রফিকুল ইসলামঃ হাওর অঞ্চলে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় তা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণ করাসহ মাস্ক পরার ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করতে মাস্ক বিতরণে মাঠে নেমেছে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলা শাখার বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ স্কাউট দল।
দেশে হার্ড ইমিউনিটি অর্জন করার জন্য অন্তত ১০ কোটি মানুুষকে টিকা দিতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু হাত ধোয়া, মাস্ক পরা প্রভৃতি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাও অব্যাহত রাখাও অপরিহার্য।
সরকারের গৃহীত সময়োপযোগী বিভিন্ন পদক্ষেপের পাশাপাশি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে মাস্ক বিতরণসহ এ ক্ষুদ্র প্রয়াস হাতে নেয়া হয়েছে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
সংশ্লিট সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত এক হাজার ১৬৭ জনের করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে ১১০ জনের করোনা পজেটিভ ধরা পরেছে বা করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। যার মধ্যে ৭৪ জন সুস্থতা লাভ করেছে আর ২৬ জনের এখনও করোনা পজেটিভ রয়ে গেছে।
সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার কারণে চীন থেকে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস নিয়ে হাওরেও আতঙ্কের শেষ নেই। শ্বাসকষ্ট, সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া ইত্যাদি এই ভাইরাসের প্রধান উপসর্গ।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং বাংলাদেশ স্কাউট কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সহকারী কমিশনার (সংগঠন) ও মিঠামইন উপজেলা শাখার সহ-সভাপতি মিঠামইন আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মতিউর রহমান এই উদ্যোগের প্রধান সমন্বয়ক।
উপজেলার ৭৫টি স্কুলের সকল শিক্ষক নিজ খরচে উপজেলার অসচেতন জনগোষ্ঠীর মাঝে মাস্ক বিতরণের মধ্য দিয়ে করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্য সচেতন করে গড়ে তোলা হচ্ছে। উদ্বুদ্ধের ক্ষেত্রে তা লোকসমাজে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
কেন্দ্রীয় এ শিক্ষক নেতা মাস্ক পরার একটা উল্লেখযোগ্য সুবিধার কথা বলতে গিয়ে বলেন, মুখে মাস্ক থাকলে মোটামুটি নিজের সুরক্ষা যেমন হবে, তেমনি চারপাশের মানুষও এতে সুরক্ষা পাবে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শহীদ উল্লাহ্ শিক্ষক ও স্কাউট সংগঠনের এ উদ্যোগকে মহৎ আখ্যায়িত করে বলেন, শিক্ষক হলো ‘মানুষ নির্মাতা এবং সমাজ ও জাতির অভিভাবক। তাঁরা ঠিক সেই অভিভাবকের কাজটি করছেন। তাঁরা যেন কখনো শ্রেণিক্ষের মধ্যে দায়িত্ব সীমাবদ্ধ না রাখেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক নিজেই করোনায় আক্রান্ত ছিলেন জানিয়ে বলেন, আমার শিক্ষকদের জনহিতকর এ কাজে সম্পৃক্ততার খবর পেয়ে গুরুত্ব অনুধাবনে গর্বিত হয়েছি। জনসাধারণের পাশাপাশি তাঁরাও যেন নিজেদের করোনার টিকা দেয়া নিশ্চিত করেন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, জানালেন ঊর্ধ্বতন শিক্ষা এ কর্মকর্তা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল্লাহ আল শাফি বলেন, ডিসপোজেবল মাস্ক বা সার্জিক্যাল ফেস মাস্ক যথাযথ নিয়মিত ব্যবহারে শতকরা ৯০ ভাগ করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধ করা যায়।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মো. মুজিবুর রহমান টিকা নেয়ার পরও মাস্ক ব্যবহারের গুরুত্ব তুলে ধরে বলেন, দেশে করোনার টিকার ডোজ চলছে। কিন্তু এ রকম ধারণা যেন না হয় যে টিকা নেয়ার পর মাস্কের দরকার নেই।
তিনি জানান, এটা ভুল চিন্তা। কারণ, টিকার সুফল পেতে বেশকিছু সময় লাগে। অন্যদিকে টিকা নেয়ার পরও প্রশ্বাসের সঙ্গে ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা, মুজিবুর রহমান আরো বলেছেন, গবেষকেরা দেখেছেন, মাস্ক পরিহিত অবস্থায় আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস মাস্কের ভেতরের বাতাসের আর্দ্রতা বাড়ায়। এর ফলে করোনাভাইরাসের ক্ষতি সাধনের সক্ষমতা কমে যায়। তাই সকলকেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার উদাত্ত আহ্বান জানান তিনি।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।