ঢাকা ০৩:৫২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৯ জানুয়ারী ২০২৫, ২৬ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ নেই আমার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৫:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ এপ্রিল ২০২১
  • ১৮০ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ২০ কাটা জমিতে ধান চাষ  করেছিলাম। জমি থেকে এক ছটাক ধান ঘরে তোলার আশা নেই। ঘরে খাবারও নেই। আত্মীয় বাড়ি থেকে ১০ কেজি চাউল দিয়েছিল আর মাত্র এক দিন চলবে। দোকানে গিয়েছিলাম কিছু বাজার করতে দোকানদার বাকি দিতে রাজি হয়নি। সে বলেছে জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে খেতে পাবে না, এখন তোমাকে বাকি দিলে পরে টাকা কোথায় থেকে দিবা। চার মেয়ে দুই ছেলে আমার। ঘরে গিয়ে সন্তানের মুখের দিকে তাকালে কান্নায় বুক পেটে যায়। তাদের কি খাওয়াবো? কি দিয়ে করব তাদের ভরণপোষণ? আর কি দিয়েই করব ঋণ পরিশোধ। বয়স হয়েছে, শরীরে শক্তি নেই। হাওরের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অন্যর বাড়িতে কাজ করারও কোনো সুযোগ নেই। দু-চোখে অন্ধকার দেখছি। আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই আমার। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বিকালে হাওরের জমিতে বসে এসব কথা বলে বিলাপ করে কান্না করছিলেন মদন উপজেলার গোবিন্দ্রশ্রী গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া। শুধু সে নয় তার মতো হাজার হাজার কৃষকের কান্নায় ভারী হয়ে যাচ্ছে নেত্রকোনার মদন উপজেলার হাওরাঞ্চল। তাদের মাঝে শুরু হয়েছে হাহাকার।

গত রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ দমকা গরম বাতাস। তিন থেকে চার ঘণ্টা স্থায়ী বাতাসে স্থানীয়দের মাঝে শুরু হয় এক ধরনের আতংক। গভীর রাতে বাতাস কমার পর আতংক কমে গেলেও সকালে উঠে কৃষকের মাথায় হাত। সূর্যের প্রখরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উঠতি বোরো ফসলের ধানের শীষ মরতে শুরু করে ক্ষেতের পর ক্ষেত, মাঠের পর মাঠ। হাওরে ২৮ জাতের ধানসহ কাটা শুরু হয়েছে বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধান। বেশির ভাগ জমির ধানই পাকতে শুরু করেছিল। এই সময়ে হাওর পাড়ের কৃষক-কৃষাণীরা কষ্টে ফলানোর সোনার ফসল ঘরে তুলতে অনেকেই ব্যস্ত সময় পার করতেন। কিন্তু এ বছর তাদের মাঝে শুরু হয়েছে শুধু হাহাকার। এদিকে ফসলের এমন ক্ষতির কারণ জানতে কৃষি বিভাগের একটি গবেষক দল মাঠে কাজ করছেন।

হাওরের বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ শুনে বাংলাদেশ সরকারের সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে মদন উপজেলার কয়েকটি হাওর পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকার কর্তৃক সব ধরনের সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, কয়েক মিনিটের গরম বাতাসে হাওরের এমন দুর্যোগ বয়স্ক লোকেরাও দেখেনি বা শুনেওনি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকবে সরকার। লগডাউনের পর আমি ঢাকা গিয়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে বলেন, অতি গরম আবহাওয়ায় এমনটা হয়েছে। ফুল আসা ধান সব চিটা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আছে, জরিপ শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে। হঠাৎ গরম বাতাসে বোরো ফসল নষ্ট হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য কৃষি বিভাগের একটি গবেষণা ইউনিট মাঠে কাজ করছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে পৌরসভাসহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে এবার ১৭ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তাদের তথ্যমতে প্রায় ৫০ ভাগ জমির ধানেই নষ্ট হয়ে গেছ কিন্তু কৃষকদের মতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি। পুরো হাওরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে আরো সময় লাগবে বলে জানান কৃষি বিভাগের লোকজন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনো পথ নেই আমার

আপডেট টাইম : ১০:০৫:০০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৭ এপ্রিল ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৩৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ২০ কাটা জমিতে ধান চাষ  করেছিলাম। জমি থেকে এক ছটাক ধান ঘরে তোলার আশা নেই। ঘরে খাবারও নেই। আত্মীয় বাড়ি থেকে ১০ কেজি চাউল দিয়েছিল আর মাত্র এক দিন চলবে। দোকানে গিয়েছিলাম কিছু বাজার করতে দোকানদার বাকি দিতে রাজি হয়নি। সে বলেছে জমির ফসল নষ্ট হয়ে গেছে খেতে পাবে না, এখন তোমাকে বাকি দিলে পরে টাকা কোথায় থেকে দিবা। চার মেয়ে দুই ছেলে আমার। ঘরে গিয়ে সন্তানের মুখের দিকে তাকালে কান্নায় বুক পেটে যায়। তাদের কি খাওয়াবো? কি দিয়ে করব তাদের ভরণপোষণ? আর কি দিয়েই করব ঋণ পরিশোধ। বয়স হয়েছে, শরীরে শক্তি নেই। হাওরের ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় অন্যর বাড়িতে কাজ করারও কোনো সুযোগ নেই। দু-চোখে অন্ধকার দেখছি। আত্মহত্যা করা ছাড়া আর কোনো পথ নেই আমার। মঙ্গলবার (৬ এপ্রিল) বিকালে হাওরের জমিতে বসে এসব কথা বলে বিলাপ করে কান্না করছিলেন মদন উপজেলার গোবিন্দ্রশ্রী গ্রামের কৃষক আবুল মিয়া। শুধু সে নয় তার মতো হাজার হাজার কৃষকের কান্নায় ভারী হয়ে যাচ্ছে নেত্রকোনার মদন উপজেলার হাওরাঞ্চল। তাদের মাঝে শুরু হয়েছে হাহাকার।

গত রবিবার সন্ধ্যায় হঠাৎ দমকা গরম বাতাস। তিন থেকে চার ঘণ্টা স্থায়ী বাতাসে স্থানীয়দের মাঝে শুরু হয় এক ধরনের আতংক। গভীর রাতে বাতাস কমার পর আতংক কমে গেলেও সকালে উঠে কৃষকের মাথায় হাত। সূর্যের প্রখরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উঠতি বোরো ফসলের ধানের শীষ মরতে শুরু করে ক্ষেতের পর ক্ষেত, মাঠের পর মাঠ। হাওরে ২৮ জাতের ধানসহ কাটা শুরু হয়েছে বিভিন্ন জাতের হাইব্রিড ধান। বেশির ভাগ জমির ধানই পাকতে শুরু করেছিল। এই সময়ে হাওর পাড়ের কৃষক-কৃষাণীরা কষ্টে ফলানোর সোনার ফসল ঘরে তুলতে অনেকেই ব্যস্ত সময় পার করতেন। কিন্তু এ বছর তাদের মাঝে শুরু হয়েছে শুধু হাহাকার। এদিকে ফসলের এমন ক্ষতির কারণ জানতে কৃষি বিভাগের একটি গবেষক দল মাঠে কাজ করছেন।

হাওরের বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সংবাদ শুনে বাংলাদেশ সরকারের সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে মদন উপজেলার কয়েকটি হাওর পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তিনি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সরকার কর্তৃক সব ধরনের সহযোগীতার আশ্বাস দিয়ে বলেন, কয়েক মিনিটের গরম বাতাসে হাওরের এমন দুর্যোগ বয়স্ক লোকেরাও দেখেনি বা শুনেওনি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকবে সরকার। লগডাউনের পর আমি ঢাকা গিয়ে কৃষিমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কথা বলব।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ হাবিবুর রহমান মদন উপজেলার বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে বলেন, অতি গরম আবহাওয়ায় এমনটা হয়েছে। ফুল আসা ধান সব চিটা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমাদের কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে আছে, জরিপ শেষে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা যাবে। হঠাৎ গরম বাতাসে বোরো ফসল নষ্ট হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য কৃষি বিভাগের একটি গবেষণা ইউনিট মাঠে কাজ করছে।

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, চলতি বোরো মৌসুমে পৌরসভাসহ উপজেলার ৮ ইউনিয়নে এবার ১৭ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। তাদের তথ্যমতে প্রায় ৫০ ভাগ জমির ধানেই নষ্ট হয়ে গেছ কিন্তু কৃষকদের মতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো অনেক বেশি। পুরো হাওরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে আরো সময় লাগবে বলে জানান কৃষি বিভাগের লোকজন।