ঢাকা ০৫:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

ভিউ বাড়াতে অশ্লীল ভিডিও ছাড়ত তারা, অবশেষে সিআইডির জালে ধরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৪৫:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ মার্চ ২০২১
  • ১৬৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফেসবুক- ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অধিক ভিউ’র মাধ্যমে অধিক ডলার উপার্জনের লোভে অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে আপলোড করত একটি চক্র। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নেতিবাচক পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। ফেসবুক ইউটিউব ব্যবহারকারী সচেতন নাগরিকরা এমন প্রতিক্রিয়ার জানানোর পর বিষয়টি নিয়ে নজরদারি শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

নজরদারির এক পর্যায়ে যারা এসব ভিডিও ছড়াচ্ছে তাদেরকে ধরতে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তের এক পর্যায়ে সুনির্দিষ্টভাবে অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে আপলোড করছে এমন পাঁচ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সংস্থাটির সাইবার পুলিশ ইউনিট।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বিকেলে সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির সাইবার পুলিশ ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান। তিনি জানান, অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে, এমন অপরাধে গাজীপুর থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে নজরদারি করা হচ্ছিল বলে জানান তিনি।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ‘কমেন্ট মিডিয়া’র পরিচালক এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও প্রযোজক মো. মনির হোসেন রাজু, কেএমএইচ টিভি’র পরিচালক, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও প্রয়োজক ও অভিনেতা কাজী মনির হোসেন, ক্যামেরাম্যান রফিকুল ইসলাম, চ্যানেল ‘এস কে আগুন’র পরিচালনাকারী ও অভিনেতা এস কে আগুন ও বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও’র অভিনেতা ও পরিচালক আসিফ আরাফাত। এসময় তাদের কাছ থেকে অশ্লীল ভিডিও তৈরিতে ব্যবহৃত ক্যামেরা, হার্ডড্রাইভ, পেনড্রাইভ ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির সাইবার পুলিশ ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, অশ্লীল ভিডিও কনটেন্ট তৈরির সঙ্গে জড়িত কন্টেন্ট নির্মাত প্রযোজক, অভিনেতাসহ একটি চক্রের পাঁচ জনকে গ্রেফতারের পর সাইবার পুলিশের তদন্তে অশ্লীল ভিডিও কনটেন্ট তৈরির সঙ্গে জড়িত এমন আরও ১৫ থেকে ১৬টি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করে আসছিল একটি চক্রে। চক্রটি দেশের কয়েকটি জেলার বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া নিয়ে এমন ভিডিও তৈরি করত। এমনকি তারা এই কন্টেন্ট তৈরি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করছে। বিষয়টি সাইবার পুলিশের নজরে আসলে দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জানিয়েছে, তারা অভিনয়ের কথা বলে বিভিন্ন আগ্রহী অভিনেতা- অভিনেত্রীদের নিয়ে এ ধরণের অশ্লীল ভিডিও তৈরির কাজ করে থাকে। পরবর্তীতে তৈরিকৃত ভিডিওগুলো বিভিন্ন চটকদার শিরোনাম দিয়ে ইউটিউবসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে প্রচার করে। প্রচার করা ভিডিও বিভিন্ন চ্যানেল ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে সাবস্ক্রাইবার ও ভিউ বৃদ্ধির মাধ্যমে অনেক টাকা আয় করেছে।

এমন ভিডিও তৈরিতে শুটিং স্পষ্ট ও সহায়তাকারীদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা মাত্র এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেছি। আমাদের তদন্তে এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম পেয়েছি। এছাড়া ভিডিও তৈরিতে সহযোগিতা করছে এমন কিছু হোটেল ও রিসোর্ট এর তথ্য পেয়েছি। এছাড়া তারা যে টাকা আয় করেছে তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। যদি কোনো অনিয়ম ধরা পরে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, এমন কোনো সামাজিক বিরোধী অপরাধ আমাদের নজরে আসলে আমরা ব্যবস্থা নিব। আমরা এরই মধ্যে টিকটিক, লাইকি, ভিগোসহ বেশ কিছু এপসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রক্রিয়া শুরু করেছি। খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরনের কন্টেন্ট সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক কলহসহ নানা আপরাধের জন্ম দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি।

তিনি বলেন, যদি কেউ এ ধরণের কর্মকাণ্ডে ভুক্তভোগী হয় তবে আমাদের কাছে কিংবা নিকটস্থ থানায় জিডি বা অভিযোগ করলে আমরা সেটি খতিয়ে দেখব। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকেও যারা আমাদের সহায়তা চেয়ে কমেন্ট করে সেগুলোও আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করি আমলে নিয়ে তদন্ত করতে। আজকে যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিষয়টিও ফেসবুকে বিভিন্ন জন আমাদের সহায়তা চেয়ে মেনসন করেন কমেন্টে। সেখান থেকে মূলত আমরা বিষয়টি নজরদারি শুরু করি। যার এক পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এমন আরও যেসব চক্র আছে তাদের বিরুদ্ধেও নজরদারী চলছে বলে জানান তিনি।

অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জনসচেতনা বৃদ্ধিতে সিআইডি কাজ করছে। পাশাপাশি ইউটিউব এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো অবহিত করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

নিখোঁজের ৩ দিন পর ইহুদি ধর্মগুরুর মরদেহ উদ্ধার

ভিউ বাড়াতে অশ্লীল ভিডিও ছাড়ত তারা, অবশেষে সিআইডির জালে ধরা

আপডেট টাইম : ০৯:৪৫:২৮ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ মার্চ ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ফেসবুক- ইউটিউবসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অধিক ভিউ’র মাধ্যমে অধিক ডলার উপার্জনের লোভে অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে আপলোড করত একটি চক্র। তাদের এমন কর্মকাণ্ডে বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় নেতিবাচক পরিবেশের সৃষ্টি হচ্ছে। ফেসবুক ইউটিউব ব্যবহারকারী সচেতন নাগরিকরা এমন প্রতিক্রিয়ার জানানোর পর বিষয়টি নিয়ে নজরদারি শুরু করে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

নজরদারির এক পর্যায়ে যারা এসব ভিডিও ছড়াচ্ছে তাদেরকে ধরতে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। তদন্তের এক পর্যায়ে সুনির্দিষ্টভাবে অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে আপলোড করছে এমন পাঁচ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয় সংস্থাটির সাইবার পুলিশ ইউনিট।

মঙ্গলবার (১৬ মার্চ) বিকেলে সিআইডির সদর দফতরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান সিআইডির সাইবার পুলিশ ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান। তিনি জানান, অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে সমাজে নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করছে, এমন অপরাধে গাজীপুর থেকে ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে দীর্ঘদিন ধরে নজরদারি করা হচ্ছিল বলে জানান তিনি।

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- ‘কমেন্ট মিডিয়া’র পরিচালক এবং কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও প্রযোজক মো. মনির হোসেন রাজু, কেএমএইচ টিভি’র পরিচালক, কন্টেন্ট ক্রিয়েটর ও প্রয়োজক ও অভিনেতা কাজী মনির হোসেন, ক্যামেরাম্যান রফিকুল ইসলাম, চ্যানেল ‘এস কে আগুন’র পরিচালনাকারী ও অভিনেতা এস কে আগুন ও বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও’র অভিনেতা ও পরিচালক আসিফ আরাফাত। এসময় তাদের কাছ থেকে অশ্লীল ভিডিও তৈরিতে ব্যবহৃত ক্যামেরা, হার্ডড্রাইভ, পেনড্রাইভ ও মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

সিআইডির সাইবার পুলিশ ইউনিটের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. কামরুল আহসান বলেন, অশ্লীল ভিডিও কনটেন্ট তৈরির সঙ্গে জড়িত কন্টেন্ট নির্মাত প্রযোজক, অভিনেতাসহ একটি চক্রের পাঁচ জনকে গ্রেফতারের পর সাইবার পুলিশের তদন্তে অশ্লীল ভিডিও কনটেন্ট তৈরির সঙ্গে জড়িত এমন আরও ১৫ থেকে ১৬টি চক্রের সন্ধান পাওয়া গেছে।

তিনি বলেন, ডিজিটাল মাধ্যমে বিভিন্ন অশ্লীল ভিডিও তৈরি করে ইউটিউবসহ বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার করে আসছিল একটি চক্রে। চক্রটি দেশের কয়েকটি জেলার বিভিন্ন হোটেল ও রিসোর্ট ভাড়া নিয়ে এমন ভিডিও তৈরি করত। এমনকি তারা এই কন্টেন্ট তৈরি করে বিপুল পরিমাণ টাকা আয় করছে। বিষয়টি সাইবার পুলিশের নজরে আসলে দীর্ঘদিন তদন্ত শেষে ঢাকা ও গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জানিয়েছে, তারা অভিনয়ের কথা বলে বিভিন্ন আগ্রহী অভিনেতা- অভিনেত্রীদের নিয়ে এ ধরণের অশ্লীল ভিডিও তৈরির কাজ করে থাকে। পরবর্তীতে তৈরিকৃত ভিডিওগুলো বিভিন্ন চটকদার শিরোনাম দিয়ে ইউটিউবসহ বিভিন্ন ডিজিটাল প্লাটফর্মে প্রচার করে। প্রচার করা ভিডিও বিভিন্ন চ্যানেল ও ডিজিটাল প্লাটফর্মে সাবস্ক্রাইবার ও ভিউ বৃদ্ধির মাধ্যমে অনেক টাকা আয় করেছে।

এমন ভিডিও তৈরিতে শুটিং স্পষ্ট ও সহায়তাকারীদের বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, আমরা মাত্র এই ধরনের অপরাধের বিরুদ্ধে কাজ শুরু করেছি। আমাদের তদন্তে এরই মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের নাম পেয়েছি। এছাড়া ভিডিও তৈরিতে সহযোগিতা করছে এমন কিছু হোটেল ও রিসোর্ট এর তথ্য পেয়েছি। এছাড়া তারা যে টাকা আয় করেছে তার বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। যদি কোনো অনিয়ম ধরা পরে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, এমন কোনো সামাজিক বিরোধী অপরাধ আমাদের নজরে আসলে আমরা ব্যবস্থা নিব। আমরা এরই মধ্যে টিকটিক, লাইকি, ভিগোসহ বেশ কিছু এপসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রক্রিয়া শুরু করেছি। খুব দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই ধরনের কন্টেন্ট সামাজিক অবক্ষয়, পারিবারিক কলহসহ নানা আপরাধের জন্ম দিচ্ছে বলে আমরা মনে করি।

তিনি বলেন, যদি কেউ এ ধরণের কর্মকাণ্ডে ভুক্তভোগী হয় তবে আমাদের কাছে কিংবা নিকটস্থ থানায় জিডি বা অভিযোগ করলে আমরা সেটি খতিয়ে দেখব। পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষ করে ফেসবুকেও যারা আমাদের সহায়তা চেয়ে কমেন্ট করে সেগুলোও আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করি আমলে নিয়ে তদন্ত করতে। আজকে যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের বিষয়টিও ফেসবুকে বিভিন্ন জন আমাদের সহায়তা চেয়ে মেনসন করেন কমেন্টে। সেখান থেকে মূলত আমরা বিষয়টি নজরদারি শুরু করি। যার এক পর্যায়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এমন আরও যেসব চক্র আছে তাদের বিরুদ্ধেও নজরদারী চলছে বলে জানান তিনি।

অতিরিক্ত ডিআইজি কামরুল আহসান বলেন, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি জনসচেতনা বৃদ্ধিতে সিআইডি কাজ করছে। পাশাপাশি ইউটিউব এবং ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে বিষয়গুলো অবহিত করার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।