সংকটে ঢালিউড তবুও সিনেমা মুক্তিতে অপেক্ষা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ষাট থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত সময়টাকে বলা হয় চলচ্চিত্রের সোনালি যুগ। এরপর সিনেমাকে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হলেও এখানে ক্রমশই পতনের সুর বেজেছে। একে একে বন্ধ হয়েছে সিনেমা হল। কমেছে সিনেমার সংখ্যা ও মান। নানা সংকটের মুখে ঢালিউড আজ মৃত প্রায়। হল ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা, চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও সমিতিগুলোর উদাসীনতা অনেকটা দায়ী এসব ধংসের জন্য।

এসব সংকট নিয়েও নতুন শতাব্দীতে ডিজিটাল স্পর্শে খানিকটা জেড়ে উঠার চেষ্টা করছিলো ঢালিউড। সেখানে ‘দানব’ হয়ে দেখা দিলো প্রাণঘাতি ভাইরাস করোনা। চরম আকারে ভোগান্তিতে পড়ে গেল ঢাকাই সিনেমা। কয়েক দফায় লকডাউনে বন্ধ থেকে সিনেমা হল। বন্ধ থেকেছে শুটিং, ডাবিং, এডিটিং। এসব কারণে প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক সিনেমা শিল্পে। কমে গেছে সিনেমার নির্মাণ ও মুক্তি। সর্বশেষ লকডাউন তুলে দেয়ার পর সিনেমা হল চালু হয়েছে। কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে দর্শক যাচ্ছেন না। আর দর্শক খরার ভয়ে মুক্তি পাচ্ছে না নতুন কোনো সিনেমা। তাই মাথায় হাত হল মালিকদের। সিনেমার অভাবে হতাশা ঝেঁকে ধরেছে সিনেমার শিল্পী-কলাকুশলীদেরও।

এ বছরের ৮ম মাস আগস্ট চলছে এখন। মুক্তির তালিকায় পাওয়া গেলো না খুব বেশি একটা ছবি। এ বছরে মুক্তি পেয়েছে অনন্য মামুনের ‘কসাই’, রায়হান রাফির ‘জানোয়ার’, শিহাব শাহীনের ‘যদি কিন্তু তবুও’, হাবিবুর রহমানের ‘আলাতচক্র’, তৌকীর আহমেদের ‘স্ফুলিঙ্গ’, সেলিম খানের ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’, কামার আহমাদ সাইমনের ‘নীল মুকুট’ এফ আই মানিকের ‘সৌভাগ্য’। তবে এ তালিকার ‘স্ফুলিঙ্গ’, ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই’, ‘আলাতচক্র’, ‘কসাই’ সিনেমাগুলোর ভাগ্যে সিনেমা হল জুটলেও বাকিগুলো মুক্তি পেয়েছে ওটিটি প্লাটফর্মেই।

এদিকে মুক্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে ‘মিশন এক্সট্রিম’, ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘শান’, ‘হাওয়া’, ‘জিন’, ‘পরাণ’, ‘অ্যাডভেঞ্চার অব সুন্দরবন’, ‘দিন : দ্য ডে’, ‘পাপ-পূণ্য’, ‘বিউটি সার্কাস’সহ আরও বেশ কিছু সিনেমা। সিনেমা হল খুললেও এখনও সিনেমা মুক্তির বিষয়ে কেউই সাহস করতে পারছেন না।

গত বছরের ঈদে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিলো ‘মিশন এক্সট্রিম’ সিনেমা, এ বছরও পায়নি। এখন সিনেমা হল খোলায় ছবি মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে কী ভাবছেন ছবিটির পরিচালক সানী সানোয়ার? তিনি বলেন, সিনেমা হল খোলার খবর জেনেছি। আমি ও আমাদের টিম দুয়েক দিনের মধ্যে মিটিংয়ে বসবো, ছবিটি মুক্তির বিষয় নিয়ে আলোচনা করবো।

 

তিনি আরও বলেন, এই ছবিটি মুক্তি দেওয়ার বিষয়ে আমাদের একটা টার্গেট অডিয়েন্স রয়েছে যেখানে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টস একটা ফ্যাক্টর। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও এদেরকে হয়তো কোনো উৎসবে পাওয়া যেতো। কিন্তু স্কুল-কলেজ বন্‌ধ থাকলে তাদের কতজন আসবে সেটা নিয়ে আমরা এখনও সন্দিহান। যদি স্কুল-কলেজগুলো খুলে যায় তাহলে আমরা ছবিটি মুক্তি দিতে চাই। কলেজ বন্ধ থাকার কারণে একটা বিশাল সংখ্যা বাড়িতে চলে গিয়েছে, সেই সংখ্যাটা পেলে সবচেয়ে ভালো হয়। তাদেরকে আমরা চাচ্ছি।

করোনার মধ্যেও মুভমেন্ট চলছে, সবকিছুই খুলে দেওয়া হয়েছে। তারপরও আমরা পর্যবেক্ষণ করছি যে কবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খুলবে! শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুললে আমরা হাতে এক মাস সময় নিয়ে ক্যাম্পেইন করে ছবি মুক্তি দিয়ে দেবো।

অন্যদিকে ‘অপারেশন সুন্দরবন’ সিনেমার নির্মাতা দীপংকর দীপন বলেন, হ্যাঁ, হল খুলে দিয়েছে। কিন্তু এখন যে পরিমাণ হল আছে, এতে আমরা ছবি মুক্তি দিব না। হলের সংখ্যাটা আরেকটু বাড়ুক। মোটামুটি ১০০ হলে যদি মুক্তি না পায় তাহলে তো দেখানো যাবে না ছবিটা। আমরা অপেক্ষা করবো পরিস্থিতিটা একটু স্বাভাবিক হোক, দর্শকরা হলের দিকে আসুক। যেহেতু ছবিটা অনেক বড় বাজেট এবং বড় অ্যারেঞ্জমেন্টের ছবি তাই একটু বেশি হল না হলে কেমন দেখায়! আমরা চাচ্ছি আরেকটু সময় নিতে।

এদিকে বড় বাজেটের আরেক ছবি ‘শান’ ঈদের ছবি হলেও তা মুক্তি পায়নি। ছবিটির পরিচালক এম রাহিম জানিয়েছেন, ছবির কাজে তিনি এখনও ভারতেই অবস্থান করছেন। হল খুললেও এখনই মুক্তি দিতে চান না। আরেকটু সময় অপেক্ষা করে দেখতে চান। তারপর যে কোনো সময়েই সেটি মুক্তি দিতে পারেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর