ঢাকা ০১:৩৩ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

ও – কি মানুষ! বিচারের বাণী যৌন নিপীড়িতার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৩:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১
  • ১৬৯ বার

রফিকুল ইসলামঃ ও কি মানুষ! -এই স্পর্শানুভূতি যৌন নিপীড়ন ও বিশ্বাসহন্তার শিকার ষোড়শী মোছা. লিজা আক্তারের। তার বাড়ি হাওর প্রাণকেন্দ্র কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের নতুন বগাদিয়া গ্রামে।

এক অনাকাঙ্ক্ষিত সহসালব্ধ সুযোগের খোরাক যৌন নিগৃহীতা লিজা শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। ‘অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর’ বলতে যা বুঝায়। শোক মানুষকে বিহ্বল করে দেয়। আর অধিক শোকে মানুষ অনেক সময় হারিয়ে ফেলে বাকশক্তি। হয়ে যায় নিশ্চুপ। তেমনি নির্বাক করে দিয়েছে লিজাকেও, যে ষোড়শী জীবনটাকে সুন্দর চিনত।

গত ১১ ফেব্রুয়ারির রাত তার মানসপটে নাকি জাগিয়ে দিয়েছে এক ভয়াল অনুভূতি। ওই কালো রাতেই তার কুমারীত্ব ও সতীত্ব পৈশাচিকীতে পিষ্ট হয়, জানাল লিজা।

লিজার শরণাপন্ন হলে এক আদর্শ শিক্ষকের পাঠদান থেকে শোনা একটি অনুগল্পের সারাংশের অবতারণা করেন বলেন, রাজদরবারে চোরের বিচার করা হবে শোনে রাজকুমারী ‘চোর দেখতে কেমন হয়’ দেখার দুর্বার আগ্রহ প্রকাশ করায় তাঁকে দেখানো হলে বিস্ময়ে রাজাকে বলেন -ও – কি চোর? দেখতে যে মানুষ!

যৌন উৎপীড়িতা লিজারও বিস্ময়ের শেষ নেই। জানতে চেয়েছেন ছবির ওই যৌন নিপীড়ক রুবেলও মানুষ কি না। আর বিবেক হারালে মানুষের থাকেইবা কী -লিজার এমন প্রশ্নে উপস্থিত অনেকের চোখ ভিজে যায়।

লিজা তার লালিত বিশ্বাস ও আস্থার সাথে বাস্তবতার বৈপরীত্যের নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করে বলেন, এতকাল জেনে আসছি পুরুষের তো কত মধুর পরিচয় রয়েছে -বাবা, ভাই, চাচা, মামা। আবার কারও বন্ধু, কারও প্রেমিক, কারও স্বামী। কিন্তু সেই পুরুষই কিনা হয়ে উঠছে কারও কারোর জন্য ধর্ষক, যা খুনের চাইতেও নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য । খুন মানে মানুষটি আর থাকল না। আর ধর্ষণ মানে মানুষটি থাকল, আরও আরও ধর্ষিতা হবার জন্য এবং সেটা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও সারাজীবন বয়ে বেড়ানোর জন্য।

বিভীষিকাময় ওই রাতের পর থেকে ‘হে ধরণী দ্বিধা হও’ বাংলায় নিগৃহীত লজ্জার প্রতিশব্দে পরিণত হয়েছে মর্মঘাতী শোকাহত লিজার কাছে। সেই দুঃখে, অপমানে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে মাটিকে বারবার বলছেন দুভাগ হয়ে তাকে ফিরিয়ে নিতে।

লিজা বলেন, আমি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। একটা নারীর যা সম্বল, তা অসুরে শক্তি কেড়ে নিয়েছে। রঙিন জীবনের ভবিষ্যতের স্বপ্ন এখন আমার কাছে কুৎসিত অন্ধকার। বিষয়টি ভিকটিমের অবস্থান থেকে ভাবলে সবার বিবেক সাড়া দিবেই। সুবিচার পাওয়ার সান্ত্বনা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই আমি — একথা বলে বিষাদেও আশায় বুক বাঁধেন উৎপীড়িতা লিজা।

এক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের প্রার্থনায় মোছা. লিজা আক্তার বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ জজ কোর্ট ১নং ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইন (সংশোধনী-২০০৩) এর ৯(১) ধারায় মামলা করেছেন। যার পিটিশন মোকদ্দমা নং ৭৬/২০২১।

মোকদ্দমার বিবরণে জানা যায়, একমাত্র আসামি একই উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের মোঃ রইছ মিয়ার ছেলে মোঃ রুবেল মিয়া (২৩)। সে রাস্তাঘাটসহ যেখানে-সেখানে উত্যক্ত এবং কুপ্রস্তাব দিত লিজাকে। বিষয়টি লিজার পিতা মো. জিয়াউর রহমানকে জানালে তিনি রুবেলকে এ হীনতা থেকে বিরত থাকার অনুরোধের পটভূমিতে রুবেলের পিতা ও মুরব্বীরা এসে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।

এতে মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্কা বিবেচনায় পিতা জিয়াউর রহমান অসম্মতি জানালে পরবর্তীতে উভয়পক্ষের মুরব্বীরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে, মেয়ে প্রাপ্তবয়স্কা হলে বিয়ে সম্পন্ন হবে। তাতে ছেলের বাবা রইছ উদ্দিন মেয়ের সুখের কথা বলে তিন লাখ টাকার দাবির প্রেক্ষিতে দেড় লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে যায়। সেসঙ্গে দুটি স্ট্যাম্পেও সই নেওয়া হয়, যা লিজা ও তার বাবাকে পড়ে শোনানো হয়নি।

ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার ১১ ফেব্রুয়ারি রুবেল মিয়া মেয়ের বাড়িতে আসলে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় মেয়ের পিতার সাধাতে সে থেকে যায়। রাত অনুমান ১০ টার সময় জরুরি কথা আছে বলে লিজাকে রুবেলের শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরজবরে ধর্ষণ করে এবং জানাজানির এক পর্যায়ে লিজাকে বিয়ে করার কসম খায়। কিন্তু পুলিশের চাকরি পেয়ে রুবেল অন্য এক কচি নামের মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে।

রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহসহ শঠতা আর কপটতার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের আর্তি জানিয়ে লিজার পিতা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, তার মেয়ে লিজার বিষম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় বিচারের নামে আসামিপক্ষ সময় পাড় করে ধোঁকা দিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মো. রুবেল মিয়া (২৩) বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন। বর্তমানে সে ঢাকায় ডিএমপি পিওএম- দক্ষিণ বিভাগে (কং- ১০২০১) কর্মরত আছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ কনস্টেবল মো. রুবেল মিয়া বলেন,  মামলাটি মিথ্যা, সাজানো ও ভিত্তিহীন এবং অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে ফাঁসানোর জন্য করা।

চলতি বছরের ৫ মার্চ থেকে বিবাহিত। আনীত মামলার ভিকটিমের সাথে তার কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই মন্তব্য করে তা মোকাবিলায় লম্বা হাতের সীমানা জানান দেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রমাণ করুক না আমি তাতে জড়িত। দুই মাস পর কোনো আলামত কি থাকে? — উল্টো প্রশ্ন ছুড়েন পুলিশের এই সদস্য রুবেল মিয়া।

জনৈক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় বাদী নিজস্ব কোনো আইনজীবী নিয়োগের প্রয়োজন নেই। ফৌজদারি কার্যবিধি ৪৯২ ধারা অনুযায়ী তিনি সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী পাবেন। তিনি মামলার সব তত্ত্বাবধান করবেন। যদি বাদী নিজে আইনজীবী নিয়োগ দিতে চান, তাহলে সেই আইনজীবী কাজ করবেন সরকারি আইনজীবীর অধীনে। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া আইনজীবী নিঃখরচায় আইনি সেবা দেবেন।

তিনি আরও জানান, বাদী যদি মামলা করতে অসমর্থ হন কিংবা কোনো হুমকির সম্মুখীন হন, তাহলে সরকারি খরচে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে প্রতি জেলায় রয়েছে লিগ্যাল এইড অফিস। তাছাড়া কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে যারা ভিকটিমকে সহযোগিতা করবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে — জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল প্রভৃতি।

এদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তি রুবেল মিয়া যদি আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে পার পেয়ে যায়, তবে অন্য আরও রুবেল লায় পাবে। এতে নৈতিক অবক্ষয়ের চোরা স্রোত আরও প্রবল বেগে ঢুকে পড়বে আমাদের হাওরপাড়ের পরিবারে, সমাজে, চিন্তা-মননে। এর চূড়ান্ত প্রকাশে সমাজে বিশেষ করে নারী সমাজ আরও বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়বে যেমন, তেমনি ভেঙে পড়বে সমাজে প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলাবোধ — এমনিই শঙ্কা প্রকাশ করছেন এলাকার সচেতন জনগোষ্ঠী।

নারী ও শিশু নির্যাতনের এই মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কিশোরগঞ্জ তদন্ত করছে।

সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সরকারি চাকরিতে ২২ হাজার নতুন নিয়োগের ঘোষণা আসছে

ও – কি মানুষ! বিচারের বাণী যৌন নিপীড়িতার

আপডেট টাইম : ১১:৩৩:১১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ জুন ২০২১

রফিকুল ইসলামঃ ও কি মানুষ! -এই স্পর্শানুভূতি যৌন নিপীড়ন ও বিশ্বাসহন্তার শিকার ষোড়শী মোছা. লিজা আক্তারের। তার বাড়ি হাওর প্রাণকেন্দ্র কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার গোপদিঘী ইউনিয়নের নতুন বগাদিয়া গ্রামে।

এক অনাকাঙ্ক্ষিত সহসালব্ধ সুযোগের খোরাক যৌন নিগৃহীতা লিজা শারীরিকভাবে বিপর্যস্ত ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েছে। ‘অল্প শোকে কাতর অধিক শোকে পাথর’ বলতে যা বুঝায়। শোক মানুষকে বিহ্বল করে দেয়। আর অধিক শোকে মানুষ অনেক সময় হারিয়ে ফেলে বাকশক্তি। হয়ে যায় নিশ্চুপ। তেমনি নির্বাক করে দিয়েছে লিজাকেও, যে ষোড়শী জীবনটাকে সুন্দর চিনত।

গত ১১ ফেব্রুয়ারির রাত তার মানসপটে নাকি জাগিয়ে দিয়েছে এক ভয়াল অনুভূতি। ওই কালো রাতেই তার কুমারীত্ব ও সতীত্ব পৈশাচিকীতে পিষ্ট হয়, জানাল লিজা।

লিজার শরণাপন্ন হলে এক আদর্শ শিক্ষকের পাঠদান থেকে শোনা একটি অনুগল্পের সারাংশের অবতারণা করেন বলেন, রাজদরবারে চোরের বিচার করা হবে শোনে রাজকুমারী ‘চোর দেখতে কেমন হয়’ দেখার দুর্বার আগ্রহ প্রকাশ করায় তাঁকে দেখানো হলে বিস্ময়ে রাজাকে বলেন -ও – কি চোর? দেখতে যে মানুষ!

যৌন উৎপীড়িতা লিজারও বিস্ময়ের শেষ নেই। জানতে চেয়েছেন ছবির ওই যৌন নিপীড়ক রুবেলও মানুষ কি না। আর বিবেক হারালে মানুষের থাকেইবা কী -লিজার এমন প্রশ্নে উপস্থিত অনেকের চোখ ভিজে যায়।

লিজা তার লালিত বিশ্বাস ও আস্থার সাথে বাস্তবতার বৈপরীত্যের নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করে বলেন, এতকাল জেনে আসছি পুরুষের তো কত মধুর পরিচয় রয়েছে -বাবা, ভাই, চাচা, মামা। আবার কারও বন্ধু, কারও প্রেমিক, কারও স্বামী। কিন্তু সেই পুরুষই কিনা হয়ে উঠছে কারও কারোর জন্য ধর্ষক, যা খুনের চাইতেও নিকৃষ্ট ও ঘৃণ্য । খুন মানে মানুষটি আর থাকল না। আর ধর্ষণ মানে মানুষটি থাকল, আরও আরও ধর্ষিতা হবার জন্য এবং সেটা শুধু শারীরিক নয়, মানসিকভাবেও সারাজীবন বয়ে বেড়ানোর জন্য।

বিভীষিকাময় ওই রাতের পর থেকে ‘হে ধরণী দ্বিধা হও’ বাংলায় নিগৃহীত লজ্জার প্রতিশব্দে পরিণত হয়েছে মর্মঘাতী শোকাহত লিজার কাছে। সেই দুঃখে, অপমানে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে মাটিকে বারবার বলছেন দুভাগ হয়ে তাকে ফিরিয়ে নিতে।

লিজা বলেন, আমি ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। একটা নারীর যা সম্বল, তা অসুরে শক্তি কেড়ে নিয়েছে। রঙিন জীবনের ভবিষ্যতের স্বপ্ন এখন আমার কাছে কুৎসিত অন্ধকার। বিষয়টি ভিকটিমের অবস্থান থেকে ভাবলে সবার বিবেক সাড়া দিবেই। সুবিচার পাওয়ার সান্ত্বনা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই আমি — একথা বলে বিষাদেও আশায় বুক বাঁধেন উৎপীড়িতা লিজা।

এক্ষেত্রে ন্যায়বিচারের প্রার্থনায় মোছা. লিজা আক্তার বাদী হয়ে কিশোরগঞ্জ জজ কোর্ট ১নং ট্রাইব্যুনালে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন আইন (সংশোধনী-২০০৩) এর ৯(১) ধারায় মামলা করেছেন। যার পিটিশন মোকদ্দমা নং ৭৬/২০২১।

মোকদ্দমার বিবরণে জানা যায়, একমাত্র আসামি একই উপজেলার ঢাকী ইউনিয়নের মামুদপুর গ্রামের মোঃ রইছ মিয়ার ছেলে মোঃ রুবেল মিয়া (২৩)। সে রাস্তাঘাটসহ যেখানে-সেখানে উত্যক্ত এবং কুপ্রস্তাব দিত লিজাকে। বিষয়টি লিজার পিতা মো. জিয়াউর রহমানকে জানালে তিনি রুবেলকে এ হীনতা থেকে বিরত থাকার অনুরোধের পটভূমিতে রুবেলের পিতা ও মুরব্বীরা এসে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।

এতে মেয়ে অপ্রাপ্তবয়স্কা বিবেচনায় পিতা জিয়াউর রহমান অসম্মতি জানালে পরবর্তীতে উভয়পক্ষের মুরব্বীরা মিলে সিদ্ধান্ত নেয় যে, মেয়ে প্রাপ্তবয়স্কা হলে বিয়ে সম্পন্ন হবে। তাতে ছেলের বাবা রইছ উদ্দিন মেয়ের সুখের কথা বলে তিন লাখ টাকার দাবির প্রেক্ষিতে দেড় লাখ টাকা অগ্রিম নিয়ে যায়। সেসঙ্গে দুটি স্ট্যাম্পেও সই নেওয়া হয়, যা লিজা ও তার বাবাকে পড়ে শোনানো হয়নি।

ঘটনার দিন বৃহস্পতিবার ১১ ফেব্রুয়ারি রুবেল মিয়া মেয়ের বাড়িতে আসলে সন্ধ্যা হয়ে যাওয়ায় মেয়ের পিতার সাধাতে সে থেকে যায়। রাত অনুমান ১০ টার সময় জরুরি কথা আছে বলে লিজাকে রুবেলের শয়নকক্ষে ডেকে নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরজবরে ধর্ষণ করে এবং জানাজানির এক পর্যায়ে লিজাকে বিয়ে করার কসম খায়। কিন্তু পুলিশের চাকরি পেয়ে রুবেল অন্য এক কচি নামের মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছে।

রুবেল মিয়ার বিরুদ্ধে যৌন নিগ্রহসহ শঠতা আর কপটতার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায় বিচারের আর্তি জানিয়ে লিজার পিতা মো. জিয়াউর রহমান বলেন, তার মেয়ে লিজার বিষম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া সত্ত্বেও স্থানীয় বিচারের নামে আসামিপক্ষ সময় পাড় করে ধোঁকা দিয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মো. রুবেল মিয়া (২৩) বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে চাকরি করেন। বর্তমানে সে ঢাকায় ডিএমপি পিওএম- দক্ষিণ বিভাগে (কং- ১০২০১) কর্মরত আছেন।

অভিযোগের ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে পুলিশ কনস্টেবল মো. রুবেল মিয়া বলেন,  মামলাটি মিথ্যা, সাজানো ও ভিত্তিহীন এবং অসৎ উদ্দেশ্য হাসিল করতে ফাঁসানোর জন্য করা।

চলতি বছরের ৫ মার্চ থেকে বিবাহিত। আনীত মামলার ভিকটিমের সাথে তার কোনো প্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই মন্তব্য করে তা মোকাবিলায় লম্বা হাতের সীমানা জানান দেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, প্রমাণ করুক না আমি তাতে জড়িত। দুই মাস পর কোনো আলামত কি থাকে? — উল্টো প্রশ্ন ছুড়েন পুলিশের এই সদস্য রুবেল মিয়া।

জনৈক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জানান, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় বাদী নিজস্ব কোনো আইনজীবী নিয়োগের প্রয়োজন নেই। ফৌজদারি কার্যবিধি ৪৯২ ধারা অনুযায়ী তিনি সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী পাবেন। তিনি মামলার সব তত্ত্বাবধান করবেন। যদি বাদী নিজে আইনজীবী নিয়োগ দিতে চান, তাহলে সেই আইনজীবী কাজ করবেন সরকারি আইনজীবীর অধীনে। সরকারের পক্ষ থেকে নিয়োগ দেওয়া আইনজীবী নিঃখরচায় আইনি সেবা দেবেন।

তিনি আরও জানান, বাদী যদি মামলা করতে অসমর্থ হন কিংবা কোনো হুমকির সম্মুখীন হন, তাহলে সরকারি খরচে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে প্রতি জেলায় রয়েছে লিগ্যাল এইড অফিস। তাছাড়া কয়েকটি মানবাধিকার সংগঠন রয়েছে যারা ভিকটিমকে সহযোগিতা করবে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে — জাতীয় মানবাধিকার সংস্থা, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড (ব্লাস্ট), আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), নারী নির্যাতন প্রতিরোধ সেল প্রভৃতি।

এদিকে অভিযুক্ত ব্যক্তি রুবেল মিয়া যদি আইনের ফাঁকফোকর গলিয়ে পার পেয়ে যায়, তবে অন্য আরও রুবেল লায় পাবে। এতে নৈতিক অবক্ষয়ের চোরা স্রোত আরও প্রবল বেগে ঢুকে পড়বে আমাদের হাওরপাড়ের পরিবারে, সমাজে, চিন্তা-মননে। এর চূড়ান্ত প্রকাশে সমাজে বিশেষ করে নারী সমাজ আরও বেশি অরক্ষিত হয়ে পড়বে যেমন, তেমনি ভেঙে পড়বে সমাজে প্রতিষ্ঠিত নিয়মনীতি ও শৃঙ্খলাবোধ — এমনিই শঙ্কা প্রকাশ করছেন এলাকার সচেতন জনগোষ্ঠী।

নারী ও শিশু নির্যাতনের এই মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) কিশোরগঞ্জ তদন্ত করছে।

সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।