ঢাকা ০৪:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হারিয়ে যাচ্ছে শিমুল গাছ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫৯:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ মার্চ ২০১৬
  • ১২০৬ বার

রক্তে রাঙা লাল শিমুল ফুলে কোনো সৌরভ নেই। কিন্ত টকটকে লাল রঙের ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য বিমোহিত করে সবাইকে।

আবহমান গ্রামবাংলার মেঠোপথের পাশে থাকা শিমুল গাছের সারির চিরন্তন রূপ আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

শিমুল ফুল ড্রয়িং রুমের ফুলের তোড়ায় স্থান পায়নি কোনোদিনই। কিন্তু শিমুল গাছ গ্রামবাংলার মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।

সারিবদ্ধভাবে বা বিক্ষিপ্তভাবে কাঁটাযুক্ত শিমুল গাছ গ্রামবাংলার সর্বত্রই কমবেশি নজরে পড়ে। তবে লালচে তাম্র বর্ণের মাটিতে টিলা আকারের স্থানে শিমুল গাছ বেশি জন্মে থাকে। বীজ থেকে চারা ফুটে বের হবার পর থেকে ৭-৮ বছরের মধ্যেই শিমুল গাছে ফুল ফোটে ও ফল ধরে। তবে গাছের বয়োপ্রাপ্তি হয় ১০-১২ বছর পর। এ সময় থেকেই শিমুল গাছ থেকে অর্থনৈতিক উপযোগিতা পাওয়া যায়। এর ফুল গুচ্ছ আকারের কিঞ্চিত লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। এ ফুলের তেমন কোনো আকর্ষিত করার মতো সৌরভ না থাকলেও পথচারীরা ক্ষণিকের জন্য হলেও এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে পারে না।

shimulশিমুল গাছ সাধারণ ৭০-৮০ হাত লম্বা ও ৬-৭ হাত বা এর চেয়েও মোটা আকারের হয়ে থাকে। বন্যার পানি বা খরায় এর কোনো ক্ষতি হয় না। বাঁচেও শতাব্দির পর শতাব্দি কাল পর্যন্ত। মাঘ ফাল্গুন মাসে এ গাছে ফুল ধরে এবং চৈত্র বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ফল পরিপক্ব হয়। এগুলো সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে নিলে এর ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে সাদা ধবধবে তুলা। একটি বড় আকারের শিমুল গাছ থেকে বছরে কমপক্ষে ৩-৪ মণ এমনকি তারও বেশি তুলা পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতিকেজি শিমুল তুলা ৩৫০ টাকা হিসেবে যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৩৬ হাজার থেকে ৪৮ হাজার টাকা।

এক বিঘা পরিমাণ পতিত জমিতে লাইন করে প্রায় ৩০টি শিমুল গাছ লাগানো যেতে পারে। এর সবগুলোতে ফল দেয়া শুরু করলে তা থেকে তুলা সংগ্রহ করে বিক্রি করলে বছরে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা হতে পারে। সৈয়দপুর ও তার আশেপাশে বেশকিছু পরিবার রয়েছে শিমুলের সংগৃহীত তুলা বিক্রি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালান।

এ ছাড়া শিমুল গাছ বড় আকারের হওয়ায় এর নিচে শাক-সবজি, মরিচ, বেগুন, পেঁয়াজ-রসুন, হলুদ ইত্যাদি আবাদ করায়ও কোনো অসুবিধা হয় না। তবে এ অঞ্চলের এক শ্রেণির অলস প্রকৃতির লোকজনের অবহেলার দরুণ শিমুল গাছ থেকে যথাসময়ে ফল সংগ্রহ না করার কারণে বিপুল মূল্যের তুলা গাছে থাকা অবস্থায়ই আকাশে উড়ে যায়।

শিমুল তুলা যে শুধু মাথায় দেয়া বালিশের কাজে ব্যবহৃত হয় তাই নয়-শিমুল গাছের ছালও বিষফোঁড়া নিরাময়ের মহৌষধ। কবিরাজগণ পুরনো শিমুল গাছের ছাল চূর্ণ করে তাতে পুরনো গাওয়া ঘি মিশ্রিত করে বিষফোঁড়ার ওপর প্রলেপ দিয়ে থাকে। তাছাড়া শিমুল মুলের কুচি কুচি চূর্ণ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে গুড়সহ খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়। এমনকি বলবর্দ্ধকও বটে-মন্তব্য কবিরাজগণের।

শিমুলের কচি কাঠ দিয়াশলাইয়ের কাঠি তৈরিতে উৎকৃষ্ট উপাদান হিসেবে বিবেচিত। শিমুলের পাতাও উৎকৃষ্ট জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিমুল তুলার বীজ থেকে কোনো ভোজ্য তেল তৈরি সম্ভব কিনা তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষার দাবি রাখে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হারিয়ে যাচ্ছে শিমুল গাছ

আপডেট টাইম : ০৯:৫৯:২৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ মার্চ ২০১৬

রক্তে রাঙা লাল শিমুল ফুলে কোনো সৌরভ নেই। কিন্ত টকটকে লাল রঙের ফুলের অপরূপ সৌন্দর্য বিমোহিত করে সবাইকে।

আবহমান গ্রামবাংলার মেঠোপথের পাশে থাকা শিমুল গাছের সারির চিরন্তন রূপ আজ হারিয়ে যেতে বসেছে।

শিমুল ফুল ড্রয়িং রুমের ফুলের তোড়ায় স্থান পায়নি কোনোদিনই। কিন্তু শিমুল গাছ গ্রামবাংলার মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে।

সারিবদ্ধভাবে বা বিক্ষিপ্তভাবে কাঁটাযুক্ত শিমুল গাছ গ্রামবাংলার সর্বত্রই কমবেশি নজরে পড়ে। তবে লালচে তাম্র বর্ণের মাটিতে টিলা আকারের স্থানে শিমুল গাছ বেশি জন্মে থাকে। বীজ থেকে চারা ফুটে বের হবার পর থেকে ৭-৮ বছরের মধ্যেই শিমুল গাছে ফুল ফোটে ও ফল ধরে। তবে গাছের বয়োপ্রাপ্তি হয় ১০-১২ বছর পর। এ সময় থেকেই শিমুল গাছ থেকে অর্থনৈতিক উপযোগিতা পাওয়া যায়। এর ফুল গুচ্ছ আকারের কিঞ্চিত লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। এ ফুলের তেমন কোনো আকর্ষিত করার মতো সৌরভ না থাকলেও পথচারীরা ক্ষণিকের জন্য হলেও এর দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ না করে পারে না।

shimulশিমুল গাছ সাধারণ ৭০-৮০ হাত লম্বা ও ৬-৭ হাত বা এর চেয়েও মোটা আকারের হয়ে থাকে। বন্যার পানি বা খরায় এর কোনো ক্ষতি হয় না। বাঁচেও শতাব্দির পর শতাব্দি কাল পর্যন্ত। মাঘ ফাল্গুন মাসে এ গাছে ফুল ধরে এবং চৈত্র বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ফল পরিপক্ব হয়। এগুলো সংগ্রহ করে রোদে শুকিয়ে নিলে এর ভেতর থেকে বেড়িয়ে আসে সাদা ধবধবে তুলা। একটি বড় আকারের শিমুল গাছ থেকে বছরে কমপক্ষে ৩-৪ মণ এমনকি তারও বেশি তুলা পাওয়া যায়। বর্তমানে প্রতিকেজি শিমুল তুলা ৩৫০ টাকা হিসেবে যার বাজার মূল্য দাঁড়ায় ৩৬ হাজার থেকে ৪৮ হাজার টাকা।

এক বিঘা পরিমাণ পতিত জমিতে লাইন করে প্রায় ৩০টি শিমুল গাছ লাগানো যেতে পারে। এর সবগুলোতে ফল দেয়া শুরু করলে তা থেকে তুলা সংগ্রহ করে বিক্রি করলে বছরে প্রায় ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা হতে পারে। সৈয়দপুর ও তার আশেপাশে বেশকিছু পরিবার রয়েছে শিমুলের সংগৃহীত তুলা বিক্রি করে পরিবার-পরিজন নিয়ে সংসার চালান।

এ ছাড়া শিমুল গাছ বড় আকারের হওয়ায় এর নিচে শাক-সবজি, মরিচ, বেগুন, পেঁয়াজ-রসুন, হলুদ ইত্যাদি আবাদ করায়ও কোনো অসুবিধা হয় না। তবে এ অঞ্চলের এক শ্রেণির অলস প্রকৃতির লোকজনের অবহেলার দরুণ শিমুল গাছ থেকে যথাসময়ে ফল সংগ্রহ না করার কারণে বিপুল মূল্যের তুলা গাছে থাকা অবস্থায়ই আকাশে উড়ে যায়।

শিমুল তুলা যে শুধু মাথায় দেয়া বালিশের কাজে ব্যবহৃত হয় তাই নয়-শিমুল গাছের ছালও বিষফোঁড়া নিরাময়ের মহৌষধ। কবিরাজগণ পুরনো শিমুল গাছের ছাল চূর্ণ করে তাতে পুরনো গাওয়া ঘি মিশ্রিত করে বিষফোঁড়ার ওপর প্রলেপ দিয়ে থাকে। তাছাড়া শিমুল মুলের কুচি কুচি চূর্ণ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ঘুম থেকে উঠে গুড়সহ খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময় হয়। এমনকি বলবর্দ্ধকও বটে-মন্তব্য কবিরাজগণের।

শিমুলের কচি কাঠ দিয়াশলাইয়ের কাঠি তৈরিতে উৎকৃষ্ট উপাদান হিসেবে বিবেচিত। শিমুলের পাতাও উৎকৃষ্ট জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শিমুল তুলার বীজ থেকে কোনো ভোজ্য তেল তৈরি সম্ভব কিনা তাও পরীক্ষা-নিরীক্ষার দাবি রাখে।