ঢাকা ০৮:৩১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারী ২০২৫, ২৪ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম

মৌসুমের শুরুতে মুকুলে মুকুলে ভরা আমবাগান

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:০৩:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ মার্চ ২০২১
  • ১৬৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গুটি হওয়ার আগেই এবার মৌসুমের শুরুতে মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে আমের বাগান। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁসহ এ অঞ্চলে এত মুকুল কয়েক বছরেও দেখেননি বাগান মালিকরা।

আম চাষিরা বলছেন, বাগানে বাগানে গাছগুলো যে পরিমাণে মুকুলিত হয়েছে, তাতে এর চার ভাগের এক ভাগ মুকুলও যদি টিকে যায় তাতে আমের বাম্পার ফলন হবে চলতি মৌসুমে।

আম ফলনে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে এবার। কিন্তু অসময়ে আকস্মিকভাবে হানা দিয়েছে ঘন কুয়াশা, যা আমের মুকুলের সবচেয়ে বড় শত্রু।

আম চাষি, কৃষি বিভাগ ও ফল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, ৫ মার্চ থেকে রাজশাহী অঞ্চলে ভোর থেকে দিনের অনেকটা সময় পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে প্রকৃতি।

ফলে পরিমিত তাপপ্রবাহ হচ্ছে না, আবার ঝলমলে সূর্যকিরণও পড়ছে না প্রকৃতিতে। এমন গুমট হাওয়ায় বাতাস ও প্রকৃতিতে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকছে। এমন প্রতিকূল আবহাওয়ায় আমের মুকুল দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে না।

চাষিরা শঙ্কিত, ঘন কুয়াশার কারণে আমের মুকুল জ্বলে যেতে পারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিরাহিমপুর মর্দানা গ্রামের চাষি নজরুল ইসলাম ও নওগাঁর সাপাহার উপজেলার খঞ্জনপুর গ্রামের চাষি কোবাদ আলী জানান, গত বছরও এ কারণেই অধিকাংশ মুকুল ঝরে পড়েছিল। এখন বৃষ্টি হলেও আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে এই দুই চাষি আশঙ্কা করছেন।

রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, এ সময়ে প্রস্ফূটিত আমের মুকুলের জন্য সূর্যকিরণ ও স্বাভাবিক তাপমাত্রা খুব জরুরি। এখন মুকুলের বয়স মাত্র তিন বা চার সপ্তাহ চলছে। এতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস দরকার।

কারণ আর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে আম গুটিতে পরিণত হবে। এমন আবহাওয়া আরও এক বা দুই সপ্তাহ থাকলে আমের মুকুল জ্বলে ঝরে পড়তে পারে। বিরূপ প্রকৃতির আক্রমণ থেকে মুকুল বাঁচাতে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিমিত পরিমাপে ও সঠিক কীটনাশক স্প্রে করা উচিত। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, এ অঞ্চলে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতেই শীত বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আকস্মিকভাবে গত এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে প্রকৃতি।

দিনের তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠা-নামা করছে। যদিও এই সময়ে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রির মধ্যে থাকার কথা ছিল। এমন বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রকৃতি ও বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকছে। এই আর্দ্রতা শুধু ফল, ফুল ও ফসলই নয়, মানুষের জন্যও স্বাস্থ্যকর নয়। ভোরের দিকে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত উঠছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, চার বছরে রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় আমের উৎপাদন বেড়েছে অতিরিক্ত আড়াই লাখ টন। রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলায় মোট ৭৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ থেকে চলতি মৌসুমে ৭ লাখ ৭৮ হাজার টন আম উৎপন্নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমের ফলন হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

যার পরিমাণ ২৮ হাজার হেক্টর। দেশে উন্নতমানের ফজলি আমও শুধুমাত্র এ জেলাতেই বেশি ফলে। এর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার টন। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কয়েক বছরে রাজশাহী অঞ্চলের নওগাঁ জেলায় আম বাগানের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে একসাথে সাকিব-তামিম

মৌসুমের শুরুতে মুকুলে মুকুলে ভরা আমবাগান

আপডেট টাইম : ১০:০৩:২৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ মার্চ ২০২১

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গুটি হওয়ার আগেই এবার মৌসুমের শুরুতে মুকুলে মুকুলে ভরে গেছে আমের বাগান। রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নওগাঁসহ এ অঞ্চলে এত মুকুল কয়েক বছরেও দেখেননি বাগান মালিকরা।

আম চাষিরা বলছেন, বাগানে বাগানে গাছগুলো যে পরিমাণে মুকুলিত হয়েছে, তাতে এর চার ভাগের এক ভাগ মুকুলও যদি টিকে যায় তাতে আমের বাম্পার ফলন হবে চলতি মৌসুমে।

আম ফলনে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাবে এবার। কিন্তু অসময়ে আকস্মিকভাবে হানা দিয়েছে ঘন কুয়াশা, যা আমের মুকুলের সবচেয়ে বড় শত্রু।

আম চাষি, কৃষি বিভাগ ও ফল গবেষণা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানান, ৫ মার্চ থেকে রাজশাহী অঞ্চলে ভোর থেকে দিনের অনেকটা সময় পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে প্রকৃতি।

ফলে পরিমিত তাপপ্রবাহ হচ্ছে না, আবার ঝলমলে সূর্যকিরণও পড়ছে না প্রকৃতিতে। এমন গুমট হাওয়ায় বাতাস ও প্রকৃতিতে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকছে। এমন প্রতিকূল আবহাওয়ায় আমের মুকুল দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে না।

চাষিরা শঙ্কিত, ঘন কুয়াশার কারণে আমের মুকুল জ্বলে যেতে পারে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার বিরাহিমপুর মর্দানা গ্রামের চাষি নজরুল ইসলাম ও নওগাঁর সাপাহার উপজেলার খঞ্জনপুর গ্রামের চাষি কোবাদ আলী জানান, গত বছরও এ কারণেই অধিকাংশ মুকুল ঝরে পড়েছিল। এখন বৃষ্টি হলেও আমের মুকুল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে এই দুই চাষি আশঙ্কা করছেন।

রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলিম উদ্দিন বলেন, এ সময়ে প্রস্ফূটিত আমের মুকুলের জন্য সূর্যকিরণ ও স্বাভাবিক তাপমাত্রা খুব জরুরি। এখন মুকুলের বয়স মাত্র তিন বা চার সপ্তাহ চলছে। এতে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস দরকার।

কারণ আর মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে আম গুটিতে পরিণত হবে। এমন আবহাওয়া আরও এক বা দুই সপ্তাহ থাকলে আমের মুকুল জ্বলে ঝরে পড়তে পারে। বিরূপ প্রকৃতির আক্রমণ থেকে মুকুল বাঁচাতে কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরিমিত পরিমাপে ও সঠিক কীটনাশক স্প্রে করা উচিত। রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, এ অঞ্চলে ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝিতেই শীত বিদায় নিয়েছে। কিন্তু আকস্মিকভাবে গত এক সপ্তাহ ধরে ঘন কুয়াশায় ঢেকে থাকছে প্রকৃতি।

দিনের তাপমাত্রা ১৫ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠা-নামা করছে। যদিও এই সময়ে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রির মধ্যে থাকার কথা ছিল। এমন বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রকৃতি ও বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকছে। এই আর্দ্রতা শুধু ফল, ফুল ও ফসলই নয়, মানুষের জন্যও স্বাস্থ্যকর নয়। ভোরের দিকে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৯৯ শতাংশ পর্যন্ত উঠছে।

কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ও রাজশাহী ফল গবেষণা ইনস্টিটিউট সূত্রে জানা গেছে, চার বছরে রাজশাহী অঞ্চলের চার জেলায় আমের উৎপাদন বেড়েছে অতিরিক্ত আড়াই লাখ টন। রাজশাহী, নওগাঁ, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোর জেলায় মোট ৭৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ থেকে চলতি মৌসুমে ৭ লাখ ৭৮ হাজার টন আম উৎপন্নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আমের ফলন হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জে।

যার পরিমাণ ২৮ হাজার হেক্টর। দেশে উন্নতমানের ফজলি আমও শুধুমাত্র এ জেলাতেই বেশি ফলে। এর পরিমাণ প্রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার টন। কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কয়েক বছরে রাজশাহী অঞ্চলের নওগাঁ জেলায় আম বাগানের পরিমাণ বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে।