কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার মোকারিমপুর ইউনিয়নের ফকিরাবাদ গ্রামের দরিদ্র কৃষক রেজাউল হক, রবিউল ইসলাম, রিন্টু রহমান, ফাইমা খাতুন ও আবুল হোসেন।
নিজস্ব জমিজমা কিছুই নেই। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ করে সংসার চালাতেন।
অভাব ছিল নিত্যসহচর। তবে বিষমুক্ত পেয়ারা চাষ করে এখন স্বাবলম্বী হতে চলেছেন। বাগানে থোকায় থোকায় ধরে থাকা পেয়ারা এখন তাদের ভাগ্য বদলের হাতছানি দিচ্ছে।
সরেজমিনে ঘুরে জানা গেছে, তিন বছর আগে সরকারের ‘একটি বাড়ি একটি খামার’ প্রকল্পের সদস্য হন কৃষক রেজাউল হক, রবিউল ইসলাম, রিন্টু রহমান, ফাইমা খাতুন ও আবুল হোসেন। ২০১৩ সালে তারা প্রকল্প থেকে ৫০ হাজার টাকার ঋণ পান, ইচ্ছা পেয়ারাবাগান করার। তবে মাত্র ৫০ হাজার টাকায় ইচ্ছা পূরণ দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়ায়। এ সময় তাদের পাশে এসে দাঁড়ান স্থানীয় ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান।
তিনি পাঁচ কৃষকের সঙ্গে যৌথভাবে ১০ বছরের জন্য বিঘাপ্রতি ৯ হাজার টাকা দরে ১০ বিঘা জমি বর্গা নেন। কৃষক রেজাউল হক জানান, ২০১৩ সালের মার্চে জমি বর্গা নেওয়ার পর যশোর থেকে ২৫ টাকা দরে প্রায় সাড়ে ১৩০০ থাই পেয়ারার চারা এনে রোপণ করেন। এর আট মাসের মাথায় ফলন পাওয়া শুরু করেন। বছরে দুবার গাছে ফল আসে। তবে বর্ষাকালে ফল বেশি হলেও দাম কম হয়। আর শীত মৌসুমে ফলন কম হলেও দাম তুলনামূলক বেশি পাওয়া যায়।
জ্যৈষ্ঠ মাসে পেয়ারা গাছে এক দফা ফুল ও ফল আসে। এ মৌসুম কমপক্ষে নয় মাস স্থায়ী হয়। এ মৌসুমে ৫-৬ লাখ টাকার পেয়ারা বিক্রির আশা কৃষক রেজাউলের। অন্যদিকে শীত মৌসুমে দ্বিতীয় দফা পেয়ারা ধরা শুরু হয় ভাদ্রের শেষ থেকে। এ মৌসুমের পেয়ারা পাওয়া যায় চৈত্র পর্যন্ত। এ মৌসুমে ৩-৪ লাখ টাকার পেয়ারা উৎপাদন হবে বলে জানান তিনি। গাছ আরও বড় হলে পেয়ারার উৎপাদনও বেড়ে যাবে।
বর্ষা মৌসুমে প্রতি কেজি পেয়ারা পাইকারি বিক্রি হয় ১৫ থেকে ৪০ টাকায়, আর শীত মৌসুমে ৭০-৮০ টাকায়। তারা বাগানে পোকামাকড় দমনে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করেন না। কেবল কৃষি বিভাগের পরামর্শে ভিটামিন-জাতীয় কিছু ওষুধ প্রয়োগ করেন। এ ছাড়া পোকামাকড় ঠেকাতে পেয়ারা একটু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পলিথিন ব্যাগে ঢুকিয়ে মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বাগানের অংশীদার ইউপি সদস্য আসাদুজ্জামান জানান, পাঁচ কৃষক বাগানের লভ্যাংশের পাশাপাশি শ্রমের মজুরিও পান। এ ছাড়া আরও পাঁচজন বিধবা নারীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে বাগানে। পেয়ারা বিক্রির পাশাপাশি ১০ বছর পর গাছগুলো কেটে জ্বালানি (খড়ি) হিসেবে বিক্রি করলেও ৫-৬ লাখ টাকা পাওয়া যাবে।
বাগানের শ্রমিক রেখা খাতুন বলেন, এখানে নিয়মিত ভালো পারিশ্রমিক পান। এতে সংসারে সুদিন ফিরেছে। দুটি ছেলেমেয়েকে পড়ালেখা শেখাচ্ছেন। একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের ভেড়ামারা উপজেলা সমন্বয়কারী তৌহিদুল ইসলাম জানান, বিষমুক্ত এ পেয়ারার যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে।
জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন বলেন, পাঁচ কৃষক ঋণ নিয়ে বিষমুক্ত পেয়ারাবাগান করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি অন্য কৃষকদের এ ধরনের উদ্যোগ বাস্তবায়নে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।