কিশোরগঞ্জে নিকলী হাওরের পর্যটকদের ঢল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ করোনা মহামারির কারণে সাড়ে চার মাসেরও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (১৯ আগস্ট) খুলেছে সারাদেশের পর্যটনকেন্দ্র। এতে কিশোরগঞ্জের পর্যটন সংশ্লিষ্টদের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এরই মধ্যে পর্যটকদের পদভারে মুখর হয়ে উঠেছে নিকলী বেড়িবাঁধ এলাকা। গতি আসতে শুরু করেছে পর্যটন সংশ্লিষ্টদের জীবন-জীবিকায়। এতে তাদের মুখে হাসি ফুটতে শুরু করেছে।

নিকলী বেড়িবাঁধ হাওর এলাকায় দেখা যায়, হাজারো পর্যটকের বাঁধভাঙা ঢল নেমেছে হাওরে। দীর্ঘ দিন পর পর্যটন এলাকা চেনারূপে ফেরায় পর্যটন সংশ্লিষ্টদের জীবন-জীবিকায় গতি আসতে শুরু করেছে। কেউ কেউ নৌকা-স্পিডবোট ভাড়া নিয়ে থৈ-থৈ জলরাশির অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করছেন। আবার কেউ কেউ দলবেধে হাওরের পানিতে নামছেন গোসল করতে। আবার দেখা গেছে বড় বড় নৌকাগুলোতে সাউন্ডবক্স বাজিয়ে ৪০-৫০ জনের দল আনন্দে মেতে উঠছেন।নিকলী হাওরে একরাশ ভালো লাগাজানা গেছে, ২০০০ সালের দিকে কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা সদরকে বর্ষার প্রচণ্ড ঢেউয়ের কবল থেকে রক্ষায় সরকার পাঁচ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য বেড়িবাঁধ তৈরি করে। একই সময় ভাঙনপ্রবণ উপজেলার ছাতিরচর গ্রাম রক্ষায় রোপণ করা হয় হাজারো করচগাছ।হাওরের ভিডিওচিত্র সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়ার পর থেকে ভ্রমণবিলাসী ও সৌন্দর্যপ্রেমী পর্যটকদের ঢল নামছে।

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের পর্যটকরা দল বেধে শত শত মোটরসাইকেল এবং প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ও বাসে পরিবার-পরিজন নিয়ে বর্ষায় ছুটে আসেন এ পর্যটন এলাকায়।কিশোরগঞ্জে হাওরের জলরাশিতে ঘোরাঘুরি | প্রথম আলোঢাকার ডেমরা থেকে থেকে নিকলী হাওর দেখতে  লাদেন আহমেদ  হাওর বার্তাকে বলেন, আমরা দেশের বিভিন্ন এলাকায় বাইকে করে ভ্রমণ করে থাকি। লকডাউনের কারণে অনেক দিন ধরে সব বন্ধ থাকায় আমাদের ভ্রমণও বন্ধ ছিল। পর্যটনকেন্দ্র খুলে দেওয়ায় ডেমরা বাইকার ক্লাব থেকে ১৯টি মোটরসাইকেলে করে ৩৮ জন বন্ধু নিকলী হাওরে এসেছি। হাওরের পানিতে নৌকায় ঘুরে অনেক ভালো লাগছে। মনে হয়েছে কোনো সমুদ্র ভ্রমণে এসেছি। তবে নৌকা-স্পিডবোট ভাড়া অনেক বেশি।

রাজধানীর উত্তরা থেকে ঘুরতে আসা নাবিলা ফারজানা হাওর বার্তাকে বলে , সোশ্যাল মিডিয়ায় নিকলী হাওরের ছবি দেখে কয়েকজন বন্ধু মিলে ঘুরতে এসেছি। নৌকায় করে ছাতিরচর করচবন দেখেছি।

কিশোরগঞ্জের হাওরে পর্যটকের ঢলপানির মধ্যে গাছগুলো দেখতে অনেক সুন্দর লাগছে। দেশি মাছ দিয়ে সাদা ভাত খেয়েছি। খুবই ভালো লেগেছে। তবে এখানে বিশ্রামাগার ও পাবলিক টয়লেট সুবিধা না থাকায় অনেকেরই কষ্ট হচ্ছে।

স্পিডবোট চালক আরমান মিয়া  বলেন, লকডাউনের কারণে বন্ধ থাকায় আমরা নৌকা চালাতে পারিনি। হাওর খুলে দেওয়ায় ও শুক্রবার হওয়ায় ভাড়া ভালো হচ্ছে। এর মধ্যে দুই ট্রিপে ৮০০০ টাকা ভাড়া পেয়েছি। আশা করছি আরও ভাড়া পাব।বাংলাদেশে খুলেছে সব পর্যটনকেন্দ্র, নিকলী হাওরে পর্যটকদের ভিড় - Prothom Kolkata

নৌকার মালিক মরহর উদ্দিন হাওর বার্তাকে বলেন, অনেক দিন বন্ধ থাকার পর দুই দিন হলো হাওর খুলছে। হাওর খোলা থাকলে দুইডা পয়সা কামাই করতে পারব। বউ-পোলাপান নিয়ে শান্তিতে থাকতে পারব।

ভাসমান রেস্তোরাঁ মালিকরা জানান, আমরা গ্রামের মানুষ। এই ভাসমান রেস্তোরাঁ করতে অর্ধ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। গতবারও লাকডাউনের কারণে ব্যবসা করতে পারিনি। এবারও অনেক দিন বন্ধ থাকার পরে হাওর খুলে দেওয়া হয়েছে। এভাবে খোলা থাকলে খরচ উঠুক বা না উঠুক কিছুটা ব্যবসা করতে পারব। তবে আবার হাওর বন্ধ হলে আমাদের অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যাবে।পর্যটকে মুখরিত নিকলী বেড়িবাঁধনিকলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসসাদিকজামান  হাওর বার্তাকে বলেন, সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘুরতে আসে সেদিকে নজর দিতে হবে। ইতোমধ্যে পাবলিক টয়লেটের কাজ শেষ হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই খুলে দেওয়া হবে। আর বিশ্রামাগার তৈরিরও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এ ছাড়া পর্যটকের নিরাপত্তায় উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কয়েকটি টিম কাজ করছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর