শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলতে পারে ঈদের পর

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পবিত্র শবে বরাতের ছুটি ২৯ মার্চের পরিবর্তে ৩০ মার্চ নির্ধারণ করেছে সরকার। ফলে ঘোষণা অনুযায়ী আগামী ৩০ মার্চ খুলছে না শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্বনির্ধারিত তারিখে স্কুল-কলেজ খোলার কোনো সুযোগ নেই। এছাড়াও করোনা প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ফের বাড়তে পারে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগামী ৩০ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত থাকলেও সেদিন শবে বরাতের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কারণে সেদিন স্কুল-কলেজ খোলা হবে না।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে দু-একদিনের মধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালকের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। ৩০ মার্চ ছুটি ঘোষণা করে মাউশিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে বলা হবে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত পিছিয়ে দেয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার কথাটি আগে বিবেচনা করে স্কুল-কলেজ খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ পবিত্র ঈদুল ফিতর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটির ঘোষণা দেয়া হতে পারে বলে জানান তারা।

তবে এ প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, অনেকেই অনেক রকম কথা বলছেন। কিন্তু বিষয়টি অনুমান নির্ভর। আমরা আগের সিদ্ধান্তেই এখনো রয়েছি। যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয় তবে তা জানিয়ে দেয়া হবে।

ছুটি বাড়ানোর বিষয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।’ দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিষয়ে ঘোষণা দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।

সোনিয়া সুলতানা নামের এক অভিভাবক বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, এখনই দেশের সব হাসপাতালের আইসিইউ বেড পূর্ণ হয়ে গেছে। এ অবস্থায় আমার বাচ্চার যদি কিছু হয় তবে তো পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের সুযোগ পাবো না। এরমধ্যে বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানো অসম্ভব।

অভিভাবক জাকিয়া রহমান জানান, করোনা সংক্রমণের হার যখন ২ শতাংশের কাছাকাছি ছিলো তখন স্কুল খোলা হলো না। এখন সংক্রমণের হার ১৪ এর বেশি পাশাপাশি প্রতিদিন সংক্রমণ-মৃত্যু বাড়ছে। এ অবস্থায় সরকারের উচিত স্কুল খোলার বিষয়ে পুনরায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।

সাইদুল ইসলাম নামের এক অভিভাবক বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সরকার ১০০ জনের বেশি গণজমায়েত নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা কীভাবে সম্ভব বলে প্রশ্ন করেন তিনি।

এর আগে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি জানিয়েছিলেন ৩০ মার্চ স্কুল-কলেজ খুলে দেয়া হবে। তখন শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হলেও প্রাক-প্রাথমিক খুলছে না। এ বিষয়ে পরে জানিয়ে দেয়া হবে। পঞ্চম, দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন ক্লাস নেয়া হবে। অন্যান্য ক্লাসের শিক্ষার্থীদের সপ্তাহে একদিন ক্লাস নেয়া হবে। পর্যায়ক্রমে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে।

এরপরই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর ও মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর স্কুল খুলতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দেয়। ফলে দীর্ঘদিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা স্কুল-কলেজ সংস্কারের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর স্কুল-কলেজ খোলার আগে শিক্ষকদের টিকা গ্রহণ বাধ্যতামূলক করে দুই মন্ত্রণালয়। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী প্রায় ৮৫ শতাংশ শিক্ষক করোনা টিকার আওতায় এসেছে বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।

কিন্তু সম্প্রতি করোনা সংক্রমণের হার ও মৃত্যু বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে জনমনে আবারও প্রশ্ন উঠেছে। এরই মধ্যে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেন, স্কুল-কলেজ খোলা হলে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।

এর মাঝে গত ২২ মার্চ ঢাকা শিক্ষাবোর্ড ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম পূরণ কার্যক্রমের ঘোষণা দিয়েছে। এবার এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের কোনো ধরনের নির্বাচনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে না বলেও শিক্ষাবোর্ড থেকে জানিয়ে দেয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর