ঢাকা ০৪:৩৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জনি,মনি,আমি -তিন ভুবনের বাসিন্দা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৫২:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ মার্চ ২০২১
  • ২৭০ বার
ড. গোলসান আরা বেগমঃ ছোট বেলার বান্ধবী জনি,রনি,আমি। একই স্কুলে প্রাইমারী শিক্ষা নিয়েছি। এক আত্মা, মন, বন্ধুত্বের বন্ধনে ছিলাম আবদ্ধ। একদিন দেখা না হলে পেটের ভাত হজম হতো না। সবাই বলতো ত্রিরত্ন।
 চোখের জল গড়িয়ে পড়তো আমাদের কারো অসুখ বিসুখ হলে। পড়া লেখার প্রতিযোগিতায়ও ছিলাম অগ্রগামী।মা বলতো তোদেরকে এক বরের সাথে বিয়ে দিতে হবে। না হয়,তোরা মরে যাবি। হায়রে শিশু বয়সের অন্তরিকতা।আজো ভুলতে পারি না।
তিন জনই পায়ে হেঁটে গ্রামের আলপথ বেয়ে গল্প করতে করতে পৌঁছে যেতাম স্কুলে। প্রথম বেঞ্চে বসার জায়গা না পেলে মন খারাপ হতো। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে কার আগে কে,কোন পড়া,কবিতা,অংক শেষ করবো– এই ছিলো তুমুল প্রতিযোগিতা।ঝড় বৃস্টি হলেও স্কুল মিস করতাম না।
জনি বরাবরই ক্লাশে প্রথম হতো। আমি তৃতীয়। মনি টেনেটুনে ক্লাশ পাড়ি দিতো। আমাদের তিন জনের মধ্যেই বন্ধুত্বের গভীরতা থাকলেও  পড়ালেখার নানা প্রতিযোগিতা, মিল, গড়মিল ছিলো প্রচুর।
জনি, যেমন ছিলো বুদ্ধমতী,মেধাবী, তেমনি ছিলো অপরুপ সুন্দরী। গায়ের রংছিলো দুধে আলতায় মেশা নো টসটসে কমলার মত। বিয়ের বয়স না হলেও,বাবা মা ঘটকের যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারতো না। আজকে এখান থেকে, কালকে ওখান থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতেই থাকতো।
বাড়ীতে ছিলো লজিং মাস্টার।সেও চোখ ঘুরাতো নানা কায়দার জনির চোখে।নাবালিকা মেয়েটি কি করবে বুঝে ওঠতে পারতো না।
জনির বাবা মা অধিক সন্তানের জন্ম দিয়ে আছে মুসিবতে। সব সন্তানের নানা  চাহিদা পূরণ করতে চাইলেও পারে না। অসুখ বিসুখ তো কারো না কারো সারা বছর লেগেই থাকে।
পড়ার খরচ বহন করতে করতে নাভিশ্বাস ওঠে যায় জনির বাবার। সংসারের ঘানি টানতে থাকে চোখ বুজে। নিজে না খেয়ে হলেও সন্তানের সাধ আহ্বলাদ পুরণে থাকে মহা ব্যস্ত।
একবার আচমকা জনির বাবর সংসারে নেমে এলো অকল্পনীয় দূর্ঘটনা। পাঁচটি সন্তান জন্ম দেয়ার পর, ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে গ্রাম্য হাতুরে ডাক্তারের হাতে  জনির মা মারা যায়। পাঁচ সন্তানের সংসার টানবে কে?
জনি বড় সন্তান। তাকেই পড়া লেখার পাশাপাশি হাত পুড়ে ভাত রেধেঁ সংসারের হাল ধরতে হয়।
না এভাবে চলে না। সংসারে আসে সৎ মা। ওঠে সংসারের হাড়িপাতিলে নানা ঝড় তুফান। ভীষন সংকটের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয় পরিবারটিকে। উপায় খুঁজতে থাকে সমাধানের।
অনেক হিসেব নিকেশের পর জনিকে লজিং মাস্টারের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়,সংসারের বোঝা কমাতে। কি আরা করা ৫ ম শ্রেণি অতিক্রম করতে না করতেই সংসারের বোঝা জনির  ঘাড়ে ওঠে। পেটে আসে সন্তান। আরেক ধরনের স্বপ্নে রাঙা ও আনন্দে ভরা অনুভুতি কল্পনায় ভাসতে থাকে। এদিকে সৎ মা স্বামীকে নিয়ে আলাদা হয়ে যায়।জনির ভাই বোনদের জলে ভাসিয়ে দিয়ে।
কি আর করা, জনির স্বামী স্কুল মাস্টার পাঁচ জন সালা সালিদের দায়িত্ব ঘাড়ে তুলে নেয়।। জনি তার খালার কাছে শুনে এসেছে সংসার ছোট রাখলে আয় বরখত বেশী থাকে। কিন্তু জনির স্বামী তা মানতে নারাজ। আল্লাহ মুখ দিলে আঁধার দিবে। তিনটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দিতে পারলে বেহেশত কনর্ফাম হয়ে যাবে। আশা অপূর্ণ থাকেনি।জনির  পেটে পর পারই  তিনটি মেয়ে সন্তান জন্মেছে।ছেলে সন্তানের সাধও পূর্ণ হয়েছে।
শালা শালি ও নিজের সন্তান সহ বার জনের সংসারের ঘানি টানতে থাকে জনি। স্বামীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে, এক সময় জনিও হয়ে যায় পাঁচ ছয় সন্তানের জননী। তার স্বামী হয় ঘর জামাই,অজঁপাড়া গ্রামের বাসিন্তা। জনি হাত পুড়ে ভাত রাঁধে, মসলা পিষে,হাড়িপাতিলে সুখ ছড়ায়, সুখের নুন ভাত তুলে দেয় সবার পাতে। পাতিল মুছা তলানি কিছু থাকলে  খায়, না হয় খালি পেটে পার করে দিন।জনির প্রখর মেধার মৃত্যু এভাবেই ঘটে। হয়ে ওঠে পুরোপুরি গৃহিনী। এবার আসি আর এক বান্ধবীর গালগপ্পে।
মনি নামের বান্ধবীটি ছিলো বাবার এক মাত্র সন্তান। পড়া লেখায় বেশী মন বসতো না। তার বাবার বিরাট অর্থ সম্পদের মালিক ভবিষ্যতে মনিই হবে। চাচাতো,ফুফাত, খালাত বা আশপড়শি ছেলেরা মনিকে বিয়ে করার জন্য শকুনের চোখ বাড়িয়ে রাখতো। কারন বিয়ে করতে পারলে রানী এবং রাজত্ব দুটোই পাবে হাতেন মুঠোয়। এ সুযোগ কি হাত ছাড়া করা যায়?
বাবা মা মেয়েটিকে মাথায় রাখবে, না বুকের ঘরে লুকিয়ে রাখরে ভেবে পায় না। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে। মেয়েটিকে নিয়ে নানা দুশ্চিন্তায় মা বাবার ঘুম আসে না।
স্কুলে গেলে ছেলেরা পিছু লাগে। আজে বাজে মন্তব্য করে, প্রেমের চিঠি গায়ে ছুঁরে মারে, কেউ দেয় বাঁশির সুরে ফ্লায়িং কিস। বাধ্যরা হয়েই স্কতেুলে যাওয় ও পড়াশোনা ছেড়ে দেয়।রাতে অযতাই ঘরের চালে টিল ছুরে। পুকুরে গোসল করেত গেলে, সেখানেও জটলা পাকায়।
সে যেন হয়ে গেছে দুর্লভ বস্তু। ঘণ ঘণ বাড়িতে ঘটক পাঠায়।বিয়ে না দিলে জোড় করে ওঠিয়ে নিয়ে যাবে।মুখে এসিড মারবে। আরো কতো বিড়ম্বনাহীন বিড়ম্বনা।
মনির বিয়েকে কেন্দ্র করে আত্মীয় স্বজনদেন মধ্যে তিক্ততা চড়িয়ে পড়ে।মুখ দেখা দেখি বন্ধ হয়ে যায়।
কার কাছে বিয়ে দিবে। কাউকে মনির পছন্দ হয় না। দশ গ্রাম দুরে বিয়ে দিবে, তাও সম্ভব হবে না। একবার মেয়েকে নিয়ে যায় মা বাবা,মেয়েটির মামার বাড়ীতে। ওখানে রেখে  বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পড়া লেখা তো গোল্লায় চলে যায়।মামার রয়েছে একটি প্রতিবন্ধি ছেলে, কানে শুনে না,কথাও বলতে পারে না। সেই ছেলের সাথেই মামা মনিকে বিয়ে দিতে চায়। মনি রাজী হয় না বলে ঘরে আটকে রাখে।
মনির মা বাবাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে রাজী করায়। শহরে যায় বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজী ডাকতে মামা। মামীকে হাতে পায়ে ধরে রাজী করিয়ে ঘরের তালা খুলে, মনি যায় প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে বাড়ীর পেছনের জঙ্গলে। সেখান থেকেই দৌড়াতে দৌড়াতে চলে আসে বান্ধবী জনির বাড়ীতে।
বান্ধবীর স্বামী মনি কে আত্ম রক্ষার্তে নানা পরামর্শ দিতে থাকে। মনির নিজস্ব বিবেক বোধও খোলতে শুরু করে। তার শুভাকাঙ্খিদের পরামর্শে ৯৯৯ এ ফোন করে সরকারের সাহায্য প্রার্থী হয়। অতঃপর পাল্টে যায় তার জীবন প্রণালী।
যত চামচিকে,টিকটিকি এগিয়ে এসেছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, পালিয়ে গেল দুই কান ধরে ৯৯৯ এর ভয়ে। প্রাইমারী, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপনীর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখে পা। নিজের মেরুদন্ড সোজা করে কৃষকের অসহায় মেয়েটি হয়ে ওঠে সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। বহু বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে নিজেকে করে সুখের ফুলদানীতে প্রতিষ্টিত। মেয়েদের ওঠতে দোষ, চলতে,কথা বলতে,অন্তহীন দোষ। কেউ নারী জাতিকে সচারাচর সোজা চোখে দেখতে চায় না। নারীর  খ্যাতি বাহবা কিচ্ছু পছন্দ করে না।
মা,খালা,ফুফু,বোন,ভাবী সবাইকে দেখেছি আঁচলে চোখ  মুছে ও বোকার হাসি ঠোটে তুলে সংসার করতে। মনি তাদের মত নয়। পাথরে ঘষে কপাল করেছে উন্নত, বাহু তর্জনী শক্তশালী। তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে সকল প্রতিবন্ধকতা। মা বাবাকে সোনার স্বর্ণালী সুখের পালঙ্খে শুইয়ে, দিয়েছে জীবনের পরিপুর্ণতা। স্বামী,সন্তান,মা বাবাকে নিয়ে সাজিয়েছে ঢাকা শহরে স্তায়ী আস্থানা। বুঝতে ও মানতে হবে নারীরা ইচ্ছে করলে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে। জনি ব্যর্থ হয়নি।
ত্রিভুবনের তিন বাসিন্দার মেলায় আমারও কিছু বলা দরকার। আমার বাবা চেয়েছিলো তাঁর কালো মেয়েটিকে ডাক্তার বানাতে। স্বপ্নে বিভোর ছিলো। না তা পারলাম না। ২০২০ সালে জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে হয়েছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট ডিগ্রি ধারী। চুড়ান্ত ভাইভা বোর্ড আমাকে জিঙ্গেস করেছিলো- জীবনের প্রায় শেষ অধ্যায়ে এই ডিগ্রি দিয়ে কি করবেন। কিছুই না।তবে মানুষিক তৃপ্তি পাবো। পরবর্তী প্রজন্ম গর্ব করে বলতে পারে আমি পিএইচডি হোল্ডার ছিলাম। কয় গ্রাম ঘুরে আপনি পাবেন এমন শিক্ষিত ও সচেতন নারী।
অজো পাড়া গায়ে জন্ম নেয়া আমি , দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করে হয়েছি ঢাকা শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। গ্রামে বসবাস রত অবস্থায় এসএসসি অধ্যায়ের পাঠ চুকিয়েছি। রাত দিন এতো বেশী পড়াশুনা করতাম যা ছিলো কল্পনাতিত। আত্ম বিশ্বাস ছিলো  – -পড়ালেখা ছাড়া ভাগ্যের চাকা ঘুরানো যাবে না। তাই পড়া পড়া পড়া এই তপস্যায় ছিলাম সর্বদা নিবেদিত। আল্লাহও মুখ তুলে তাকিয়েছিলো বলেই, আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি।
 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাবল মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছি। হয়েছি একটি এমপিও ভুক্ত বেসরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। কলেজটি গড়ে তুল তে বাইশ বছর সময় হারিয়েছি আমার জীবন যৌবন থেকে। ছোট ছোট সন্তাদের বঞ্চিত করেছি স্নেহ আদর থেকে। তাদেরকে ঢাকায় রেখে কলেজের সেবায় পড়ে থাকতাম মফস্বল শহরে। আমার সোনার সন্তারা লাইন চুত্য হয়নি,বরং উজ্জল নক্ষত্রের মত হয়েছে সোনার মানুষ।
বাংলাদেশ কৃষকলীগ,কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা সদস্য। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্যদের সিনেট সদস্য। লেখক হিসেবে জন্ম দিয়েছি২০ টা বইয়ের। বিচরন করেছি গদ্যে,পদ্যে,প্রবন্ধে,নিবন্ধে। শিক্ষাবিদ,সমাজ সেবক,কলেজ নির্মাতা, গর্ববতী মা,সমাজ সংস্কারক ইত্যাদি বহুবিদ অধ্যায়ে পেয়েছি সন্মাননা,পদক, শুভেচ্ছা স্মারক,রাষ্ট্রীয় জয়িতা পুরস্কার ইত্যাদি বহু কৃতিত্বের অংশিদার। বাংলাদেশ টিভি ও বেতারের স্বরচিত কবিতা আবৃতিকার,বেতারের নিবন্ধিত গীতিকার। আমি তো স্বপ্নেও ভাবি নাই এতো বেশী অগ্রসর হবে আমার পথ চলা।
দার্শনিক বার্টান রাসেল বলেছিলেন — যে কোন টেনশান থেকে মুক্তি পেতে হলে, নিজস্ব জগৎ তৈরী করতে হবে।আমি নামাজে বসে আল্লাহকে বলতাম আমাকে এমন একটা পরিবেশ দাও,আমি যেন কাজ করতে করতে আকাশ দেখার সুযোগ না পাই। এ কারনেই রাজপথের মিছিলে, নারী সমাজের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে, সভা সেমিনারে, মানব বন্ধনে, জায় বাংলা স্লোগান ও বঙ্গবন্ধুর চেতনার ধারক বাহক, সমাজের কল্যাণে বহু অঙ্গনে  কাজ করতে করতে কখন যে একষট্টিতে এসে দাঁড়িয়েছি তা টের পেলাম না।তবে অলস সময় বৃথা কাজে ব্যয় করিনি সে আমার বড় শান্তনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করে ছয় মাসের ছেলে সন্তান কোলে নিয়ে সংসারে যে দিন ঢোকে ছিলাম। বইগুলো ছুরে ফেলে দিয়ে বলেছিলাম-আর পড়ালেখার ধারে কাছেও যাবো না।কিন্তু পারলাম কই। বই,খাতা,কলম আমায় মুক্তি দিলো না। এখনও ঘুরছি সে অঙ্গনে। জানি না এর শেষ কোথায় হবে।
 শুধু আমি না, আমরা পাঁচ ভাই বোন ছিলাম অত্যান্ত মেধাবী। বাবা তাঁর নিজের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে, সব জমা জমি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সব অর্থই আমাদের পড়ার পেছনে ব্যয় করেছিলেন। আমরাও পথ চলায় ভুল করিনি। মানবীয়,স্বনাম ধন্য হওয়ার চেষ্টা করেছি। মা বাবা তোমাদের হাজারও সালাম।
এর পর এসে দায়িত্বের হাত বাড়িয়ে দাঁড়ায় বড় ভাই। বাবা মা চার ভাইবোনকেই নিয়ে আসেন ঢাকায়। পড়াশুনা,বোনদের বিয়ে,ভাইদের পড়ালেখা,মা বাবা সমস্ত গুরু দায়িত্বই বহন করেন।এমন ভাই কারো ভাগ্যে জুটেছে কি না সন্দেহ।দুহাত তুলে বার বার সেই ভাইয়ের জন্য করি শুকরিয়া আদায়।
শিশু বয়সের তিন বন্ধবী কে কোথায়, কেমন আছি জানি না।দেখাও হয় না। জীবনের সমাপ্তি টানার পূর্বে আদৌ দেখা হয় কি না সন্দেহ। হায় জীবন, সময়,বাস্তবতা এতো অবুঝ নিষ্ঠুর কেন?
Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনি,মনি,আমি -তিন ভুবনের বাসিন্দা

আপডেট টাইম : ০৯:৫২:২২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২২ মার্চ ২০২১
ড. গোলসান আরা বেগমঃ ছোট বেলার বান্ধবী জনি,রনি,আমি। একই স্কুলে প্রাইমারী শিক্ষা নিয়েছি। এক আত্মা, মন, বন্ধুত্বের বন্ধনে ছিলাম আবদ্ধ। একদিন দেখা না হলে পেটের ভাত হজম হতো না। সবাই বলতো ত্রিরত্ন।
 চোখের জল গড়িয়ে পড়তো আমাদের কারো অসুখ বিসুখ হলে। পড়া লেখার প্রতিযোগিতায়ও ছিলাম অগ্রগামী।মা বলতো তোদেরকে এক বরের সাথে বিয়ে দিতে হবে। না হয়,তোরা মরে যাবি। হায়রে শিশু বয়সের অন্তরিকতা।আজো ভুলতে পারি না।
তিন জনই পায়ে হেঁটে গ্রামের আলপথ বেয়ে গল্প করতে করতে পৌঁছে যেতাম স্কুলে। প্রথম বেঞ্চে বসার জায়গা না পেলে মন খারাপ হতো। গভীর রাত পর্যন্ত জেগে কার আগে কে,কোন পড়া,কবিতা,অংক শেষ করবো– এই ছিলো তুমুল প্রতিযোগিতা।ঝড় বৃস্টি হলেও স্কুল মিস করতাম না।
জনি বরাবরই ক্লাশে প্রথম হতো। আমি তৃতীয়। মনি টেনেটুনে ক্লাশ পাড়ি দিতো। আমাদের তিন জনের মধ্যেই বন্ধুত্বের গভীরতা থাকলেও  পড়ালেখার নানা প্রতিযোগিতা, মিল, গড়মিল ছিলো প্রচুর।
জনি, যেমন ছিলো বুদ্ধমতী,মেধাবী, তেমনি ছিলো অপরুপ সুন্দরী। গায়ের রংছিলো দুধে আলতায় মেশা নো টসটসে কমলার মত। বিয়ের বয়স না হলেও,বাবা মা ঘটকের যন্ত্রনায় ঘুমাতে পারতো না। আজকে এখান থেকে, কালকে ওখান থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতেই থাকতো।
বাড়ীতে ছিলো লজিং মাস্টার।সেও চোখ ঘুরাতো নানা কায়দার জনির চোখে।নাবালিকা মেয়েটি কি করবে বুঝে ওঠতে পারতো না।
জনির বাবা মা অধিক সন্তানের জন্ম দিয়ে আছে মুসিবতে। সব সন্তানের নানা  চাহিদা পূরণ করতে চাইলেও পারে না। অসুখ বিসুখ তো কারো না কারো সারা বছর লেগেই থাকে।
পড়ার খরচ বহন করতে করতে নাভিশ্বাস ওঠে যায় জনির বাবার। সংসারের ঘানি টানতে থাকে চোখ বুজে। নিজে না খেয়ে হলেও সন্তানের সাধ আহ্বলাদ পুরণে থাকে মহা ব্যস্ত।
একবার আচমকা জনির বাবর সংসারে নেমে এলো অকল্পনীয় দূর্ঘটনা। পাঁচটি সন্তান জন্ম দেয়ার পর, ষষ্ঠ সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে গ্রাম্য হাতুরে ডাক্তারের হাতে  জনির মা মারা যায়। পাঁচ সন্তানের সংসার টানবে কে?
জনি বড় সন্তান। তাকেই পড়া লেখার পাশাপাশি হাত পুড়ে ভাত রেধেঁ সংসারের হাল ধরতে হয়।
না এভাবে চলে না। সংসারে আসে সৎ মা। ওঠে সংসারের হাড়িপাতিলে নানা ঝড় তুফান। ভীষন সংকটের মুখোমুখি দাঁড়াতে হয় পরিবারটিকে। উপায় খুঁজতে থাকে সমাধানের।
অনেক হিসেব নিকেশের পর জনিকে লজিং মাস্টারের সাথে বিয়ে দিয়ে দেয়,সংসারের বোঝা কমাতে। কি আরা করা ৫ ম শ্রেণি অতিক্রম করতে না করতেই সংসারের বোঝা জনির  ঘাড়ে ওঠে। পেটে আসে সন্তান। আরেক ধরনের স্বপ্নে রাঙা ও আনন্দে ভরা অনুভুতি কল্পনায় ভাসতে থাকে। এদিকে সৎ মা স্বামীকে নিয়ে আলাদা হয়ে যায়।জনির ভাই বোনদের জলে ভাসিয়ে দিয়ে।
কি আর করা, জনির স্বামী স্কুল মাস্টার পাঁচ জন সালা সালিদের দায়িত্ব ঘাড়ে তুলে নেয়।। জনি তার খালার কাছে শুনে এসেছে সংসার ছোট রাখলে আয় বরখত বেশী থাকে। কিন্তু জনির স্বামী তা মানতে নারাজ। আল্লাহ মুখ দিলে আঁধার দিবে। তিনটি মেয়ে সন্তানের জন্ম দিতে পারলে বেহেশত কনর্ফাম হয়ে যাবে। আশা অপূর্ণ থাকেনি।জনির  পেটে পর পারই  তিনটি মেয়ে সন্তান জন্মেছে।ছেলে সন্তানের সাধও পূর্ণ হয়েছে।
শালা শালি ও নিজের সন্তান সহ বার জনের সংসারের ঘানি টানতে থাকে জনি। স্বামীর সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে, এক সময় জনিও হয়ে যায় পাঁচ ছয় সন্তানের জননী। তার স্বামী হয় ঘর জামাই,অজঁপাড়া গ্রামের বাসিন্তা। জনি হাত পুড়ে ভাত রাঁধে, মসলা পিষে,হাড়িপাতিলে সুখ ছড়ায়, সুখের নুন ভাত তুলে দেয় সবার পাতে। পাতিল মুছা তলানি কিছু থাকলে  খায়, না হয় খালি পেটে পার করে দিন।জনির প্রখর মেধার মৃত্যু এভাবেই ঘটে। হয়ে ওঠে পুরোপুরি গৃহিনী। এবার আসি আর এক বান্ধবীর গালগপ্পে।
মনি নামের বান্ধবীটি ছিলো বাবার এক মাত্র সন্তান। পড়া লেখায় বেশী মন বসতো না। তার বাবার বিরাট অর্থ সম্পদের মালিক ভবিষ্যতে মনিই হবে। চাচাতো,ফুফাত, খালাত বা আশপড়শি ছেলেরা মনিকে বিয়ে করার জন্য শকুনের চোখ বাড়িয়ে রাখতো। কারন বিয়ে করতে পারলে রানী এবং রাজত্ব দুটোই পাবে হাতেন মুঠোয়। এ সুযোগ কি হাত ছাড়া করা যায়?
বাবা মা মেয়েটিকে মাথায় রাখবে, না বুকের ঘরে লুকিয়ে রাখরে ভেবে পায় না। সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখে। মেয়েটিকে নিয়ে নানা দুশ্চিন্তায় মা বাবার ঘুম আসে না।
স্কুলে গেলে ছেলেরা পিছু লাগে। আজে বাজে মন্তব্য করে, প্রেমের চিঠি গায়ে ছুঁরে মারে, কেউ দেয় বাঁশির সুরে ফ্লায়িং কিস। বাধ্যরা হয়েই স্কতেুলে যাওয় ও পড়াশোনা ছেড়ে দেয়।রাতে অযতাই ঘরের চালে টিল ছুরে। পুকুরে গোসল করেত গেলে, সেখানেও জটলা পাকায়।
সে যেন হয়ে গেছে দুর্লভ বস্তু। ঘণ ঘণ বাড়িতে ঘটক পাঠায়।বিয়ে না দিলে জোড় করে ওঠিয়ে নিয়ে যাবে।মুখে এসিড মারবে। আরো কতো বিড়ম্বনাহীন বিড়ম্বনা।
মনির বিয়েকে কেন্দ্র করে আত্মীয় স্বজনদেন মধ্যে তিক্ততা চড়িয়ে পড়ে।মুখ দেখা দেখি বন্ধ হয়ে যায়।
কার কাছে বিয়ে দিবে। কাউকে মনির পছন্দ হয় না। দশ গ্রাম দুরে বিয়ে দিবে, তাও সম্ভব হবে না। একবার মেয়েকে নিয়ে যায় মা বাবা,মেয়েটির মামার বাড়ীতে। ওখানে রেখে  বিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পড়া লেখা তো গোল্লায় চলে যায়।মামার রয়েছে একটি প্রতিবন্ধি ছেলে, কানে শুনে না,কথাও বলতে পারে না। সেই ছেলের সাথেই মামা মনিকে বিয়ে দিতে চায়। মনি রাজী হয় না বলে ঘরে আটকে রাখে।
মনির মা বাবাকে ভয় ভীতি দেখিয়ে রাজী করায়। শহরে যায় বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজী ডাকতে মামা। মামীকে হাতে পায়ে ধরে রাজী করিয়ে ঘরের তালা খুলে, মনি যায় প্রকৃতির ডাকে সারা দিতে বাড়ীর পেছনের জঙ্গলে। সেখান থেকেই দৌড়াতে দৌড়াতে চলে আসে বান্ধবী জনির বাড়ীতে।
বান্ধবীর স্বামী মনি কে আত্ম রক্ষার্তে নানা পরামর্শ দিতে থাকে। মনির নিজস্ব বিবেক বোধও খোলতে শুরু করে। তার শুভাকাঙ্খিদের পরামর্শে ৯৯৯ এ ফোন করে সরকারের সাহায্য প্রার্থী হয়। অতঃপর পাল্টে যায় তার জীবন প্রণালী।
যত চামচিকে,টিকটিকি এগিয়ে এসেছিল বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে, পালিয়ে গেল দুই কান ধরে ৯৯৯ এর ভয়ে। প্রাইমারী, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপনীর পর বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখে পা। নিজের মেরুদন্ড সোজা করে কৃষকের অসহায় মেয়েটি হয়ে ওঠে সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। বহু বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে নিজেকে করে সুখের ফুলদানীতে প্রতিষ্টিত। মেয়েদের ওঠতে দোষ, চলতে,কথা বলতে,অন্তহীন দোষ। কেউ নারী জাতিকে সচারাচর সোজা চোখে দেখতে চায় না। নারীর  খ্যাতি বাহবা কিচ্ছু পছন্দ করে না।
মা,খালা,ফুফু,বোন,ভাবী সবাইকে দেখেছি আঁচলে চোখ  মুছে ও বোকার হাসি ঠোটে তুলে সংসার করতে। মনি তাদের মত নয়। পাথরে ঘষে কপাল করেছে উন্নত, বাহু তর্জনী শক্তশালী। তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে সকল প্রতিবন্ধকতা। মা বাবাকে সোনার স্বর্ণালী সুখের পালঙ্খে শুইয়ে, দিয়েছে জীবনের পরিপুর্ণতা। স্বামী,সন্তান,মা বাবাকে নিয়ে সাজিয়েছে ঢাকা শহরে স্তায়ী আস্থানা। বুঝতে ও মানতে হবে নারীরা ইচ্ছে করলে মাথা উচু করে দাঁড়াতে পারে। জনি ব্যর্থ হয়নি।
ত্রিভুবনের তিন বাসিন্দার মেলায় আমারও কিছু বলা দরকার। আমার বাবা চেয়েছিলো তাঁর কালো মেয়েটিকে ডাক্তার বানাতে। স্বপ্নে বিভোর ছিলো। না তা পারলাম না। ২০২০ সালে জীবনের শেষ অধ্যায়ে এসে হয়েছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডক্টরেট ডিগ্রি ধারী। চুড়ান্ত ভাইভা বোর্ড আমাকে জিঙ্গেস করেছিলো- জীবনের প্রায় শেষ অধ্যায়ে এই ডিগ্রি দিয়ে কি করবেন। কিছুই না।তবে মানুষিক তৃপ্তি পাবো। পরবর্তী প্রজন্ম গর্ব করে বলতে পারে আমি পিএইচডি হোল্ডার ছিলাম। কয় গ্রাম ঘুরে আপনি পাবেন এমন শিক্ষিত ও সচেতন নারী।
অজো পাড়া গায়ে জন্ম নেয়া আমি , দারিদ্র্যতার সাথে লড়াই করে হয়েছি ঢাকা শহরের স্থায়ী বাসিন্দা। গ্রামে বসবাস রত অবস্থায় এসএসসি অধ্যায়ের পাঠ চুকিয়েছি। রাত দিন এতো বেশী পড়াশুনা করতাম যা ছিলো কল্পনাতিত। আত্ম বিশ্বাস ছিলো  – -পড়ালেখা ছাড়া ভাগ্যের চাকা ঘুরানো যাবে না। তাই পড়া পড়া পড়া এই তপস্যায় ছিলাম সর্বদা নিবেদিত। আল্লাহও মুখ তুলে তাকিয়েছিলো বলেই, আজকের অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছি।
 ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাবল মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেছি। হয়েছি একটি এমপিও ভুক্ত বেসরকারি কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। কলেজটি গড়ে তুল তে বাইশ বছর সময় হারিয়েছি আমার জীবন যৌবন থেকে। ছোট ছোট সন্তাদের বঞ্চিত করেছি স্নেহ আদর থেকে। তাদেরকে ঢাকায় রেখে কলেজের সেবায় পড়ে থাকতাম মফস্বল শহরে। আমার সোনার সন্তারা লাইন চুত্য হয়নি,বরং উজ্জল নক্ষত্রের মত হয়েছে সোনার মানুষ।
বাংলাদেশ কৃষকলীগ,কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা সদস্য। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্যদের সিনেট সদস্য। লেখক হিসেবে জন্ম দিয়েছি২০ টা বইয়ের। বিচরন করেছি গদ্যে,পদ্যে,প্রবন্ধে,নিবন্ধে। শিক্ষাবিদ,সমাজ সেবক,কলেজ নির্মাতা, গর্ববতী মা,সমাজ সংস্কারক ইত্যাদি বহুবিদ অধ্যায়ে পেয়েছি সন্মাননা,পদক, শুভেচ্ছা স্মারক,রাষ্ট্রীয় জয়িতা পুরস্কার ইত্যাদি বহু কৃতিত্বের অংশিদার। বাংলাদেশ টিভি ও বেতারের স্বরচিত কবিতা আবৃতিকার,বেতারের নিবন্ধিত গীতিকার। আমি তো স্বপ্নেও ভাবি নাই এতো বেশী অগ্রসর হবে আমার পথ চলা।
দার্শনিক বার্টান রাসেল বলেছিলেন — যে কোন টেনশান থেকে মুক্তি পেতে হলে, নিজস্ব জগৎ তৈরী করতে হবে।আমি নামাজে বসে আল্লাহকে বলতাম আমাকে এমন একটা পরিবেশ দাও,আমি যেন কাজ করতে করতে আকাশ দেখার সুযোগ না পাই। এ কারনেই রাজপথের মিছিলে, নারী সমাজের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে, সভা সেমিনারে, মানব বন্ধনে, জায় বাংলা স্লোগান ও বঙ্গবন্ধুর চেতনার ধারক বাহক, সমাজের কল্যাণে বহু অঙ্গনে  কাজ করতে করতে কখন যে একষট্টিতে এসে দাঁড়িয়েছি তা টের পেলাম না।তবে অলস সময় বৃথা কাজে ব্যয় করিনি সে আমার বড় শান্তনা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ করে ছয় মাসের ছেলে সন্তান কোলে নিয়ে সংসারে যে দিন ঢোকে ছিলাম। বইগুলো ছুরে ফেলে দিয়ে বলেছিলাম-আর পড়ালেখার ধারে কাছেও যাবো না।কিন্তু পারলাম কই। বই,খাতা,কলম আমায় মুক্তি দিলো না। এখনও ঘুরছি সে অঙ্গনে। জানি না এর শেষ কোথায় হবে।
 শুধু আমি না, আমরা পাঁচ ভাই বোন ছিলাম অত্যান্ত মেধাবী। বাবা তাঁর নিজের ভবিষ্যতের কথা না ভেবে, সব জমা জমি বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সব অর্থই আমাদের পড়ার পেছনে ব্যয় করেছিলেন। আমরাও পথ চলায় ভুল করিনি। মানবীয়,স্বনাম ধন্য হওয়ার চেষ্টা করেছি। মা বাবা তোমাদের হাজারও সালাম।
এর পর এসে দায়িত্বের হাত বাড়িয়ে দাঁড়ায় বড় ভাই। বাবা মা চার ভাইবোনকেই নিয়ে আসেন ঢাকায়। পড়াশুনা,বোনদের বিয়ে,ভাইদের পড়ালেখা,মা বাবা সমস্ত গুরু দায়িত্বই বহন করেন।এমন ভাই কারো ভাগ্যে জুটেছে কি না সন্দেহ।দুহাত তুলে বার বার সেই ভাইয়ের জন্য করি শুকরিয়া আদায়।
শিশু বয়সের তিন বন্ধবী কে কোথায়, কেমন আছি জানি না।দেখাও হয় না। জীবনের সমাপ্তি টানার পূর্বে আদৌ দেখা হয় কি না সন্দেহ। হায় জীবন, সময়,বাস্তবতা এতো অবুঝ নিষ্ঠুর কেন?