অর্থবছরের প্রথম আট মাস কৃষক ঋণ নেন কম শোধ করেন বেশি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের কৃষক যে পরিমাণ নতুন ঋণ নিচ্ছেন, এর চেয়ে বেশি পরিমাণে পুরোনো ঋণ পরিশোধ করছেন। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) ১৬ হাজার ১৮০ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণ করা হয়েছে।

আগের অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল ১৫ হাজার ৯২ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরে ঋণ বিতরণ ১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা বেড়েছে। শুধু ঋণ বিতরণই বাড়েনি, আদায়ের পরিমাণও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কৃষক ১৭ হাজার ৪৯২ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছেন। আগের অর্থবছরের একই সময়ে তারা ১৫ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করেছিলেন। অর্থাৎ তারা এক বছরে ১ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা বেশি পরিশোধ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ বিভাগ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, ঋণ পরিশোধে যে ছাড় ছিল, কৃষকরা তা গ্রহণ করেননি। প্রণোদনার ঋণ পাওয়ায় তাদের হাতে উদ্বৃত্ত টাকা চলে গেছে। এ সুযোগে অনেক কৃষক ঋণ পরিশোধ করেন। এর ফলে কৃষি খাতে ঋণ বিতরণের তুলনায় পরিশোধের পরিমাণ বেশি হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে ব্যাংক খাতে ২৬ হাজার ২৯২ কোটি টাকার কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬১ দশমিক ৫৪ শতাংশ বা ১৬ হাজার ১৮০ কোটি ৮২ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। আগের অর্থবছরের মোট ২৪ হাজার ১২৪ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রথম আট মাসে বিতরণ হয়েছিল ১৫ হাজার ৯২ কোটি ১৭ লাখ টাকা বা ৬২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কৃষি খাতে মোট বিতরণ হওয়া ঋণের মধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে প্রায় ৭ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। আর বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো বিতরণ করেছে প্রায় ৮ হাজার ৮৪৯ কোটি টাকা।

বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ১১ হাজার ৪৫ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করবে। ইতোমধ্যে সরকারি ব্যাংকগুলো লক্ষ্যমাত্রার ৬৬ দশমিক ৩৮ শতাংশ বিতরণ করেছে। আর বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকগুলো ১৫ হাজার ২৪৭ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করলেও বিতরণ করেছে ৫৮ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। কৃষিখাতে বিতরণ করা ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে শস্য খাতে ৮ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এরপর পশু ও পোলট্রি ফার্মে ২ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে কয়েকটি ব্যাংক ঋণ বিতরণের বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি অবস্থান করছে। এরমধ্যে বিডিবিএল লক্ষ্যমাত্রার ৯৪ দশমিক ৪৭ শতাংশ, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ৭২ দশমিক ৭৯ শতাংশ ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক ৭২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বিতরণ করেছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার ২০ শতাংশও বিতরণ করতে পারেনি কিছু ব্যাংক। দেশি-বিদেশি খাতের এসব ব্যাংকের এ সমস্যা দীর্ঘদিনের।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের (বিকেবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী হোসেন প্রধানিয়া যুগান্তরকে বলেন, কৃষি ঋণের আদায় সবসময়ই ভালো। প্রকৃত কৃষক কখনো খেলাপি হন না, যদি না প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয়ে পড়েন। কৃষি ব্যাংকের আদায় ভালো হচ্ছে। ঋণ বিতরণও চোখে পড়ার মতো। তিনি বলেন, প্রণোদনা ছাড়াও নিয়মিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এগিয়ে থাকবে কৃষি ব্যাংক।

করোনাভাইরাসের কারণে গত বছরের এপ্রিলে কৃষকদের জন্য দেওয়া প্রণোদনা প্যাকেজের সুদ হার কমিয়ে ৪ শতাংশে নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকও কৃষকদের চলতি মূলধন দেওয়ার জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার পুনঃঅর্থায়ন তহবিল গঠন করে। অবশ্য কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা সব ঋণের সুদই এখন ৪ শতাংশ। বর্তমানে ব্যাংক খাতে কৃষিঋণের পরিমাণ ৪৫ হাজার ৫৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত খেলাপি হয়েছে ৪ হাজার ৩৮২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এর মধ্যে সরকারি আট ব্যাংকের ৪ হাজার ৯১ কোটি টাকা এবং সব বেসরকারি ও বিদেশি ব্যাংকে ২৯১ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর