অনেক জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণ পেয়ে সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকায় আসতে রাজি হয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মোদির সফরসঙ্গী হিসেবে সীমান্তবর্তী অন্য তিন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর ঢাকায় আসার বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত থাকলেও মমতার বিষয়টি ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বহু প্রত্যাশিত তিস্তা চুক্তির বিষয়টি মমতার ওপরই নির্ভর করে। তবে মোদির সফরসঙ্গী হিসেবে ঢাকায় আসার জন্য ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা ও আসামের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ আমন্ত্রণপত্র পেয়েছেন।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিরোধীপূর্ণ সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে এই মুখ্যমন্ত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই ভারতের জাতীয় স্বার্থে বিরোধীদলীয় এই মুখ্যমন্ত্রীদের আমন্ত্রণ জানাতে ভুলেনি ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার। ২০১১ সালেও ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরকালে মমতা ব্যানার্জি ছাড়া সীমান্তবর্তী অন্য তিন মুখ্যমন্ত্রী এসেছিলেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগামী ৬ ও ৭ জুন ঢাকা সফর করবেন। তার সফরসূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে শেষ মুহূর্তে এই সূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আসতে পারে। আগামী ৬ জুন সকাল ১০টায় বিশেষ বিমানে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামবেন মোদি। সেখান থেকেই সরাসরি চলে যাবেন সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে। সেখানে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন। সাভার থেকে ফিরে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। দুপুরে হোটেলে মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী। এরপর হোটেল থেকে যাবেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। সেখানে একান্ত ও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে দু’দেশের মধ্যে চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ঢাকার বাইরে একাধিক প্রকল্পও উদ্বোধন করবেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এরমধ্যে ত্রিপুরা সীমান্তে একটি সীমান্ত হাটেরও উদ্বোধন করা হবে। রাতে সোনারগাঁও হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আয়োজনে নৈশভোজে অংশ নেবেন নরেন্দ্র মোদি।
সফরের শেষদিন সকালে নরেন্দ্র মোদি যাবেন পুরান ঢাকার ঢাকেশ্বরী মন্দিরে। সেখানে প্রার্থনায় অংশ নেবেন তিনি। এরপর যাবেন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে। বঙ্গভবনে তিনি ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর পক্ষে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা গ্রহণ করবেন। বারিধারায় কূটনৈতিক পাড়ায় ভারতের নতুন চ্যান্সারি ভবন উদ্বোধন করবেন। এরপর হোটেলে ফিরে বিরোধীদলীয় নেত্রী রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন নরেন্দ্র মোদি। হোটেল থেকে যাবেন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে। সেখানে বাংলাদেশের সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী, রাজনীতিক ও বিশিষ্টজনের উদ্দেশ্যে বক্তৃতা দেবেন। এখান থেকেই তার দিল্লি ফেরার কথা রয়েছে।