ছাত্রদলের কমিটিতে শিবির বহিরাগত অছাত্র

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দীর্ঘ ৫ বছর পর রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তবে ১১ সদস্যের এ কমিটিতে ছাত্রশিবিরের রাজনীতিতে যুক্ত, অছাত্র, চাকরিজীবী ও জেলা নেতাদের স্থান দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই বিতর্কিত এ কমিটি বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। বুধবার ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন ও সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামলের সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে ১১ সদস্যের এ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।

কমিটিতে ইংরেজি বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী আল আমিন ইসলামকে আহ্বায়ক ও রসায়ন বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের রাশেদ মন্ডলকে সদস্য সচিব করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় বিগত কমিটির নেতাদের অভিযোগ, নতুন কমিটির আহ্বায়ক আল আমিন ইসলাম কিছুদিন আগে রংপুর জেলা ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে ২ নম্বর সহসাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। জেলা কমিটির নেতা হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কীভাবে রাজনীতি করবেন, এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তারা।

অভিযোগের বিষয়ে আল আমিন ইসলাম বলেন, জেলার কমিটিতে একাধিক ‘আল আমিন’ নামে পদধারী ব্যক্তি রয়েছেন। সেখানে আমাকে কোনো পদ দেওয়া হয়েছে কি না, আমি জানি না। সংগঠনকে গতিশীল রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করে বলেন, কেন্দ্র আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে, তা যথাযথভাবে পালন করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নতুন কমিটির সদস্য সচিব রাশেদ মন্ডলের বিরুদ্ধে সংগঠনে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছেন একাধিক ছাত্রদল নেতা।

তারা বলছেন, রাশেদ মন্ডল ছাত্রদলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই অনিয়মিত। পুরোনো-নতুন কমিটির কারও সঙ্গেই তার পরিচয় নেই। কমিটির কাউকেই চেনেন না-এমন অভিযোগ অবশ্য স্বীকার করে নিয়েছেন রাশেদ মন্ডল। তিনি বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতির বাইরে আছি। আমি রাজনীতি থেকে দূরে থাকতে চাই। এ বিষয়ে আমি কেন্দ্রে কথা বলব।

কমিটিতে ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের সাবেক শিক্ষার্থী কাউসার মাহমুদকে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, ২০১৪ সালের রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় থেকে শিবিরকর্মীর সঙ্গে নাশকতা করতে গিয়ে গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে এক মাসের বেশি সময় কারাগারে ছিলেন। ছাত্রদল নেতাদের অভিযোগ, কাউসার মাহমুদ ছাত্রদলের কেউ না, হুট করে ছাত্রশিবির থেকে ছাত্রদলে এসে যোগ দিয়েছেন।

আর কমিটিতে ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক পদে রাখা হয়েছে গণিত বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কামরুজ্জামানকে। তিনি পীরগঞ্জের একটি হাইস্কুলে বর্তমানে চাকরি করেন। তার পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এসব বিষয়ে কাউসার মাহমুদ ও কামরুজ্জামানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

আরেক যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম। তিনি নগরীর মাহিগঞ্জ থানা ছাত্রদলের এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ঢাকার স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। তিনি রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না হয়েও পদ পেয়েছেন।

সদস্য করা হয়েছে আল অমি মিয়াকে। তাকে নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। কারণ তিনি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নন। সেই সঙ্গে চাকরিজীবী। তিনি রংপুর শহরের শাহান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের রসায়ন বিষয়ের শিক্ষক। তাছাড়াও তিনি একসময় ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।

১১ সদস্যের কমিটির বাকিরা হলেন যুগ্ম আহ্বায়ক সবুজ ইসলাম ও মাহফুজুল আলম শাওন। সদস্য হিসাবে রয়েছেন এএম মঈন শরীফ আহমেদ, সৈকত মাহমুদ ও হযরত আলী। এরা সবাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। কেউ নিজ এলাকায়, কেউ ঢাকায় রয়েছেন। কেউবা চাকরি-ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ফজলুর রহমান খোকনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়ে ফোন কেটে দেন।

সর্বশেষ ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়। গণিত বিভাগের ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষের সাইফুল ইসলাম লিমনকে সভাপতি ও ইংরেজি বিভাগের ২০০৯-১০ শিক্ষাবর্ষের ইমরান খান শ্রাবণকে সাধারণ সম্পাদক এবং গণিত বিভাগের আল মুরসালিন মুন্নাকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য ১২ সদস্যের ওই কমিটির অনুমোদন দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রদল।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর