রফিকুল ইসলামঃ কিশোরগঞ্জের হাওরে মিঠামইনে বহুল আলোচিত ধর্ষণ মামলার অভিযুক্ত ধর্ষক বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য কনস্টেবল মো. রুবেল মিয়ার (২৩) যতসব পিলেচমকানো তথ্য বেরিয়ে আসছে সামনে। হবু স্ত্রীকে ধর্ষণের আগে বিয়ের অ্যাঙ্গেজমেন্টের আংটিও পড়েছিল ওই রুবেল।
বিয়ের অ্যাঙ্গেজমেন্টের এ আংটি পড়ানো হয়েছিল শতাধিক মেহমানের উপস্থিতিতে। ষোড়শীকন্যা মোছা. লিজা আক্তারের বাবা মো. জিয়াউর রহমানের গরু জবাইয়ে ধুমধাম মেজবানির মধ্য দিয়ে এ আয়োজন করা হয়েছিল।
এমন দাবি হাওর অধ্যুষিত কিশোরগঞ্জের ইটনা ও মিঠামইন উপজেলার এলংজুরি, ঢাকী ও গোপদিঘী ইউনিয়নের এলংজুরি, চকেশ্বর, শান্তিপুর, মামুদপুর, কুলাহানি, ঢাকীর পূর্বহাটি, চাঁনপুর, অলুয়া, ধলাই ও নতুন বগাদিয়া গ্রামের শতাধিক আমন্ত্রিত অতিথিদের।
নজিরবিহীন যৌন নিপীড়নের এ ঘটনাটি ঘটেছে কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের নতুন বগাদিয়া গ্রামের নিভৃত এক পল্লীতে।
এ ব্যাপারে ধর্ষিতা মোছা. লিজা আক্তার ন্যায়বিচার চেয়ে বিজ্ঞ আদালতের শরণাপন্না হয়েছেন।
ভিকটিমের দায়ের করা ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন (সংশোধনী/০৩) এর ৯(১) ধারায় কিশোরগঞ্জ জজ কোর্ট ১নং ট্রাইব্যুনালে ৭৬/২০২১ নং পিটিশন মোকদ্দমার অভিযুক্ত আসামি মো. রুবেল মিয়া (২৩), পিতা- মো. রইছ মিয়া, গ্রাম- মামুদপুর, ইউনিয়ন- ঢাকী, উপজেলা- মিঠামইন, জেলা- কিশোরগঞ্জ।
অভিযুক্ত ধর্ষক মো. রুবেল মিয়া বর্তমানে ঢাকায় ডিএমপি পিওএম-দক্ষিণ বিভাগে (কং-১০২০১) কর্মরত রয়েছেন।
বিয়ের অ্যাঙ্গেজমেন্ট অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের উপঢৌকন নথির তথ্যানুযায়ী দেখা যায়, রুবেলকে বিয়ের আংটি পড়ানোর অ্যাঙ্গেজমেন্টকে কেন্দ্র করে সামাজিক প্রথার এ মেজবানিতে দাওয়াতিদের মধ্যে মিঠামইন ও ইটনা উপজেলার গোপদিঘী, ঢাকী ও এলংজুরি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ১২৮ জন মেজবান (মেহমান) উপস্থিত ছিলেন। লিজা ও রুবেলের বিয়ের সামাজিক চুক্তির প্রত্যক্ষ সাক্ষী এবং ধর্ষণ ঘটনার পরোক্ষ সাক্ষী বলে জানিয়েছেন তারা।
বিয়ের অ্যাঙ্গেজমেন্ট উৎসবে উপস্থিত থাকা মেহমানদের মধ্যে মুঠোফোনে কথা হয় মিঠামইন উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের ঢাকীর পূর্বহাটির কামাল মিয়া (৬০) ও চকেশ্বর গ্রামের বাচ্চু মিয়া (৪০), গোপদিঘী ইউনিয়নের অলুয়া গ্রামের আলাউদ্দিন (৬৫), রইছ উদ্দিন (৫২), আমীর হোসেন (৫৮), মাহবুব (৩৫) ও ফয়েজ উদ্দিন মানিক (৪৬), নতুন বগাদিয়া গ্রামের বিল্লাল হোসেন (৩২), স্বপন মিয়া (৪২), সজল মিয়া (৪২) ও ইয়াকুব আলী (৪০), ধলাই গ্রামের আনোয়ার (৪৫), ইটনা উপজেলার এলংজুরি গ্রামের সরুজ মিয়া (৬৫) ও মন্নাছ বেপারি (৪৬) সহ আরো অনেকের সঙ্গে।
অতিথিরা বলেন, বাপের বড় মাইয়্যা লিজা। মাইয়্যারে বিয়া দিব বইলা হবু জামাই রুবেলকে বিয়ের আংটি পড়ানোর জাঁকজমকপূর্ণ এ অনুষ্ঠানে আমরা ছাড়াও শতাধিক মেজবান উপস্থিত আছিন। তাছাড়া হবু বর রুবেলের পক্ষেরও মেজবান আছিন ৭/৮ জনের মতন। খাওয়া-দাওয়া সাইরা উপহার কিংবা উপহার বাবদ নগদ ট্যাহাপয়সা দিয়া কনেরে সম্মান দেহানোটা স্থানীয় প্রচলিত সমাজিক প্রথা বা রীতি, যা আমরা করছি। যারতার সামর্থ অনুযায়ী এ রকম উৎসবের মাধ্যমে সমাজের মানুষকে বিয়ের বিষয়ে অবগত করানো হয়ে থাকে বলে জানান তারা।
অতিথিরা আরো বলেন, সমাজ চিরায়ত বিশ্বাসের উফরে ভর কইরা চলে। দু-একটা ব্যতিক্রম বাদে বিয়া-শাদি থেইক্কা আরম্ভ কইরা হগল কামই মুখের কতাতে বা মৌখিক চুক্তিতে যেমন অই, তদ্রুপ রুবেল ও লিজার বিয়াডাও সেই রীতি অনুযায়ী অইছে।
এক্ষেত্রে মাইয়্যা সাবালিকা অইলে উঠাইয়্যা নিব এমনডাই শর্ত আছিন। কিন্তু পরে হুনলাম, এর আগেই মাইয়াডারে রুবেল রেপ (ধর্ষণ) করছে। এতে অবাক ও বিস্ময় প্রকাশ করে প্রতিকার চেয়েছেন তারা।
মেজবানরা খেদোক্তি প্রকাশ করে বলেন, এ ধরনের লম্পট্যতা পুরুষ জাতির কলঙ্ক, সমাজ নষ্টের গোড়া (মূল); করোনা মহামারির ভাইরাসের চাইতেও তা ক্ষতিকর। ওরে শক্ত বিচারের ভিতরে এনে দৃষ্টান্ত গড়তে না পারলে সুস্থ ও নিরাপদ সমাজব্যবস্থা ভাইঙ্যা পড়বে এবং মাইয়ারা সমাজে অরক্ষিত অইয়া ভোগের শিকার অইতেই থাকবে। উঠতি বয়সী ছেলেরা রুবেলের ঘটনা থেইক্কা শিক্ষা নিবে যে, লুচ্চামি (ধর্ষণ) কইরা বাঁচন যায়; কোনো বিচার অই না তাতে। একে অপরকে প্রভাবিত করতে পুলিশ রুবেলের উদাহরণটি দেখ্যাইয়া এরকম অঘন ঘটাইবে। যেকারণে রুবেল পুলিশ বলে কিংবা কোনো অনৈতিক চাপে অথবা কোনো ফাঁকফোকর দিয়ে সে পার পেয়ে গেলে অন্যরাও লাই (প্রশ্রয়) পাবে বলে উদ্বেগও প্রকাশ করেন তারা।
এসব লুচ্চাগিরি কেউ দেখাইয়্যা করে না মন্তব্য করে তারা বলেন, ছলনার আশ্রয় নিয়া রুবেলের পক্ষ টাইম পাছ কইরা আলামত নষ্ট করার পায়তারা করছে। তবে এইডা হ্যাঁচা কথা যে, অপরাধী কোনো না কোনো আলামত রাইখ্যা যাইবই যাইব। তা বাইর করতে দায়িত্ব যাঁদের; ইঁনাদের সদিচ্ছা থাকলে তা ধরা পড়বেই পড়বে। কারণ, পাপ বাপকেও ছাড়ে না। তাছাড়া এইডা ডিজিটাল যুগ। কোনোতাই ধরার বাদ থাহে না। ‘কাকের মাংস কাকে খায় না’ এমনডা প্রবাদে থাকলেও সততা ও ন্যায়ের পাল্লা যে তদন্ত সংস্থার (পিবিআই) আতে (হাতে), ইঁনাদের উফরে সাধারণ মানুষের অগাধ বিশ্বাস ও সমস্ত ভরসা আছে।
মুঠোফোনে কথা হয় বিয়ের আংটি পড়ানোর অ্যাঙ্গেজমেন্টে রুবেলের পক্ষে আসা গোপদিঘী ইউনিয়নের নতুন চাঁনপুর গ্রামের আল-আমীন ও ঢাকী ইউনিয়নের পূর্বহাটির জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে। লিজার বিয়ে উপলক্ষে রুবেলকে আংটি পড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে তারা বলেন, এটা শুধু বিশ্বাসের ঘরে সিঁদকাটা কেবলই না, পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ সমাজদ্রোহেরও শামিল; যা হাওর সমাজে কলঙ্কজনক উপাখ্যানের জন্ম দিয়েছে।
তারা জানান, আমরা ছাড়াও রুবেলের পক্ষে বাবা মো. রইছ মিয়া, ভাই লোকমান, বোন জামাই ঢাকীর কুলাহানি গ্রামের কাইল্যা বাদশা ও মামুদপুর গ্রামের আলমগীর, শান্তিপুর গ্রামের ডা. বাবুলসহ ৭/৮ জনের মতো অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলাম।
রুবেলের পক্ষে অতিথি হয়ে আসা মামুদপুর গ্রামের ডা. বাবুল বিয়ের অ্যঙ্গেজমেন্টের আংটি পড়ানোর কথা স্বীকার করে বলেন, পরবর্তীতে রুবেলের এ ন্যক্কারজনক ঘটনার জন্য রুবেলের বাবা রইছ মিয়া এবং মেয়ের বাবা জিয়াউর রহমানের সাথে সামাজিকভাবে আপসের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। ছেলের বাবা রইছ মিয়া সামাজিক বিচার না মানার কারণে তা সম্ভব হয়ে উঠেনি। এমন সত্য ঘটনাকে নিয়ে মিছামিছি করার ফল ভবিষ্যতে খুব একটা ভালো হয় না। গর্হিত এ কাজের নিষ্পত্তির উদ্যোগকারী মুজিবুর মেম্বার ছিলেন বলে তিনি জানান।
ডা. বাবুল আরো বলেন, রুবেলের হয়ে আমিও ছিলাম বিয়ের অ্যাঙ্গেজমেন্টের আংটি পড়ানোর ভোজ উৎসবে। বিয়ের সামাজিক এ চুক্তি ভেঙে ছেলে রুবেলকে অন্যত্র বিয়ে করানোর ভবিষ্যতও ‘মঙ্গল হবে না’ – এ বুঝ না মানাতে আজ সমাজেও একটা বাজে দৃষ্টান্তের জন্ম হলো।
ঢাকী ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের বাসিন্দা ১নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার, বিশিষ্ট রাজনীতিক ও বিজ্ঞ সালিসকারী মো. মুজিবুর রহমান সমস্ত ঘটনা অবগত রয়েছেন জানিয়ে বলেন, প্রাচীনকাল থেকে বাংলাদেশের পল্লী অঞ্চলে প্রধানত যে দু’ধরনের বিচারব্যবস্থা প্রচলিত রয়েছে। তার একটি হলো সালিস। আমি ও ডা. বাবুল এবং ঢাকী ইউনিয়ন পরিষদের দু’বারের সফল চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর রহমানসহ আরো কয়েকজনকে নিয়ে অনানুষ্ঠানিকভাবে চেষ্টা করেছি সৃষ্ট ন্যক্কারজনক ঘটনার সম্মানজনক ফয়সালা দিতে। যাতে মেয়েটারও সামাজিকভাবে সম্মানটা অক্ষুন্ন থাকে এবং ওর যথাযথ একটা বিহিত হয়, অন্যদিকে রুবেলও যাতে মামলাতে না পড়ে; যেহেতু সে পুলিশের চাকরি করে। কিন্তু মেয়ের বাবা জিয়াউর রহমান বারবার ধর্না দিলেও রুবেলের বাবা রইছ মিয়া প্রথমে সালিস মানলেও পরবর্তীতে কি না কি কারণে মীমাংসার পথ থেকে সড়ে যান।
একই অনুযোগ করেছেন মামুদপুর গ্রামের বাসিন্দা ১নং ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার মো. শাহ্ নেওয়াজ। তিনি বলেন, সত্য ঘটনা ধামাচাপা দেয়া যায় না। একদিন না একদিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠবেই উঠবে। তাই চেয়েছিলাম রুবেলকে সেফ করতে, যেহেতু সে সুশৃঙ্খল পুলিশ বাহিনীতে আছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত লিজারও যেন একটা সদ্গতি হয়, মানবাধিকার লঙ্ঘিত না হয়। মেয়ের বাবা নিষ্পত্তিতে মরিয়া হলেও অদৃশ্য কোনো প্রশ্রয়ে রুবেলের বাবার একগুয়েমির দরুন তা সম্ভব হয়ে উঠেনি।
ঢাকী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর রহমান বলেন, সালিস মূলত পাড়া ও গ্রামভিত্তিক স্থানীয় লোকসমাজের বিচার। স্বাভাবিক সুবিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে সালিসে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষ সংঘাতে না গিয়ে সমঝোতায় উপনীত হতে আগ্রহী হবার কথা। কেননা, সাধারণত সালিস প্রক্রিয়া শুরু হয় বাস্তব তথ্যগুলি কি কি তা নির্ধারণের মধ্য দিয়ে।
তিনি জানান, লিজা ও রুবেলের বিয়ের সামাজিক চুক্তি, অ্যাঙ্গেজমেন্ট ও ভোজনোৎসব এবং পরবর্তী রুবেলের নিগৃহের ঘটনা এতবেশি আলোচিত বিষয় যে, যা জানার বাকি কম মানুষেরই। স্বাভাবিক সুবিচারের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে গেলে সালিসে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই পক্ষ সংঘাতে না গিয়ে সমঝোতায় উপনীত হতে আগ্রহী হবার কথা। উভয় পক্ষ স্থানীয় নিষ্পত্তিতে সম্মত হলেও নানাখানে ঘুরাঘুরি করে এক অজানা শক্তির ভর পেয়ে রুবেলের বাবা মো. রইছ মিয়া মীমাংসার পথ থেকে পিছিয়ে যায়। ফলে বিষয়টি মামলায় গড়িয়েছে। এখন বিজ্ঞ আদালত ভালো বুঝবেন বলে অভিমত ব্যক্ত করেন চেয়ারম্যান মুজিবুর।
প্রাপ্ত ডকুমেন্টসে জানা যায়, রুবেলকে যে স্বর্ণের আংটি পড়ানো হয়েছিল তা কেনা হয়েছে কিশোরগঞ্জ শহরের স্টেশন রোডে রঙমহলের পশ্চিম পাশের রায়হান জুয়েলার্স থেকে। সঙ্গে ছিল একটি চেইন। আংটির দাম ৭ হাজার ৬শ টাকা এবং চেইনের দাম ৩ হাজার ৪শ টাকা।যার তারিখ ৩০/০৩/২০২০ খ্রি,।
রুবেলকে আংটি পড়ান ইটনা উপজেলার এলংজুরি গ্রামের আলাউদ্দিন (৬৫)। তিনি জানান, মেজবান ছাড়াও অত্র তল্লাটেে কারো জানার বাকি নাই আংটি পড়ানো ও মাইয়া প্রাপ্ত বয়স্কা হলে তুলে নেওয়ার বিষয়টি।
লিজা আক্তার বলেন, আমাকে বিয়ে করার উপলক্ষে রুবেলকে আংটি পড়ানো হয়েছে শত মেজবানদের সাক্ষীতে। কিন্তু আমি সাবালিকা হওয়া ও তুলে নেওয়ার আগেই কৌশলে এবং জোরে আমার সতীত্ব কেড়ে নেয়।
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে লিজা ও রুবেলের বিয়ের আংটি পড়ানোর অ্যাঙ্গেজমেন্টের ভোজোৎসবে অংশগ্রহণ ও রুবেলকে আংটি পড়ার কথা অস্বীকার করেন রুবেল মিয়া। এতে একই মত পোষণ করেন রুবেলের বাবা মো. রইছ মিয়াও।
রুবেল মিয়ার বড় বোনজামাই কুলাহানি গ্রামের কালা বাদশা রুবেলের বিয়ের অ্যাঙ্গেজমেন্টের ভোজোৎসবে তার নিজের অংশগ্রহণ এবং রুবেলকে আংটি পড়ানো কথা স্বীকার করে বলেছেন, চার বছর পর লিজাকে তুলে আনার কতা আছিন। তবে ধর্ষণকে তিনি স্বাভাবিক চলাফেরা বলেছেন।
মো. রুবেল মিয়া বরাবরই ভুল তথ্য দিয়ে চলেছেন এবং অসংলগ্ন কথা বলে আসছেন। মামলায় ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রুবেল বলেন, আমি ঘটনার দিন বা রাত (১১ ফেব্রুয়ারি’২১) কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ শ্বশুর বাড়িতে ছিলাম।
বিয়ের তারিখ জানতে চাওয়া হলে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের ৭ তারিখ, আবার ৮ তারিখ বলে জানান। এর আগে গত ১৫ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে মার্চ মাসের ৫ তারিখ দাবি করেছিলেন রুবেল মিয়া।
রুবেল মিয়ার দেয়া বিয়েসংক্রান্ত তথ্য যাচাই করতে গিয়ে ধুম্রজালের সৃষ্টি হয়। করিমগঞ্জ উপজেলার জয়কা, নোয়াবাদ ও জাফরাবাদ ইউনিয়নের সংশ্লিষ্ট অফিসে এ দাবির কোনো সত্যতা মিলেনি বলে সূত্র জানায়।
সূত্রটি নিশ্চিত করে যে,, মো. রুবেল মিয়ার বিয়ের প্রকৃত তারিখ ৩১ মার্চ’২১। কিশোরগঞ্জ পৌর এলাকার নিকাহ্ রেজিস্ট্রার অফিস। কনে- কচি, পিতা- মো. আ. রউফ, মাতা- সুফিয়া খাতুন, সাং- বানকাটা কান্দাইল, পোঃ – জয়কা, উপজেলা- করিমগঞ্জ, জেলা- কিশোরগঞ্জ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মো. রুবেল মিয়া কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের মো. রইছ মিয়ার ছেলে। গত ১১ ফেব্রুয়ারি আংটি পড়ানোর পটভূমিতে লিজাদের বাড়িতে এসে এক ছুতোয় রাত্রিযাপনকালে সুযোগ বুঝে লিজাকে ধর্ষণের অভিযোগের মামলায় রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।
এ বহুল আলোচিত মামলাটি তদন্ত করছে কিশোরগঞ্জের পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। গত ২৪ জুন দ্বিতীয়বারের মতো উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. সুমন মিয়া সরেজমিন তদন্ত করেছেন।
এ তদন্তানুষ্ঠানে এলাকাবাসীর সাক্ষ্য নেয়া হয়। এতে বাদীর মানীত সাক্ষী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন গোপদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মো. আজিজুল হক (৫৮), মিঠামইন উপজেলা শাখার আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. নূরুল হক ভূঁইয়া (৫৩), ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার আনোয়ার হোসেন (৪৩), সাবেক মেম্বার মোমতাজ উদ্দিন (৭০), অলুয়া গ্রামের রইছ উদ্দিন (৫২) ও আজিম উদ্দিন (৪৩), নতুন বগাদিয়ার কামাল বেপারি (৫৪), সজল মিয়া (৪২) ও স্বপন মিয়া(৪২), ধলাই গ্রামের মো. আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া (৫৩), মোজাম্মের হক (৪৭) সহ প্রায় অর্ধশত লোক।
এলাকাবাসী পিবিআই তদন্ত কর্মকর্তার কাছে আমলার বিষয়বস্তু ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার বর্ণনা দিয়ে ভিকটিমের সর্বস্ব হারানো এবং বৃহত্তর সমাজ ও রাষ্ট্রের শান্তিশৃঙ্খলার স্বার্থে সুবিচারের পথ সমুন্নতের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সূত্র জানায়।
সমাজ চিন্তকরা জানিয়েছেন, নজিরবিহীন এ ঘটনাটি গোটা সমাজব্যবস্থার ভিত নাড়িয়ে দিয়েছে। সমাজ একটি অতি প্রাচীনতম সংগঠন। আর সামাজস্বীকৃত আচরণবিধি হলো প্রথা বা রীতি। এতে রয়েছে নৈতিক মূল্যবোধের প্রতিফলন এবং প্রথা এক ধরনের সামাজিক অনুশাসন বা আইন। একে বর্তমানেও অধিকাংশ মানুষ বিশ্বাসযোগ্য যুগোপযোগী মনে করে থাকেন। সামাজিক প্রথাকে অমান্য করলে সংঘাত ও বিদ্রোহের সৃষ্টি হয়, যা বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর সদস্য রুবেল মিয়ার শঠতা ও অনৈতিক কার্যকলাপের মধ্য দিয়ে প্রকট হয়ে উঠেছে।
তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ এক বক্তব্যে বলেছেন, কোনো সমাজে যৌন ও নারী সহিংসতার উপস্থিতি নিঃসন্দেহে সেই সমাজের মানব উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত শুধু নয়, অন্যান্য আর্থিক-সামাজিক সমস্যার চেয়েও অধিক গুরুতর সমস্যা। সেজন্যই মূল্যবোধ পরিপন্থী কোনো কার্যক্রম সমাজে গৃহীত হয় না। যে কারণে মানবজাতি মহাবিপর্যয়ের শ্রেষ্ঠত্বের অন্বেষণ করে।
তাই সতত দাবি উঠেছে, ‘মনেরে আজ কহ যে, /ভাল-মন্দ যাচাই আসুক সত্যরে লও সহজে।’
রফিকুল ইসলাম: সহযোগী সম্পাদক, সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।