হাওরে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যস্ত রাখতে ডিইও’র আহ্বান

রফিকুল ইসলামঃ আমাদের মনে রাখতে হবে, একজন শিক্ষক হিসেবে আমাদের দায়িত্ব কেবল শ্রেণিকক্ষে ক্লাস পরিচালনা করা আর খাতা দেখাই নয়; যে কোনো পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের পাশে থাকা।

গত শনিবার (১২ জুন) দুপুরে হঠাৎ কিশোরগঞ্জ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুন নাহার মাকছুদা হাওর উপজেলা মিঠামইনের ধলাই-বগাদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে এসে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে এ কথা বলেন।

তার পরিদর্শন সঙ্গীয়দের মধ্যে ছিলেন মিঠামইন উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার ও অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান ও জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের এ্যাসিস্টেন্ট প্রোগ্রামার মো. রূপজল হোসেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাকছুদা বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে সবকিছুই থমকে গেছে উল্লেখ করে  বলেন,  কিশোর বয়সী শিক্ষার্থীদের সব সময় কোনো না কোনো কাজে ও খেলাধুলায় ব্যস্ত রাখতে হয়। একটি প্রবাদই আছে — ‘অলস মস্তিষ্কে শয়তানের বাসা।’ তাই তাদের শিক্ষা কার্যক্রমে ব্যস্ত রাখতেই হবে।

তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা স্বভাবিক সময়ে বিদ্যালয়ে আসার জন্য প্রস্তুতি নিত, বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করত, ক্লাস করত, খেলাধুলা করত, বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি যেত। বর্তমানে এসব কাজ যখন বন্ধ তখন তাদের মাথায় ভর করবে রাজ্যের যত বাজে চিন্তা। এটা স্বভাবিক। শিশুরা তো শুধু শুধু বসে থাকতে পারে না, তাদের কিছু না কিছু করা চাই। এটা শিশুমনস্তত্ত্বের অংশও বটে।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আরও বলেন, গতবারের ১৭ মার্চ হতে এ পর্যন্ত ১৫ মাস সারাদেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রয়েছে। সংগত ও যৌক্তিক কারণেই বন্ধ রাখা হয়েছে। তা নিয়ে সব উন্নয়নশীল দেশই হিমশিম খাচ্ছে। এটা আমাদের জন্যও বিরাট এক চ্যালেঞ্জ।

সরকারের অনুসৃত পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের যুক্ত করে সকর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আস্থা আনতে হবে মন্তব্য করে তিনি জানান, মনে রাখতে হবে, সবক্ষেত্রেই ক্ষতি হয়ত একদিন পুষিয়ে নেওয়া যাবে, কিন্তু শিক্ষার ক্ষতি পোষাতে না পারলে অন্য ক্ষতি পুষিও লাভ হবে না।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুুন নাহার মাকছুদা উপস্থিত শিক্ষকমন্ডলীদের কাছ থেকে শিক্ষাকার্যক্রম সম্পর্কে অভিমত জানতে চাওয়া হলে শিক্ষকেরা বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও বড় ধরনের আঘাত এসেছে। তবে টেলিভিশন, অনলাইন, বেতার ও মুঠোফোনের মাধ্যমে পড়াশোনা চালু রাখতে নানা প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।

শিক্ষকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করে বললেন, কিন্তু এসব প্রক্রিয়া চালু রাখার পরও হাওর অঞ্চলের ভৌগোলিক অবস্থান ও অর্থনৈতিক দৈন্যতার প্রেক্ষাপটসহ নানান সীমাবদ্ধতার জন্য শিক্ষার্থীদের কাছে এই পদ্ধতিতে পৌঁছানো যাচ্ছে না। কেউ কেউ এন্ড্রয়েড মোবাইল হাতে পেয়ে তা অপব্যবহারের প্রবণতা অধিকাংশক্ষেত্রে হিতে বিপরীতও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অনাকাঙ্ক্ষিত যতসব বিষয়ে আসক্ত হয়ে নৈতিক মানদন্ড হারাচ্ছে।

অবশ্য শিক্ষকেরা এ্যাসাইনমেন্ট পদ্ধতিটি শিক্ষার্থীদের পাঠে কিছুটা হলেও মনোযোগী করছে উল্লেখ করে বলেন, এতে অনেকটা  সাড়াও মিলছে। তবে এ্যাসাইনমেন্ট মূল্যায়ন করতে গিয়ে বিরামচিহ্নসহ হুবহু মিল পরিলক্ষিত হলেও অন্তত কাজে ব্যস্ত রাখা যাচ্ছে। চর্চার তাগিদ তাড়া করে ফিরে শিক্ষার্থীদেরকে — এটা ভালো দিক।

প্রধান শিক্ষক বলেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের জ্যেষ্ঠপুত্র তিনবারের নির্বাচিত এমপি প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিকের বদান্যতায় অবকাঠামোসহ সার্বিক বিষয়ে আন্তরিক সহযোগিতায় এতদূর এগোতে পেরেছি এবং আশা করছি অচিরেই মাধ্যমিকে স্তর উন্নতির মাধ্যমে পর্যাপ্ত শিক্ষকও পাবো।

তিনি আরও জানান, ২০১১ সাল হতে এ পর্যন্ত নিজ প্রতিষ্ঠানের নামেই শিক্ষার্থীরা এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সাফল্যের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। করোনাকালে আমরা মাঝেমধ্যেই দূরদূরান্ত গ্রামে গিয়ে হোমভিজিট করছি।

প্রধান শিক্ষক সার্বিক বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার আন্তরিক সহযোগিতারও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামছুন নাহার মাকছুদা শিক্ষক-কর্মচারীদের সরব উপস্থিতি, শিক্ষাকার্যক্রে অগ্রগতি ও বিদ্যালয়ের পরিবেশ দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

পরে গোপদিঘী জিন্নাতুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শন শেষে বিকেলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ডিইও) ফিরে গেছেন বলে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মো. মিজানুর রহমান জানান।

 সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর