ সালে আরও বেশি মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হবে বলে আশা করছে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু সম্প্রতি ঢাকায় এসে জনবক্তৃতায় এ আশাবাদের কথাই শুনিয়ে গেছেন। অর্থনৈতিক গবেষণার জন্য খ্যাতিমান সিএনএন মানি বলছে, বাংলাদেশ চীনকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ সংস্থার তালিকায় ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ছিল পঞ্চম স্থানে। ২০১৬ সালে এসে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়ে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশগুলোর সম্ভাব্য অবস্থান নিয়ে করা তালিকায়ও বাংলাদেশ শীর্ষস্থানেই থাকছে। যেমন— ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থাকবে তৃতীয় অবস্থানেই (৭%), পরের দুই বছরে চতুর্থ স্থানে (৭%)। ২০২০ সালে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ থাকবে চতুর্থ স্থানে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেনের মতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি চীনের কাছাকাছি চলে যাবে। কারণ চীনের গতি শ্লথ হচ্ছে, আর আমাদের বাড়ছে। বাংলাদেশের জন্য এখন দরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ সেরে ফেলা এবং সম্ভাবনাময় বিশেষ এলাকার দিকে নজর দেওয়া। তা করতে পারলে খুব সহজেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যাবে। আরেকটি বিষয় হলো, মানব উন্নয়নের সাফল্য ধরে রাখতে হবে। বিশেষত শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির কাজে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। যুবশক্তিকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে দেশের ভিতরে ও বিদেশে কর্মসংস্থানে গুণগত পরিবর্তন আসবে। এটা যে কতটা ফলদায়ক তার লক্ষণ ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের জনশক্তি বিশেষত নারীরা বিদেশে কাজ পাচ্ছেন। শুধু প্রবৃদ্ধি অর্জনেই নয়, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে অথবা এটি ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম। বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে পৃথিবীতে চতুর্থ। হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদনে বৈশ্বিক গড়কে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। গম ও ভুট্টায় বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের প্রথম। বাংলাদেশ আম উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে। মাছ চাষে বাংলাদেশ এখন শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, ১০ বছর ধরে মাছ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৫-এর প্রতিবেদন অনুসারে মিষ্টি পানিতে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে পঞ্চম এবং চাষের মাছ উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য রহস্যের মতো। কারণ স্বাস্থ্যসেবায় কম বরাদ্দ, দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও ব্যাপক দারিদ্র্য সত্ত্বেও গত চার দশকে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অর্জন ব্যতিক্রমী। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের জীবন রক্ষা, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, টিকাদান কর্মসূচি, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলোয় বাংলাদেশের সাফল্যের কাহিনী উল্লেখযোগ্য। নারীর ক্ষমতায়নের দিক থেকেও বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেলের স্থানে পৌঁছে গেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘বিশ্ব লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদন ২০১৫’ অনুসারে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম। এ ক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশের থেকেও বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। জাপানের মতো দেশও এখন বাংলাদেশের পেছনে। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার, ছাত্রছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, ঝরে পড়ার হার দ্রুত কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। ইউনেস্কো বলছে, প্রায় ৯৬ শতাংশ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বয়স্ক শিক্ষার হার উন্নীত হয়েছে ৫৯ শতাংশে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ অবিচলভাবে শিক্ষায় অভিগম্যতা বাড়িয়েছে, যার ফলে প্রাথমিক স্কুলে মোট ভর্তি হার ৯১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে তৈরি পোশাক বা গার্মেন্ট শিল্প। পৃথিবীতে এখন এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা পোশাক পাওয়া যায় না। খেলাধুলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছে ক্রিকেট। বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থা আইসিসির র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে সপ্তম, টেস্টে নবম এবং টি-২০-তে দশম স্থানে আছে। আগামী শুক্রবার নতুন র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নয়ন ঘটবে নিঃসন্দেহে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মন্জুরুল ইসলামের মতে বাংলাদেশকে নিয়ে আশাবাদের কয়েকটি ভিত্তি আছে। প্রথমত, এ দেশের বিশাল জনসংখ্যা একদিকে হতাশার জন্ম দিলেও অন্যদিকে এ সম্ভাবনার কথাও জানায় যে, এ জনসংখ্যা যদি সৃষ্টিশীল এবং নানা ক্ষেত্রে উৎপাদনশীল হয়, যদি জনসংখ্যাটা অভ্যন্তরীণ একটা বিশাল বাজার সৃষ্টি করে ফেলে, তাহলে অর্থনীতিটা কতটাই না গতিশীল হবে! দ্বিতীয়ত, এ বিশাল জনসংখ্যার একটা বড় অংশ তরুণ। তারুণ্য নিজেই নিজের পথ তৈরি করে নেয়, নানান সমস্যা সমাধান করে ফেলে। আজ অনেক শ্রমিক বিদেশে কায়িক শ্রম দিচ্ছেন, কাল হয়তো তারাই দেশীয় উদ্যোক্তা হবেন, পরশু আন্তর্জাতিক বাজারে ঢুকবেন পণ্য ও সেবা নিয়ে। তরুণরা মেধাবী, তারা একশ পথ খুঁজে নেবে আত্মবিকাশের। আজ যে তরুণ উগ্রবাদে নাম লিখিয়েছে, কাল হয়তো সে যখন দেখবে, অন্য তরুণরা নিজেদের ও দেশের ভাগ্য গড়তে নেমে একটা বিপ্লবই বাধিয়ে ফেলেছে উদ্যোগের, উদ্ভাবনের, আত্মমর্যাদার, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার; তখন সেও হয়তো এদের দলে নাম লেখাবে। পরিবেশ নিয়ে তরুণরা আজ প্রতিবাদী; কাল হয়তো তা রূপ নেবে পরিবেশ বাঁচানোর কর্মযজ্ঞে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একসাথে সাকিব-তামিম

স্বপ্নচূড়ায় অবস্থান নিতে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ

আপডেট টাইম : ১১:৫১:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ মার্চ ২০১৬

বিভিন্ন ক্ষেত্রে এক অভাবনীয় অগ্রগতির স্বপ্নচূড়ায় অবস্থান নিতে যাচ্ছে আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ। বঙ্গোপসাগরে জেগে উঠছে বাংলাদেশের সমান আরেক ভূখণ্ড, আগামীর বসতি। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সামাজিক অগ্রগতির ধারায় বাংলাদেশ ছাড়িয়ে গেছে প্রতিদ্বন্দ্বী অনেক দেশকে। বিশ্ব ক্রিকেটে এক ঈর্ষণড়ীয় সাফল্যের নাম বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে এগিয়ে চলেছে ১৬ কোটি মানুষের এই গর্বিত জনপদ।

খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও অন্যান্য সামাজিক খাতে বিশ্বে রীতিমতো রহস্য সৃষ্টি করে এগিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রগুলোকে ছাড়িয়েছে আগেই। এখন আকাশ ছোঁয়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশের সাফল্য। ইতিমধ্যেই জাতিসংঘের সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জনে বিশ্বের অন্যান্য দেশের কাছে রোল মডেলে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ নতুন টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিতে চাইছে। এর মাধ্যমে সামাজিক সূচকে পৌঁছানো যাবে নতুন উচ্চতায়। পাশাপাশি দেশের বিশাল তরুণ জনগোষ্ঠীর স্পৃহা, ব্যবসায়ীদের নিত্যনতুন উদ্ভাবনী উদ্যোগ, কর্মঠ কৃষক ও তৃণমূল নারীর সম্মিলিত শক্তি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে অর্থনীতিকে। নিয়মিত বিরতিতেই গৌরবের মুকুট এনে দিচ্ছেন দেশে ও বিদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলাদেশিরা। জানা যায়, বিশ্ব অর্থনীতিতে ২০১৬ সালে আরও বেশি মন্দার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কিন্তু এর মধ্যেও বিশ্বব্যাংক, আইএমএফসহ আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনৈতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর বেশির ভাই বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি হবে বলে আশা করছে। বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু সম্প্রতি ঢাকায় এসে জনবক্তৃতায় এ আশাবাদের কথাই শুনিয়ে গেছেন। অর্থনৈতিক গবেষণার জন্য খ্যাতিমান সিএনএন মানি বলছে, বাংলাদেশ চীনকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ সংস্থার তালিকায় ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ছিল পঞ্চম স্থানে। ২০১৬ সালে এসে বাংলাদেশ দুই ধাপ এগিয়ে তৃতীয় স্থান দখল করেছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশগুলোর সম্ভাব্য অবস্থান নিয়ে করা তালিকায়ও বাংলাদেশ শীর্ষস্থানেই থাকছে। যেমন— ২০১৭ সালে বাংলাদেশ থাকবে তৃতীয় অবস্থানেই (৭%), পরের দুই বছরে চতুর্থ স্থানে (৭%)। ২০২০ সালে ৬ দশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে বাংলাদেশ থাকবে চতুর্থ স্থানে। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বিনায়ক সেনের মতে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি চীনের কাছাকাছি চলে যাবে। কারণ চীনের গতি শ্লথ হচ্ছে, আর আমাদের বাড়ছে। বাংলাদেশের জন্য এখন দরকার গ্যাস, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ সেরে ফেলা এবং সম্ভাবনাময় বিশেষ এলাকার দিকে নজর দেওয়া। তা করতে পারলে খুব সহজেই জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া যাবে। আরেকটি বিষয় হলো, মানব উন্নয়নের সাফল্য ধরে রাখতে হবে। বিশেষত শ্রমশক্তির দক্ষতা বৃদ্ধির কাজে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। যুবশক্তিকে যথাযথভাবে প্রশিক্ষণ দিতে পারলে দেশের ভিতরে ও বিদেশে কর্মসংস্থানে গুণগত পরিবর্তন আসবে। এটা যে কতটা ফলদায়ক তার লক্ষণ ইতিমধ্যে দেখা যাচ্ছে। কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে আমাদের জনশক্তি বিশেষত নারীরা বিদেশে কাজ পাচ্ছেন। শুধু প্রবৃদ্ধি অর্জনেই নয়, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালের মধ্যে ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যা অর্ধেকে অথবা এটি ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১১তম। বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে পৃথিবীতে চতুর্থ। হেক্টরপ্রতি ধান উৎপাদনে বৈশ্বিক গড়কে পেছনে ফেলতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। গম ও ভুট্টায় বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয়। ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হারের ভিত্তিতে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের প্রথম। বাংলাদেশ আম উৎপাদনে বিশ্বে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম স্থানে উঠে এসেছে। মাছ চাষে বাংলাদেশ এখন শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণই নয়, ১০ বছর ধরে মাছ উৎপাদনে বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের মধ্যে রয়েছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার ২০১৫-এর প্রতিবেদন অনুসারে মিষ্টি পানিতে মাছ উৎপাদনে বিশ্বে পঞ্চম এবং চাষের মাছ উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, কৃষিজমি কমতে থাকাসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগসহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম। স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য রহস্যের মতো। কারণ স্বাস্থ্যসেবায় কম বরাদ্দ, দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও ব্যাপক দারিদ্র্য সত্ত্বেও গত চার দশকে স্বাস্থ্য খাতে বাংলাদেশের অর্জন ব্যতিক্রমী। পাঁচ বছরের কম বয়সীদের জীবন রক্ষা, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি, টিকাদান কর্মসূচি, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের মতো বিষয়গুলোয় বাংলাদেশের সাফল্যের কাহিনী উল্লেখযোগ্য। নারীর ক্ষমতায়নের দিক থেকেও বাংলাদেশ বিশ্বে রোল মডেলের স্থানে পৌঁছে গেছে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘বিশ্ব লিঙ্গবৈষম্য প্রতিবেদন ২০১৫’ অনুসারে নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ বিশ্বে অষ্টম। এ ক্ষেত্রে অনেক উন্নত দেশের থেকেও বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। জাপানের মতো দেশও এখন বাংলাদেশের পেছনে। জাতিসংঘ ও বিশ্বব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, সবার জন্য শিক্ষা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রীতিমতো বিপ্লব ঘটে গেছে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি, বিদ্যালয়ে ভর্তির হার, ছাত্রছাত্রীর সমতা, নারী শিক্ষায় অগ্রগতি, ঝরে পড়ার হার দ্রুত কমে যাওয়াসহ শিক্ষার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই রোল মডেল এখন বাংলাদেশ। ইউনেস্কো বলছে, প্রায় ৯৬ শতাংশ শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার সাফল্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে বয়স্ক শিক্ষার হার উন্নীত হয়েছে ৫৯ শতাংশে। বিশ্বব্যাংকের সর্বশেষ মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ অবিচলভাবে শিক্ষায় অভিগম্যতা বাড়িয়েছে, যার ফলে প্রাথমিক স্কুলে মোট ভর্তি হার ৯১ শতাংশ থেকে বেড়ে ১০০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বিশ্বে বাংলাদেশকে পরিচিত করার ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখছে তৈরি পোশাক বা গার্মেন্ট শিল্প। পৃথিবীতে এখন এমন কোনো দেশ নেই যেখানে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ লেখা পোশাক পাওয়া যায় না। খেলাধুলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়েছে ক্রিকেট। বিশ্ব ক্রিকেট সংস্থা আইসিসির র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশ ওয়ানডেতে সপ্তম, টেস্টে নবম এবং টি-২০-তে দশম স্থানে আছে। আগামী শুক্রবার নতুন র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নয়ন ঘটবে নিঃসন্দেহে। বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মন্জুরুল ইসলামের মতে বাংলাদেশকে নিয়ে আশাবাদের কয়েকটি ভিত্তি আছে। প্রথমত, এ দেশের বিশাল জনসংখ্যা একদিকে হতাশার জন্ম দিলেও অন্যদিকে এ সম্ভাবনার কথাও জানায় যে, এ জনসংখ্যা যদি সৃষ্টিশীল এবং নানা ক্ষেত্রে উৎপাদনশীল হয়, যদি জনসংখ্যাটা অভ্যন্তরীণ একটা বিশাল বাজার সৃষ্টি করে ফেলে, তাহলে অর্থনীতিটা কতটাই না গতিশীল হবে! দ্বিতীয়ত, এ বিশাল জনসংখ্যার একটা বড় অংশ তরুণ। তারুণ্য নিজেই নিজের পথ তৈরি করে নেয়, নানান সমস্যা সমাধান করে ফেলে। আজ অনেক শ্রমিক বিদেশে কায়িক শ্রম দিচ্ছেন, কাল হয়তো তারাই দেশীয় উদ্যোক্তা হবেন, পরশু আন্তর্জাতিক বাজারে ঢুকবেন পণ্য ও সেবা নিয়ে। তরুণরা মেধাবী, তারা একশ পথ খুঁজে নেবে আত্মবিকাশের। আজ যে তরুণ উগ্রবাদে নাম লিখিয়েছে, কাল হয়তো সে যখন দেখবে, অন্য তরুণরা নিজেদের ও দেশের ভাগ্য গড়তে নেমে একটা বিপ্লবই বাধিয়ে ফেলেছে উদ্যোগের, উদ্ভাবনের, আত্মমর্যাদার, নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার; তখন সেও হয়তো এদের দলে নাম লেখাবে। পরিবেশ নিয়ে তরুণরা আজ প্রতিবাদী; কাল হয়তো তা রূপ নেবে পরিবেশ বাঁচানোর কর্মযজ্ঞে।