ঐতিহ্যবাহী ও শতবর্ষী বৃক্ষ সংরক্ষণে সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত হলেও ঝিনাইদহে চলছে প্রাচীন ৪৮টি বৃক্ষ নিধনের পরিকল্পনা। স্থানীয় পরিবেশবাদীরা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসকের কাছে বৃক্ষ নিধন পরিকল্পনার প্রতিবাদ জানিয়ে এই তৎপরতা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানিয়েছেন।
স্থানীয়রা জানান, ঝিনাইদহ শহরের পোষ্ট অফিস মোড় থেকে ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কের দুই পাশে কালের সাক্ষী হয়ে টিকে থাকা ৪৮টি পুরাতন কড়ই গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। স্থানীয় একটি স্বার্থান্বেষী মহল এর পেছনে উন্ধন যোগাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবিষয়ে একটি প্রস্তাব এরই মধ্যে জেলা পরিষদে পাঠিয়েছে বলেও জানা গেছে। গত ১২ ই অক্টোবর ও ৯ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর সচেতন মহল ও সাধারণ মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। এর প্রতিবাদে ইতিমধ্যে ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটি জেলা প্রশাসকের নিকট স্বারকলিপি দিয়েছে।
স্থানীয় জেলা প্রশাসক পরিবেশ ও জৈববৈচিত্র্য এবং পুরাতন ঐতিহ্যের ক্ষতি হয়-এমন সিদ্ধান্ত না নেওয়ার ব্যাপারে তাদের আশ্বস্থ্য করেছেন। তারপরেও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে কুচক্রি মহলটি তাদের উদ্দেশ্য হাছিলে উঠে পড়ে লেগেছে বলে জানা গেছে। জেলা পরিষদ এ ব্যাপারে তাদের সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ-চুয়াডাঙ্গা সড়কটি সড়ক ও জনপথ বিভাগের। সেই হিসাবে ঝিনাইদহ শহরের ওয়াপদা অফিসের সামনে থেকে জেলার শেষ সীমানা সরোজগঞ্জ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের গাছ গুলির মালিকানা তাদের। ব্রিটিশ আমালে লাগানো গাছগুলো সড়ক ও জনপথ বিভাগই দেখভাল করছে। এতে যেমন স্থানীয় পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হচ্ছে, তেমনি ঝিনাইদহের সৌন্দর্য বর্ধন করে এখানকার ইতিহাস ও ঐতিহ্যেরও অংশ হয়ে উঠেছে বৃক্ষগুলো।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ জীববৈচিত্র সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে আসছে, কিন্ত সড়ক প্রশস্ত করণের অজুহাতে সড়ক ও জনপথ বিভাগ এই সড়কের দুই ধারের ঐতিহ্যবাহী মূল্যবান ৪৮ টি কড়াই গাছ বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় অত্যন্ত হতাশ স্থানীয় প্রকৃতিপ্রেমীরা ।
ঝিনাইদহ সড়ক ও জনপথ বিভাগ এ ব্যাপারে একটি সুপারিশমালা পরিষদ বরাবর পাঠিয়েছে। জেলা পরিষদ বিক্রির পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে কার্যক্রম শুরু করেছে। সড়ক প্রশস্তকরণের অজুহাতে কালের সাক্ষী ঝিনাইদহের অতীত ঐতিহ্যের অংশ ৪৮টি কড়ই গাছ বিক্রির উদ্যোগ স্থানীয়দের বিস্মিতও করেছে।
ঝিনাইদহের পরিবেশ ও জৈববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি মাছুদ আহামেদ সঞ্জু জানান, ঝিনাইদহের ঐতিহ্যবাহী কালের সাক্ষী মূল্যবান কড়ই গাছগুলো বিক্রির জন্য একটি কুচক্রি মহল পাঁয়তারা শুরু করেছে। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের ঐতিহ্য ধবংসকারী যে কোন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলব।
ঝিনাইদহের সড়ক বিভাগের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম জানান, ঝিনাইদহ থেকে চুয়াডাঙ্গা সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে কাজ অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্ত সড়কের পাশের গাছ গুলি রাস্তার বর্ধিত সীমারেখার ভিতরে চলে এসেছে এতে যান বাহন চলাচলের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়েছে। সে কারণে সড়ক ও জনপথ বিভাগ বেশী ঝুকি পূর্ণ গাছগুলো কেটে ফেলার জন্য একটি প্রস্তাব জেলা পরিষদ বরাবর পেশ করেছে। তবে আমরা চেষ্টা করছি যত কম সংখ্যক গাছ কেটে সড়ক বর্ধিতকরণের কাজ করা যায়।
অন্যদিকে, স্থানীয় ঐতিহ্যেও অংশ এসব গাছ কাটার সিদ্ধান্তের খবরে ক্রমেই ফুঁসে উঠছে ঝিনাইদহের সাধারণ মানুষ। গত মঙ্গলবার জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে ঝিনাইদহ জেলা জাসদ। মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় শহরের পায়রা চত্বরে এ বন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
জেলা জাসদ সভাপতি মুন্সী এমদাদুল হকের সভাপতিত্বে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধনে জাসদ নেতা শরাফত ইসলাম, শামিম আকতার বাবু, মনিরুজ্জামান মানিক, চন্দন চক্রবর্তী প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এসময় জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক ফজলুর রহমান খুররম বলেন, শুধু ৪৮টি কড়াই গাছই নয় কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে জেলা পরিষদ ঝিনাইদহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় রাস্তার দুই ধারে ফাঁকা জায়গাগুলো বেআইনীভাবে লিজ দিয়ে যাচ্ছে। সেখানে স্থায়ীভাবে পাকা ও সেমিপাকা স্থাপনা তৈরী করা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ বেআইনী।
বক্তারা ঝিনাইদহের পরিবেশ ধবংসকারী এসব বেআইনী কর্মকান্ড অনতিবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানান। অন্যথায় ঝিনাইদহের সর্বস্তরের জনগণকে সাথে নিয়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে সতর্ক করে দেন।
বাংলাদেশ যুবমৈত্রীর ঝিনাইদহ জেলার সাধারণ সম্পাদক স্বপ্না সুলতানা কালের সাক্ষী ৪৮ টি গাছ ঐতিহ্যবাহী কড়ই গাছ কেটে ফেলার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন।
শতবর্ষী ও ঐহিত্যবাহী গাছ সংরক্ষণে আইন হচ্ছে