সরকারের ব্যাংক ঋণ ২৬ হাজার কোটি টাকা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিদায়ি অর্থবছরে (২০২০-২০২১) ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ২৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারির কারণে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ধীরগতি, অন্যদিকে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। রাজস্ব আয়েও কিছুটা গতি আসায় ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ কম নিয়েছে সরকার।

২০১৯-২০ অর্থবছরে ব্যাংক থেকে রেকর্ড পরিমাণ ধার নিয়েছিল সরকার। মহামারির কারণে ঋণের চাহিদা আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হয়েছিল।

ফলে গেল অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি মেটাতে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি টাকার ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছিল। তবে বছরের শুরু থেকেই ঋণের চাহিদা কম থাকায় এ লক্ষ্য কাটছাঁট করে ৭৯ হাজার ৭৪৯ কোটি টাকা করা হয়। কিন্তু অর্থবছর শেষে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়েছে মাত্র ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা যা নির্ধারিত লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ৭০ শতাংশ কম।

সব সময় বাজেট ঘাটতি মেটাতে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক উৎস থেকে ঋণ নিয়ে থাকে সরকার। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা ও সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমেই সবচেয়ে বেশি ঋণ নেয়। তবে গেল অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়লেও ব্যাংক ঋণ কমেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে, অর্থবছরের শুরু থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিয়েছে ৪৬ হাজার ১৭ কোটি টাকা। তবে এ সময়ে সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ধার করেনি। উলটো আগের নেয়া ঋণের ১৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা শোধ করেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে সরকারের নেওয়া পুঞ্জীভূত ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে দুই লাখ তিন হাজার ৯০১ কোটি টাকা। ২০২০ সালের ৩০ জুন সরকারের ব্যাংক ঋণের স্থিতি ছিল এক লাখ ৭৭ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে ২০২০-২১ অর্থবছরের ব্যাংক খাত থেকে নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ৭৮ কোটি টাকা।

সরকারের ঋণ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সরকারের বাজেটের আয়-ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবের সঙ্গে মিল কম ছিল। মহামারির কারণে সরকারের উন্নয়ন বাজেটের (এডিপি) বাস্তবায়ন কম হয়েছে। সঞ্চয়পত্রও বিক্রি বেড়েছে। এসব কারণে ব্যাংক ঋণ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম নিয়েছে। তবে ব্যাংকগুলোতে এখন পর্যাপ্ত তারল্য পড়ে আছে। এখন ব্যাংকাররা চাচ্ছেন সরকারকে ঋণ দিতে। এতে করে তাদের কিছু আয় বাড়বে।

নতুন ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি ধরা হয়েছে অনুদান ছাড়া দুই লাখ ১৪ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। যা মোট জিডিপির ৬ দশমিক ২ শতাংশ। বাজেটের আয়-ব্যয়ের বিশাল ঘাটতি পূরণে প্রধান ভরসাস্থল ব্যাংক খাত। এবারও ঘাটতি পূরণে ব্যাংক খাত থেকে ৭৬ হাজার ৪৫২ কোটি টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, গেল ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) সব মিলিয়ে এক লাখ দুই হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। এ বিক্রি অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের সুদ-আসল বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৬১৬ কোটি ১৪ লাখ টাকা। সে হিসাবে নিট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৭ হাজার ৩৮৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

২০২১-২২ অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে ৩২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে, যা গেল অর্থবছরের চেয়ে ৬০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের বাজেটে যার লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের ১১ মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়ন হয়েছে ৫৮.৩৬ শতাংশ, যা টাকার অংকে এক লাখ ২২ হাজার ১৩১ কোটি টাকা।

বাস্তবায়নের এ হার গত অর্থবছরের চেয়ে বেশি। এডিপি বাস্তবায়নে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে এগিয়ে রয়েছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়। তবে করোনা সংকটের কারণে সার্বিক এডিপি বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা গেছে।

এদিকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাময়িক হিসাবের তথ্য অনুযায়ী, সদ্য সমাপ্ত ২০২০-২১ অর্থবছর (জুলাই-জুন) শেষে তিন লাখ এক হাজার কোটি টাকার সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সাময়িক হিসাবে আদায় হয়েছে প্রায় দুই লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ঘাটতি ৪৫ হাজার কোটি টাকা।

যদিও গত অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি ১৭ শতাংশের কিছু বেশি। গত ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের রাজস্ব আদায় হয়েছিল দুই লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা। আর তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার মূল লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় পিছিয়ে ৭৪ হাজার কোটি টাকা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর